| ভায়ের, মায়ের রক্তে রাঙানো উনিশে মে, বাংলা ভাষার অধিকার চেয়ে |
---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
এমন অনেক জায়গা আছে যেখানে মলিন জামা, লুঙ্গি পরে দুজনে গামছা কাঁধে কথা বললে অনেকে ভাবে তারা বাংলাদেশী। এখনো অনেকে মনে করে রবীন্দ্রনাথের উচ্চারণটা রভিন্দরনাথ আর জনগণমনটা আসলে "জ্যনা গ্যনা মনা"। ভাবে বাঙালিরা উচ্চারণ করতে পারেনা বলে সবেতে ও-কার বসিয়ে দেয়। ভারতে এখনো অনেকে এই ভুল ধারণা লালনপালন করে যে একটা ভাষা রাষ্ট্র ভাষা আর বাকি সব আঞ্চলিক। কি আশ্চর্য, সেই আঞ্চলিক ভাষাকেই সম্মান জানিয়ে পৃথিবী আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস পালন করে আর দেশ শিড়দাড়া সোজা করে গান গায়৷ সেই আঞ্চলিক ভাষাই ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম ভাষা - বাংলা। যে ভাষায় আমরা ভাত ও খাই, জল ও খাই, মায়ের হাতে মার ও খাই। বাংলা বলতে লজ্জা কি!
"আ মরি বাংলা ভাষা" ফেব্রুয়ারিতে আমরা বলি বটে কিন্তু উনিশে মে তারিখটা অনেকেই ভুলে যাই। এই আত্মবিস্মৃতি বাঙালিকেই মানায়। স্রেফ বাংলাদেশ না এই ভারতে ও বাংলা ভাষায় কথা বলার দাবী জানিয়ে কিছুজন শহীদ হয়েছিল। তার মধ্যে ১৬বছর বয়সী এক তরুনী ও ছিল৷ সম্ভবত পৃথিবীর প্রথম মহিলা ভাষা শহীদ৷
আজ মানিক বন্দোপাধ্যায়ের জন্মদিন, আজ হো চিমিন এর ও জন্মদিন। কিন্তু বাঙালির শোকের ও দিন হওয়ার কথা ছিল যে আজ৷ ১৯৬১ সালে আজকের দিনেই তো অসমের বরাক উপত্যকার শিলচর এলাকায় বাংলা ভাষাকে সরকারি ভাষা হিসেবে মান্যতা দেওয়ার দাবীতে ১১জন বাঙালি খুন হন পুলিশের গুলিতে। বরাক উপত্যকায় ৮০% অধিবাসী ছিল বাংলাভাষী কিন্তু তাও তাদের উপর অহমিয়া আরোপ করা হয়। না মানলে বাঙাল খেদাও আন্দোলনের নামে লুঠপাট, খুনখারাপি। মনে রাখবো না আমরা? না গোটাটাই ইন্টারন্যাশনালিজম এর হ্যাংওভারের তলায় আঞ্চলিক এক ঝামেলা হিসেবে থেকে যাবে।
ভাষা সাম্রাজ্যবাদটা সাম্রাজ্যবাদই। এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন। একটা ভাষা আরোপ করার বিরুদ্ধে বললে সাম্প্রদায়িক হয়ে যাবেন না। বাংলাদেশে উর্দু চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে যেমন নিন্দায় বাঙালি ফেটে পরেছিল তেমনই হাততালি, উল্লাস, আবেগে ভেসে গেছিল গুলাম আলীর গানে বা গুলজারের কবিতাতে বা মান্টোর আফসানায়। ভালোটা গ্রহণ করে খারাপটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে শেখায় বাঙালিয়ানাই।
মাথায় রাখবেন, আপনার অ এ অজগর আর টাপুর টুপুর বৃষ্টি পরা, আপনার হলদে সবুজ ওরাংওটাং আর হিজিবিজবিজ, আপনার শব্দকল্পদ্রুম আর ডি লা গ্রান্ডি মেফিস্টোফিলিস ইয়াক ইয়াককেই ওরা ভয় পায়। কারণ সব রাস্তার নাম, পাঠ্যক্রম, সরকারি কথোপকথন, কাগজের অক্ষর পাল্টিয়ে দিলেও ঐতিহ্য আর শিকড়টাকে উপড়ে ফেলতে পারছে না ওরা। ওটা উপড়ে ফেললেই তো দুর্গাপূজা হয়ে যাবে নবরাত্রি আর রমজান হয়ে যাবে রামাদান। দুগগা দুগগা হয়ে যাবে জয় মাতাদি আর চিথল মাছের মুইঠ্যা হয়ে যাবে সোয়া চাপ!
আপনার খ্রিষ্ট আছে কালী আছে, জবা আছে, জিয়ল আছে। হিজল গাছের ফুল ও আছে, শ্যাওড়া গাছে পেত্নী আছে। ছোট নদীর বাঁক আছে, বুড়ো গাছে মৌচাক আছে। ভাষা, ভাষার প্রতি ভালোবাসা আছে। ওটার প্রতি অহংকার ছিল, আছে, থাকবে। জয় বাংলা!
©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
No comments:
Post a Comment