কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Sunday, May 31, 2020

আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে

.| আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে |

------ ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

দিল্লির চাণক্যপুরীতে অবস্থিত কমিউনিস্ট চীনের দূতাবাস। এক 'চৈনিক চাড্ডি' নিজের স্ত্রীকে সাথে নিয়ে উঠোনে এসে প্রদীপ জ্বালালেন। বললেন এই অন্ধকার সময়ে ভারতের পাশে আছে চীন। এই আলোর রস্মিতে ১৩০ কোটি মানুষ শক্তি পাক লড়াই করার। বলে রাখি, ঐ 'চৈনিক চাড্ডি'টি চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য, ভারতে চীনের রাষ্ট্রদূত! রাত নটায় ন'মিনিট সংহতির জন্য মোম জ্বালালেন। 

এরকমভাবেই বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, নেপাল, ভুটান, পোল্যান্ড এর মতো প্রায় এক ডজন দেশের দূতাবাস মোমবাতি জ্বালিয়ে পাশে থাকার বার্তা দিলো। ওরা আপনার ভাষায় অশিক্ষিত, উজবুক!

সীয়াচেনে সাধারণত মাইনাস ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে স্বাভাবিক তাপমাত্রা। ওখানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যরা ও থাকে। আজ মোবাইলের আলো ও জ্বলেছিল ওই রুক্ষ, নিষ্ঠুর এলাকায়। আপনার কথায় হুজুগে কয়েকজন খামোখা আবেগপ্রবণ হয়ে পরেছিল।

আলো তো অনেক মুসলিম পরিবারে ও জ্বলেছিল৷ ওরা সব্বাই বোরখা বা ফেজটুপি হয়তো পরে না, সব্বাই তবলীগকে সমর্থন করে না। সব্বাই ওই আপনার তোষণ সহ্য করতে পারেনা। অনেকেই আলো জ্বালালো। মজার ব্যাপার কাল ওই পরিবারগুলোকে সম্প্রদায়ের মাতব্বরেরা একঘরে করে দিলে আপনি দরজার খিল দিয়ে না শোনার ভান করবেন। কিংবা শাহবানুর মতো কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন! শাহ বানু মামলা মনে আছে তো? 

শাহ বানুকে মনে না থাকলে ও রতন টাটা যে ১৫০০ কোটি টাকা দান করলো কোরোনা মহামারী রুখতে সেটা মনে আছে নিশ্চয়ই! কি কান্ড, এই অশিক্ষিত, ষ্টুপিড লোকটা ও প্রদীপ জ্বালালো। শুধু তাই নয়, তাজের সব হোটেল দীপাবলির মতো সাজালো। তাজ হোটেল বন্ধ কিন্তু কিছু মানুষ আছে। যারা ভারতের ভয়াবহ সন্ত্রাস হামলার শিকার তারা জানে অন্ধকার সময়ে মোমবাতি কতোটা আরাম দিতে পারে ক্ষতে। ওরা আজ প্রদীপ জ্বালিয়ে কয়েক দন্ড গল্প করলো। রোগের না, জরা জীর্ণতার না, আলোয় ফিরে যাওয়ার গল্প। 

একদিন আলোয় ফিরে যাবার প্রত্যয় নিয়ে তো ওই ফুটপাতে ও আজ আলো জ্বললো৷ কোরোনা আটকে দিতে? না! স্রেফ জানান দিতে, তোমার দলের পিছনে আমিও আছি। দেশ রাগ আজ ও নাগরিকদের ঘরে ঘরে আলো জ্বালিয়ে রাখে। 

আপনার শত্তুর আলো জ্বালাবে বলেছে তাই আপনি আলোকে খিস্তি করা শুরু করলেন। অন্ধকার ঘরে গোঁসা করে পরে থাকলেন। এভাবেই একদিন আপনার শত্তুর দেশাত্মবোধকে ছুঁয়েছিল বলে আপনি অচ্ছুৎ ভাবলেন দেশের প্রতি আবেগকে। ভারত তেরে টুকরে হোংগে ইনশাল্লাহ ইনশাআল্লাহকে ভাবলেন বিশ্ব নাগরিকতার শব্দব্রহ্ম! আপনার শত্তুর নিজেকে ধর্মের জ্যাঠামশাই ভাবছে, তাই দেখে আপনি গোটা ধর্ম আর তার সবটুকুকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে উঠতে বসতে গাল দিতে শুরু করলেন। আচ্ছা আসলে আপনার শত্তুর অপ্রতিরোধ্য না আপনি হোপলেসলি হেরো, ময়দান ছেড়ে পালিয়ে বাঁচতে চান কারণ দাঁতে দাঁত চেপে দেশ, ধর্ম, সংস্কৃতি, সংস্কৃতি ওদের কবল থেকে ছিনিয়ে আনতে ভয় পান আপনি! আপনি বড্ড হেরো মাইরি। আয়নার সামনে আপনি খুব বড় বিপ্লবী সাজেন কিন্তু আদপে আপনার বাড়ির লোক ও আপনার কথা শোনেনা, আপনার আদর্শকে সিরিয়াসলি নেয় না। 

এই যে ছবিগুলো দিলাম এরা কেউ আপনার পাশে নেই। আপনি যত সেনাবাহিনীকে, রামায়ণকে, তুলশীতলায় প্রদীপ জ্বালানোকে, শাঁখ বাজানোকে কোন এক দলের সংকীর্ণতায় ঠেলে দেবেন ওরা আরো বেঁধে বেঁধে থাকবে। 

আর যারা মিছিল করেছিল? যারা বাজি ফাটালো? তারা বিচ্ছিন্নই। ওই যেমন আল্হ হ আবকর বলে ৯/১১ এর মতো ঘটনা ঘটানোটা বিচ্ছিন্ন, যেমন তবলীগের জীবাণু দান করে বেরানো বিচ্ছিন্ন সেরকম। রাষ্ট্রদূত, রতন টাটা, সেনাবাহিনী, আম নাগরিক বা ভবগুরের প্রদীপ জ্বালানোর পরে কোরোনা কমবে না কিন্তু সংহতি বাড়বে। লড়াই চালিয়ে যাওয়ার সংহতি। নিশিদিন          আলোক-শিখা জ্বলুক গানে, আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে, ছোঁয়াও প্রাণে, ছোঁয়াও প্রাণে।

©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

স্বার্থপর হোন,স্বাস্থ্য কর্মীদের সর্বোচ্চ স্বাচ্ছন্দ্য দিন

.| স্বার্থপর হোন,স্বাস্থ্য কর্মীদের সর্বোচ্চ স্বাচ্ছন্দ্য দিন |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ 

স্বার্থপর হোন। ভীষণ ভীষণ স্বার্থপর। এই সময় ডাক্তার, সিস্টার সহ সমস্ত স্বাস্থ্য কর্মীদের সর্বোচ্চ স্বাচ্ছন্দ্য দিন, তাদের আগলে রাখুন, তাদের সুরক্ষিত রাখুন। পরে ফের ওদের রোগী মৃত্যু হলে কলার চেপে, টেনে হিঁচড়ে মারা যাবে, আউটডোরে লম্বা লাইন বলে চুলের মুঠি ধরা যাবে, কষাই বলে ফের খিস্তি করা যাবে। এখন ওদের বাঁচিয়ে রাখুন নিজের স্বার্থে। 

স্বার্থপর হোন। ভীষণ ভীষণ স্বার্থপর। ভাবুন তো ভারতে সমস্ত ডাক্তার একদিন মারা গেল! পরপর সব নার্স অসুস্থ হয়ে ভেন্টিলেটরে। কারা চিকিৎসা করবে তখন? কারা কোরোনার চোখে চোখ রেখে স্টেথোস্কোপ হাতে লড়বে? স্বার্থপর হোন। সীমান্তে সেনাবাহিনী দেখলে আপনার গলার কাছে যেরকম দলা পাকিয়ে আসে, স্বাস্থ্য কর্মীদের দেখলে সেরকম ভাবে স্যালুট দিন, নিদেনপক্ষে একটা হাততালি। এই লড়াই কালাশনিকভ দিয়ে জেতা যাবে না। এ লড়াইয়ে স্বাস্থ্য কর্মীদেরই যে একমাত্র প্রয়োজন। 

আপনি ডোনাল্ড ট্রাম্প হতে পারেন, আপনি মুকেশ আম্বানি হতে পারেন, আপনি শাহরুখ খান হতে পারেন কিন্তু বিশ্বাস করুন এতো অল্প সময় আপনি চিকিৎসা বিজ্ঞানটা আয়ত্তে আনতে পারবেন না। তাই স্বাস্থ্য কর্মীদের সুরক্ষিত করুন। এই লড়াই লড়তে যা যা দরকারি সেটা দিন ওদের। পারলে একটা দুটো PPE আর কিট বেশী দিন। মাথায় রাখুন, ওদের যদি ঢাল তলোয়ার ছাড়া যুদ্ধে পাঠান আর সেই যুদ্ধে যদি ওরা হেরে যায়, মৃত্যুপুরী হবে এই মহান দেশ। স্বার্থপর হোন। ভীষণ ভীষণ স্বার্থপর।

এই সময় ডাক্তারদের একটু স্বাচ্ছন্দ্য দিন। মাথায় রাখবেন ওরা ভগবান নয়। ভগবান হতে ও পারবে না। ভগবান মিরাকল করতে পারে। ডাক্তার শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করার আগে অবধি লড়তে পারে বাঁচানোর। ডাক্তার ও হেরে যায়, ডাক্তারের ও ডিপ্রেশন আসে৷ পাশে থাকুন। খোঁজ নিন স্বাস্থ্য কর্মীদের বাড়িতে বাজার টা হচ্ছে কিনা, বৃদ্ধ কেউ আছে কিনা, বাড়ির সব্বাই ভালো তো? ওরা এসব ভাবতে ভাবতে যত চিকিৎসা করবে শত্রু ততোধিক দশাশই হবে। আখেড়ে আমাদের লোকশান৷ স্বার্থপর হোন প্লিজ।

ইতালি, আমেরিকা, স্পেনের সব আছে। সব অত্যাধুনিক প্রযুক্তি থাকার পরে ও প্রাচুর্য থাকার পরে ও রোজ হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে কারণ ডাক্তারেরা সংক্রমিত এখন। একজন ডাক্তার ও অসুস্থ হয়ে ঘরে চলে গেলে এক হাজার লোক বিনা চিকিৎসায় পরে থাকবে। নেতা, অভিনেতা, জাদুকর, গুরুজী, জ্যোতিষী কেউ না, স্রেফ স্বাস্থ্য কর্মী আপনাকে প্রাণে বাঁচাতে পারবে৷

কাল স্বাস্থ্য কর্মীদের বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিন যেভাবে পরিযায়ী শ্রমিকদের খোঁজ নিচ্ছেন। ডাক্তার নিজে বাঁচলে বাকিরা বাঁচবে। কাল থেকে পারলে স্বাস্থ্য কর্মীদের কোন অসুবিধা হচ্ছে কিনা খোঁজ কিন। যারা High Risk Zone এ কাজ করছে কিন্তু সামান্যতম প্রোটেক্টিভ গিয়ার পাচ্ছে না, তারা আপনার জীবন বিপদে ফেলছে। স্বার্থপর হোন। ডাক্তারদের অসুস্থতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে যারা তাদের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করুন। 

দিল্লিতে সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারদের জন্য পাঁচতারা হোটেলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সমস্ত পরিষেবা, খাবারদাবার ভিভিআইপির মতো প্রদান করা হচ্ছে৷ মুম্বাইয়ে ও তাই। এছাড়া ও তাজ হোটেল থেকে সরকারি হাসপাতালের সমস্ত স্বাস্থ্য কর্মীর জন্য দুপুরের খাবার যাচ্ছে। স্বাস্থ্য কর্মীদের ভিভিআইপির মতো আচরণ করুন, পৃথিবীর অসুখ সেরে গেলে স্বাস্থ্য খাতে আরো টাকা বরাদ্দ করুন, স্বাস্থ্য কর্মীদের খুশি রাখুন। মাথায় রাখুন এ লড়াই কালশনিকভ, যুদ্ধবিমান, তাগা তাবিজ, পবিত্র জল, পশুর মূত্র হাতে না, স্রেফ স্টেথোস্কোপ হাতে, গ্লাভস আর মাস্ক পরনে ডাক্তারেরা বাঁচাতে পারবে। এখন স্বার্থপর হোন, স্বাস্থ্য কর্মীদের সর্বোচ্চ স্বাচ্ছন্দ্য দিন।

©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

ট্রাম্প একটা বাজে লোক, ওর হলুদ চুলে উকুন হোক

.| ট্রাম্প একটা বাজে লোক, ওর হলুদ চুলে উকুন হোক |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

দাদু ছোটবেলায় বলতো বন্ধুত্ব দেখে করবে। কেন বলতো বুঝিনি। এখন বুঝছি৷ টিফিন খেয়ে, নোটস নিয়ে, নিজের প্রেমিকার চিঠি  লিখিয়ে নিয়ে, পরীক্ষার হলে সব টুকে নিয়ে ও যদি কম নম্বর পেতো, সে বলতো সব তোর জন্য হয়েছে। ট্রাম্প ও সেরকম এক বজ্জাত ছেলে৷ পাল্টিবাজ আর বেইমান শিরোমণিরা ও লজ্জায় মুখ লোকাবে ট্রাম্পকে দেখে। 

শালা তোর জন্য কি না করা হলো৷ আমেরিকার সব গুজরাতিকে এক ছাতার তলায় আনলো দেশের সবচেয়ে বড় ইভেন্ট ম্যানেজার। ওখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তোর গু এর মতো এজেন্ডা গুলোকে গুজিয়ার রোম্যান্টিকতা মাখিয়ে বিক্রি করে দেওয়া হলো৷ নিজে যেচে যেচে বুথ এজেন্টের মতো সব্বাইকে বললো ভবিষ্যৎটা আমাগো আর তেনাগোর, আর তুই আমাদের চোখ রাঙাচ্ছিস ব্যাটাচ্ছেলে কুইনাইন দেবো না বলে? প্রফুল্ল রায় বোতল ছুঁড়ে মারতো রে কমলা লেবু তোর ত্যাঁদড়ামো দেখলে!

