কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Sunday, May 24, 2020

মা তুঝে সালাম

| মা তুঝে সালাম ❤ |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ 

নিকিতা আর বিভূতি রাহুল আর সিমরন নয় কিন্তু ওদের প্রেমকাব্যটা কোন অংশে কোন সিনেমার চেয়ে কম নয় ৷ পুলওয়ামা থেকে গুলিতে গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে যাওয়া মেজর বিভূতি শঙ্কর ধৌন্দিয়ালের নিথর দেহটা যেদিন দেহরাদুনে ফিরলো, নিকিতা অপলক দৃষ্টিতে কফিনের দিকে তাকিয়েছিল। মাত্র এক বছর আগে ৩৪ বছর বয়সী আর্মি মেজরকে বিয়ে করেছিল নিকিতা কৌল। কাশ্মীরি পন্ডিত পরিবারের মেয়ে। খুব ছোটবেলায় কাশ্মীর থেকে মা বাবার হাত ধরে পালিয়ে আসতে হয়। 

যেদিন পুলওয়ামায় সন্ত্রাস হামলা ও এনকাউন্টারে বিভূতি নিহত হয়, সেদিনই 
ও দীর্ঘক্ষন ফোনে নববিবাহিতা স্ত্রীর সাথে কথা বলে৷ শেষ কথা। গোটা ভারত দেখেছিল সেদিন নিকিতা বলে এক বছর ৩০এর মেয়েকে প্রেমিকের, বন্ধুর, বরের কফিনবন্দি দেহকে ধরে কখনো কাঁদছে, কখনো মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, কখনো চুমু খেয়ে দিচ্ছে নিথর দেহটায়, কখনো চিৎকার করে স্যালুট দিতে দিতে বলছে জয় হিন্দ তারপর কান্নায় ভেঙে পড়ে বলছে, বিভূ আই লাভ ইউ! 

একরত্তি ওই বউটার অসহায়তা দেখে সেদিন কেউ বোধহয় চোখের জল ধরে রাখতে পারেনি। চারপাশে নেতা-আমলা-স্বজন-বন্ধু ঝরঝর করে কেঁদে ফেলেছিল। কিন্তু নিকিতা তো সৈনিকের প্রেমিকা ছিল৷ ও নিজে ও জানতো ওর প্রিয় বিভূর প্রথম প্রেম ছিল মাতৃভূমি, ওটাই তো ওদের প্রথম ভ্যালেন্টাইন। ওর জন্যই তো সবটা দেওয়া যায়। নিজের মাটির গন্ধ আর দেশের পতাকা বুকে চলে যাওয়া যায় হাসতে হাসতে।

নিকিতা আর বিভূতির প্রেমটা আর পাঁচটা লং ডিস্টান্স প্রেমের গল্প ছিল না। পারস্পরিক বিশ্বাস ছাড়া ও দুজন দুজনকে উদ্ধুদ্ধ করতো। নিকিতা বিভূতিকে প্রেম শেখাতো, বিভূতি ওকে নেশা লাগিয়ে দিতো দেশাত্মবোধের। 

বিভূতি চলে যাওয়ার এক মাসের মধ্যে নিকিতা ঠিক করে এভাবে কেঁদে কেঁদে জীবন চালিয়ে দেবে না। অনেকে নিকিতাকে বলে আবার একটা বিয়ে করতে, কতোই আর বয়স! নিকিতা এসব কিছু না করে সিদ্ধান্ত নেয়, সে ও সেনাবাহিনীতে যোগ দেবে। প্রস্তুতি নিতে শুরু করে এন্ট্রান্স পরীক্ষার। এই বছরের শুরুতে পেয়ে ও যায়। সেদিন বিভূতির সেনাবাহিনীর পোষাকটা জড়িয়ে ধরে ও অনেকক্ষণ বিড়বিড় করে কিসব যেন পোষাকটাকে বলেছিল। তারপর কাজে যোগ দিয়েছিল বিভূতির মতো। 

আমরা সিনেমা হল থেকে বেরিয়ে আসার পরেই অন্যকিছুতে ব্যাস্ত হয়ে পরি, তার ও কম সময়ে পুলওয়ামা, মেজর বিভূতি, নিকিতা নামগুলো ভুলে গেছিলাম। মনে পরলো আজ হঠাৎ নিকিতা ফের শিরোনামে আসায়। খবরের দেখলাম ৩০ বছর বয়সী এক ঝলমলে মেয়ের হাসিমুখ। নিজের জমানো টাকা আর মাইনে থেকে ১০০০টা পিপিই কিনে হরিয়ানা পুলিশকে দান করবে ঠিক করেছে। সেনাবাহিনীর সাধারণ র‍্যাংক এ অতো মাইনে নয়। কিন্তু তাতে কি এসে গেল। ওর বিভূ বলতো, দেশকে ভালোবাসায় আবার লাভ-ক্ষতি দেখতে আছে নাকি!

নিকিতাকে জিগ্যেস করা হয়েছিল এই দানের কারণ। ও বলে, সেনাবাহিনী এই যুদ্ধে তো কিছু করতে পারবে না। এই যুদ্ধ লড়ছে ডাক্তাররা। কিন্তু ওদের ছাড়া ও পুলিশগুলো দিনরাত ডিউটি করছে, লোককে বকা দিয়ে ঘরে পাঠাচ্ছে, বাজার করে দিচ্ছে, পাহাড়া দিচ্ছে, ক্লান্ত হয়ে রাস্তার ধারেই খেয়ে ঘুমিয়ে নিচ্ছে - ওদের ও তো সুরক্ষিত রাখতে হবে। ওদের মধ্যে ও বিভূতির মতো কেউ কেউ আছে নিশ্চয়ই। বাড়িতে কোন নিকিতা অপেক্ষা করছে নিশ্চয়ই। ওদের ও তো বাড়ি ফিরতে হবে মহামারী শেষে। 

দেশমাতৃকার কোন বয়স বা অবয়ব আছে? সেটা ৩০বছরের কোন মেয়ে হতে পারে না? নারী শক্তির পোস্টার গার্ল মফস্বল শহরের এই মেয়ে হতে পারেনা? একে দেখে গলার কাছে দলা পাকানো কি জানি কি নিয়ে অস্ফুটে বলা যায় না? মা... তুঝে... সালাম! 

©------ ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

No comments:

Post a Comment