কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Sunday, May 31, 2020

আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে

.| আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে |

------ ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

দিল্লির চাণক্যপুরীতে অবস্থিত কমিউনিস্ট চীনের দূতাবাস। এক 'চৈনিক চাড্ডি' নিজের স্ত্রীকে সাথে নিয়ে উঠোনে এসে প্রদীপ জ্বালালেন। বললেন এই অন্ধকার সময়ে ভারতের পাশে আছে চীন। এই আলোর রস্মিতে ১৩০ কোটি মানুষ শক্তি পাক লড়াই করার। বলে রাখি, ঐ 'চৈনিক চাড্ডি'টি চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য, ভারতে চীনের রাষ্ট্রদূত! রাত নটায় ন'মিনিট সংহতির জন্য মোম জ্বালালেন। 

এরকমভাবেই বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, নেপাল, ভুটান, পোল্যান্ড এর মতো প্রায় এক ডজন দেশের দূতাবাস মোমবাতি জ্বালিয়ে পাশে থাকার বার্তা দিলো। ওরা আপনার ভাষায় অশিক্ষিত, উজবুক!

সীয়াচেনে সাধারণত মাইনাস ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে স্বাভাবিক তাপমাত্রা। ওখানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যরা ও থাকে। আজ মোবাইলের আলো ও জ্বলেছিল ওই রুক্ষ, নিষ্ঠুর এলাকায়। আপনার কথায় হুজুগে কয়েকজন খামোখা আবেগপ্রবণ হয়ে পরেছিল।

আলো তো অনেক মুসলিম পরিবারে ও জ্বলেছিল৷ ওরা সব্বাই বোরখা বা ফেজটুপি হয়তো পরে না, সব্বাই তবলীগকে সমর্থন করে না। সব্বাই ওই আপনার তোষণ সহ্য করতে পারেনা। অনেকেই আলো জ্বালালো। মজার ব্যাপার কাল ওই পরিবারগুলোকে সম্প্রদায়ের মাতব্বরেরা একঘরে করে দিলে আপনি দরজার খিল দিয়ে না শোনার ভান করবেন। কিংবা শাহবানুর মতো কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন! শাহ বানু মামলা মনে আছে তো? 

শাহ বানুকে মনে না থাকলে ও রতন টাটা যে ১৫০০ কোটি টাকা দান করলো কোরোনা মহামারী রুখতে সেটা মনে আছে নিশ্চয়ই! কি কান্ড, এই অশিক্ষিত, ষ্টুপিড লোকটা ও প্রদীপ জ্বালালো। শুধু তাই নয়, তাজের সব হোটেল দীপাবলির মতো সাজালো। তাজ হোটেল বন্ধ কিন্তু কিছু মানুষ আছে। যারা ভারতের ভয়াবহ সন্ত্রাস হামলার শিকার তারা জানে অন্ধকার সময়ে মোমবাতি কতোটা আরাম দিতে পারে ক্ষতে। ওরা আজ প্রদীপ জ্বালিয়ে কয়েক দন্ড গল্প করলো। রোগের না, জরা জীর্ণতার না, আলোয় ফিরে যাওয়ার গল্প। 

একদিন আলোয় ফিরে যাবার প্রত্যয় নিয়ে তো ওই ফুটপাতে ও আজ আলো জ্বললো৷ কোরোনা আটকে দিতে? না! স্রেফ জানান দিতে, তোমার দলের পিছনে আমিও আছি। দেশ রাগ আজ ও নাগরিকদের ঘরে ঘরে আলো জ্বালিয়ে রাখে। 

আপনার শত্তুর আলো জ্বালাবে বলেছে তাই আপনি আলোকে খিস্তি করা শুরু করলেন। অন্ধকার ঘরে গোঁসা করে পরে থাকলেন। এভাবেই একদিন আপনার শত্তুর দেশাত্মবোধকে ছুঁয়েছিল বলে আপনি অচ্ছুৎ ভাবলেন দেশের প্রতি আবেগকে। ভারত তেরে টুকরে হোংগে ইনশাল্লাহ ইনশাআল্লাহকে ভাবলেন বিশ্ব নাগরিকতার শব্দব্রহ্ম! আপনার শত্তুর নিজেকে ধর্মের জ্যাঠামশাই ভাবছে, তাই দেখে আপনি গোটা ধর্ম আর তার সবটুকুকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে উঠতে বসতে গাল দিতে শুরু করলেন। আচ্ছা আসলে আপনার শত্তুর অপ্রতিরোধ্য না আপনি হোপলেসলি হেরো, ময়দান ছেড়ে পালিয়ে বাঁচতে চান কারণ দাঁতে দাঁত চেপে দেশ, ধর্ম, সংস্কৃতি, সংস্কৃতি ওদের কবল থেকে ছিনিয়ে আনতে ভয় পান আপনি! আপনি বড্ড হেরো মাইরি। আয়নার সামনে আপনি খুব বড় বিপ্লবী সাজেন কিন্তু আদপে আপনার বাড়ির লোক ও আপনার কথা শোনেনা, আপনার আদর্শকে সিরিয়াসলি নেয় না। 

এই যে ছবিগুলো দিলাম এরা কেউ আপনার পাশে নেই। আপনি যত সেনাবাহিনীকে, রামায়ণকে, তুলশীতলায় প্রদীপ জ্বালানোকে, শাঁখ বাজানোকে কোন এক দলের সংকীর্ণতায় ঠেলে দেবেন ওরা আরো বেঁধে বেঁধে থাকবে। 

আর যারা মিছিল করেছিল? যারা বাজি ফাটালো? তারা বিচ্ছিন্নই। ওই যেমন আল্হ হ আবকর বলে ৯/১১ এর মতো ঘটনা ঘটানোটা বিচ্ছিন্ন, যেমন তবলীগের জীবাণু দান করে বেরানো বিচ্ছিন্ন সেরকম। রাষ্ট্রদূত, রতন টাটা, সেনাবাহিনী, আম নাগরিক বা ভবগুরের প্রদীপ জ্বালানোর পরে কোরোনা কমবে না কিন্তু সংহতি বাড়বে। লড়াই চালিয়ে যাওয়ার সংহতি। নিশিদিন          আলোক-শিখা জ্বলুক গানে, আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে, ছোঁয়াও প্রাণে, ছোঁয়াও প্রাণে।

©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

No comments:

Post a Comment