আ মোলো যা, কুইনাইন দেবে না বলে নাকি প্রতিশোধ নেবে! রোজ হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে, নিউইয়র্ক শহরে গণ-কবর দেওয়া হচ্ছে, বেওয়ারিশ লাশের মতো ফেলে রাখা হচ্ছে স্বজনের দেহ আর এখনো কমলালেবু ভাঙবে তবু মচকাবে না। এখনো অন্য দেশকে ধমকাচ্ছে চমকাচ্ছে। এখনো বলবে না ওদের ভুল হয়েছিল স্বাস্থ্য খাতে খরচ কমিয়ে, ওদের এই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা ভুল ছিল।

প্রতিশোধ নিবি কেমনে শুনি? যুদ্ধ জাহাজ পাঠাবি? মানুষ বাঁচলে তো প্লেন উড়বে, মিসাইল হামলায় নিহত হবে শিশু, অমানবিক অত্যাচার চলবে আবু গ্রাইবে। মিনশে বুড়ো সব সেনা দিয়ে জয় করা যায় না। হোয়াইট হাউসের ফাইলগুলো পড়লে জানতি ভিয়েতনামে কি হয়েছিল৷ এবার ভিয়েতনামকে আবার ভিভেকামুন্ড বলে দিস না!

মোদিজী এসব ছিঁচকাদুনের কথায় একবার কিছু দিলে বারবার দিতে হবে। এদের কাঁধে চাপালে কাল মাথায় বসে চুল ঝাকাবে। আজ কুইনাইন নিলো কাল যখন জানবে যে টয়লেট পেপারের জায়গায় জল দিয়ে আমাদের কায়দায় শৌচকর্ম করলে অনেক কাগজ, গাছকাটা বাঁচে আর হাইজেনিক ও,কমলা লেবু না ছুচু করিয়ে দেওয়ার লোক চেয়ে বসে। স্যামচাচার চাহিদার শেষ থাকবে না। কড়া চোখে দরদাম করুন। 

আমরা সবাই এক্কাট্টা হয়ে নিন্দা করছি আমেরিকার রাষ্ট্রপতির। পারলে ওই যে মহিলা রাস্তায় নেমে থালা বাজিয়ে গো কোরোনা গো চিৎকার করছিল তাকে আর যে গোটা বাড়ি জ্বালিয়ে দিলো প্রদীপের জায়গায় বাজি ফাটাতে গিয়ে, তাকে ছেড়ে দিন। ওরাই বুঝে নেবে। 

কুইনাইন, হামি সব পাবেন প্রতিবার। বদলে কিছু আমাদের ও ছাড়ুন। ক্যান্সারের ওষুধ সস্তায় দিন ভারতকে। আগে ভারতীয় ওষুধ কোম্পানিগুলোকে ছাড় দিন আমেরিকায় ব্যবসা করতে, কোন প্রতিবন্ধকতা যে ভারতীয় কোম্পানির না হয়, US FDA যে ব্যানগুলো ভারতীয় বানিজ্যিক সংস্থার বিরুদ্ধে করে রেখেছে সেগুলো তুলে নিক। ট্রাম্প নিজে দেখুক যাতে আমেরিকায় ব্যবসা করার ক্ষেত্রে কোন অসুবিধা না হয় ভারতীয় ওষুধ কোম্পানি গুলোর। 

মোদিজী আমাদের সংবিধানে এখনো সার্বভৌমত্ব শব্দটা আছে। ওটাকে বেচে ট্রাম্প টাওয়ার বানিয়ে দেবেন না। এসব লোক কারোর বন্ধু হয়না। আজ কুইনাইন চাইছে কাল স্ট্যাচু অফ ইউনিটি চাইবে। পরশু বলবে তাজ মহলের জমিতে ফ্ল্যাট বাড়ি বানাবে। দেশ না ট্রাম্প পরিবারের ফার্ম হাউস এটা। ভাগ!

©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

সোনার খাঁচা

.| সোনার খাঁচা |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ 

আমার এক ভারতীয় বন্ধু আফগানিস্তানের টোলো নিউজে কাজ করতো৷ ওর না না গল্প শুনে আমার ও লোভ হতো ডলারে কামানোর। ও বলতো, ভাড়া বাড়ি ঠিক করে দেওয়ার মতো অফিস ওদের পাঁচ তারা হোটেলেই থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়। আসা যাওয়া অফিসের গাড়িতে, সামনে মিলিটারি জিপ৷ হোটেল টু অফিস, অফিস টু হোটেল। মাঝে আফগান সেনার চেকিং, হোটেলে ঢোকার আগে চারবার চেকিং। মানে এক্কেরে থ্রিলিং একটা ব্যাপার। এটাই ক্রমশ ওর দুনিয়া হয়ে গেছিল৷ 

বেশ কিছুদিন হলো আমি এবং আমাদের অফিসের কয়েকজন এই হোটেলেই বন্দি। আরো সাত দিন থাকবো। হোটেল থেকে অফিসের গাড়িতে মাস্ক পরে অফিস আর হোটেল ফেরত, অফিসে আমরাই কয়েকজন হোটেল থেকে আসছি, লাইভের আয়োজন করছি, হোটেলে ফিরে যাচ্ছি। এসবটা করা কারণ দা শো মাস্ট গো অন!

আমাদের ও রাস্তায় চারবার চেকিং, কারফিউ পাস দেখানো, অফিসে ঢোকার মুখে চেকিং, মাথায় বন্দুক সদৃশ যন্ত্র ঠেকিয়ে বডি টেম্পারেচার মাপা, স্যানিটাইজ করা, হোটেলে ফিরে নরম আলোয়, নরম তোয়ালে দিয়ে ফ্রেশ হওয়া, আলাদা আলাদা খাওয়া, নিজের মতো ফিরে আসা ঘরে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির দরজা বন্ধ করে ঘুম! কাল ফের একইরকম এক সকাল।

তাজ হোটেলের নামেই শিহরণ জাগে মধ্যবিত্ততায়। সেই দিল্লির সদা গমগমে তাজ হোটেলই Post Apocalypse কোন সিনেমার প্রথম দৃশ্য যেন। পিয়ানোটা বন্ধ পরে আছে। ক্যাপিটাল কিচেনের মতো রেস্তোরাঁ যেখানে সাধারণ দিনে ও এক ঘন্টা অপেক্ষা করে লোকে আর পাঁচ-ছয় হাজার টাকার বিল মিটিয়ে উঠে চলে যায় মোটা টিপস রেখে, সেখানে খাঁ খাঁ করছে। সদর দরজাতে ও তো ওই ইয়া গোঁফওয়ালা পাগড়ি পরা লোকটা নেই। বাইরে সিআইএসএফ ঘরের চাবি আর আইডি চেক করছে। 

তাজ হোটেল ও বন্ধ কিন্তু কিছু ঘরে সাকুল্যে  ৫০জন মতো জরুরি পরিষেবার সাথে যুক্ত মানুষেরা আছেন। এই যেমন সাংবাদিক বা ডাক্তার বা আটকে পরা বিদেশি কূটনীতিক। এরা সব্বাই আলাদা আলাদা ব্লকে। কারা কারা আছে সেটা একে অপরে জানে কিন্তু কেউ কাউকে দেখতে পায় না। কেউ কারোর জন্য হাততালি দিতে পারেনা। পাছে জীবাণু ছোবল মারে। দেখার মধ্যে কয়েকজন তাজের স্টাফ। ওরা ও আমাদের মতো টানা ১৪দিন কাজ করে বাড়ি যাবে। দূরে দূরে বসে ওরা ও সুখের গল্প করছে, যা দরকার সাথে সাথে দিয়ে যাচ্ছে। ভয়ের গল্প করছে। এই ভয় তাজের সেই ব্রিটিশ ভূতের না। এই ভয় হোটেল শিল্পের মন্দা পরিস্থিতির। দেশে মন্দা চলছিলই, তার সাথে যুক্ত হলো লকডাউন। শ্রমিক তো সব্বাই, পেটে জ্বালা তো সবারই হয়। কারোর আগে কারোর পরে। কেউ গামছা গলায়, কেউ হোয়াইট কলারে। 

জুলিয়ান আসাঞ্জ এর কথা আসলেই ভাবতাম সে বন্দিদশা আর এমন কি? দূতাবাসে আলিশান জীবন। খাচ্ছে দাচ্ছে ব্লগ লিখছে। ওমার আবদুল্লাহর ও তো তাই। ধন্যবাদ তাজ স্বাধীনতার মানে উপলব্ধি করাবার জন্য। এসময় পাখিরা দিল্লিতে ফিরে এসেছে। এই চাণক্যপুরী অঞ্চলে তো আরো গাছ, সবুজ ঘাস। সাথে ঝকঝকে নীল আকাশ। 

এই সময় পাখিগুলোকে দেখে বড্ড হিংসে হচ্ছে। হিংসে হচ্ছে ওই কাঠবিড়ালিটাকে দেখে। ওকে কেউ বলে দেয়নি, ওই একটা গাছ থেকেই ওকে খুঁটে খেতে হবে। হিংসা তো তাদের জন্যও হচ্ছে যারা গরম ভাত আর ডিম সেদ্ধ মাখন দিয়ে খাচ্ছে নিজের ঘরে। ইচ্ছে তো হচ্ছে নিজের রান্নাঘরে ওই খুব সাধারণ কালচে কড়াইয়ে একটা ডিম ভাজতে। 

জাহাজ করে প্রথমবার সমুদ্র সফরের প্রথম আধ ঘন্টা যেমন দারুণ রোমাঞ্চকর আর তারপর যেদিকে তাকাও নীল জল, দিগন্ত বিস্মৃত নীলিমা, এই পাঁচ তারা হোটেলে বিচ্ছিন্নতা যাপন ও তাই। প্রথম তিনদিন দারুণ লাগে কিন্তু তারপর ঘরে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে, প্রিয়জনের সাথে বিকেলে কালো চা আর চালভাজা খেতে খেয়ে খবর দেখতে ইচ্ছে করে, ভুলে ফেলে আসা ওষুধের স্ট্রিপটা মনে পরে ফ্রিজের মাথায়, তারপাশে ফটোফ্রেম! 

আফগানিস্তানে বড় সাংবাদিক ছিল যে বন্ধুটা সে বেমালুম এসব চেপে গেছিল। ওর ও এসব হতো৷ ওর ও ভয় করতো ঘরের জন্য, ওর ও পাঁচ তারা হোটেলের এই দিগন্ত বিস্মৃত ঐশ্বর্য দেখে দেখে নতুন কিছু দেখতে ইচ্ছে করতো৷ ও বলেনি, আর প্রাচীন প্রবাদ মেনে আমি ভাবতাম নদীর এপার কহে ছাড়িয়ে নিশ্বাস....

স্বাধীনতা আর মুক্ত হওয়া যে কি বিশাল এক পাওনা, সেটা যতক্ষণ না কেউ আটকে পরছে উপলব্ধি করতে পারেনা। তাই হয়তো পরে পাওয়া চোদ্দ আনার মতো কিছু একটা অর্জিত স্বাধীনতাকে ভাবে। পাখিকে যতোই তুমি আখরোট খাওয়াও, সোনার খাচায়, রুপোর বাটিতে জল খাওয়াও, পাখি নীল আকাশে একদিন ঠিক পারি দেবে। রোজ ক্যালেন্ডার দেখবে, ডায়েরি লেখার পরে, তারপর একটা দীর্ঘ নিশ্বাস। আজ এখানেই শেষ। 

©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

আপনার সন্তান যেন থাকে দুধে- ভাতে: আপনার সাথে এ জিনিস যেন না ঘটে

.| আপনার সন্তান যেন থাকে দুধে- ভাতে: আপনার সাথে এ জিনিস যেন না ঘটে |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ 

ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি এরকম এক হৃদয়বিদারক ভিডিও পোস্ট করার জন্য৷ বিশ্বাস করুন আপনার দিনটা আমি খারাপ করে দিতে চাইনি, কিন্তু কি বলুন তো, দুমিনিটে ম্যাগি আর তিরিশ মিনিটে পিজার যুগে আমাদের সব হাতে গরম প্রমাণ চাই। আমি চোখের সামনে ইতালি বা আমেরিকার পুনরাবৃতি এ দেশে হচ্ছে দেখতে চাইনা। 

ডাক্তার শত্রুঘন পঞ্জওয়ানিকে আপনি চিনবেন না। ডা. পঞ্জওয়ানি শাহরুখ খান নয়। মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে উনি সাধারণ এক ডাক্তার ছিলেন। ছিলেন বলছি কারণ আজ উনি মারা গেছেন কোরোনা আক্রান্ত হয়ে। ফ্রন্টলাইনে যে ডাক্তারেরা কাজ করছেন তাদের মধ্যে প্রথম মৃত্যু। ভারতে প্রথম ডাক্তার যে চিকিৎসা করছিল, কোরোনা পজিটিভ ধরা পরে এবং মৃত্যু হয় ৬২ বছর বয়সে৷

ডা. পঞ্জওয়ানি বস্তি এলাকায় চিকিৎসা চালিয়ে যেতেন। নিম্নবর্গের মানুষকে কোরোনা সচেতন করতেন। অসুস্থ বোধ করার আগে অবধি তাই করে গেছিলেন। ডা. পঞ্জওয়ানির স্রী আর তিন ছেলে অস্ট্রেলিয়াতে আটকে পরেছিলেন লকডাউনের কারণে। এখন ও সেখানেই৷ অস্ট্রেলিয়ার জায়গায় মুম্বাই, দিল্লি, পুনে হলে ও আসতে পারতেন না। ঝরঝর করে কাঁদতে কাঁদতে ভিডিও কলের মাধ্যমে বাবার মৃতদেহকে দূর থেকে শেষ চুমু দিলো ছেলেরা। বাবার শরীর প্লাস্টিকের ব্যাগে রাখা হলো, মুখটা সামান্য সময়ের জন্য দেখতে দিলো প্রশাসন, ভ্যানে তুলে দেওয়া হলো তারপর। স্ত্রী তার দীর্ঘদিনের বন্ধুকে হারালো কিন্তু পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতো পারলো না শেষ যাত্রার আগে। ভগবান করুক এই মর্মান্তিক দৃশ্য যেন আপনাকে না দেখতে হয়। 

এরকম দৃশ্য হয়তো আপনাদের পাড়াতে ও দেখা যাবে এরপরে। হয়তো আপনাদের মধ্যে অনেকেই আটকে পরেছে বাইরে। স্বজনের দেহ ছুঁয়ে দেখতে পারবে না হয়তো।  
ডাক্তার শত্রুঘন পঞ্জওয়ানি বা তার মতো হাজার হাজার ফ্রন্টলাইনে লড়ছে যারা, সেই স্বাস্থ্য কর্মী, পুলিশ, জরুরি পরিষেবার সাথে যুক্ত মানুষে)পরা চেয়েছিল তাদের সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে। তারা ও বাড়ি ফিরে আসতে চেয়েছিল। পারেনি কিন্তু বিশ্বাস করুন এরা সব্বাই চায় আপনার সন্তান যেন থাকে দুধে। 

