কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Sunday, May 24, 2020

দুমুঠো ভাত ডে, কাজের সুরক্ষা ডে, শিক্ষা- স্বাস্থ্যের অধিকার ডে

| দুমুঠো ভাত ডে, কাজের সুরক্ষা ডে, শিক্ষা- স্বাস্থ্যের অধিকার ডে |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

মহামারী শেষে পৃথিবীর প্রায় ১৬ কোটি অসংগঠিত ক্ষেত্রের সাথে যুক্ত শ্রমিক কাজ হারাবে। ভারতের নিরিখে প্রায় এক কোটি কাজ। আচ্ছা এখন তো রামজান মাস, খোঁজ নিয়েছেন ওই যে ছেলেটা রাস্তায় কাবাব বিক্রি করতো ও কেমন আছে? বা পুরীতে বীচের ধারে যে মাছ ভেজে দিতো৷ দার্জিলিং এ যে মাংকি টুপির দোকান দিয়েছিল সে আর ওই যে কেরালা মুম্বাই গুরুগ্রামে উঁচু উঁচু ফ্ল্যাট বানাতো যারা, তারা? 

এ এক অদ্ভুত পয়লা মে। যারা সবকিছুকে বেসরকারি করে দাও বলে চেঁচাতো তারা নিশ্চুপ। কোন বেসরকারি কোম্পানি এগিয়ে আসেনি, পোস্ট অফিস সারা দেশে কাজ চালিয়ে গেছে। সেই পোস্টাল ডিপার্টমেন্ট যাদের রুগ্ন করে দেওয়া হচ্ছে বেসরকারি ব্যাংককে জায়গা করে দিতে। কাজ তো এসবিআই এর মতো ব্যাংক ও টানা করে চলেছে, ওই যেখানে গেলে নাকি স্রেফ লাঞ্চ ব্রেক চলে৷ আশা কর্মী যাদের ন্যায্য দাবীর আন্দোলনে লাঠি চালিয়েছিল পুলিশ তারা ফুল দিয়ে স্বাগত জানাচ্ছে ওদের এখন। বিএসএনএল টানা পরিষেবা প্রদান করে চলেছে, এয়ার ইন্ডিয়ার কর্মচারীরা গোটা পৃথিবী থেকে ভারতীয়দের ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে আসছে এটা জানার পরে ও যে তাদের কোম্পানি বিক্রি করে দেবে সরকার, চাকরি অনিশ্চিত হয়ে যাবে, এই পয়লা মে ওদের কুর্নিশ। কুর্নিশ সেই সমস্ত সরকারি হাসপাতালের স্বাস্থ্য শ্রমিকদের যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছে, কুর্নিশ পরিযায়ী শ্রমিকদের যারা কেউ মাইলের পর মাইল হেঁটে বাড়ি ফিরেছে। যাদের এখনো হিন্দু বা মুসলিমে ভুলিয়ে রাখা হয়েছে। বাড়ি না ফিরে ওরা যদি রাষ্ট্রকে ঘেরাও করতো? 

ভুলিয়ে রাখাই ভালো এদের। শ্রমিক হিসেবে চিহ্নিত না করে হিন্দু মুসলমানে ভাগ করে মন্দির মসজিদের রাখাই ভালো এদের। এরা যেদিন দুনিয়ার মজদুর হিসেবে নিজেকে ভাবতে শুরু করবে সেদিন সব হিসেব ওলট-পালট হয়ে যাবে। পয়লা মে সেদিন হয়ে যাবে দুমুঠো ভাতের দাবীর ডে, কাজের সুরক্ষা দাবীর ডে, শিক্ষা- স্বাস্থ্যের অধিকার দাবীর ডে।

ফঞ্চুদা আমাদের এলাকায় রিকশা চালাতো। রোজ, ৩৬৩ দিন। বাকি দুদিন ছুটি নিতো। নিতোই। সে রিকশার সামনে কামান তাক করলে ও চালাবে না। একদিন মে ডে আরেকদিন বিশ্বকর্মা ডে। প্রথমদিনটা ফঞ্চুদার কাছে প্রাতিষ্ঠানিক ছিল আর অদ্ভুত ভাবে দ্বিতীয় দিনটা ছিল হক বুঝে নেওয়ার, দামি পানীয় কিনে সাহেব সাজার, সাউন্ডবক্সের আস্ফালনে আশেপাশের সবাইকে বুঝিয়ে দেওয়ার - Have Not দের ও একটা দিন আছে। ফঞ্চুদা বলতো পয়লা মে বিলেতি ঠাকুরের জন্য, আর বিশ্বকর্মা দেশী। তারপর চোখ মেরে সন্ধেবেলা নেমতন্ন করতো ঠেক এ। 

মে দিবসের জয়গান যদ্দিন শহীদ বেদী টু জন হেনরি ভায়া পল রবসনে সীমাবদ্ধ থাকবে, তদ্দিন শ্রমিক নিজেকে হিন্দু বা মুসলিমের দলে নাম লেখাবে। কারণ পল বা জন আসলে ওদেশের ফঞ্চুদাই, ছাঁটাই হয়ে যাওয়া শ্রমিকটা, বাড়িতে বসে যাওয়া মুটেটা। আপনি কোনদিন সেলিব্রেটই করেননি ওকে৷ শ্রমিকই তো সবচেয়ে বড় জাত আর ধনী এবং দরিদ্র সবচেয়ে বড় দুটো ধর্ম। বাকি যা তা তো Divide and Rule সাবান কলের ন্যাংটো শ্রমিকের তেড়ে আসা আটকাতে।

 আজ "হোপলেস কেস, আধমরা, লাথখোর ছেলে, খুচরো চিটিংবাজ, উটকো দোকানদার, খিদিরপুর, একবালপুর, শ্রীরামপুর, সীতাভোগ, লক্ষীকান্তপুর, কাঁটাপুকুর, সোনাগাছি, গরানহাটা, ভাল্লুকপাড়ার মাগ, হিজড়ে, আলবাল পদ্যগদ্য লেখকদের একসাথে খেলা ভাঙার খেলার দিন। ফুঞ্চুদাকে আজ বোঝানোর দিন মে ডে মানে হেব্বি কোন রাশভারী ফরেন সেলিব্রেশন না, মে ডে মানে পাঁচ বচ্ছর অন্তর অন্তর আসে যে ভোটমারানিরা তাদের কলার চেপে দুমুঠো ভাত ডে, কাজের সুরক্ষা ডে, শিক্ষা- স্বাস্থ্যের অধিকার ডে বলার দিন। হঠাৎ একদিন মহামারীর কারণে রিকশা চালানো বন্ধ হয়ে গেলে, রাষ্ট্র যেন ফুঞ্চুর বাড়ি এসে চাল-ডাল-তেল দিয়ে যায়, সামান্য হাতখরচ দিয়ে যায় সেটা মনে করানোর ডে। ডে মানে দিন। নতুন এক সূর্য ওঠার দিন। 

©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

No comments:

Post a Comment