---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি এরকম এক হৃদয়বিদারক ভিডিও পোস্ট করার জন্য৷ বিশ্বাস করুন আপনার দিনটা আমি খারাপ করে দিতে চাইনি, কিন্তু কি বলুন তো, দুমিনিটে ম্যাগি আর তিরিশ মিনিটে পিজার যুগে আমাদের সব হাতে গরম প্রমাণ চাই। আমি চোখের সামনে ইতালি বা আমেরিকার পুনরাবৃতি এ দেশে হচ্ছে দেখতে চাইনা।
ডাক্তার শত্রুঘন পঞ্জওয়ানিকে আপনি চিনবেন না। ডা. পঞ্জওয়ানি শাহরুখ খান নয়। মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে উনি সাধারণ এক ডাক্তার ছিলেন। ছিলেন বলছি কারণ আজ উনি মারা গেছেন কোরোনা আক্রান্ত হয়ে। ফ্রন্টলাইনে যে ডাক্তারেরা কাজ করছেন তাদের মধ্যে প্রথম মৃত্যু। ভারতে প্রথম ডাক্তার যে চিকিৎসা করছিল, কোরোনা পজিটিভ ধরা পরে এবং মৃত্যু হয় ৬২ বছর বয়সে৷
ডা. পঞ্জওয়ানি বস্তি এলাকায় চিকিৎসা চালিয়ে যেতেন। নিম্নবর্গের মানুষকে কোরোনা সচেতন করতেন। অসুস্থ বোধ করার আগে অবধি তাই করে গেছিলেন। ডা. পঞ্জওয়ানির স্রী আর তিন ছেলে অস্ট্রেলিয়াতে আটকে পরেছিলেন লকডাউনের কারণে। এখন ও সেখানেই৷ অস্ট্রেলিয়ার জায়গায় মুম্বাই, দিল্লি, পুনে হলে ও আসতে পারতেন না। ঝরঝর করে কাঁদতে কাঁদতে ভিডিও কলের মাধ্যমে বাবার মৃতদেহকে দূর থেকে শেষ চুমু দিলো ছেলেরা। বাবার শরীর প্লাস্টিকের ব্যাগে রাখা হলো, মুখটা সামান্য সময়ের জন্য দেখতে দিলো প্রশাসন, ভ্যানে তুলে দেওয়া হলো তারপর। স্ত্রী তার দীর্ঘদিনের বন্ধুকে হারালো কিন্তু পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতো পারলো না শেষ যাত্রার আগে। ভগবান করুক এই মর্মান্তিক দৃশ্য যেন আপনাকে না দেখতে হয়।
এরকম দৃশ্য হয়তো আপনাদের পাড়াতে ও দেখা যাবে এরপরে। হয়তো আপনাদের মধ্যে অনেকেই আটকে পরেছে বাইরে। স্বজনের দেহ ছুঁয়ে দেখতে পারবে না হয়তো।
ডাক্তার শত্রুঘন পঞ্জওয়ানি বা তার মতো হাজার হাজার ফ্রন্টলাইনে লড়ছে যারা, সেই স্বাস্থ্য কর্মী, পুলিশ, জরুরি পরিষেবার সাথে যুক্ত মানুষে)পরা চেয়েছিল তাদের সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে। তারা ও বাড়ি ফিরে আসতে চেয়েছিল। পারেনি কিন্তু বিশ্বাস করুন এরা সব্বাই চায় আপনার সন্তান যেন থাকে দুধে।
এরজন্য আপনাকে স্রেফ বাড়ি থাকতে হবে। আপনাকে ক্রমাগত সরকারগুলোকে চাপ দিতে হবে পিপিই, মাস্ক সহ সব স্বাচ্ছন্দ্যের প্রথম দাবিদার যেন জরুরি পরিষেবার সাথে যুক্ত মানুষেরা হয়। ওইটুকুই অনেকটা পরিবারের এনে দেবে সংখ্যায়।
আমি চাইনি এই ভিডিওটি দেখাতে। পৃথিবীর কোন সন্তান, কোন বাবা, কোন ভাই চায়না এই সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করাতে কিন্তু আগামীকে সুরক্ষিত করতে এই ভিডিওটা দেখা দরকারি, লেখাটা পড়া জরুরি।
©------ ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
No comments:
Post a Comment