| জন্মদিনে অভিবাদন নাও লেনিন |
----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
লেনিন মানে স্রেফ ফ্রেঞ্চ কাট আর ওভারকোট নয়, আমার লেনিন লং মার্চেও হাঁটে অধিকার বুঝে নিতে। আমার লেনিন সাত শতাংশ ভোট। আমার লেনিন লাথ খাওয়া, মার্কা মারা, হেরো মানুষগুলোর জোট। আমার লেনিন রোজ নিয়ম করে খাবার রেখে যায় রিক্সাওয়ালা, মুটে, মজুর, ভবগুরে, বেকার বা দুম করে চাকরিটা চলে গেছে যার তার পেটের জন্য। আমার লেনিন 'প্রতিদ্বন্দ্বীর' সিদ্ধার্থ, 'জণ অরণ্যের' সোমনাথ, 'দিওয়ারের' অমিতাভ বচ্চন। আমার লেনিন রক্ত মাংসের লোক।
যে লোকটা ভন্ড বাবাদের রক্তচক্ষু আর ভক্তের জণচ্ছ্বাস উপেক্ষা করে ও বিজ্ঞানমঞ্চ আন্দোলনটা করছেন সে আমার লেনিন, যে কয়লা খাদানের শ্রমিকদের এক ছাতার তলায় এনে দারুণ রাগে ফেটে পরার কথা বলছেন, সে আমার লেনিন। রোজ গণশক্তি টা ঝড় জল বৃষ্টিতে বাড়ি বাড়ি এসে দিয়ে যাচ্ছে যে মানুষটা সে ও, সে ও ভ্লাদিমির ইলিয়াচ লেনিন।
লেনিনের লাশ কোনদিন দেখেছেন? খেটে খাওয়া মানুষের অধিকার রক্ষা করতে গিয়ে জঙ্গলমহলে প্রতিদিন খুন হয়েছে যে ডজনে ডজনে লেনিন। ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন করতে গিয়ে গুম হয়েছে যে মোটা চশমা, ঢোলা শার্ট। ছাত্র আন্দোলন করতে গিয়ে থেঁতলে দেওয়া হয়েছিল যে মুখ। ওই থোঁতনা ভাঙা, রক্তমাখা জেদি আপসহীন মুখগুলোই তো লেনিন। চিনতে পারেন নি?
মার্শাল মুর্মু, জামির মোল্লা- খয়েরুল জমাদারই আমাদের লেনিন। ভাঙরের মোফিজুল-আলমগীরই লেনিন। লেনিন সিমলায় পার্টির সেই বিধায়ক যে রাতের পর রাত সরকারি অফিসের বাইরে শুয়ে থাকছে অধিকার বুঝে নিতে। লেনিন কেরালার সেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী যার কোটি টাকার বিজ্ঞাপন লাগেনা রাজ্যকে কোরোনামুক্ত করতে, প্রত্যেককে টেস্ট করাতে।
এই প্রত্যেকটা মুখ আরো অনেক দুনিয়া কাঁপানো দশটা দিন উপহার দেবে। যারা আজ ও না খেতে পেয়ে শুতে গেল তাদের পেটে ভাত জোগাবে। পৃথিবীর সব সন্ত আর জ্ঞানীই তো এটা বলে যে মানুষ বড় কাঁদছে, মানুষের চোখের জল পরছে। লেনিন সে যে ওই কান্নাটা চিরকালের জন্য থামিয়ে দিতে পারে, চোখের জলটা মুছিয়ে দিতে পারে।
ধর্ম না স্টেথোস্কোপ গলায় মানুষের প্রতি সমীহ বাড়ছে, প্যারিসে ম্যাকডোনাল্ডস নিজেদের দখলে নিয়ে কর্মচারীরা খাবার বিলিয়ে দিচ্ছে, কিউবা নিজেদের সৈনিক পাঠাচ্ছে বিশ্বজুড়ে। এই সৈনিকদের কালাশনিকভ নেই, পিপিই আর ভেন্টিলেটর চালানোর প্রশিক্ষণ আছে। ক্ষুদ্র দেশ ভিয়েতনাম চাল বিলির এটিএম বানিয়েছে, ভারতে একটা ও ভোট যারা পায় না তারা রোজ নিরন্ন মানুষকে দুমুঠো ভাত খাইয়ে চলেছে, রক্তদান করে চলেছে।
কমরেড আপনি অনুভব করছেন নিশ্চয়ই কবরে শুয়ে এই ধিকিধিকি আগুনের ওম। A Spectre is haunting the World। জুজুর ভয় পাওয়া ভালো। মেহেনতী মানুষের রক্তচক্ষু, ক্ষুদার্ত, বেকার, লাথি ঝাঁটা খাওয়া মানুষের, কাঙাল মালসাটের জুজু। আমাদের চুমুর দিব্যিতে থাকুন, বিপ্লবে, বিদ্রোহে থাকুন আপনি।
©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
No comments:
Post a Comment