এরজন্য আপনাকে স্রেফ বাড়ি থাকতে হবে। আপনাকে ক্রমাগত সরকারগুলোকে চাপ দিতে হবে পিপিই, মাস্ক সহ সব স্বাচ্ছন্দ্যের প্রথম দাবিদার যেন জরুরি পরিষেবার সাথে যুক্ত মানুষেরা হয়। ওইটুকুই অনেকটা পরিবারের এনে দেবে সংখ্যায়। 

আমি চাইনি এই ভিডিওটি দেখাতে। পৃথিবীর কোন সন্তান, কোন বাবা, কোন ভাই চায়না এই সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করাতে কিন্তু আগামীকে সুরক্ষিত করতে এই ভিডিওটা দেখা দরকারি, লেখাটা পড়া জরুরি। 

©------ ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

ধর্মের দোহাই দিয়ে অশিক্ষাকে তোল্লাই দেবেন না, এতে মুসলমানদেরই পিছিয়ে দিচ্ছেন

.| ধর্মের দোহাই দিয়ে অশিক্ষাকে তোল্লাই দেবেন না, এতে মুসলমানদেরই পিছিয়ে দিচ্ছেন |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ 

এই ভিডিওটা আজকের। মানে শুক্কুরবারের। মানে লকডাউন উপেক্ষা করে মুর্শিদাবাদের কান্দি মহকুমা অন্তর্গত বড়ঞাঁ থানা এলাকায় একশোর উপরে মানুষ জড়ো হওয়ার। মানে অশিক্ষার। মানে এটা বিশ্বাস করা এবং করানোর যে প্রার্থনা করলে কোরোনা মহামারী থেকে বাঁচা যাবে। 

এই ভিডিওটা দেওয়ার সাথে সাথে একদল ফের ঝাপিয়ে পরবে পাল্টা কিছু ভিডিও দেখিয়ে ব্যালেন্স করানোর। এটা বোঝানোর যে ইসলামের সাথে এর কোন জোগ নেই। সত্যিই নেই। কোন ধর্ম কি অশিক্ষিত হয়ে থাকতে বলে? এতোটা গোঁড়া হয়ে থাকতে বলে? বলেনা। তাই মক্কা মদিনা ও বন্ধ। নামাজ পড়তে মসজিদমুখো হলেই তাই কাতার এ এক লক্ষ টাকা জরিমানা হচ্ছে। সৌদি রাজ পরিবারের প্রায় ১৫০জন কোরোনাতে আক্রান্ত। ইসলাম তো একে সমর্থন করছে না। তা হলে কি মৌলবাদ আর গোঁড়ামিকে সমর্থন দেওয়া হয়ে যাচ্ছে না?

আজকাল তবলীগ মৌলবাদী আর সুইসাইড বোম্বারের সাথে তুলনা করলেই অনেকে তেলে বেগুনে জ্বলে, অমুক সময় বলেন নি তো, তমুক সময় কোথায় ছিলেন, ইসলামোফোবিক শালা ইত্যাদি বলে দিচ্ছেন কিন্তু আবার বললাম, ভয়ে ভয়ে বললাম, ড্যানিয়েল পার্ল যেভাবে মরেছিল সেরকম পরিনতি হতে পারে ভেবে ও বললাম, ধর্মের দোহাই দিয়ে অশিক্ষাকে তোল্লাই দেবেন না, এতে ওই সম্প্রদায়কেই পিছিয়ে দিচ্ছেন। এতে আপনার ভোট বাড়ছে, কিন্তু সমাজ প্রাগৈতিহাসিকই থেকে যাবে। একটা সৈয়দ আহমেদ, একটা রামমোহন, একটা বিদ্যাসাগর আসুক। ভুলকে ভুল না বলতে পারলে আর কিসের মুক্ত হাওয়া! 

©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

তোমার মিনিবারের মুখোমুখি, অভুক্ত সৈন্যদল/ না খাওয়ার লড়াই।

.তোমার মিনিবারের মুখোমুখি, অভুক্ত সৈন্যদল/ না খাওয়ার লড়াই।

ছিপি খুললেই, ব্যাপক বিলিং,
একটা চালের ভুল/ কোথায় দাঁড়াই।

মদের ওপর মদের ব্র‍্যান্ড, ওষ্ঠ ছুঁতে চায়/
না খেয়ে খেয়ে, মুখের আয়না আদল লাগছে অসহায়।

তুমি লকডাউন শেষেই গ্লাসে বেঁধো গান।

এটাও তো অমানবিক এক অত্যাচার। মানবাধিকার কর্মীরা কই? কই? হিরের খনির মজুরের সামনে কোহিনূর, কুলিনান ডায়মন্ড রেখে দেওয়া হয়েছে। চ্যাংড়ামো? ধৈর্যের পরীক্ষা নেওয়া চলছে। খুললেই কোট পরা এক ভদ্রলোক টুংটাং পিয়ানোর কলিং বেল বাজিয়ে এক মাসের মাইনে সমান এক বিল ধরিয়ে যাবে। 

সব ইয়াদ রকখা যায়েগা! একবার শাটার উঠুক, একবার পৃথিবীর জ্বর সেরে যাক, আমি হোস পাইপ দিয়ে প্রতিক্রিয়াশীল এই চক্রান্তের মুখে মদ ছুঁড়ে মারবো৷ 

সব কা বদলা লেগা রে তেরা ফাইজল৷ 

©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

এটা "মোল্লারা" করেনি, পুলিশের হাত কেটে নেওয়া হলো, এটা ও শিরোনাম হোক |

| এটা "মোল্লারা" করেনি, পুলিশের হাত কেটে নেওয়া হলো, এটা ও শিরোনাম হোক |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ 

ঠিক যেই সময় আপনার মনে হচ্ছিল এরপর আপনার পাতলা পায়খানার জন্য ও 'মোল্লারা' দায়ী হবে, এই ভিডিওটি সামনে এলো। পাঞ্জাবের পাটিয়ালাতে এক পুলিশ অফিসারের হাত তলোয়ার দিয়ে কেটে দেওয়া হয়েছে। তার অপরাধ ছিল, কিছু মানুষ যারা লকডাউন উপেক্ষা করে রাস্তায় ঘোরাফেরা করছিল তাদের কাছে কারফিউ পাস চাওয়া। তাদের মধ্যে একজন গাড়ি না থামানোয় পুলিশেরা সেটা আটকাতে চেষ্টা করে, লাঠি মারতে থাকে গাড়ির উপরে। গাড়ি থেকে একজন নেমে এসে কোমড়ে গোজা তলোয়ার বের করে পুলিশের হাত কোপে মারে। হাতটা কেটে বেরিয়ে আসে।

এই অবধি পড়ে আপনার মনে হতে পারে, 'মোল্লা' ছাড়া আর কারাই বা এটা করবে। 'মোল্লা' মানে আপনার চোখে কারা? ওই তো যারা ফেজটুপি পরে, যারা লম্বা দাড়ি রাখে। আর শাহরুখ খান? সে ও তো দেশদ্রোহী কারো কারো চোখে। 

এই কান্ডটা পাঞ্জাবে নিহাং শিখেদের এক গোষ্ঠী ঘটিয়েছে। নিহাং বা আকালি শিখেদের আপনি দেখে থাকবেন। লম্বা পাগড়ি, লম্বা দাড়ি, নীল পোষাক, ইয়া লম্বা বল্লব নিয়ে ঘোরে৷ এনাদের মহিলা সদস্যরা ও পাগড়ি পরে। বীরেদের গোষ্ঠী, লড়াকু গোষ্ঠী হিসেবে সম্মানিত। 

এই যে কয়েকজন এই কান্ডটা ঘটালো, তার জন্য সব্বাই কি দোষী? ফতেহ সিংহের বলিদান মিথ্যে হয়ে যাবে? তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো খেলো হয়ে যাবে? আচ্ছা রাজ্যের শাসক দলের এক মন্ত্রী যে এই অবস্থাতে ও হনুমান পুজো করলো তাতে সমস্ত হিন্দুদের সমর্থন ছিল?

যারা উগ্র, যারা অশিক্ষিত, যারা গোঁড়া তারা যে ধর্মেরই হোক, তাদের একঘরে করুন, তাদের দ্ব্যর্থহীন ভাবে নিন্দা করুন। এটা করতে গিয়ে গোটা সম্প্রদায়টাকে দাগিয়ে দিলে হাতে থাকবে পেনসিল। সেই পেনসিল দিয়েই লিখে রাখতে পারেন, কি করে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলেন আপনার পাশের বাড়ির লোকগুলোকে, আপনার ওই ছেলেবেলার বন্ধুটাকে, আপনার উৎসবে যে অংশ নিতো আর তার উৎসবে যে আসতে বলতো, তাকে। যে দেশে সংখ্যালঘুরা এতো বছর পরে ও হীনমন্যতায় ভোগে, সে দেশে সংখ্যাগুরুদের ও দায়িত্ব নিতে হবে, প্রগতিশীল চিন্তাধারার সংখ্যালঘু মানুষকে সামনের সারিতে নিয়ে এসে তাদের ক্ষমতায়ন করার। তবেই তারা নিজের নিজের গোষ্ঠীর গোঁড়ামির বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারবে। আপনি হাত ছেড়ে দিলেই চাপাতি বা তলোয়ার দিয়ে ঘ্যাচাং। 

©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

তাজ প্যালেস, নয়া দিল্লি

রবিবার, এপ্রিল ১২, ২০২০
তাজ প্যালেস, নয়া দিল্লি

টাইমলাইনটাকে আইডি হাসপাতাল বানিয়ে ফেলতে হবে, এরকমটা কেউ বলেছে নাকি? মনকে ফুরফুরে না রাখলে আর কাহে কা সর্বাত্মক লকডাউন সফল? ফূর্তিতে থাকুন। হাকুনামাটাটা! No Worries! সব্বাই মিলে যাই আসুক না কেন ঠিক সামলে নেবো! 

হাকুনামাটাটার কথায় মনে পরলো, টাটার এই সিংহহৃদয় আতিথিয়েতা ছেড়ে তাজকে আজ আশা করি টাটা বলতে পারবো। 

প্রায় মেরে এনেছি। আশাকরি পরের পোস্ট নিজের ঘরে ল্যাদ খেতে খেতেই লিখতে পারবো।

Wednesday, May 27, 2020

ওঠো

| ওঠো |

#অণুগল্পহলেওসত্যি

--- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ 

"ওঠো ওঠো মা ওঠো" একরত্তি বাচ্চাটা ঘুমন্ত মায়ের চারপাশে খালি এটা বলতে বলতে খেলছিল। মাঝে মাঝে মায়ের শরীরের উপরে উঠে পরছিল। মা উঠছে না। 

দুই সন্তানকে নিয়ে পরিযায়ী শ্রমিক মা শ্রমিক এক্সপ্রেস করে গুজরাট থেকে বিহারের কাটিহার ফিরছিল। শ্রমিক এক্সপ্রেস কি আর বুলেট ট্রেন? ট্রেন তো দিয়েছে কিন্তু না আছে জল না আছে খাবার। ব্লাউজের খাঁজে যে টাকা টা ছিল সেটা ও তো কবেই শেষ৷ ৪৪ডিগ্রি গরমে, তৃষ্ণায়, হাঁটতে হাঁটতে স্টেশন পৌঁছনোর ক্লান্তিতে মা মুফাফফরপুর প্ল্যাটফর্মে নেমে জলের সন্ধান করতে গিয়ে শুয়ে পরে। চিরনিদ্রায়। রিপোর্ট বলে হিট স্ট্রোক। ব্যাস!

মায়ের দেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মানুষ কাল ভুলে যাবে। "ওঠো ওঠো, ওঠো না ওঠো" একরত্তি বাচ্চাটা খালি আমার পাশে আমাকে ধাক্কা দিচ্ছে। ও এখান এলো কি করে? আমি এখনো উঠছি না কেন? অবস হয়ে যাচ্ছে কেন চারপাশ.....

©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

Sunday, May 24, 2020

এটা "মোল্লারা" করেনি, পুলিশের হাত কেটে নেওয়া হলো, এটা ও শিরোনাম হোক

| এটা "মোল্লারা" করেনি, পুলিশের হাত কেটে নেওয়া হলো, এটা ও শিরোনাম হোক |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ 

ঠিক যেই সময় আপনার মনে হচ্ছিল এরপর আপনার পাতলা পায়খানার জন্য ও 'মোল্লারা' দায়ী হবে, এই ভিডিওটি সামনে এলো। পাঞ্জাবের পাটিয়ালাতে এক পুলিশ অফিসারের হাত তলোয়ার দিয়ে কেটে দেওয়া হয়েছে। তার অপরাধ ছিল, কিছু মানুষ যারা লকডাউন উপেক্ষা করে রাস্তায় ঘোরাফেরা করছিল তাদের কাছে কারফিউ পাস চাওয়া। তাদের মধ্যে একজন গাড়ি না থামানোয় পুলিশেরা সেটা আটকাতে চেষ্টা করে, লাঠি মারতে থাকে গাড়ির উপরে। গাড়ি থেকে একজন নেমে এসে কোমড়ে গোজা তলোয়ার বের করে পুলিশের হাত কোপে মারে। হাতটা কেটে বেরিয়ে আসে।

এই অবধি পড়ে আপনার মনে হতে পারে, 'মোল্লা' ছাড়া আর কারাই বা এটা করবে। 'মোল্লা' মানে আপনার চোখে কারা? ওই তো যারা ফেজটুপি পরে, যারা লম্বা দাড়ি রাখে। আর শাহরুখ খান? সে ও তো দেশদ্রোহী কারো কারো চোখে। 

এই কান্ডটা পাঞ্জাবে নিহাং শিখেদের এক গোষ্ঠী ঘটিয়েছে। নিহাং বা আকালি শিখেদের আপনি দেখে থাকবেন। লম্বা পাগড়ি, লম্বা দাড়ি, নীল পোষাক, ইয়া লম্বা বল্লব নিয়ে ঘোরে৷ এনাদের মহিলা সদস্যরা ও পাগড়ি পরে। বীরেদের গোষ্ঠী, লড়াকু গোষ্ঠী হিসেবে সম্মানিত। 

এই যে কয়েকজন এই কান্ডটা ঘটালো, তার জন্য সব্বাই কি দোষী? ফতেহ সিংহের বলিদান মিথ্যে হয়ে যাবে? তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো খেলো হয়ে যাবে? আচ্ছা রাজ্যের শাসক দলের এক মন্ত্রী যে এই অবস্থাতে ও হনুমান পুজো করলো তাতে সমস্ত হিন্দুদের সমর্থন ছিল?

