রামপুকারের পুকার কেউ শোনেনি

| রামপুকারের পুকার কেউ শোনেনি |

#পরিযায়ীদাস্তান 

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ 

রাষ্ট্র রাষ্ট্র তোমার কি মন বলে কিছু নাই? তোমার রক্তচক্ষুর মাঝে চোখের জল নাই? সহানুভূতি নাই? না আছে কিন্তু একচোখো?

আচ্ছা শাহরুখ খানের ছোট ছেলের নাম যেন কি? আর ঐশ্বর্য রাই এর মেয়ের? আচ্ছা ওই উপরে ফ্যাটানো কফি নিচে দুধ ওই ড্রিংকটা কি আর টিকটকে নতুন চ্যালেঞ্জ কোনটা? 

আমি আপনাকে Judge করছি না বা খারাপ বলছি না আপনি এই সাধারণ জ্ঞানগুলোর  অধিকারী বলে। আমি স্রেফ আকুতি করছি আপনাকে রামপুকার পন্ডিতদের সম্বন্ধে ও জানুন। বিশ্বাস করুন আমি পরিযায়ী শ্রমিক না। হ্যাঁ আমি জানি, পরিযায়ী শ্রমিক শুনলে আপনি আমার আকুতি শুনবেন না।

এই যে ছবিটা বিপুল ভাবে ভাইরাল হয়েছে, এরকম ছবিগুলো বিপুলভাবে ভাইরাল হচ্ছে, এই প্রত্যেকটা ছবি একটা করে গল্প বলে৷ সবকটা গল্প বই আকারে প্রকাশ পেলে, মানব ইতিহাসের এক হৃদয় বিদারক পর্বের কথা জেনে ফেলবে পৃথিবী। তা কখনো হয় নাকি? তাই বাজাও তালি, পেটাও থালি, সেলফি তোলো বারান্দা থেকে। ওই বারান্দার অনেক অনেক নিচ থেকে দূর থেকে ওদের ঘরের উদ্দেশ্যে হাঁটা শুরু হয়।

ভদ্রলোকের নাম রামপুকার পন্ডিত। বিহারের বেগুসরাই এর মানুষ। উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদে মজদুরি করতেন। লকডাউনের ফলে কাজ নেই। বাকিদের মতো হেঁটে বাড়ি পৌছনোর চেষ্টা করেছিলেন। মাঝরাস্তায় খবর পান, তাদের এক বছর বয়সী একমাত্র সন্তান খুব অসুস্থ। পায়ে জোর বাড়ে। আরেকটু জলদি হাঁটো পন্ডিতজী, নিজেই নিজেকে বলে। এরপরে রামপুকার খবর পায়, ছেলে আর নেই। ওদিকে রামপুকারকে উত্তর প্রদেশের পুলিশ সীমান্ত পেরোতে দিচ্ছে না বিহারে ঢোকার। কাগজ চাই, লিখিত অনুমতি চাই, কাগজ চাই। রাষ্ট্র যেমন চায়৷ 

তিনদিন পথে আটকে ছিল এ দেশের নাগরিক রামপুকার পন্ডিত। যার একটা ভোট আর মন্ত্রী আমলার একটা ভোটের নাকি সমগুরুত্ব। তিনদিন পাগলের মতো হেঁটেছে, লড়ি খুঁজেছে, লিফট চেয়েছে, পুলিশের হাতেপায়ে ধরেছে, মোবাইলে কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেছে। ওর ৭২ ঘন্টার নানা মুহুর্তের স্রেফ একটা ফ্রেম দেশ দেখতে পেয়েছে। কেঁপে উঠেছে! আমাদের বোধহয় সাহস নেই ওর ৭২ ঘন্টার অসহায়তা প্রত্যক্ষ করার। 

হিন্দিতে पुकार (পুকার) মানে আর্তি। কিন্তু কি অদ্ভুত এই দেশ। রামের পুকার শুনতে চায় না। রামপুকারের আর্তি শোনেনা। পন্ডিতের আকুতি দেখতে পায় না। এখানে বিশাল বিশাল বিমান ফিরিয়ে আনে বিদেশে আটকে পরা ভারতীয়দের, ঋষি কাপুরের মেয়ের ছাড়পত্র মেলে বিশেষ বিমানে ফিরে আসার অথচ রামের পুত্রবিয়োগে ও সে ঘরে ফিরতে পারেনা। হে রাম!

©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