| দুরন্ত ঘূর্ণি শেষে |
---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
শুভ সকাল। শুভই বটে কারণ আপনার দুর্যোগ কেটে গেছে। আপনি এখনো এই লেখাটি পড়তে পারছেন। মানে ধরে নেওয়া যাক আপনার ফোনে এখনো ব্যাটারি আছে, নেট আছে আর প্রবল বৃষ্টি মাথায় নেই। থাকলে সবার আগে ফোনটাকে বাঁচাতেন। অনেকের থেকে আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি কে কে Marked Safe। ঠিকই তো। টাইট্যানিকডুবির সময় ফেসবুক থাকলে ওখানে ও কিছুজন লিখে যেত Marked Safe, তারপর পিয়ানো আর ভায়োলিন শুনতে শুনতে লাইফবোটে পা দিতো। ওটা ও প্রিভিলেজ। ওতে ক্ষতি নেই কিন্তু তারপর?
আমরা কি সত্যি সেফ? ওই যে কাল অবধি যাদেরকে ঘরে থাকার কথা বলা হচ্ছিল, তারা তো এখন ভেজা কাপড়ে মাঠে দাঁড়িয়ে। টিনের চাল উড়ে গেছে, টালির ছাদে ফাটল, ত্রিপল আর খড়কুটো কোন প্রান্তে ভেসে গেছে হাওয়ায়। ভাগ্যিস "টেরেন" চলছে না। চললে হয়তো আপনার ঘরেই উঠতে চাইতো৷ সাবিত্রী, বাসন্তী, বকুল। ওই যারা না আসলে আপনাকে একসময় গান গেতে হতো, "তোমার দেখা নাই"।
প্রায় ১০হাজার ঘর উপড়ে গেছে। ২০ হাজার মানুষ এবার কোন ক্যাম্পে যাবে। কোথায় সোশ্যাল ডিস্টান্সিং করবেন? কোরোনা রিলিফে না উম্ফান রিলিফে? ভাবুন। কারণ এখন না ভাবলে আপনি যা নিয়ে গর্ববোধ করতেন, মানে সস্তা শ্রম নিয়ে তারা আর বেঁচে ফিরবে না। ফিরলে ও আপনার মুখ ঝামটার থেকে আপনাকে এক ঘুষি মেরে আপনার চেন টেনে পালিয়ে যাওয়াতে বেশি একাত্ববোধ করবে। আমি না অর্থনীতিবিদরা ভয় দেখাচ্ছে। এক দানবীয় অর্থনৈতিক নিম্নচাপ আসছে। নিচুতলার ভিত না বাঁচালে উপরতলা তাসের দেশের মতো ধুলিমাখা হবে।
এখনো সময় আছে। মাঠে নামি। উদ্বৃত্ত যা কিছু আছে সেটা দান করুন। যারা ধান ফলাতো আর আর যারা কাজ করতে আসতো আপনার বাড়ি তারা এই দ্বিমুখী আক্রমণের মুখোমুখি অনেকবছর হয়নি। কোনটায় বাঁচবে আর কোনটায় মরবে তার দ্বন্দ্ব ছিল না। এখন আছে। আপনি যদি ভাবেন আপনি নিরাপদ উটপাখির মতো নিজের মাথা বালিতে গুঁজে ভাববেন পৃথিবীর কেউ আপনাকে দেখতে পাচ্ছে না।
কলকাতাকে এগিয়ে আসতে হবে। হবেই। ফেসবুক, টুইটার, প্রবাসী বাঙালি, ভালোবেসে বাঙালি, আধা বাঙালিদের এগিয়ে আসতে হবে। আজকের পরে কোমড় ভেঙ্গে যাবে মালতির মা, রফিকুলের ছা, বিলকিসদের। যদি আপনি ডিশওয়াশার আর স্প্যাগেটিতেই জীবন চালিয়ে নিতে পারেন কিছু বলার নেই কিন্তু যদি আপনার এদের উপর জীবন নির্ভরশীল হয়, এগিয়ে আসুন।
এই লড়াইটা একা মমতা বা কান্তি লড়তে পারবে না। রাজ্যের সাংসদরা দলমত নির্বিশেষে চাপ তৈরি করুন কেন্দ্রীয় প্যাকেজের, মধ্যবিত্ত যারা তারা আসুন কমিউনিটি কিচেনগুলোকে আরেকটু টাকা দিই। যারা রামকৃষ্ণ মিশন, ভারতসেবাশ্রম, ইসকনের ভক্ত তারা অবিলম্বে কাজ শুরু করি ত্রানের। এসময়টা বাংলা বাঁচানোর সময়। বাংলা বাঁচলে দুর্গা প্রতিমা, ভোরের আজান, আলু দেওয়া বিরিয়ানি, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রে মনকেমন, কোজাগরী, নববর্ষ, আমন ধান, শষ্য শ্যামলা।
অনেক তো মুম্বাই, কেরালার জন্য হ্যাশট্যাগ আন্দোলন হলো। এবার বাংলাকে পুনরুজ্জীবিত করার লড়াই শুরু হোক। মাভৈই মাভৈই!
©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
No comments:
Post a Comment