যারা উগ্র, যারা অশিক্ষিত, যারা গোঁড়া তারা যে ধর্মেরই হোক, তাদের একঘরে করুন, তাদের দ্ব্যর্থহীন ভাবে নিন্দা করুন। এটা করতে গিয়ে গোটা সম্প্রদায়টাকে দাগিয়ে দিলে হাতে থাকবে পেনসিল। সেই পেনসিল দিয়েই লিখে রাখতে পারেন, কি করে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলেন আপনার পাশের বাড়ির লোকগুলোকে, আপনার ওই ছেলেবেলার বন্ধুটাকে, আপনার উৎসবে যে অংশ নিতো আর তার উৎসবে যে আসতে বলতো, তাকে। যে দেশে সংখ্যালঘুরা এতো বছর পরে ও হীনমন্যতায় ভোগে, সে দেশে সংখ্যাগুরুদের ও দায়িত্ব নিতে হবে, প্রগতিশীল চিন্তাধারার সংখ্যালঘু মানুষকে সামনের সারিতে নিয়ে এসে তাদের ক্ষমতায়ন করার। তবেই তারা নিজের নিজের গোষ্ঠীর গোঁড়ামির বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারবে। আপনি হাত ছেড়ে দিলেই চাপাতি বা তলোয়ার দিয়ে ঘ্যাচাং। 

©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

মুম্বাই মাঝি জান আহে

| মুম্বাই মাঝি জান আহে ❤ |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ 

মুম্বাইয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ১০০ ছাড়ালো। ১৫০০ জন আক্রান্ত। ধুর! এতো সহজে ভেঙে পরবে মুম্বাই? সেই শহর যার ধর্মই হলো জীবনকে উদযাপন করা? যে সিরিয়াল ব্লাস্ট এর পরের দিন ফের গমগম করে, অফিস দোকান আর পাঁচটা দিনের মতোই খুলে যায় সন্ত্রাস হামলার পরে, বন্যা হলে যেখানে বিশাল বিশাল অফিসগুলো খুলে দেওয়া হয় আর দোকানদার নিজের দোকানে স্টক করা বিস্কুট আর জলের বোতলগুলো অকাতরে বিলিয়ে দেয় অফিস যাত্রীদের, গাড়ি ঘোড়া না পেয়ে আটকে গেলে যাতে তারা জল আর বিস্কুট খেয়ে নিতে পারে।

যখনই মুম্বাইকে প্রতিকূলতার মুখে দাঁড় করানো হয়, মুম্বাই তার সুপারহিরোদের ডেনে আনে। সাধারণ দেখতে সব মানুষরা Avengers এর মতো দাঁড়িয়ে পরে শত্রুর সামনে। জ্যায়সে ফিলমো মে হোতা হে! প্রেমিকাকে আগলে নায়কের মতো দাঁড়িয়ে পরে মুম্বাইকাররা।

সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারেরা ২০ ঘন্টা কাজ করছে বলে তাজ হোটেল রোজ তাদের খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছে। ওদিকে শিবাজী পার্ক এলাকার শ্মশানে যারা রোজ কোরনায় মৃত মানুষদের চুল্লিতে পোড়াচ্ছেন তাদের জন্য খাবার যাচ্ছে আশেপাশের তথাকথিত সম্ভ্রান্ত সব বাড়ি থেকে। পুলিশ রোজ ভাবছে সে কাল ছুটি পাবে, বাড়ি ফিরে সন্তানের মুখ দেখবে কিন্তু রোজ আরো জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে। এক অদৃশ্য শত্রুর সাথে লড়তে জান লড়িয়ে দিচ্ছে। এ যেন ২৬/১১ র থেকে ও ভয়াবহ এক পরিস্থিতি।

মুম্বাইয়ে প্রতি দুমিনিটে একটা করে লোকাল ট্রেন চলে। পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ ও জটিল রেল নেটওয়ার্ক। প্রতিটা কামরার প্রতিটি হ্যান্ডেল, সিট পরিস্কার করে গেছে এক ডজন ছেলে৷ তারপর নিজেরা অসুস্থ হয়ে পরেছে। এখন ট্রেন চলছে না কিন্তু রেলের আধিকারিকরা রোজ অফিসে বসে হাজার হাজার এক্সপ্রেস ট্রেনের দিস্তে দিস্তে রিজার্ভড কামরার  লাখ লাখ যাত্রীর খোঁজার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এরা সবাই সংক্রমণের শিকার হতে পারে। এদের মাঝেই একাধিক পজিটিভ রোগী যাত্রা করেছে।

এশিয়ার সবচেয়ে বড় জনবসতি ধারাভি ও আক্রান্ত। এক একটা দেশলাই বাক্সের মতো ঘরে বিশ তিরিশজন শুতে আসে স্রেফ৷ প্রতি দু পা হাঁটলে পঞ্চাশটা মানুষের ধাক্কা লাগে। ট্রাম্প বা পুতিন ও হয়তো পাগল হয়ে যেত এর পরিনতি ভেবে। কিন্তু বালাসাহেব ঠাকরের ছেলে, উদ্ধব ঠাকরে ভয় পায়নি। যা হবে দেখা যাবে বলে গোটা প্রশাসনকে নিয়ে নেমে পরেছে মাঠে। সন্ত্রাস হামলার পরে যেভাবে মুম্বাই প্রশাসন লড়াই করে সেভাবে ঝাপিয়ে পরেছে। টেস্ট টেস্ট টেস্ট। পাগলের মতো সন্দিগ্ধ মানুষ খুঁজে টেস্ট চলছে। টাকা কম পরলে ফোন যাচ্ছে জাঁদরেল লোকেদের বাংলোতে। টাকা ছাড়ুন।

মুম্বাই একটি স্বপ্নের নাম। এখানে রোজ একটা করে সাফল্যের গল্প লেখা হয়৷ এখানে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের ২০% থাকে। বিশাল বিশাল ইমারত, চোখধাঁধানো তারকা গলি। আবার এখানেই স্রেফ পদপৃষ্ঠ হয়ে মানুষ মারা যায়। রাস্তার খোলা ম্যানহোলে ভেসে যায় লোক। গুলি খায় বিয়ারে চুমুক খেতে খেতে কোন পাবে।

কিন্তু বিশ্বাস করুন, এবার ও মুম্বাই বেঁচে যাবে। ফের এক দন্ড দাঁড়ানোর সুযোগ পাবে না। ফের গমগম করবে দিন আর রাত। কেন জানেন? 

কারণ মুম্বাইয়ে সব্বাই শহরটাকে নিজের প্রেমিকা মনে করে। রীতিমতো প্রতিযোগিতা করে ভালোবাসা জাহির করতে। এক সপ্তাহ হলো যে ছেলেটা সদ্য ট্রেন থেকে নেমেছে সে, বিহার থেকে ট্যাক্সি চালাতে এসেছে সে, তালি বাজিয়ে সিগনালে সিগনালে টাকা তোলে সে, বাদশা বলে ডাকা হয় যাকে সে, মুম্বাইয়ের রাজা বলা হয় যাকে সে, ডোংরির ডন ছিল যে সে। এরা না না রাজ্যের থেকে এসে, না না ভাষাভাষী হয়ে ও প্রেমিকাকে নিয়ে বলার সময় স্রেফ একটাই লাইন বলে - মুম্বাই মাঝি জান আহে। হিন্দি করলে, মুম্বাই মেরি জান। 

©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

পয়লা বৈশাখে কথা দিচ্ছি

| পয়লা বৈশাখে কথা দিচ্ছি |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

কথা দিচ্ছি, নব বর্ষে আর তোমায় অবহেলা করবো না। আর স্রেফ এক আধদিন তোমায় উদযাপন করে বাকি দিনগুলো আলমারির মাথায় বা চিলেকোঠার ঘরে অযত্নে রেখে দেবো না। কথা দিচ্ছি। 

কথা দিচ্ছি পৃথিবীর অসুখ সেরে গেলে আমি অনলাইনে ওষুধ, ডিজিটাল মুদিখানা ছেড়ে নতুন কাপড়-জামা পরে পাড়ার শংকর কাকুর দোকানেই ফিরবো। দোকানের দরজার মাথায় কচি আম পাতার শুভ প্রতীক। শংকর কাকুর দেওয়া মিইয়ে যাওয়া কচুরি আর খুব মিষ্টি সন্দেশই তৃপ্তি করে খাবো। প্রমিস করছি সেভেন আপ আর হালখাতাতেই ফিরবো৷ অনেক হলো ডিজিটাল সবকিছু। এবার ফের হালখাতায় পুরনো মোহরের ছাপ তুলে লক্ষ্মী-গণেশের নবকলেবর প্রতিষ্ঠা করবো। 

কথা দিচ্ছি পৃথিবীর অসুখ সেরে গেলে, আমরা ফের শৈশবে ফিরে যাবো। পয়লা বৈশাখের সকালে লুচি আর সাদা আলুর তরকারি,নাড়ু,খই, মুড়ি-মুড়কি, বাতাসা, গজা, জিলিপি খেয়ে, সব ভাই বোনেরা মিলে কানামাছি, দাড়িয়াবান্দা, ডুডু, চু-কিৎকিৎ-ছুট খেলবো। 

কথা দিচ্ছি বেঁচে ফিরলে গোলাপ, লিলি, ক্রিসেন্থেমাম না বরং ভাঁটফুল, কাঠগোলাপের বন আর বেতসলতার ঝোপে ফিরবো৷ কাঁটা ফল ছুঁড়ে মারবো বন্ধুর জামায়, বান্ধবীর চুলে গেঁথে দেবো কাঁটা ফলের গুচ্ছ। ও রাগত চোখে তাকিয়ে হেসে ফেলবে। তারপর এক এক করে ওর চুল থেকে কাঁটা বেছে ফেলবো। কথা দিচ্ছি এবার স্লথ গতিতে ভালোবাসবো। চুমু গুলো দীর্ঘ হবে। 

কথা দিচ্ছি জ্বরের শেষে সূর্য ধোয়া ঘর আজকের দিনে গোবরের ছিটে দিয়ে পবিত্র করবো দিদা যেভাবে করতো, মায়ের মতো আলপনা দেবো অনেকক্ষণ ধরে। গোছা গোছা নিমপাতা ঝোলাবো দরজায়, গলা ছেড়ে গান গাইবো। প্রমিস করছি এসব শেষ হলে গ্রামের মাটির গন্ধ বুক ভরে নেবো কালবৈশাখী বিকেলে। নাগরদোলা, জাদু, পুতুলনাচ, বায়োস্কোপ, মোরগের লড়াই বসাবো কোন প্রত্যন্ত অঞ্চলে। প্রমিস করছি সন্ধে নামার আগে তোমার ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁয়ে দেবো। পৃথিবীর অসুখ সেরে যাক। আমাদের দূরত্ব মিটুক।

কথা দিচ্ছি আর নাট সেঁটকাবো না সপ্তপদের গিমাশাক, সর্ষেশাক, হলুদপাতা, পাটশাক, কলমিশাক, থানকুনিপাতা, নিমপাতা পাতে পরেছে দেখে।

কথা দিচ্ছি নতুন আইফোন না কিনতে পারার মনখারাপ আর হবে না। বরং মেলা থেকে  টিনের জাহাজটা দশটাকা বেশী দিয়ে কিনেছি বলে আপশোশ হবে। ওই দশটাকা দিয়ে দুটো বুড়ির চুল কেনা যেত। প্লাস্টিকের বিভিন্ন বাঁশি কিনতে পারতাম। চাপ দিলে ফুত ফুত আওয়াজ হতো। আমার শৈশব শুনতে পেতো ওই ধ্বনি। 

বেয়াদব নেওটা বেড়ালছানার মতো স্মৃতি বারবার এসে গায়ে গা ঘষে দিচ্ছে। রুদ্ধ জীবনের এসব বৈশাখ তীব্র দাবদাহ শেষে ঝড় বৃষ্টির মতো। এসব সময় জানালা হুট করে খুলে যায়। উঁকি মেরে ফের ফেলা আসা সবটা দেখতে ইচ্ছে করে। অনেক তো দৌড় ঝাপ হলো। কোরোনা তো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো। অর্থ, ক্ষমতা, সিঁড়ি দিয়ে উপরে ওঠা ক্ষনিকের। দুম করে একদিন চলে যেতে হবে। কথা দিচ্ছি পৃথিবীর অসুখ সেরে গেলে আর অবহেলা করবো না আমাদের আশেপাশের মানুষকে। মানুষের ঘরবাড়িকে, বন্ধুকে, ছোট ছোট বাঁচার মুহুর্ত আর কারণগুলোকে। কথা দিচ্ছি।

©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

হাজারে হাজারে পরিযায়ী শ্রমিক রাস্তায় নেমেছে: খেতে দে, কাজ দে শালা

| হাজারে হাজারে পরিযায়ী শ্রমিক রাস্তায় নেমেছে: খেতে দে, কাজ দে শালা |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ 

“গাঁড় মারি তোর মোটরগাড়ির, গাঁড় মারি তোর শপিং মলের।
বুঝবি যখন আসবে তেড়ে, ন্যাংটো মজুর সাবান কলের।
পেটমোটাদের ফাটবে খুলি,ফাটবে মাইন চতুর্দিকে।
গলায় ফিতে নেংটি বেড়াল, তার বরাতেই ছিঁড়বে শিকে।” --- নবারুণ ভট্টাচার্য 

ফ্যাতাড়ুরা রাস্তায় ফ্যাত ফ্যাত সাঁই সাঁই করছে। বোম্বাই এটা। বান্দ্রা স্টেশনের সামনে। কলার চেপে পুলিশকে বলছে, আমাকে বাড়ি ফিরে যেতে হবে। বাড়ি ফিরতে হবে। গ্রামে ফিরতে হবে। গ্রামে কাজ নেই, চাল নেই, দুমুঠো ভাত নেই। 

এরা হয়তো কেউ মুসলমান, কেউ হিন্দু, কেউ দলিত, কেউ ব্রাহ্মণ কিন্তু এদের সব্বার পরিচয় এরা শ্রমিক। শ্রমিক হয়ে শহরে এসেছিল। তোমার পেটমোটা শপিং মল, সৌখিন বাংলোটা বানিয়েছিল৷ তুমি বলেছিলে এদের কিচ্ছু হবে না। কিন্তু তারপর আদানি আর আম্বানির জন্যই সবটা পায়েস রেখে এদের থালায় দুহাতা গু ঢেলে দিয়েছিলে। 

