কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Sunday, May 24, 2020

পঁচিশে বৈশাখ উদযাপন মাই ফুট

| পঁচিশে বৈশাখ উদযাপন মাই ফুট |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ 

দিনের দিন টাকা পেতো, এক মাস ধরে একটা টাকা ও উপার্জন করেনি। কাজ চলে গেছে, খাওয়ার শেষ, রোজ হাত পাততে ভালো লাগেনা। তাই বাকি দেশের পরিযায়ী শ্রমিকদের মতো হাজার কিলোমিটার হেঁটে বাড়ি পোঁছবে ঠিক করেছিল। মহারাষ্ট্র থেকে মধ্যপ্রদেশ। তিনদিন হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে রেললাইনে শুয়ে পরেছিল কারণ ঠান্ডা লাইনে মাথা দিয়ে আরাম লাগছিল। ওরা ভেবেছিল গোটা দেশের ট্রেন বন্ধ তো তাই তো হাঁটতে হচ্ছে ওদের, একটা ও ট্রেন চোখে পরেনি, পরলে লাফিয়ে উঠে যেত। ভোরবেলা ১৬জনকে পিষে দিয়ে চলে যায় এক মালগাড়ি। পরে থাকে কিছু শুকনো রুটি, হাওয়াই চটি, নোংরা জামা। চাপ চাপ রক্ত। আপনার ভাতের থালায় ঠিক দেখতে পাবেন কাটা লাশের এক আধ টুকরো, রক্তদাগ। হারমোনিয়াম আর রবীন্দ্র রচনাবলীর পাতায়। 

কার জন্য সারাদিন ধরে সেই এক গান, এক কবিতা, এক নাচের মুদ্রা, এক বাটিক প্রিন্ট, এক হারমোনিয়াম, এক গীতবিতান নিয়ে উদযাপন করছেন? আপনার মনে হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আজ বেঁচে থাকলে ও চ্যানেলে এই ১৬ জন ভারতীয়র মৃত্যু সংবাদ দেখার পরে গদগদ হয়ে চন্দন চর্চিত হয়ে, মালা গলায়, হাসি হাসি মুখে বসে থাকতেন জন্মদিনে দর্শন দেবে বলে? আপনার মনে হয় আজ "এসো হে বৈশাখ" গাওয়ার দিন? আপনার মনে হয় না গুরুদেব আজ থাকলে দরজা বন্ধ করে টানা ওই ভারতবর্ষের জন্য কিছু একটা লিখতো? সরকারের নিদারুণ ঔদ্ধত্য আর উদাসিতাকে বিদ্ধ করতো শব্দ দিয়ে? কোন আনন্দে নাচছেন?

কিসের প্রাণের আরাম? হাঁটতে, হাঁটতে অসুস্থ হয়ে মরে যাওয়া মুটে, মজুরকে দেখে ডালগোনা কফির আরাম? মনের আনন্দ আপনি এখনো খাবার পাচ্ছেন, বাজার যাচ্ছেন আর শ্রমিকেরা পচা কলার স্তুপ থেকে ধাক্কাধাক্কি করে কলার টুকরো বেছে খাচ্ছে দেখে? আত্মার শান্তি এটা মনে করে যে আপনার তো মাথার উপরে ছাদ আছে, রেশন আছে, ব্যাংকে টাকা আছে, দুপুরে ভাত আছে, বিকেলে অনলাইনে রবীন্দ্র জয়ন্তীর কবিতাপাঠ আছে!

১৬টা লাশ আর শুকনো রুটিগুলো আপনাকে বহুদিন দেখবেন তাড়া করে বেরাবে। আর যদি না তাড়া করে বুঝবেন আপনি যন্ত্র হয়ে গেছেন। রবি ঠাকুরকে একটা প্রতিষ্ঠান ভেবে প্রতিবার উদযাপন করছেন। 

চারিদিকে নাগিনীরা ফেলিতেছে বিষাক্ত নিঃশ্বাস আর আপনি নাচিয়া কুদিয়া এমন একজনের জন্মদিবস পালন করিতে চাইছেন যে আজকের দিনে বেঁচে থাকলে প্রতিদিন শ্রমিকের দুর্দশা নিয়ে লিখতো, সরকার বাহাদুরকে চিঠি পাঠাতো, গোটা পৃথিবীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতো নাইটহুড প্রত্যাখ্যানের মতো কিছু একটা করে। আজ যদি এই ১৬জনের মৃত্যু নিয়ে না লিখি, ছবিতে ছবিতে ছেয়ে না ফেলি টাইমলাইন রবিঠাকুরের সবচেয়ে বড় অপমান করবো আজ।

মালগাড়ির ড্রাইভার হয়তো আজ রাতে ঘুমাতে পারবে না। যদি ও ওই স্পিডে কিভাবেই বা থামাতো ট্রেন, হয়তো ৫০ সেকেন্ড সময় ছিল৷ কিন্তু যাদের ৫০দিন সময় ছিল পরিযায়ী শ্রমিকদের সাহায্য করার, ট্রেনের ব্যবস্থা, ভাতের ব্যবস্থা করার, তাদের আজ ঘুম হবে?

©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

No comments:

Post a Comment