| হাজারে হাজারে পরিযায়ী শ্রমিক রাস্তায় নেমেছে: খেতে দে, কাজ দে শালা |
---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
“গাঁড় মারি তোর মোটরগাড়ির, গাঁড় মারি তোর শপিং মলের।
বুঝবি যখন আসবে তেড়ে, ন্যাংটো মজুর সাবান কলের।
পেটমোটাদের ফাটবে খুলি,ফাটবে মাইন চতুর্দিকে।
গলায় ফিতে নেংটি বেড়াল, তার বরাতেই ছিঁড়বে শিকে।” --- নবারুণ ভট্টাচার্য
ফ্যাতাড়ুরা রাস্তায় ফ্যাত ফ্যাত সাঁই সাঁই করছে। বোম্বাই এটা। বান্দ্রা স্টেশনের সামনে। কলার চেপে পুলিশকে বলছে, আমাকে বাড়ি ফিরে যেতে হবে। বাড়ি ফিরতে হবে। গ্রামে ফিরতে হবে। গ্রামে কাজ নেই, চাল নেই, দুমুঠো ভাত নেই।
এরা হয়তো কেউ মুসলমান, কেউ হিন্দু, কেউ দলিত, কেউ ব্রাহ্মণ কিন্তু এদের সব্বার পরিচয় এরা শ্রমিক। শ্রমিক হয়ে শহরে এসেছিল। তোমার পেটমোটা শপিং মল, সৌখিন বাংলোটা বানিয়েছিল৷ তুমি বলেছিলে এদের কিচ্ছু হবে না। কিন্তু তারপর আদানি আর আম্বানির জন্যই সবটা পায়েস রেখে এদের থালায় দুহাতা গু ঢেলে দিয়েছিলে।
ফ্যাতাড়ুরা ক্ষেপে গেলে কিন্তু আপনার ধর্ম-ধর্ম খেলা গোটাটা গিলে খেয়ে নিতে পারে। আপনার জাতের নামে বজ্জাতির টুঁটি চেপে ধরতে পারে। দুমদাম ময়লাজল ঢেলে দিতে পারে আপনার রাষ্ট্রীয় ভদ্রতায়। খালি পেটে, হাতে কাজ না থাকলে আবার সৌজন্য কি? ভয় পান। ফ্যাতাড়ুগুলোকে ভয় পান।
ওরা হাঁটতে হাঁটতে ঘরে ফেরা অবধি সুরক্ষিত আপনি। ওরা খাদ্যসঙ্কট অনুভব করার আগে অবধি সুরক্ষিত আপনি। ওরা নিজের হিসেব বুঝে নেওয়ার আগে অবধি সুরক্ষিত আপনি, ওরা অ্যানার্কি না করা অবধি আপনার ঘর সুরক্ষিত, আপনার ড্রইংরুমে স্টক করে রাখা স্কচগুলো সুরক্ষিত, আপনি, আপনার পরিবার সুরক্ষিত।
ব্লেডের উপর দিয়ে টানা হেঁটে হেঁটে ওরা শিকড়ে ফিরতে চাইছে, ফিরে আপনার মতোই ওর সদ্যোজাত মেয়েটার মুখটা দেখতে চায়। স্রেফ ওইটুকুর ব্যবস্থা করে দিন এখন। একটা প্লেন না, বিদেশ মন্ত্রকের অনুমোদন না, রাষ্ট্রনেতাদের সহানুভূতি না, কয়েকটি বাস মহানগর থেকে কোন জেলায় পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে নিয়ে যাবে, স্রেফ একটা ট্রেন গাঁও এর ওই ইস্টিশনে থামবে - রাষ্ট্র থেকে স্রেফ এইটুকুই চাইছে। কলার চেপে ভাত, পরিশ্রুত পানীয় জল, বিনামূল্যে চিকিৎসা, মাথার উপর ছাদ, চাকরির নিরপত্তা দাবী করেনি। আমাদের এখনো ঘর পোড়েনি। আমরা সুরক্ষিত, আমরা ফেসবুক করছি সেল্ফ- কোয়ারেন্টিনে।
©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
No comments:
Post a Comment