ফ্যাতাড়ুরা ক্ষেপে গেলে কিন্তু আপনার ধর্ম-ধর্ম খেলা গোটাটা গিলে খেয়ে নিতে পারে। আপনার জাতের নামে বজ্জাতির টুঁটি চেপে ধরতে পারে। দুমদাম ময়লাজল ঢেলে দিতে পারে আপনার রাষ্ট্রীয় ভদ্রতায়। খালি পেটে, হাতে কাজ না থাকলে আবার সৌজন্য কি? ভয় পান। ফ্যাতাড়ুগুলোকে ভয় পান। 

ওরা হাঁটতে হাঁটতে ঘরে ফেরা অবধি সুরক্ষিত আপনি। ওরা খাদ্যসঙ্কট অনুভব করার আগে অবধি সুরক্ষিত আপনি। ওরা নিজের হিসেব বুঝে নেওয়ার আগে অবধি সুরক্ষিত আপনি, ওরা অ্যানার্কি না করা অবধি আপনার ঘর সুরক্ষিত, আপনার ড্রইংরুমে স্টক করে রাখা স্কচগুলো সুরক্ষিত, আপনি, আপনার পরিবার সুরক্ষিত। 

ব্লেডের উপর দিয়ে টানা হেঁটে হেঁটে ওরা শিকড়ে ফিরতে চাইছে, ফিরে আপনার মতোই ওর সদ্যোজাত মেয়েটার মুখটা দেখতে চায়। স্রেফ ওইটুকুর ব্যবস্থা করে দিন এখন। একটা প্লেন না, বিদেশ মন্ত্রকের অনুমোদন না, রাষ্ট্রনেতাদের সহানুভূতি না, কয়েকটি বাস মহানগর থেকে কোন জেলায় পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে নিয়ে যাবে, স্রেফ একটা ট্রেন গাঁও এর ওই ইস্টিশনে থামবে - রাষ্ট্র থেকে স্রেফ এইটুকুই চাইছে। কলার চেপে ভাত, পরিশ্রুত পানীয় জল, বিনামূল্যে চিকিৎসা, মাথার উপর ছাদ, চাকরির নিরপত্তা দাবী করেনি। আমাদের এখনো ঘর পোড়েনি। আমরা সুরক্ষিত, আমরা ফেসবুক করছি সেল্ফ- কোয়ারেন্টিনে। 

©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

সব ইয়াদ রকখা জায়েগা

| সব ইয়াদ রকখা জায়েগা |

--- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

'এরা জানে না কোথায় গেলে মানুষের, সমাজের পারিশ্রমিকের মতন নির্দিষ্ট কোনো শ্রমের বিধান পাওয়া যাবে। জানে না কোথায় গেলে জল তেল খাদ্য পাওয়া যাবে/ অথবা কোথায় মুক্ত পরিচ্ছন্ন বাতাসের সিন্ধুতীর আছে।' -- জীবনানন্দ দাশ

বিগত ২১ দিন পাগলের মতো দেশের প্রায় ছয় লাখ পরিযায়ী শ্রমিক যা নয় তাই করছে। এ মাথা থেকে ও মাথা ছুটে যাচ্ছে। এক কাপড়ে বেরিয়ে আসছে বাস ধরতে, লাঠির ঘা খেয়ে কেঁদে ফেলছে বা লাঠিটা কেড়ে নিয়ে দু ঘা বসিয়ে জেলে যাচ্ছে।কখনো ২০০ কিলোমিটার হাঁটার পণ করে মাঝরাস্তায় অসুস্থ হয়ে মারা যাচ্ছে বা রাতের পর রাত হাইওয়ে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ট্রাকের তলায় পিশে যাচ্ছে। 

কখনো ভয়ংকর মারামারি করেছেন পচা কলার খোসার স্তুপে আগে পৌঁছোবেন বলে? তন্নতন্ন করে খুঁজে আধখাওয়া কলা খাবেন বলে? কখনো এরকম মারামারিতে হেরে গিয়ে সবার শেষে পৌঁছে পচা কলার খোসা চিবিয়ে চিবিয়ে খেয়েছেন? লকডাউনে পরিযায়ী শ্রমিকের মতো জীবনযাপন করার সাহস দেখিয়েছেন কখনো? ওরা ঠিক এভাবেই দিন কাটাচ্ছে। কাজ নেই, শোবার জায়গা নেই, গ্রামে টাকা না পাঠানোর গ্লানি আর এক আকাশ রাগ নিয়ে ওরা আপনার চারপাশে ঘুরছে। আপনি বারুদের গন্ধ পাচ্ছেন না?

চারদিকে নর্দমার জল, মাছি ভন ভন করছে, খালের পাশে গামছা পেতে শ'য়ে শ'য়ে শ্রমিক শুয়ে। কোথায় সোশ্যাল ডিস্টানসিং? ওসব তো বিলাসিতা এই ভারতে যেখানে দুবেলা খাবার পেতে লড়তে হয়, কাজ পেতে লড়তে হয়, রাতে শোবার দু ফিট জায়গার জন্য লড়তে হয়। এ বড় কথা কঠিন সময়। পাল্টা মারলে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেওয়া হচ্ছে অশান্তিকারী বলে। 'বড়লোকের গাড়ির টায়ার/ ফুটো করে লাগাও ফায়ার/ নজরটুকু রাখবে যেন/ আঁচটুকু না লাগে আয়ার’- র মতো কবিতা মারালে বলা হচ্ছে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষরযন্ত্র করছে। 

সব ইয়াদ রকখা জায়েগা। এই অপমানগুলো, এই অবহেলা গুলো, কৃষকের আত্মহত্যার মতো শ্রমিকের দুর্দশার দাস্তাঁ গুলো ভুলিয়ে দেওয়ার ফন্দিগুলো।

‘যতই তাকাও আড়ে আড়ে, হঠাৎ এসে ঢুকবে গাঁড়ে/ বাম্বু-ভিলার রেকটোকিলার গাঁটপাকানো বাঁশ/ আজ্ঞাবহ দাসবাবাজি আজ্ঞাবহ দাস’। কবির ভাষাতেই ফের সতর্ক করলাম। এই যে অশ্লীলতাটা হচ্ছে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে, এই যে কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে ভাবছেন আপনি তো সুরক্ষিত আপনার উঁচু ফ্ল্যাটবাড়িতে, মাথায় রাখবেন এই শ্রমিক, ওই কৃষকেরা একবার হুলুস্থুল শুরু করলে কিন্তু আপনার সাধের সাম্রাজ্যের গোটাটা উপরে খাবে নর্দমার পাশে শুচ্ছে যে নেংটো মজুরেরা। 

©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

একদিন ছোট ছোট ফ্রেমগুলো মিলিয়ে যাবে এক বিশাল উষ্ণতার ক্যানভাসে

| একদিন ছোট ছোট ফ্রেমগুলো মিলিয়ে যাবে এক বিশাল উষ্ণতার ক্যানভাসে |

----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

কলকাতা টু মুর্শিদাবাদ টু নয়ডা টু দিল্লি! 

মা ও বোন কলকাতার বাড়িতে। বাবা মুর্শিদাবাদে সরকারি হাসপাতালে অন ডিউটি এখনো। স্ত্রী নয়ডার ফ্ল্যাটে একা আর আমি দিল্লির একটি হোটেলে। এখান থেকেই অফিস করছিলাম। 

এবার বাড়ি যাবো। মানে দিল্লি থেকে নয়ডা। মানে চারটে ফ্রেম তিনটে হবে। মহামারির মৃত্যু হলে, ট্রেন গাড়ি চলতে শুরু করলে ডাক্তারেরা ও ঘরে ফিরবে। মুর্শিদাবাদ টু কলকাতা। তখন তিনট ফ্রেম দুটো হবে। 

একটু একটু করে দূরত্ব মিটবে! এক ছুটে বাড়ি ফিরতে না পারার অসহায়তা নিপাত যাবে! কোরোনা শেষ হলে এই হাসিমুখ গুলোই মনে থাকবে।একদিন ছোট ছোট ফ্রেমগুলো মিলিয়ে যাবে এক বিশাল উষ্ণতার ক্যানভাসে। পৃথিবীর অসুখ সেরে গেলে আমরা সব্বাই এক ফ্রেমে সেলফি নেবো! এভাবেই সব্বার চারটে থেকে একটা ফ্রেমে সবাই একসাথে ছবি তোলা দূর নেহি। দম রাখুন। 

লড়তে থাকুন।

আমরা তো এমনি এমনি মরি

| আমরা তো এমনি এমনি মরি |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ 

হরিপদ কেরানি রোজ বাজারে যেত। সেদিন ও গেছিল। এমনি এমনি মানুষ বাজারে যায়। বাজার হয়ে গেলে আড্ডা মারে না, বাড়ি চলে যায়। সেদিন দুম করে ভুষি সামগ্রী দিয়ে বানানো ফ্লাইওভারটা ভেঙে পরলো হরিপদ কেরানির মাথায়।জ্যোতিষী শ্রীঋভু ওকে বলেছিল ও ৯৯ বছরে আউট হবে কিন্তু হরিপদ কেরানি এমনি এমনি মরে গেল ৫৯ এ৷ লোকে জানলো দুর্ঘটনায় সে মারা গেছে। ফ্লাইওভার এমনি এমনি ভেঙে পরে এখানে। গাছের পাতা যে ভাবে ঝড়ে পরে সেরকম। 

চোমু সিংহ জ্বর, হাঁচি-কাশি নিয়ে হাসপাতালে এলেন। তারপর হাঁপ উঠে এমনি এমনি মারা গেলেন পাঁচ দিন পরে। জানা গেল চোমু সিংহের কুচকিতে একটা ফোঁড়া ছিল। ডেডলি ফোঁড়া। আমের মতো টুসটুসে, লিচুর মতো ডাগর৷ যেদিন চোমু মারা যায়, সেদিন ওই ফোঁড়া ও ফাটে৷ কয়েকজন সিস্টার নাকি শুনতে ও পায় ও শব্দ। অর্থাৎ ধরে নিতে হবে ফোঁড়া ফেটে অম্বল মাথায় উঠে জ্বরের মধ্যে উনি পরলোকগমন করেছেন। জ্বরের জন্য না।

যাদের আগে থেকেই হাজা ছিল, হাঁপানি ছিল, বোগলে গন্ধ ছিল, তারা যদি জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় তবে কি সেটা জ্বরের জন্য না ওই হাজা, হাঁপানি, বোগলের গন্ধের জন্য৷ এমনি এমনি সব দোষ জ্বরকে দিলে চলবে? জ্বর আজ হয়েছে। ৩৪ বছর ধরে ওর হাজা৷ খঁচ খঁচ আওয়াজ ও হতো। এমনি এমনি কুৎসা করলেই হলো?

যে লোকটাকে চুপিচুপি চুল্লিতে ঢুকিয়ে দিতে হলো, জানেন তার পাদের ইতিহাস? এক পাদেই পাড়া কাঁপিয়ে দিতো৷ তা সে যদি হঠাৎ এমনি এমনি মারা যায় কয়েকদিন ভুগে, সেটা কি জ্বরের জন্য না পাদের গন্ধের জন্য?

এমনি এমনিই কতো লোক মরে রোজ। ওই যে পরিযায়ী শ্রমিক মাঝরাতে গাড়ি চাপা পরে মারা গেল হাঁটতে হাঁটতে, সে ও তো এমনি এমনি মরলো। হাঁটতে কে বলেছিল রাতে? আর ডাক্তারগুলো যারা স্যাটাস্যাট সংক্রমিত হচ্ছে তারা ও এমনি এমনি হচ্ছে। শিবঠাকুরের আপন দেশে এমন দেবো কেস,  বাঁকিয়ে দেবো ফেস! ব্যাঁকা মুখ নিয়ে ফের যদি কন্সপিরেসি থিয়োরি খোঁজো, এমনি এমনি জেলে যাবে। তেনাদের ধৈর্যের টেস্ট করো না!

ইশ! আবার, আবার টেস্ট, করো, না পাশাপাশি বসিয়ে দিলাম। কেলেংকারি কেস৷ এবার কুকুর, মেকুর, ফেউ, ফেকুর সব লেলিয়ে দেওয়া হবে। মিথ্যাচার আর কুৎসা করছি বলে দেওয়া হবে। এমনি এমনি কেউ টেস্ট করে নাকি সবার? হালুয়া নাকি? টেস্ট টেস্ট আর শুধু টেস্ট করে কে কবে মাধ্যমিকে প্রথম হয়েছে শুনি? রায় ও মার্টিন এর প্রশ্ন বিচিত্রাতে এর উত্তর আছে? 

তারচেয়ে 'সংস্কিতি' হোক। হালকা খোকোখেলা, মেলাধুলা, মেগাসিরিয়াল, ফুটপাতে মেলোড্রামা হোক। ঝ্যাকাঝ্যাক ফটো উঠুক৷ এমনি এমনি ভয় পেলে পাড়ার দোকান থেকে মিষ্টি খাইয়ে দেওয়া হোক। জ্বর এলে চুপিচুপি আইসোলেশন ওয়ার্ড আর যম এলে গভীর রাতে 'সালটে' দেওয়া হোক৷ সব কিছুর পিছনে কি কারণ থাকে?

দেরি 'করো না'। বরং এমনি এমনি টেস্ট টেস্ট আর টেস্ট করাও। এদিক ওদিক এমনি এমনি হরলিক্স খাওয়ার মতো এমনি এমনি লোক মরে যায়? শালা ফেলু, ব্যোমকেশ তদন্ত করে দেখুক। ওরা ও অজানা জ্বরে আক্রান্ত নাকি? 

