| ইরফান |
---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
ঠিক যখন মনে হচ্ছে আর ভালো লাগছে না, ইরফান খান ঠিক করলেন মন মেজাজটা আরো খারাপ করে দিয়ে চলে যাবেন। অবশ্য এর দাওয়াই ও উনিই দিয়ে গেলেন। সারাদিন ওনার ছবিগুলো দেখে আবার বাঁচতে চাওয়ার অদম্য ইচ্ছে। ঠিক ওরই মতো৷
অজাতশত্রু কি তবে একেই বলে? Life in a Metro র কংকনার মতো মুম্বাইয়ে একা থাকে যে মেয়েটি সে ও কাঁদছে আবার life of Pie বা Namesake দেখে ফ্যান হয়ে গেছিল যে ইউরোপীয় যুবক সে ও কাঁদছে। বৃদ্ধ বাবার সাথে যে অষ্টাদশী কন্যা থাকতো, তার ও টপটপ করে জল পরছে চোখ দিয়ে। মিস করছে ইংরেজি সাহিত্যের সেই ছাত্র যে প্রতিটা Shakespearean চরিত্রে ইরফানকে খুঁজে পেত, বিশ্বাস করতো ইরফান সব চরিত্রে অভিনয় করতে পারে। রান্নাঘরে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলছে কোন এক গৃহবধূ, ওর ও তো ইচ্ছে ছিল Lunchbox এর নিমরত কৌরের মতো ৫৩ বছর বয়সী কাঁচা পাকা চুলের ইরফানের সাথে প্রেম করে। সাত খুন মাফের ইরফানের মতো হয়তো কোন কবি চরিত্র বাংলায় বলবে, পাগলী, তোমার সঙ্গে ধুলোবালি কাটাব জীবন।
সব তারকার ফ্যানেরাই পাগল হয়। কেউ ছেলেমানুষের মতো ভক্তি করে, কেউ আকাশকুসুম কাস্টিং করে রাখে গুরুর। হাজারো রোলে ইরফানকে কাল্পনিক কাস্ট করে রেখেছিল কোন একুশ বছর, কোন বিখ্যাত পরিচালক, কোন নবাগত চিত্রনাট্যকার, স্ট্রাগলিং নাট্যকার। আচ্ছা ঋষিকেশ মুখার্জির 'আনন্দ' ছবিতে আনন্দের রোলে কিরকম লাগতো, কিংবা A Wednesday তে নাসিরের রোলে বা হেমলক সোসাইটির পরমব্রতের চরিত্রে?
"Real Khan In Bollywood" বলতে একজন খানকেই বুঝতাম। যে বলিউড হলিউড সমান তালে দাপিয়ে বেড়াতেন। যার মন্ত্রীমশাইদের বিয়েবাড়িতে নাচন কোদন করতে হতোনা, গাড়ি চাপা দেওয়ার দুষ্টুমি চাপা দিতে মানবিক টি শার্ট এনজিও-র নামে বিক্রি করতে হতো না, ছবি রিলিজের আগেই সামাজিক বিষয়ে গুরুগম্ভীর টুইট করতে হতো না। এই খান সমস্ত নায়কের ম্যানারিজম স্টিরিয়োটাইপ খান খান করে দিয়ে রাজ করে গেলেন।
অবশ্য এই খান সচারচর নামের শেষে খান ব্যবহার করতেন না। অনায়াসে বলে দিতেন "যদি তোমার ধর্ম মানুষে মানুষে বিভেদ তৈরি করে, রক্ত ঝরায় তবে তোমার ধর্ম নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। বদলানোর ও।"
ইরফান অসুস্থ ছিলেন কিন্তু লড়াকু ছিলেন। বারবার যখন উনি বিদেশে উড়ে যাচ্ছিলেন, শেষ দিন অবধি ভাবতেন এবার সব ঠিক হয়ে যাবে। তারপর জ্যায়সে ফিলমো মে হোতা হে, ফিরে আসবেন রাজার হালে। কিন্তু ইরফান তো হ্যাপি এন্ডিং এর ওই স্টিরিওটাইপ এ কোনদিন ছিলেন না। একের পর এক চরিত্রে অভিনয় করে নিজেকেই নিজে চ্যালেঞ্জ করে যেতেন রোজ। নতুন নতুন গল্প বলে যেতে পছন্দ করতেন। কতো কি করার ছিল বাকি। কতো চরিত্র একা হয়ে গেল।
আর কে আসবে নতুন গল্প বলতে। অন্ধকার সময়ে ইরফান কে আমরা যারা রোদ্দুরে,আলোয়, আশাবাদে আঁকড়ে বাঁচছিলাম, তাদের ছেড়ে এত তাড়াতাড়ি চলে যাওয়ার কোন কারন থাকতে পারে না।
আপনি প্লিজ ফিরে আসুন জলদি কোটরে পরা চোখ আর ওই অমায়িক হাসিটা নিয়ে। প্লিজ৷ জীবনের এই স্ক্রিপ্ট রাইটারকে বলুন না প্লিজ, এই বিচ্ছিরি বাজে পচা টুইস্ট টা না দিয়ে প্লটে আপনাকে ফিরিয়ে আনতে। এতো জলদি আপনি চলে যাবেন? ঝরঝরে বাংলা শিখতেই হবে এবার। বাংলা ছবি করতে হবে, আনন্দ ছবির রিমেক করতে হবে, হলিউডে আরো প্রজেক্ট, আরো সাহিত্যের নায়ককে রক্তমাংসের মানুষ বানিয়ে তোলা। ইরফান ভাই, একবার, প্লিস একবার আমাদের মতো হেরো মানুষগুলোকে বলুন না,"বাবুমশাই জিন্দেগি লম্বি নেহি, বড়ি হোনি চাহিয়ে।"
©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
No comments:
Post a Comment