| জাজ'মেন্টাল' হ্যায় ক্যা? |
----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
ম্যা গো আবার ওই মোটা মেয়েটা নাচছে আর ওই রোগা মেয়েটা না নেচে রান্নার ছবি দিচ্ছে খালি? আচ্ছা এই বাজারে মাংসের ঠ্যাং এর ছবি দেওয়াটা কি খুব জরুরি? আর দিচ্ছিসই যখন ডালগোনা কফির ট্রেন্ড ফলো না করে চালগোনার বাচালপনা করছিস? তুই টাকা দিয়েছিস প্রধানমন্ত্রী রিলিফ ফান্ডে? আর মোমবাতি জ্বেলেছিলি? ছবি কই, প্রমাণ কই, পোস্ট কই? আর দান করে অতো ছবি দিতে আছে? দান তো চুপচাপ করতে হয়। চুপচাপ তো গান ও শুনতে হয়। তা এতো লোককে শোনানোর কি দরকার শুনি? কই কতোদিন কোন গান শুনিনি তো তোর। বরের সাথে অশান্তি হলো নাকি? শাশুড়ী সারদিন লাইভ করা দেখে ঝাড়েনা কেন? আচ্ছা রাত নটায় তোর শাড়ির সেলের ওই লাইভটা মনে আছে? বাবা পারিস ও বটে, এই মন্দার বাজারে ও শাড়ি কেনার রেস্ত আছে?
লকডাউনের এই বিরাট অবসরে এরকম কিছু মানুষ ও তাদের লাইন দিলাম। তাদের হ্যাঁ তে ও সমস্যা, না তে ও সমস্যা। বাদিকে ঘেষলে ও বিপ্লবী হবে না ডানদিকে ঘেষলে ও জাতীয়তাবাদী ছোবে না। সাপ, ব্যাং, কাঠবিড়ালির ঠ্যাং যা কিছুর ছবি, লেখা, মন্তব্য পোস্ট করুন না কেন, তাদের অসুবিধা৷ বিচারক সেজে চলিয়া আসিবেন জাজমেন্ট দিতে। স্বঘোষিত, সামন্ততান্ত্রিক।
এক 'পরমা' গুনী শিল্পীর সমস্যা 'থলথলে' মেয়ের ঝলমলে নাচ নিয়ে। আমার ও অসুবিধা হতেই পারতো 'মন্দ নয় সে পাত্র ভালো, রং যদি ও বেজায় কালো'র রেসিজম নিয়ে বা ডোমেস্টিক হেল্পকে চাকর বলা হবে ভেবে। আমার তো রোজগেরে গিন্নি নিয়ে ও সমস্যা হয়নি। এই সমস্যা না হওয়াটা ও শিক্ষার অঙ্গ আর সিলেবাসের অংশ হওয়া উচিত।
শুনুন দিদিমনি। ওয়েব দুনিয়ার গণতান্ত্রিক পরিমন্ডলে ওসব সামন্তবাদ আর চলে না। হিসেব স্পষ্ট। কেউ সারাজীবন গেয়ে যাবে আর কেউ সারা জীবন শুনে যাবে তা কী করে হয়। সে বেছে নেবে "ওয়াই দিস কোলাবারি ডি' বা 'বারান্দায় রোদ্দুর'৷ আপনি কাহারবা আর দাদরা তে থাকুন না। ক্যান্টিনে, কমোডে যে যখন পারবে গাইবে৷ কাঞ্চন মল্লিক বা ক্রিস্টোফার নোলান যে পারবে যেমন খুশি নাচবে! আপনাকে গোটা ব্রহ্মাণ্ডের জেঠু সাজতে কে বলেছে।
সাধারণত্ব উদযাপন হচ্ছে গোটা বিশ্বজুড়ে। এটা মেনে নিতে পারেন বা এড়িয়ে যেতে পারেন। এলিটিস্ট নাক উঁচুপনা করলে নিজেকেই নিজে কষ্ট দেবেন। কারণ গনতন্ত্র বিরোধীদের ও হয়। আর হয় প্রান্তিক, পেটরোগা, প্রোলেতারিতের। সে যদি শনিপুজোয় টুনির মা চালায় আর তারপর ট্রেড ইউনিয়ন নেতা মারা গেলে একই আবেগে 'গাও ইন্টারন্যাশনাল' এ গলা মেলায়, দুটোই মেনে নিতে হবে কারণ আপনার উৎকৃষ্টতর শিল্পকর্মগুলো ফেল মেরেছে।
অমলকান্তি যে রোদ্দুর হতে চেয়েছিল আর শ্যামলী যে মাধুরী দীক্ষিত হতে, তাদের দুজনেরই হাতে এখন অত্যাধুনিক স্মার্ট ফোন আর ফোরজি ইন্টারনেট। নিজের সৃজনশীলতা প্রকাশ করতে আর দরজায় দরজায় ঘুরতে হয় না এদের। ঘরে বসে ভিডিও রেকর্ড করো আর ভাইরাল হয়ে যাও। লেখককে আর প্রকাশককে তেলাতে হয় না, একটা ও বই না প্রকাশ করে ও পাঠক সংখ্যা এক লাখ ছাড়ায়। এটা সমাজবাদী নয় আর মুলায়াম সিংহ সমাজবাদী!
এই ভাইরাল হতে গেলে হয় তোমাকে ভয়ানক উৎকৃষ্ট বা ভয়াবহ নিকৃষ্ট কিছু করতে হবে। মানে এ.আর. রহমান বা রোদ্দুর রায় কিংবা নাসিরুদ্দিন শাহ বা হিরো আলম। মাঝামাঝি থাকলে তুমি ফাউ৷ বদলে যাওয়া পৃথিবীতে আপনাদের স্বাগত।
যে মেয়েটা আলুথালু বেশে রোজ একটা করে ভিডিও দেয় টিকটকে তার যদি এটা করে আনন্দ হয়, কার আপত্তি? আপনি দেখবেন না মশাই। সেই সময় ভালো একটা বই পড়ুন বা নেটফ্লিক্সে সিনেমা দেখুন। আপনার বা ওর কারো মাথাতেই তো কেউ বন্দুক ঠেকিয়ে বলেনি বই পড়তেই হবে বা টিকটক দেখতেই হবে।
সাধারণ মানুষকেই ঠিক করতে দিন ওরা ল্যাজে কাটবে না মুড়োয়। আলগোছে anarchy হবে, দু পা এগিয়ে চার পা পিছোবে কিন্তু ছোট্ট ছোট্ট পায়ে চলতে চলতে ঠিক পৌঁছে যাবে দিনবদলের দোরগোড়ায়। গণ এন্টারটেনমেন্টের সবচেয়ে সাধারণ স্টারের বিপুল হিট সংলাপ ধার করে বলি, Don't underestimate the Power of a Common Man!
©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
No comments:
Post a Comment