কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Sunday, May 24, 2020

সবকিছু নেগেটিভ নয়, পজিটিভ ও হচ্ছে কতো কিছু

| সবকিছু নেগেটিভ নয়, পজিটিভ ও হচ্ছে কতো কিছু |

------ ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ 

চারদিকে এতো মৃত্যু, এতো জরা দেখে দমবন্ধ করা লাগছে? আশেপাশে সমস্ত আলো বন্ধ হতে দেখে আরো বিষন্ন লাগছে?  রোজ ব্যাংকের পাসবই দেখিয়ে, টাকা তুলতে যাওয়ার ছুতোয় বাইরে বেরিয়ে বাড়ির কাছে ব্যারিকেড দেখে, বাঁশ দিয়ে সমস্ত গলি আটকে দেওয়া দেখে এবার একটু চাপা টেনশন হচ্ছে? গোটা পাড়া সিল করে দেওয়ার মানে কি সেটা উপলব্ধি করে ভয় হচ্ছে? কিন্তু ভয় পেয়ে, উৎকন্ঠায় কাটিয়ে পৃথিবীর কোন যুদ্ধ কেউ জিতেছে? ধুর, এতো চিন্তা করে বাঁচা যায় গৃহবন্দী দশায়? আলোর খবর, আশার খবর নেই নাকি? কোথাও কি কিছু ভালো হচ্ছে না? পজিটিভ কি স্রেফ কোরোনাই হচ্ছে আর বাকি সব নেগেটিভ? কেউ কি ভিক্ট্রি ল্যাপের কাছাকাছি পৌঁছচ্ছে না? কেউ কি ummidowali dhoop আর sunshinewali asha র কথা লিখছে না এই আকালে?

এক লাখ ৬৫ হাজার মানুষ মারা গেছে গোটা পৃথিবীতে কোরোনা আক্রান্ত হয়ে কিন্তু এটা ও ঠিক এর প্রায় ছয় গুন মানে সারে ছয় লাখ মানুষ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে। ইতালি স্পেনে রোজ হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে এই সময় কিন্তু এটাও বাস্তব যে শেষ কয়েকদিনে রেকর্ড হারে মৃতের সংখ্যা কমেছে। সারা পৃথিবীর দূষণ অপ্রত্যাশিতভাবে কমে গেছে। নদীগুলো স্বচ্ছ হচ্ছে আবার, সমুদ্র প্লাস্টিকের গ্রাস থেকে মুক্তি পাচ্ছে। পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত শহর দিল্লিতে ঝকঝকে আকাশ, দূষণের মাত্রা গোয়ার মতো সামান্য এখন। রাষ্ট্রনেতারা দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য যে বিপুল অর্থ বরাদ্দ করেছিল সেটা জনস্বাস্থ্য খাতে ব্যবহার করবে বলছে। ভবিষ্যতের জন্য এর চেয়ে বড় সুসংবাদ আর কিছু হতে পারে না।

ডোনাল্ড ট্রাম্প রেগেমেগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টাকা আটকে দিচ্ছে কিন্তু আয়ারল্যান্ড এগিয়ে আসছে টাকা নিয়ে। এই রাজনৈতিক কাদা ছোঁড়াছুড়িতে জনকল্যাণমুখী কাজ যেন আটকে না যায়। চিরশত্রু ভিয়েতনাম আমেরিকাকে পিপিই পাঠাচ্ছে। চায়না থেকে নরেন্দ্র মোদির দেশে আসছে বিপুল চিকিৎসা সামগ্রী।

আমরা হতাশ হয়ে পরলে চলবে? যে নয় মাসের শিশুটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলো আর যে ১০০ বছর বয়সী বৃদ্ধা হাসপাতালের বাইরে এলো হাততালি শুনতে শুনতে, তাদের মন ভেঙে যাবে আমাদের নৈরাশ্য দেখে। পর পর দুটো পারমানবিক বোমা বিস্ফোরণের পরে জাপান যদি দশকের পর দশক হতাশ হয়ে কাটিয়ে দিতো, পৃথিবীর অগ্রগন্য সুপারপাওয়ার হতে পারতো? এতো লাখ লাখ ইহুদি হত্যার পরে ও তো ইহুদিরা বেঁচে আছে, ব্যবসা বানিজ্য করছে, অগ্রগতি করছে। তাজ হোটেলে সন্ত্রাস হামলার পরে রতন টাটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ১বছরের মধ্যে হোটেলটা খুলে জীবনকে উদযাপন করবে। ফের উতকৃষ্টমানের পরিষেবা দেওয়া হবে পিছনের দিকে না তাকিয়ে। 

আসুন না আমরা ও Rear view mirror এ চোখ না রেখে সামনে যে অজানা পথটা পরে সেদিকে চোখ রেখে, এগিয়ে নিয়ে যাই পৃথিবীর গাড়িটা৷ আসুন না ভালো দিকগুলো নিয়ে আরো কথা বলি। আসুন না এটা ভেবে কয়েক মিনিট না হয় স্বস্তি পাই যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান মহল রীতিমতো রিসার্চ করতে বসেছে এটা খুঁজতে যে ভারতীয় উপমহাদেশে পাশ্চাত্যের তুলনায় কেন লাফিয়ে লাফিয়ে সংখ্যা বাড়ছে না, কি বিশেষ কারণে আমাদের ইমিউনিটি সাহেবদের থেকে বেশী? কেন কুইনাইন নিয়ে এতো মারামারি! 

আমাদের অনেক না এর মধ্যে হ্যাঁ ও তো কিছু আছে। আমাদের বেশিরভাগ 'নেই' এর মধ্যে কিছু তো আছে। সবকিছু নেগেটিভ নয়, পজিটিভ ও হচ্ছে কতো কিছু। আসুন না, ডালগোনা আর মশারির ফুটো গোনার মাঝে এই পজিটিভ যা কিছুর সংখ্যাটা ও গুনি। আমরা আজ আলোর পথ না খুঁজলে আগামী প্রজন্ম আলোর প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলবে যে। অন্ধকারের ও মাহাত্ম্য হারাবে। আলো আছে বলেই তো অন্ধকারে এতো ভয়। অন্ধকার আছে মানেই তো এরপর আলো আসবে, ঘর ধুইয়ে দেবে জ্বরের শেষে, মন ভিজিয়ে দেবে, নৈরাশ্যের দাগ মুছে দেবে আশাবাদী রোদ্দুর। চোয়াল শক্ত করুন, মন্ত্রোচ্চারণের মতো নিজেকে নিজে বলুন, আমরা করবো জয়। আমরা করবো জয়। আমরা করবো জয় নিশ্চয়। 

©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

No comments:

Post a Comment