কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Sunday, May 24, 2020

বামফ্রন্ট সেদিন ও কোন চক্রান্ত করেনি: অজানা তথ্য জানুন

| বামফ্রন্ট সেদিন ও কোন চক্রান্ত করেনি: অজানা তথ্য জানুন |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

দশ বছর হয়ে গেল। এক দশক। এখনো জেলের বাইরে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, গৌতম দেবেরা। এখনো ২১ জুলাই এর মাথারা ঘুরে বেরাচ্ছে। আপনাকে বলছি ধর্মাবতার। আপনি যে রোজ খবরের কাগজ কেনেন, বাড়ির জন্য তেলওলা মাছ, ঠাকুরের আসনের জন্য ফুল, ব্রেকফাস্ট এ কচুরি আর রাজনীতি নিয়ে কে কী বললো তার ফিরিস্তি নিয়ে ফেরেন। আপনাকে বলছি যে সন্ধে নামলে টিভিতে বিরাট বিপ্লব দেখেন আর রাগে ফেটে পড়লে মোমবাতি জ্বালান পার্ক স্ট্রিটে। আপনাকে বলছি ধর্মাবতার দশ বছর হলো, এবার ন্যয়দন্ডে মাপুন রাজধর্ম। আপনি বিচার করুন সেই নরকের কীটেদের ভবিষ্যৎ যারা গভীর চক্রান্ত করেছিল। 

দশ দশটা বছর প্রায় পার হলো। নন্দীগ্রামের যে গুলিচালনা হয়েছিল সেটাতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বা রাজ্য সরকারের কোন চক্রান্ত ছিল না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছিল সিবিআই তাদের জমা দেওয়া চার্জশিটে। এটাও স্পষ্ট করেছিল যে মানুষ মারার কোন চক্রান্ত ছিল না সাদা ধুতিপাঞ্জাবির। ওটা ম্যাজিস্ট্রেট আদেশ করেছিল ৩০জন পুলিশ আহত হওয়ার পরে৷ আইনশৃঙ্খলা হাতের বাইরে চলে যাচ্ছিল বলে। অন্যদিকে অস্ত্র মজুত আছে খবর পেয়ে। শাস্তি পেয়েছিল নির্দিষ্টজন। কিন্তু বামফ্রন্ট কৃষক মারার জন্য কোন চক্রান্ত করেনি। এটা ও মনে রাখবেন ধর্মাবতার।

ধর্মাবতার মনে রাখবেন যারা সিঙ্গুর থেকে টাটার ফ্যাক্টরি তুলে দিয়েছিল তারাই কিন্তু মুম্বাই, গুড়গাঁও, হায়দ্রাবাদে শিল্প বৃদ্ধি দেখলে হ্যাংলামি করে। তাদের সন্তানদের ভীনরাজ্যে চলে যাওয়ার কথা বলে কারণ এ রাজ্যে কিছুই তো নেই। শেষ কবে ভারী শিল্প হয়েছে এ রাজ্যে? টাটার ফ্যাক্টরির জমিতে চাষ করে কত কুইন্টাল চাল এসেছে ঘরে? না এখানে ও কোন চক্রান্ত ছিল না। টাটা ইনফোসিস ডেলয়েট মহীন্দ্রা এনে অন্য রাজ্যের সাথে পাল্লা দেওয়ার ইচ্ছে ছিল। যে ছোট ছোট ছেলেমেয়ে গুলো দিল্লি মুম্বাই পুনেতে বসে বাংলা নিয়ে রোজ রাতে নস্টালজিক হয়ে পরে তাদের ঘরে ফিরিয়ে আনার চক্রান্ত ছিল। বাংলাকে বৃহৎ একটা বৃদ্ধাশ্রম না বানাবার চক্রান্ত ছিল। ধর্মাবতার এই সত্যটা ও স্বীকার করুন। 

