কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Sunday, May 24, 2020

সত্যজিৎ রায়

| সত্যজিৎ  রায়  ❤️ |

----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

মুকুলের আজ ও হাসি পায়না। তপেশরঞ্জন মিত্র ও সেই কবেই লেখা বন্ধ করে দিয়েছে। জটায়ুর সবুজ অ্যাম্বাসাডর বাতিল হয়েছে কবেই। ১০০ নং গড়পার রোডের বাড়িটা শুনেছি প্রোমোটারদের কবলে চলে গেছে। রজনী সেন রোড আছে এখনো? 

ফেলুদা এখন বাতের ব্যাথার তেলের মডেল। তোপসে নামী বাঙালি হেঁসেল এর মালিক। মগনলাল মেঘরাজ কবেই মরে ভূত হয়ে গেছে। আর কেউ বাদাম কা সরবত খাওয়ায় না। ওতে আজ ও ভিষ নাই। 

গুপি শেষ বয়সে গড়িয়া অটোর লাইনে দাঁড়িয়ে ঘাম মুছতো। বাঘা ও মৃত। মন্দার বোস বিনা চিকিৎসায় মারা গেছে। খুচরো ভেল্কি বা গ্লোবট্রটার, কেউই খুব একটা সাহায্য করেনি শেষ দিকে। 

যেভাবে নায়ক অরিন্দম মুখার্জীকে টাকার চোরাবালি থেকে তুলতে কেউ সাহায্য করেনি। তবে অত টাকা প্রথমবার চোখে দেখে দিব্যি লেগেছিল আমাদের। দিব্যি লেগেছিল চারমিনার ও, চা এর সাথে নিউ মার্কেট থেকে কেনা ডালমুট, ধোঁয়ার রিং, সকালবেলা নিয়ম করে যোগাসন। 

তালি মেরে আনানো ভূতের রাজার ভোজের ওই ইয়া বড় রাজভোগ বা মাছের মুড়োটা আর পাতে পরেনা। কুকুর ও পায় না। ভূতেও খায় না। ভূতের রাজার থাকার বাড়ি তো সব ভেঙে ফ্ল্যাটবাড়ি হচ্ছে। বোড়ালের নিশ্চিন্তিপুর এখন গমগমে শহরাঞ্চল। 

ভূত যে নাচে, তখন জেনেছিলাম। যখন ছোট ছিলাম। তখনই প্ল্যানচেট শেখা, আলকেমি জানা। ইয়েতি, সোনা তৈরির ফর্মুলা, দড়ি ধরে টান মারার প্রতিস্পর্ধা, বোমযাত্রীর ডাইরি, বিনেপয়সার ভ্রমণ,  সোনার কেল্লা, আটলান্টিস, এল ডোরাডো। 

তারপর একদিন কি যে হলো। কখন যেন সব্বাই বড় হয়ে গেলাম। ইন্দির ঠাকুরান বা দুর্গার গল্প কিরকম অবাস্তব লাগতে শুরু করলো। এত গরীব কেউ হয়? আমার তখন হতাশা নতুন সিরিজের আই ফোন না পাওয়ার। আমার গ্লানি রোজ উবের না চড়তে পারার। এক এক করে র‍্যাক্সসিট, ডাকু গন্ডারিয়া, ক্যাপ্টেন স্পার্ক উত্তর দেওয়া বন্ধ করে দিলো। কতোবার ভাবলাম গিরিডি থেকে ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু আমার বাড়ির ছাদে তার ইউএফওটা নিয়ে এসে একটা টাইম মেশিন দিয়ে যাবে। কই এলো না তো আজ ও। অ্যানাইহিলিন, মিরাকিউরল, নার্ভিগার, অমনিস্কোপ, স্নাফগান, ক্যামেরাপিড, লিঙ্গুয়াগ্রাফ এক এক করে কে বা কারা আমার শৈশব থেকে চুরি করে নিয়ে গেল। 

আমি তখন প্রখর রুদ্রের থেকে ও দ্রুত দৌড়োচ্ছি। উচ্চাশার ইমারত গড়বো ভাবছি।  
তারিণীখুড়ো বারন করেছিল বটে কিন্তু আমার তখন শোনার সময় কই? আমার তখন ছেলেবেলার গল্পের বইগুলো ধুলো ঝেড়ে চিলেকোঠার ঘরে নিয়ে গিয়ে দুপুরবেলা পড়ার সময় কই?

এখন তো পিকু ও অনেক অনেক বড় হয়ে গেছে। পিকুর মা আর ওই দুপুরবেলা আসতো যে কাকুটা ওরা বৃদ্ধ। চারুলতা ও তো থুরথুরে বুড়ি। অপর্ণা আর অপুর জন্য সিগারেটের প্যাকেটে লিখে রাখে না, 'খাবার পরে, একটা করে।

আমরাও তো কখন যেন বড় হয়ে উঠলাম। সোমনাথের মত মিডিলম্যান হয়ে, সিদ্ধার্থর মতো রাগী হয়ে। বস কে খুশি করে, ক্লায়েন্ট কে পছন্দসই 'মাল' সাপ্লাই করে, আপোষ করে, একনম্বরী, দুনম্বরী, দুনম্বরী হয়ে।

আমরা কি সত্যি বড় হতে পারলাম? না ভান করলাম বড় হওয়ার এই কয়েক দশক ধরে? আদপে হয়তো রোজ কৈশোরটা পুষে রাখা ছিল কোটের পকেটে, ফর্মাল শার্ট এর কলার এ, আপিসের ফাইলের ভাঁজে। 

ধন্যবাদ সত্যজিৎ রায় বারবার টাইম মেশিনে চাপিয়ে আমার ফেলে আসা রংপেন্সিল, গরমের ছুটির ১টাকার পেপসি, দূরদর্শনে 'ছুটি ছুটি', পাড়ার লাইব্রেরি, খেলার মাঠ, তিন বর,তিন বর, তিন বর পাইয়ে দেওয়ার জন্য। 

এই জন-অরণ্যে আশা আকাঙ্ক্ষার না পাওয়া অনেক কিছুর মাঝেও সব পেয়েছির নাম, সত্যজিৎ। আজ বাঙালির সেই সবচেয়ে প্রিয় মাস্টারমশাই এর মৃত্যু দিন। আজকের দিনেই আমাদের ফেলে রেখে, তোপশের লেখা বন্ধ করিয়ে, ফেলুদার মগজাস্ত্রে শান দেওয়া থামিয়ে দিয়ে, জটায়ুর ঠাঁই, ঠাঁই, ঠাঁই, ঠাঁই, ঠাঁই এর শব্দ যতদূর পৌঁছয় তার ও অনেক অনেক দূরে উনি চলে গেছেন। রেখে গেছেন আমাদের গোটা ছেলেবেলা। মহারাজা তোমারে সেলাম! 

©--- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

#SatyajitRoy

No comments:

Post a Comment