©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

কলকাতাকে লেখা চিঠি

| কলকাতাকে লেখা চিঠি ❤ |

----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

ভাত আর আলুপোস্তা খেয়ে, অখ্যাত কোন কবির কবিতা পড়তে পড়তে জিরিয়ে নাও বইপাড়া। ঘুম ভাঙলে আমি ঠিক ফিরবো তোমার কাছে কোন পান্ডুলিপি নিয়ে। কবি ফিরবে প্রকাশকের কাছে পাওনা বুঝে নিতে। অক্ষর ফিরবে ছাপাখানায়। 

বিশ্রাম নাও মহানগরীর রাজপথ। গাড়ি, ঘোড়া, মিনিবাস বুকে জেগে থেকেছো এতোকাল। নিয়ন বাতি ক্ষত চিনিয়ে দিয়েছে  রোজ কিন্তু আমরা দৌড়ে গেছি, লাফিয়ে বাসে উঠেছি, পা পিছলে এ শহরেই মারা গেছি অঘটন ঘটিয়ে।জীবনানন্দ জানে। রক্তদাগ, গ্লানি, পেট্রোল লিক হয়ে চাপ চাপ পোড়া গন্ধ এই সুযোগে জামা থেকে ধুয়ে নাও দ্বিতীয় হুগলি ব্রিজ। আমি সুসজ্জিত তোমাতে ফিরবো। 

আমি ফিরবো মহামারী শেষে, দক্ষিনাপনের
ফুচকা স্টলে, ডালহৌসির ওই রাস্তার চাউমিনে, সেক্টর ফাইভের পাশে ফের গাড়ি দাঁড় করিয়ে দুজনে দুদন্ড প্রেম করবো অফিস ফেরত। আমি বরাবরের মতো আবার ও এক ঘন্টা অপেক্ষা করবো মেট্রো চ্যানেলের মুখে, তুমি ফের দেরি করো।

প্রিয় ময়দান, শেকড় বাকড় বাড়তে দাও নিজের, এই যে সময়টা পেলে৷ আচ্ছা ভিক্টোরিয়ার ওই পরীর গায়ে গাছ গাছালি পৌছবে তোমার? ফের ব্রিগেডের ধুসর সবুজে ঢেকে দিতে পারবে? রেডরোডে শ্যাওলা জমাতে পারবে? এ কদিন প্রকৃতি কুচকাওয়াজ করুক একের পর এক কংক্রিট দখলের অহংকারে।

পায়ের কাছে যে মানুষগুলো কিলবিল করে ওরা বাড়ি ফিরে গেছে। পায়ে আরাম দাও শহীদ মিনার, ঘুমিয়ে থাকো হাওড়া ব্রিজ, জেব্রা ক্রসিং, গার্ডরেল আর ব্যারিকেড গুলো। আমরা ফিরবো আন্দোলনে, অনশনে। আমরা ফিরবো মধুসূদনের সমাধিস্থলে, আমরা ফিরবো বড়বাজারের ক্যাকোফোনিতে। 

৩০০ বছরের ঝড়-ঝাপ্টা উপেক্ষা করে হাঁটতে, হাঁটতে, হাঁটতে, হাঁটতে এবার তিষ্ঠ হও ক্ষণকাল! কল্লোলিনীর শ্বাস প্রশ্বাস জুড়ে নাও শস্যক্ষেত, পাখির কাকলি, জলপাই রঙের ঘনসবুজ বন-লতাপাতা আর ধূসর মাটির ধূলিকণা। আমরা ফিরবো মহামারী শেষে দ্রোহ আর দূষণে। হুগলি নদীর জল ফের ঘোলা হবে, দেওয়াল ঢেকে দেওয়া হবে স্লোগানে স্লোগানে, বিজ্ঞাপনে মুড়ে ফেলা হবে ফ্লাইওভার, শপিং মল, সিনেমা হল। আমরা ফের ফিরবো ধূসর বিষন্ন গোধূলিতে ধর্মতলার কোন পানশালায়, আমরা ফিরবো গড়িয়াহাটার ওই দাবার আড্ডায়৷

কয়েক হপ্তা ঘুমিয়ে কাটাও বাউন্ডুলে শহর তারপর ফের কোন বেহেড মাতাল তোমার রাত শাসন করবে৷ ডিপো থেকে বেরিয়ে আসবে ট্রাম, হাড়কাটায় ফের জুঁই ফুল কেনা হবে, হলুদ ট্যাক্সি ফের না বলবে ভরা সন্ধেবেলা, অটো খুচরো পয়সায় ভাড়া দিতে বলবে, বৃষ্টি ভিজে কোন মেয়ে আশ্রয় নেবে বহুদিন আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া কোন গ্ৰামাফোন দোকানের শেডে। মৃত কবিরা ফের কফিহাউসে নেমে আসবে। উদ্দাত্ত কন্ঠে শক্তি পড়া হবে গোরোস্থানে বসে। 

"কাছে এলে মুছে যায় স্মৃতির পাথর হতে তার, ছায়া, রোদ মুছে দেয়, ভিতরে উত্তাল করে রাখে, কলকাতা কলকাতা তার জগন্ময় দুঃখ ও মাধুরী।"

©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

সবকিছু নেগেটিভ নয়, পজিটিভ ও হচ্ছে কতো কিছু

| সবকিছু নেগেটিভ নয়, পজিটিভ ও হচ্ছে কতো কিছু |

------ ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ 

চারদিকে এতো মৃত্যু, এতো জরা দেখে দমবন্ধ করা লাগছে? আশেপাশে সমস্ত আলো বন্ধ হতে দেখে আরো বিষন্ন লাগছে?  রোজ ব্যাংকের পাসবই দেখিয়ে, টাকা তুলতে যাওয়ার ছুতোয় বাইরে বেরিয়ে বাড়ির কাছে ব্যারিকেড দেখে, বাঁশ দিয়ে সমস্ত গলি আটকে দেওয়া দেখে এবার একটু চাপা টেনশন হচ্ছে? গোটা পাড়া সিল করে দেওয়ার মানে কি সেটা উপলব্ধি করে ভয় হচ্ছে? কিন্তু ভয় পেয়ে, উৎকন্ঠায় কাটিয়ে পৃথিবীর কোন যুদ্ধ কেউ জিতেছে? ধুর, এতো চিন্তা করে বাঁচা যায় গৃহবন্দী দশায়? আলোর খবর, আশার খবর নেই নাকি? কোথাও কি কিছু ভালো হচ্ছে না? পজিটিভ কি স্রেফ কোরোনাই হচ্ছে আর বাকি সব নেগেটিভ? কেউ কি ভিক্ট্রি ল্যাপের কাছাকাছি পৌঁছচ্ছে না? কেউ কি ummidowali dhoop আর sunshinewali asha র কথা লিখছে না এই আকালে?

এক লাখ ৬৫ হাজার মানুষ মারা গেছে গোটা পৃথিবীতে কোরোনা আক্রান্ত হয়ে কিন্তু এটা ও ঠিক এর প্রায় ছয় গুন মানে সারে ছয় লাখ মানুষ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে। ইতালি স্পেনে রোজ হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে এই সময় কিন্তু এটাও বাস্তব যে শেষ কয়েকদিনে রেকর্ড হারে মৃতের সংখ্যা কমেছে। সারা পৃথিবীর দূষণ অপ্রত্যাশিতভাবে কমে গেছে। নদীগুলো স্বচ্ছ হচ্ছে আবার, সমুদ্র প্লাস্টিকের গ্রাস থেকে মুক্তি পাচ্ছে। পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত শহর দিল্লিতে ঝকঝকে আকাশ, দূষণের মাত্রা গোয়ার মতো সামান্য এখন। রাষ্ট্রনেতারা দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য যে বিপুল অর্থ বরাদ্দ করেছিল সেটা জনস্বাস্থ্য খাতে ব্যবহার করবে বলছে। ভবিষ্যতের জন্য এর চেয়ে বড় সুসংবাদ আর কিছু হতে পারে না।

ডোনাল্ড ট্রাম্প রেগেমেগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টাকা আটকে দিচ্ছে কিন্তু আয়ারল্যান্ড এগিয়ে আসছে টাকা নিয়ে। এই রাজনৈতিক কাদা ছোঁড়াছুড়িতে জনকল্যাণমুখী কাজ যেন আটকে না যায়। চিরশত্রু ভিয়েতনাম আমেরিকাকে পিপিই পাঠাচ্ছে। চায়না থেকে নরেন্দ্র মোদির দেশে আসছে বিপুল চিকিৎসা সামগ্রী।

আমরা হতাশ হয়ে পরলে চলবে? যে নয় মাসের শিশুটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলো আর যে ১০০ বছর বয়সী বৃদ্ধা হাসপাতালের বাইরে এলো হাততালি শুনতে শুনতে, তাদের মন ভেঙে যাবে আমাদের নৈরাশ্য দেখে। পর পর দুটো পারমানবিক বোমা বিস্ফোরণের পরে জাপান যদি দশকের পর দশক হতাশ হয়ে কাটিয়ে দিতো, পৃথিবীর অগ্রগন্য সুপারপাওয়ার হতে পারতো? এতো লাখ লাখ ইহুদি হত্যার পরে ও তো ইহুদিরা বেঁচে আছে, ব্যবসা বানিজ্য করছে, অগ্রগতি করছে। তাজ হোটেলে সন্ত্রাস হামলার পরে রতন টাটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ১বছরের মধ্যে হোটেলটা খুলে জীবনকে উদযাপন করবে। ফের উতকৃষ্টমানের পরিষেবা দেওয়া হবে পিছনের দিকে না তাকিয়ে। 

আসুন না আমরা ও Rear view mirror এ চোখ না রেখে সামনে যে অজানা পথটা পরে সেদিকে চোখ রেখে, এগিয়ে নিয়ে যাই পৃথিবীর গাড়িটা৷ আসুন না ভালো দিকগুলো নিয়ে আরো কথা বলি। আসুন না এটা ভেবে কয়েক মিনিট না হয় স্বস্তি পাই যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান মহল রীতিমতো রিসার্চ করতে বসেছে এটা খুঁজতে যে ভারতীয় উপমহাদেশে পাশ্চাত্যের তুলনায় কেন লাফিয়ে লাফিয়ে সংখ্যা বাড়ছে না, কি বিশেষ কারণে আমাদের ইমিউনিটি সাহেবদের থেকে বেশী? কেন কুইনাইন নিয়ে এতো মারামারি! 

আমাদের অনেক না এর মধ্যে হ্যাঁ ও তো কিছু আছে। আমাদের বেশিরভাগ 'নেই' এর মধ্যে কিছু তো আছে। সবকিছু নেগেটিভ নয়, পজিটিভ ও হচ্ছে কতো কিছু। আসুন না, ডালগোনা আর মশারির ফুটো গোনার মাঝে এই পজিটিভ যা কিছুর সংখ্যাটা ও গুনি। আমরা আজ আলোর পথ না খুঁজলে আগামী প্রজন্ম আলোর প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলবে যে। অন্ধকারের ও মাহাত্ম্য হারাবে। আলো আছে বলেই তো অন্ধকারে এতো ভয়। অন্ধকার আছে মানেই তো এরপর আলো আসবে, ঘর ধুইয়ে দেবে জ্বরের শেষে, মন ভিজিয়ে দেবে, নৈরাশ্যের দাগ মুছে দেবে আশাবাদী রোদ্দুর। চোয়াল শক্ত করুন, মন্ত্রোচ্চারণের মতো নিজেকে নিজে বলুন, আমরা করবো জয়। আমরা করবো জয়। আমরা করবো জয় নিশ্চয়। 

©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

পালঘর এবং ইল্বল- বাতাপির ভারতবর্ষ

| পালঘর এবং ইল্বল- বাতাপির ভারতবর্ষ |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ 

যা নেই ভারতে তা নেই ভারতে। আমরা রামায়ণ আর মহাভারত নিয়ে অহংকারই শুধু করলাম, আত্মস্থ করলাম না। আমাদের চারপাশে যা যা ঘটে চলেছে তার সবটা মহাভারতে লেখা। স্রেফ খুঁজে নিতে হবে। কিন্তু শত খুঁজে ও এটা বুঝতে পারবেন না কেন আপনজনের মৃত্যু-শোকের চেয়ে এই সময় জরুরি হয়ে পরছে কে কাঁদলো আর কে কাঁদলো না। 

সব মৃত্যু নিয়েই কি লিখি আমরা? সব খুন নিয়ে কাব্য করি? মোমবাতি জ্বালাই? তবে পালঘর নিয়ে কে কে লিখছে আর কে কে চুপ তা নিয়ে লোক ভীড় করছে কেন? আচ্ছা কৃষক আর শ্রমিকরা যদি একদিন ধরে ধরে আমাদের জিগ্যেস করে, কোথায় ঢুকে গেছিল কলম যখন আমরা হাঁটতে হাঁটতে অসুস্থ হয়ে মারা গেছিলাম বা রাতে হাইওয়েতে ট্রাক পিষে চলে গেছিল বা ফসলের দাম পাচ্ছি না বলে আত্মহত্যা করেছিলাম বা মুখে ইঁদুর নিয়ে প্রতিবাদে।

হিন্দুত্ববাদী দল শিবসেনার দখলে মহারাষ্ট্র। সেখানকার পালঘর জেলায় তিনজন হিন্দুকে পিটিয়ে মেরে দেয় হিন্দু দলিত সম্প্রদায়ের শ'খানেক মানুষ। এদের মধ্যে দুজন সাধু, একজন ড্রাইভার।  দুজনই জুনাগড় আখাড়ার সদস্য। জুনাগড় আখাড়া সাধু সন্তদের বহু প্রাচীন এক মন্ডলি৷ কিছুদিন আগে শিরোনামে ফের আসে দলিত এক সদস্যকে আখাড়ার মহন্ত হিসেবে অভিষিক্ত করে৷ অর্থাৎ ধরে নেওয়া যায় নিহত দুই হিন্দু দলিত বিদ্বেষী ছিলেন না। দলিত মানুষগুলো ও নিশ্চিত জুনাগড় আখাড়ার নাম শুনেছেন। তবে? পিটিয়ে মারা হলো কেন?

১১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এই অপরাধে। না কোন মুসলিম হিন্দুর উপরে বদলা নিয়েছে বা গ্রাহাম স্টেইন্স এর মতো শুধুমাত্র খ্রিস্টান বলেই গাড়িতে জ্যান্ত জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে বা সাধুদের ফ্রিজে নিষিদ্ধ পনির ছিল বলে মারা হয়েছে বা গো-প্রেমী বলে খুন হতে হয়েছে, এরকম কোন দিক পেলাম না খবরে। ভিডিওতে দেখলাম পুলিশের অপদার্থতার জন্য লোকগুলোকে মরতে হলো৷ পাগলের মতো অত লোক থানার সামনে দেখে ও পুলিশ জনতার হাতে তুলে দেয় তিনজনকে। তবে কি পুলিশেরা জেহাদি? দুজন সাসপেন্ড হয়েছে। কোন মৌলবাদী -কট্টরপন্থী বা জেহাদি যোগ নেই। স্ট্রেঞ্জ৷ 

 যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে সেখানকার পঞ্চায়েত বিজেপির দখলে৷ সরপঞ্চ বিজেপির এক সদস্য। তিনজন মানুষ স্রেফ খুন হয়ে গেল। সেটা নিয়ে হাহাকার না করে সবাই উঠে পরে লাগলো কে কে কাঁদছে না তার নীতিপুলিশি করতে। আচ্ছা ঘরে কেউ মারা গেলে ঘরের লোক কি শোক প্রকাশ করে, নিজেরা কাঁদে না হাতা গুটিয়ে পাড়াতে লাঠি হাতে দেখতে বেরোয় কে কে এখনো কাঁদেনি। স্ট্রেঞ্জ না? এতে কি সাধুদের প্রতি সম্মান দেওয়া হলো? 

