কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Sunday, May 24, 2020

মহাযুদ্ধ শেষ, 'কোরোনা'কিলার এখন টিচাররুপে সাজেশন দিচ্ছে একে ওকে

| মহাযুদ্ধ শেষ, 'কোরোনা'কিলার এখন টিচাররুপে সাজেশন দিচ্ছে একে ওকে | 

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ 

কে.কে. শৈলজা কেরালার স্বাস্থ্য মন্ত্রী। শৈলজা টিচার নামেই বেশি জনপ্রিয়। দিদিমনির মতো শাসন ও করেন আবার স্নেহ ও করেন। বন্যা হোক বা মহামারী, টিচারকে চাই। ঠান্ডা মাথায় বোর্ডে ছক কষে নেন তারপর গোটা দল আর রাজ্যকে নিয়ে মাঠে নামা। আমরা করবো জয়!

জানুয়ারি মাস থেকে ঢাল তলোয়ার নিয়ে রেডি ছিল কেরালা। মহামারী বরং অনেক পরে আশে টিচারকে ফাইট দিতে, ফ্লাইটে করে। টিচারের লোকেরা ততক্ষণে কন্ট্রোলরুম খুলে ফেলেছে, তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র হাতে বিমানবন্দরে রেডি। সেসময় আমরা মহামারীর চেয়ে ট্রাম্পের আসা নিয়ে বেশি উৎসাহী ছিলাম। ওরা ততোদিনে পিপিই, মাস্ক এর জোগান নিয়ে চিন্তিত। কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে রোগীদের মন ভালো রাখতে কি খাবার দেবে তাই নিয়ে মাথা খাটাচ্ছে। সরকার কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে যারা বন্দি তাদের বিনামূল্যে ফোনের টাকা ভরে দেয়, বাড়ির সাথে কথা বলতে হবে তো৷ সকালে পৌঁছে দেওয়া হয় খবরের কাগজ। উত্তর ভারতের পরিযায়ী শ্রমিকদের মাথা গরম যাতে না হয়, হাঁটা যাতে শুরু না করে তাই ইডলি ডোসা বাদ দিয়ে রুটি ডাল দেওয়া শুরু হয়, একদিন পুরি সব্জি, ছাতুর সরবত। টিচারের দলটা জানে, পেটের জন্যই জান কবুল আর মান কবুল। 

এরপর লড়াই শুরু। ঝড়ের মতো সংক্রমণ আছড়ে পড়লো। বাকি রাজ্যগুলোর কাছে সিলেবাস নতুন। তাদের অন্য প্রায়োরিটি ছিল৷ ধর্ম-ধর্ম খেলা ছিল। টিচার একমাস আগে থেকে পড়া শুরু করিয়ে দিয়েছিল ছাত্রছাত্রীদের। কোন প্রশ্নই অজানা নয়, শুধু সময় মেপে খেলতে হতো। 

কেরালায় নতুন করে গোটা দেশের মধ্যে সংক্রমণ আর হয়নি। বেশীর ভাগ জায়গা কোরোনা শূন্য, অনেক আগে চিহ্নিত করে ভেন্টিলেটর প্রদান, শুশ্রুষা করার ফলে মৃত্যুর হার দেশের মধ্যে সবচেয়ে কম। গোটা পৃথিবীর কাছে মডেল হিসেবে উঠে আসা কেরালায় ডিটেক্ট, টেস্ট, আইসোলেট করাই গীতা, কোরান, বাইবেল হয়ে গেছিল। পাগলের মতো স্বাস্থ্য দপ্তরের লোক বাড়ি বাড়ি এসে টোকা মারছে দরজায়। দরজা খুলতেই হবে। প্রশ্নে প্রশ্নে জর্জরিত করছে। কেউ অসুস্থ বোধ করছে? কেউ বাইরে থেকে এসেছে? বাড়িতে চাল ডাল আছে? স্যানিটাইজার ব্যবহার করছে? বিদেশ থেকে এসেছে এমন কাউকে এরা চেনে?

কেরালা মডেল এখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও প্রশংসা করছে৷ আমেরিকা ইতালি, ব্রিটিশ পত্রিকা খোঁজ নিচ্ছে, পাতাজুড়ে সাক্ষাৎকার প্রকাশ করছে আন্তর্জাতিক মিডিয়া, কর্ণাটক, অন্ধ্র, মহারাষ্ট্র সরকার ভিডিও কনফারেন্স করে টিচারের সাজেশন নিচ্ছে। টিচার তো পড়াতে, বোঝাতে ভালোইবাসে। বিদেশিদের যেভাবে ব্যাখ্যা করছে, বিভিন্ন রাজ্যের মন্ত্রীদের ও সাহায্য করছে। এরা কেউ সিপিআইএম না। কেউ শিবসেনা, কেউ এনসিপি, কেউ বিজেপি, কেউ জগন এর দল। মহামারীর সময় আবার বিদ্যা কুক্ষিগত করে রাখতে আছে নাকি? সমাজবাদের পাঠ্যক্রমে তো এরকম কিছু লেখা নেই। 

হয়তো একারণেই শৈলজা টিচারের একটা নয়া পয়সা বিজ্ঞাপন খরচা করতে হচ্ছে না আত্মপ্রচারে। আগে ছেলে ছোকরারা নাম দিয়েছিল শৈলজা টিচার। এখন নাম দিয়েছে কোরোনা কিলার৷ আদপে যদি কেউ কোরোনার চোখে চোখ রেখে ফাইট দিয়ে নিজের সন্তানসম রাজ্যব্যাসীকে আগলে রাখতে পারে সে হলো এই ৬৩ বছর বয়সী সাদামাটা মহিলা। আর পাঁচটা মহিলা সমিতির সদস্যার মতো দেখতে, কাঁধে ঝোলা, অনাড়ম্বর। 

এখন মহামারীর সাথে মহা যুদ্ধ শেষ, টিচারের কাছে কিছুটা সময় থাকছে অনলাইন ক্লাস নেওয়ার। এদেশ ও দেশ থেকে রোজ কেউ না কেউ শুনছে তার কথা। আচ্ছা বাংলাতে এই টিচারের সাহায্য নেওয়া যায় না? বাংলা আর কেরালার তো অনেক মিল। ভাত, মাছ, আড্ডা, ফুটবল, আবেগ, লড়াকু মানসিকতা! টিচার অনলাইনে পড়াতে পারেন না পাড়ায় পাড়ায়? বা স্রেফ দিনবদলের গল্প বলতে পারেন না? কেরালার স্বাস্থ্য মডেলই তো মহামারী শেষে রুপকথার গল্প হয়ে থেকে যাবে দেশে বিদেশে। 

©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

No comments:

Post a Comment