ধর্মাবতার তাপসী মালিকের খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া সুহৃদ দত্তকে মনে আছে? অবশ্যই আছে। কিন্তু এটা বোধহয় জানা নেই যে ওর বিরুদ্ধে আদালতে কোনও প্রমাণ দিতে পারেনি সিবিআই। হাইকোর্ট জামিন দিয়েছেল। সিবিআইয়ের আইনজীবী দিনের পর দিন গরহাজির থেকেছেন। তার দাবি ছিল নাকি ‘সুহৃদ ষড়যন্ত্রের শিকার। টাটাদের প্রতিযোগীরা যে কোনও ভাবে ন্যানো গাড়ির উৎপাদন ঠেকাতে চেয়েছিল। ওর কথায় বেশির ভাগ মানুষ কারখানার জন্য জমি দিতে এগিয়ে এসেছিলেন। সে জন্যই নাকি বলির পাঁঠা করা হয়েছিল।’ ধর্মাবতার এটা নিয়ে ও কফির কাপে তুফান উঠুক। চা পে চর্চা হোক বা পিঠে উৎসবে একটা আলোচনা। হোক হোক হোক কলরব।

ধর্মাবতার আপনি প্রতিবার অভিযোগ করেন ওরা কম্পিউটার ঢুকতে দেয়নি বাংলায়। প্রযুক্তির বিরুদ্ধে ছিল ওরা৷ অথচ জেনে রাখুন মান্যবর এ দেশে মোবাইল ফোনের সূচনালগ্নে প্রথম হ্যালোটা যে বলেছিলেন তিনি ছিলেন জ্যোতি বসু। নোকিয়া কোম্পানি আয়োজন করেছিলেন এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের। ওই যাকে গুন্ডা বলে থাকেন সেই সুভাষ চক্রবর্তী আর যাকে নিয়ে ব্যঙ্গ করেন সেই গৌতম দেব দাঁড়িয়ে থেকে তথ্য প্রযুক্তির দুটো হাব তৈরি করেছিল। সেক্টর ফাইভ আর রাজারহাট। গমগম করে রোজ। কত হাজার ছেলেমেয়ে কাজ করতে ঢোকে। কিন্তু ওখানে শেষ? তারপর? আর কতোগুলো আইটি হাব হলো? কটা নাম করা কোম্পানি এলো?  LinkedIn আছে আপনাদের। খুঁজতে থাকুন কলকাতায় চাকরি। 

ধর্মাবতার জেনে রাখুন গোটা দেশের মধ্যে প্রথম এই কলকাতাতে ব্যবসা করতে আসে বহুজাতিক খুচরা ব্যাবসায়ী সংস্থা মেট্রো ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারী। বিশ্বমানের পাইকারি বাজার। কিন্তু বামফ্রন্ট কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে বেনজির শর্ত আরোপ করে। মিনিমাম একহাজার টাকার বাজার করতে হবে। পাড়ার শংকর মুদির দোকান আর মেট্রো আজ ও পাশাপাশি আছে। না ধর্মাবতার বাম সরকার  পুঁজিবাদের দালালি করেনি। আরো বৃদ্ধি আরো চাকরি চেয়েছিল। চেয়েছিল যাতে তাজা ছেলেগুলোকে সিন্ডিকেট আর বোম বাঁধতে না হয়৷

টাটা চলে যাওয়ার পরে আর কোন বড় সংস্থা বাংলাতে ফ্যাক্টরি বানিয়েছে? বানালে নাম কি? বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পাঞ্জাবিতে লাল দাগ আদপে নেই৷ দশ বছর হলো, সত্যিই আর চাকরি সেরকম হয়নি বাংলায়।

আমি জানি ধর্মাবতার আপনি আবার ৩৪ বছরের র‍্যাপ বাজাবেন বলে প্রস্তুত হচ্ছেন। সাঁইবাড়ি, মরিচঝাঁপি ইত্যাদি বলবেন। সে জন্যই তো বদলে দিয়েছিলেন, কিন্তু তারপর? কেন্দ্র যে রকম সব ব্যার্থতার মূলে নেহেরু আর ৭০ বছর বলে এখানে ও ওই ৩৪ আর জ্যোতি বসু৷ 

ধর্মাবতার, নোট করে রাখবেন এই Competitive Communalism এর যুগে, ওই ৩৪ বছর একটা দাঙ্গা হয়নি। বাবরি মসজিদ ভাঙার পরে পালা করে দলের ছেলেরা মুসলিম পাড়ায় রাত পাহারা দিয়েছে, আর হ্যাঁ রাজধর্ম পালন করতে মুয়াজ্জিনদের বা পাড়ার ক্লাবগুলোকে টাকা দিতে তুষ্ট রাখতে হয়নি বা লোক দেখিয়ে জয় শ্রী রাম বা ইনশাআল্লাহ আউড়াতে হয়নি৷ 

©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

No comments:

Post a Comment