আমরা বিগত কয়েক বছরে ইল্বল ও বাতাপি নামক দুই রাক্ষসকে পুষেছি। তারা এই কয়েক বছরে আদর যত্ন পেয়ে বিশাল রুপ ধারণ করেছে। গুজব বা ফেক নিউজ এবং পিটিয়ে মারার সংস্কৃতি। মহাভারত মতে ইল্বল ও বাতাপি দুই ভাই, দুজনেই রাক্ষস বা অসুর। তারা পথিকদের আপ্যায়নের লোভ দেখিয়ে ঘরে নিয়ে আসতো। ইল্বল খাবার রুপ ধারণ করতো৷ বাতাপি সেই খাবার পরিবেশন করতো। অতিথি সেই খাবার রুপী রাক্ষসকে চেটেপুটে খেতো। তারপর ইল্বল পেটে ঢুকে অতিথির নাড়িভুড়ি কামড়ে পেট চিঁড়ে বেরিয়ে আসতো। তারপর দুই ভাই অতিথির মাংস খেতো।

ভারতে ও তাই হচ্ছে। আমরা ভাবছি হিন্দু মারছে মুসলিমকে আর মুসলিম মারছে হিন্দুকে। ইল্বল মানে গুজব বা ফেক নিউজ লোক ভুলিয়ে, লোক ক্ষেপিয়ে এক জায়গায় সবাইকে জড়ো করছে। তারপর বাতাপি মানে Lynch Mob বা পিটিয়ে মারার সংস্কৃতি বাকি কাজটা সম্পন্ন করছে। ইল্বল- বাতাপিকে আটকানোর বা বিনাশের কোন চেষ্টা কেন্দ্র বা ভারতের প্রধান শাসক দল এই কয়েক বছরে করেনি। বরং পিটিয়ে মেরেছে যারা তাদের ফুল চন্দন নিয়ে বরন করেছে, জামিন দিয়েছে, অভিবাদন জানিয়েছে। 

ইল্বল- বাতাপির বিনাশ করেছিল অগস্ত্য মুনি। প্রতিবারের মতো এবার ও ব্রাহ্মণ মাংস খাওয়ার লোভে ইল্বল আর বাতাপি এক বামনকে ভোজনের আমন্ত্রণ জানালো। ঘটনাচক্রে এবার অগস্ত্য এলো খেতে।অগস্ত্যের খাওয়া শেষে ইল্বল বাতাপি'কে উচ্চস্বরে ডাকতে লাগলেন। কিন্তু বাতাপি অগস্ত্যের পেট থেকে বের হলো না। তখন অগস্ত্য জানালেন যে, বাতাপি সম্পূর্ণরূপে হজম হয়ে গেছে। এতে ইল্বল ভীত হয়ে, অগস্ত্যকে তার বাঞ্ছনীয় সম্পদ দান করে বিপদমুক্ত হন। কোনদিন আর ওই হত্যালীলা চালায়নি দুই ভাই। 

আমাদের ও একটা অগস্ত্যের দরকার। সরকার চাইলেই অগস্ত্যের আগমন হবে ইল্বল- বাতাপিকে শায়েস্তা করতে। অগস্ত্য এক্ষেত্রে গণ পিটুনি প্রতিরোধ বিল। প্রোটেকশন ফ্রম লিঞ্চিং বিল ২০১৯। অবিজেপি শাসিত রাজ্যগুলো এই বিল পাশ করেছে কিন্তু বিরোধিতা করেছে বিজেপি। দেশে এটা চাইলেই আইন হতে পারে। গণ পিটুনি বা মিথ্যে খবর -গুজব ছড়ালেই কঠোর থেকে কঠোর সাজা হবে। হচ্ছে না। ভগবানই জানে কেন অগস্ত্যের জায়গায় ইল্বল- বাতাপির মতো দুই রাক্ষসকে জিইয়ে রেখেছে সরকার। 

পরের বার ফের হিন্দু মুসলমানে ভাগ করতে এলে, ফের জাতের নামে বজ্জাতি করতে এলে প্রশ্ন করুন কেন ইল্বল- বাতাপির মতো ফেক নিউজ আর গণ পিটুনিকে জিইয়ে রাখা হয়েছে। কেন এদের জব্দ করা হচ্ছে না। গোটা দেশ প্রশ্ন করলে দেখবেন ঠিক জব্দ হবে। 

পুনশ্চঃ যেদিন অগস্ত্য ইল্বল- বাতাপির ঘরে খেতে আসে, ইল্বল অগস্ত্যকে হত্যা করার জন্য সুস্বাদু মেষরূপী বাতাপি'র মাংস পরিবশন করেছিল নাকি৷ শোনা যায় সে সময় ঋষি মুনিরা মেষ-মাংস ও মদিরা খেত। অবশ্য এখন খেলে অগস্ত্যকেই হয়তো পিটিয়ে মারা হতো৷ ছ্যা ছ্যা! যাক গে সে সব ম্লেচ্ছ- কথা! হরি ওম তৎ সৎ।

©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

জন্মদিনে অভিবাদন নাও লেনিন

| জন্মদিনে অভিবাদন নাও লেনিন |

----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

লেনিন মানে স্রেফ ফ্রেঞ্চ কাট আর ওভারকোট নয়, আমার লেনিন লং মার্চেও হাঁটে অধিকার বুঝে নিতে। আমার লেনিন সাত শতাংশ ভোট। আমার লেনিন লাথ খাওয়া, মার্কা মারা, হেরো মানুষগুলোর জোট। আমার লেনিন রোজ নিয়ম করে খাবার রেখে যায় রিক্সাওয়ালা, মুটে, মজুর, ভবগুরে, বেকার বা দুম করে চাকরিটা চলে গেছে যার তার পেটের জন্য। আমার লেনিন 'প্রতিদ্বন্দ্বীর' সিদ্ধার্থ, 'জণ অরণ্যের' সোমনাথ, 'দিওয়ারের' অমিতাভ বচ্চন। আমার লেনিন রক্ত মাংসের লোক। 

যে লোকটা ভন্ড বাবাদের রক্তচক্ষু আর ভক্তের জণচ্ছ্বাস উপেক্ষা করে ও বিজ্ঞানমঞ্চ আন্দোলনটা করছেন সে আমার লেনিন, যে কয়লা খাদানের শ্রমিকদের এক ছাতার তলায় এনে দারুণ রাগে ফেটে পরার কথা বলছেন, সে আমার লেনিন। রোজ গণশক্তি টা ঝড় জল বৃষ্টিতে বাড়ি বাড়ি এসে দিয়ে যাচ্ছে যে মানুষটা সে ও, সে ও ভ্লাদিমির ইলিয়াচ লেনিন।

লেনিনের লাশ কোনদিন দেখেছেন? খেটে খাওয়া মানুষের অধিকার রক্ষা করতে গিয়ে জঙ্গলমহলে প্রতিদিন খুন হয়েছে যে ডজনে ডজনে  লেনিন। ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন করতে গিয়ে গুম হয়েছে যে মোটা চশমা, ঢোলা শার্ট। ছাত্র আন্দোলন করতে গিয়ে থেঁতলে দেওয়া হয়েছিল যে মুখ। ওই থোঁতনা ভাঙা, রক্তমাখা জেদি আপসহীন মুখগুলোই তো লেনিন। চিনতে পারেন নি?

মার্শাল মুর্মু, জামির মোল্লা- খয়েরুল জমাদারই আমাদের লেনিন। ভাঙরের মোফিজুল-আলমগীরই লেনিন। লেনিন সিমলায় পার্টির সেই বিধায়ক যে রাতের পর রাত সরকারি অফিসের বাইরে শুয়ে থাকছে অধিকার বুঝে নিতে। লেনিন কেরালার সেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী যার কোটি টাকার বিজ্ঞাপন লাগেনা রাজ্যকে কোরোনামুক্ত করতে, প্রত্যেককে টেস্ট করাতে।

এই প্রত্যেকটা মুখ আরো অনেক দুনিয়া কাঁপানো দশটা দিন উপহার দেবে। যারা আজ ও না খেতে পেয়ে শুতে গেল তাদের পেটে ভাত জোগাবে। পৃথিবীর সব সন্ত আর জ্ঞানীই তো এটা বলে যে মানুষ বড় কাঁদছে, মানুষের চোখের জল পরছে। লেনিন সে যে ওই কান্নাটা চিরকালের জন্য থামিয়ে দিতে পারে, চোখের জলটা মুছিয়ে দিতে পারে।

ধর্ম না স্টেথোস্কোপ গলায় মানুষের প্রতি সমীহ বাড়ছে, প্যারিসে ম্যাকডোনাল্ডস নিজেদের দখলে নিয়ে কর্মচারীরা খাবার বিলিয়ে দিচ্ছে, কিউবা নিজেদের সৈনিক পাঠাচ্ছে বিশ্বজুড়ে। এই সৈনিকদের কালাশনিকভ নেই, পিপিই আর ভেন্টিলেটর চালানোর প্রশিক্ষণ আছে। ক্ষুদ্র দেশ ভিয়েতনাম চাল বিলির এটিএম বানিয়েছে, ভারতে একটা ও ভোট যারা পায় না তারা রোজ নিরন্ন মানুষকে দুমুঠো ভাত খাইয়ে চলেছে, রক্তদান করে চলেছে।

কমরেড আপনি অনুভব করছেন নিশ্চয়ই কবরে শুয়ে এই ধিকিধিকি আগুনের ওম। A Spectre is haunting the World। জুজুর ভয় পাওয়া ভালো। মেহেনতী মানুষের রক্তচক্ষু, ক্ষুদার্ত, বেকার, লাথি ঝাঁটা খাওয়া মানুষের, কাঙাল মালসাটের জুজু। আমাদের চুমুর দিব্যিতে থাকুন, বিপ্লবে, বিদ্রোহে থাকুন আপনি। 

©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

সত্যজিৎ রায়

| সত্যজিৎ  রায়  ❤️ |

----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

মুকুলের আজ ও হাসি পায়না। তপেশরঞ্জন মিত্র ও সেই কবেই লেখা বন্ধ করে দিয়েছে। জটায়ুর সবুজ অ্যাম্বাসাডর বাতিল হয়েছে কবেই। ১০০ নং গড়পার রোডের বাড়িটা শুনেছি প্রোমোটারদের কবলে চলে গেছে। রজনী সেন রোড আছে এখনো? 

ফেলুদা এখন বাতের ব্যাথার তেলের মডেল। তোপসে নামী বাঙালি হেঁসেল এর মালিক। মগনলাল মেঘরাজ কবেই মরে ভূত হয়ে গেছে। আর কেউ বাদাম কা সরবত খাওয়ায় না। ওতে আজ ও ভিষ নাই। 

গুপি শেষ বয়সে গড়িয়া অটোর লাইনে দাঁড়িয়ে ঘাম মুছতো। বাঘা ও মৃত। মন্দার বোস বিনা চিকিৎসায় মারা গেছে। খুচরো ভেল্কি বা গ্লোবট্রটার, কেউই খুব একটা সাহায্য করেনি শেষ দিকে। 

যেভাবে নায়ক অরিন্দম মুখার্জীকে টাকার চোরাবালি থেকে তুলতে কেউ সাহায্য করেনি। তবে অত টাকা প্রথমবার চোখে দেখে দিব্যি লেগেছিল আমাদের। দিব্যি লেগেছিল চারমিনার ও, চা এর সাথে নিউ মার্কেট থেকে কেনা ডালমুট, ধোঁয়ার রিং, সকালবেলা নিয়ম করে যোগাসন। 

তালি মেরে আনানো ভূতের রাজার ভোজের ওই ইয়া বড় রাজভোগ বা মাছের মুড়োটা আর পাতে পরেনা। কুকুর ও পায় না। ভূতেও খায় না। ভূতের রাজার থাকার বাড়ি তো সব ভেঙে ফ্ল্যাটবাড়ি হচ্ছে। বোড়ালের নিশ্চিন্তিপুর এখন গমগমে শহরাঞ্চল। 

ভূত যে নাচে, তখন জেনেছিলাম। যখন ছোট ছিলাম। তখনই প্ল্যানচেট শেখা, আলকেমি জানা। ইয়েতি, সোনা তৈরির ফর্মুলা, দড়ি ধরে টান মারার প্রতিস্পর্ধা, বোমযাত্রীর ডাইরি, বিনেপয়সার ভ্রমণ,  সোনার কেল্লা, আটলান্টিস, এল ডোরাডো। 

তারপর একদিন কি যে হলো। কখন যেন সব্বাই বড় হয়ে গেলাম। ইন্দির ঠাকুরান বা দুর্গার গল্প কিরকম অবাস্তব লাগতে শুরু করলো। এত গরীব কেউ হয়? আমার তখন হতাশা নতুন সিরিজের আই ফোন না পাওয়ার। আমার গ্লানি রোজ উবের না চড়তে পারার। এক এক করে র‍্যাক্সসিট, ডাকু গন্ডারিয়া, ক্যাপ্টেন স্পার্ক উত্তর দেওয়া বন্ধ করে দিলো। কতোবার ভাবলাম গিরিডি থেকে ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু আমার বাড়ির ছাদে তার ইউএফওটা নিয়ে এসে একটা টাইম মেশিন দিয়ে যাবে। কই এলো না তো আজ ও। অ্যানাইহিলিন, মিরাকিউরল, নার্ভিগার, অমনিস্কোপ, স্নাফগান, ক্যামেরাপিড, লিঙ্গুয়াগ্রাফ এক এক করে কে বা কারা আমার শৈশব থেকে চুরি করে নিয়ে গেল। 

আমি তখন প্রখর রুদ্রের থেকে ও দ্রুত দৌড়োচ্ছি। উচ্চাশার ইমারত গড়বো ভাবছি।  
তারিণীখুড়ো বারন করেছিল বটে কিন্তু আমার তখন শোনার সময় কই? আমার তখন ছেলেবেলার গল্পের বইগুলো ধুলো ঝেড়ে চিলেকোঠার ঘরে নিয়ে গিয়ে দুপুরবেলা পড়ার সময় কই?

এখন তো পিকু ও অনেক অনেক বড় হয়ে গেছে। পিকুর মা আর ওই দুপুরবেলা আসতো যে কাকুটা ওরা বৃদ্ধ। চারুলতা ও তো থুরথুরে বুড়ি। অপর্ণা আর অপুর জন্য সিগারেটের প্যাকেটে লিখে রাখে না, 'খাবার পরে, একটা করে।

আমরাও তো কখন যেন বড় হয়ে উঠলাম। সোমনাথের মত মিডিলম্যান হয়ে, সিদ্ধার্থর মতো রাগী হয়ে। বস কে খুশি করে, ক্লায়েন্ট কে পছন্দসই 'মাল' সাপ্লাই করে, আপোষ করে, একনম্বরী, দুনম্বরী, দুনম্বরী হয়ে।

আমরা কি সত্যি বড় হতে পারলাম? না ভান করলাম বড় হওয়ার এই কয়েক দশক ধরে? আদপে হয়তো রোজ কৈশোরটা পুষে রাখা ছিল কোটের পকেটে, ফর্মাল শার্ট এর কলার এ, আপিসের ফাইলের ভাঁজে। 

ধন্যবাদ সত্যজিৎ রায় বারবার টাইম মেশিনে চাপিয়ে আমার ফেলে আসা রংপেন্সিল, গরমের ছুটির ১টাকার পেপসি, দূরদর্শনে 'ছুটি ছুটি', পাড়ার লাইব্রেরি, খেলার মাঠ, তিন বর,তিন বর, তিন বর পাইয়ে দেওয়ার জন্য। 

এই জন-অরণ্যে আশা আকাঙ্ক্ষার না পাওয়া অনেক কিছুর মাঝেও সব পেয়েছির নাম, সত্যজিৎ। আজ বাঙালির সেই সবচেয়ে প্রিয় মাস্টারমশাই এর মৃত্যু দিন। আজকের দিনেই আমাদের ফেলে রেখে, তোপশের লেখা বন্ধ করিয়ে, ফেলুদার মগজাস্ত্রে শান দেওয়া থামিয়ে দিয়ে, জটায়ুর ঠাঁই, ঠাঁই, ঠাঁই, ঠাঁই, ঠাঁই এর শব্দ যতদূর পৌঁছয় তার ও অনেক অনেক দূরে উনি চলে গেছেন। রেখে গেছেন আমাদের গোটা ছেলেবেলা। মহারাজা তোমারে সেলাম! 

©--- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

#SatyajitRoy

শুভ জন্মদিন লিটল মাস্টার

| শুভ জন্মদিন লিটল মাস্টার ❤ |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ 

নভজোৎ সিং সিধু তখন পুরোদমে ভাষ্যকার। পৃথিবীকে শচীনের জনপ্রিয়তা বোঝাতে বলেছিলেন, ভারতে প্রধানমন্ত্রীকে ও একবার অন্তত কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যায় কিন্তু শচীন তেন্ডুলকারের দিকে একবার আঙুল ও যদি কেউ তোলে গোটে দেশে আগুন লেগে যাবে৷ ভারতে আবেগের আরেক নাম শচীন রমেশ তেন্ডুলকার। 

ভারতবর্ষে ডজনখানেক ধর্মের মধ্যে একটি প্রধান ধর্ম ক্রিকেট আর তার দেবাদিদেব শচীন তেন্ডুলকার। এমন একটি নাম যা ১৩০ কোটি দেশবাসীকে এক করতে পারে। যে হাত জোড় করলে এক ওভারের ও কম সময় লাগে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ থামাতে।

মনে পড়ে ১৯৯৯ এর ইডেন গার্ডেন্স? ভারত বনাম পাকিস্তান। শোয়েব আখতারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে শচীন রান আউট হয়ে গেলে দর্শকদের ক্ষোভে খেলা বন্ধ করে দিতে হয়। পাবলিক পারলে আগুনে পুড়িয়ে দেয় পাকিস্তান আর হাতের কাছে সেই শোয়েবকে। ওই এক লাখ মানুষকে থামাতে মাঠে সেই পাঁচ ফুট চার ইঞ্চির লোকটাকেই আবেদন করতে হয়েছিল। ওর আবেদনে দর্শকেরা শান্ত হলে খেলা আবার শুরু হয়।

আপনি শচীনকে পছন্দ নাই করতে পারেন। কিন্তু গোটা স্টেডিয়াম যখন একসাথে মন্ত্রোচ্চারণের মতো শ....চীননন... শ...চীন বলতো আপনার গায়ে কাঁটা দিতো নিশ্চয়ই। লিটল মাস্টার যখনই দেশের হয়ে ব্যাট করতে নেমেছে আপনি সব ফেলে খেলা দেখতে বসেছেন৷ হাউ হাউ করে কেঁদেছেন যখন শেষবার ক্রিকেট-ভগবান মাঠ ছেড়েছে, শেষবারের মতো দেশের পতাকা গায়ে জড়িয়ে হাত নাড়িয়েছে।

শচীন সেই সুপারহিরোর নাম যে দশকের পর দশক ধরে জেতার সাহস জুগিয়ে গেছে গোটা ভারতকে। চাকরি চলে গেছে, পরীক্ষায় ফেল করেছে, বান্ধবী ছেড়ে গেছে, স্কুলের বার্ষিক রেসে লাস্ট হয়েছে, কিন্তু বাড়ি ফিরে শচীনের ওই দারুণ একটা ছয়, ওয়াসিম আক্রম, ইউনিস, অ্যালান ডোনাল্ডকে হেব্বি প্যাদানো দেখে সব ঠিক হয়ে গেছে। শচীন তো সেই Great Indian Dream যে কোটি কোটি মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেগুলোকে স্বপ্ন দেখিয়েছিল প্রথম ১১য় স্থান পাওয়ার, শচীন, সৌরভ, দ্রাবিড়, লক্ষ্মণ এর মতো দেশের নীল জার্সি গায়ে ময়দানে নামার৷ বাবার হাতে পায়ে ধরে ক্রিকেট কিট কেনা, মায়ের সঞ্চিত অর্থ নিয়ে প্রথম ক্রিকেট কোচিং, রাতের পর রাত শ্যাডো প্র‍্যাক্টিস - শচীনের পোস্টারগুলোই সাক্ষী সেই সমস্তকিছুর। ভারতের ঘরে ঘরে চেনা ছবি। নায়ক অবশ্য সব ছবিতেই এক। শচীন রমেশ তেন্ডুলকার।

একটা গোটা প্রজন্ম অন্ধের মতো ভগবানের কথাগুলো বেদবাক্য হিসেবে মেনে চলেছিল।  ভগবান বলছে Boost is the secret of My Energy, ব্যাস মাকে রোজ বলা, হরলিক্স না, কমপ্ল্যান না, বুস্টই বেস্ট। এরপর ভগবান অ্যাকশন শু পরে মাঠে নামলো। বিজ্ঞাপনটা দেখে বুঝলাম শচীন হতে গেলে অ্যাকশন শু মাস্ট আর হাতে থাকতে হবে পেপসি। উইকেট নিই বা ছক্কা হাঁকাই, শান্ত থাকতে হবে, কারণ ইয়ে দিল মাংগে মোর!

এই শচীনকে দেখিয়েই তো অনেক বন্ধুর থেকে আলাদা করতে চেয়েছিল মা বাবা। শচীন হও বিনোদ কাম্বলি না। আমরা ও স্মার্ট কিনা, সঙ্গে সঙ্গে শচীন যে ক্লাস টেন পাশ সেটা মনে করিয়ে দিতাম, প্রশ্ন করতাম তবে কি আমরা ও সারাদিন খেলাধুলা করতে পারি? পড়াশোনা করে কবে কে শচীন তেন্ডুলকার হয়েছে!

তেন্ডুলকার বোধহয় আর কেউ হয়নি। হবে ও না। ওই যে হেলমেট খুলে আকাশের দিকে ব্যাট তোলা, প্রয়াত বাবাকে প্রতিটা সেঞ্চুরি উৎসর্গ করা, যতোই বড় খেলোয়াড় হয়ে যাক না কেন, বৃদ্ধ গুরু রমাকান্তের টিপস মন দিয়ে শোনা, শিবাজি পার্ক এ সামান্য ফ্ল্যাটে শিকড়, সমস্ত স্বাচ্ছন্দ্যে বড় বড় পাঁচতারা হোটেলে থাকলে ও মুম্বাইয়ে নিজের পাড়াকে মিস করা, রাস্তার ধারের ভড়া পাও পেলে গোগ্রাসে গেলা, মধ্যবিত্ত পরিবারের ছোট ছেলে থেকে বিশ্বক্রিকেটের অতিমানব হয়ে ওঠা - ওটাই তো ভারতের ১৩০ কোটির স্বপ্ন।

ওই গল্পটা শুনেই তো সারাদিনের ধকল, ব্যার্থতা, গ্লানি ভুলে ঘুমোতে যেত একটা গোটা দেশ। যে ফের একবার জিততে চায়, ঘুরে দাঁড়াতে চায়, ছেঁড়া কাথায় শুয়ে স্পর্ধা দেখায় উচ্চাভিলাষের। খোঁজ নিন, ওরা রোজ স্বপ্নে নিজেকে শচীন ভাবে। নীল জামা গায়ে, আবশ্যিক হেলমেট মাথায়, MRF এর ব্যাট হাতে ড্রেসিং রুম থেকে লম্বা করিডর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মাঠে ঢোকে। গমগম করছে এক লাখ মানুষ, কেউ পোস্টার হাতে, কেউ জাতীয় পতাকা - মন্ত্রোচ্চারণের মতো সবাই একসাথে চিৎকার করছে তালে তাল মিলিয়ে। শ....চীননন... শ...চীন। এটা ভারত। এখানে আবেগের আরেক নাম শচীন রমেশ তেন্ডুলকার। 

©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

বেশিদিন শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায় না

| বেশিদিন শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায় না |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ 

আমরা এতোদিন এমনি এমনি মারা যাচ্ছিলাম। মানুষ বড় সস্তা তো৷ তাই ডেথ সার্টিফিকেটে অন্য সব কারণ লেখা হচ্ছিল একটি ছাড়া! 

হরিপদ কেরানি রোজ বাজারে যেত। সেদিন ও গেছিল। এমনি এমনি মানুষ বাজারে যায়। বাজার হয়ে গেলে আড্ডা মারে না, বাড়ি চলে যায়। সেদিন দুম করে ভুষি সামগ্রী দিয়ে বানানো ফ্লাইওভারটা ভেঙে পরলো হরিপদ কেরানির মাথায়।জ্যোতিষী শ্রীঋভু ওকে বলেছিল ও ৯৯ বছরে আউট হবে কিন্তু হরিপদ কেরানি এমনি এমনি মরে গেল ৫৯ এ৷ লোকে জানলো দুর্ঘটনায় সে মারা গেছে। ফ্লাইওভার এমনি এমনি ভেঙে পরে এখানে। গাছের পাতা যে ভাবে ঝড়ে পরে সেরকম। 

চোমু সিংহ জ্বর, হাঁচি-কাশি নিয়ে হাসপাতালে এলেন। তারপর হাঁপ উঠে এমনি এমনি মারা গেলেন পাঁচ দিন পরে। জানা গেল চোমু সিংহের কুচকিতে একটা ফোঁড়া ছিল। ডেডলি ফোঁড়া। আমের মতো টুসটুসে, লিচুর মতো ডাগর৷ যেদিন চোমু মারা যায়, সেদিন ওই ফোঁড়া ও ফাটে৷ কয়েকজন সিস্টার নাকি শুনতে ও পায় ও শব্দ। অর্থাৎ ধরে নিতে হবে ফোঁড়া ফেটে অম্বল মাথায় উঠে জ্বরের মধ্যে উনি পরলোকগমন করেছেন। জ্বরের জন্য না।

যাদের আগে থেকেই হাজা ছিল, হাঁপানি ছিল, বোগলে গন্ধ ছিল, তারা যদি জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় তবে কি সেটা জ্বরের জন্য না ওই হাজা, হাঁপানি, বোগলের গন্ধের জন্য৷ এমনি এমনি সব দোষ জ্বরকে দিলে চলবে? জ্বর আজ হয়েছে। ৩৪ বছর ধরে ওর হাজা৷ খঁচ খঁচ আওয়াজ ও হতো। এমনি এমনি কুৎসা করলেই হলো?

যে লোকটাকে চুপিচুপি চুল্লিতে ঢুকিয়ে দিতে হলো, জানেন তার পাদের ইতিহাস? এক পাদেই পাড়া কাঁপিয়ে দিতো৷ তা সে যদি হঠাৎ এমনি এমনি মারা যায় কয়েকদিন ভুগে, সেটা কি জ্বরের জন্য না পাদের গন্ধের জন্য?

এমনি এমনিই কতো লোক মরে রোজ। ওই যে পরিযায়ী শ্রমিক মাঝরাতে গাড়ি চাপা পরে মারা গেল হাঁটতে হাঁটতে, সে ও তো এমনি এমনি মরলো। হাঁটতে কে বলেছিল রাতে? আর ডাক্তারগুলো যারা স্যাটাস্যাট সংক্রমিত হচ্ছে তারা ও এমনি এমনি হচ্ছে। শিবঠাকুরের আপন দেশে এমন দেবো কেস,  বাঁকিয়ে দেবো ফেস! ব্যাঁকা মুখ নিয়ে ফের যদি কন্সপিরেসি থিয়োরি খোঁজো, এমনি এমনি জেলে যাবে। তেনাদের ধৈর্যের টেস্ট করো না!

ইশ! আবার, আবার টেস্ট, করো, না পাশাপাশি বসিয়ে দিলাম। কেলেংকারি কেস৷ এবার কুকুর, মেকুর, ফেউ, ফেকুর সব লেলিয়ে দেওয়া হবে। মিথ্যাচার আর কুৎসা করছি বলে দেওয়া হবে। এমনি এমনি কেউ টেস্ট করে নাকি সবার? হালুয়া নাকি? টেস্ট টেস্ট আর শুধু টেস্ট করে কে কবে মাধ্যমিকে প্রথম হয়েছে শুনি? রায় ও মার্টিন এর প্রশ্ন বিচিত্রাতে এর উত্তর আছে? 

তারচেয়ে 'সংস্কিতি' হোক। হালকা খোকোখেলা, মেলাধুলা, মেগাসিরিয়াল, ফুটপাতে মেলোড্রামা হোক। ঝ্যাকাঝ্যাক ফটো উঠুক৷ এমনি এমনি ভয় পেলে পাড়ার দোকান থেকে মিষ্টি খাইয়ে দেওয়া হোক। জ্বর এলে চুপিচুপি আইসোলেশন ওয়ার্ড আর যম এলে গভীর রাতে 'সালটে' দেওয়া হোক৷ সব কিছুর পিছনে কি কারণ থাকে?

দেরি 'করো না'। বারবার শাক দিয়ে মাছ ঢেকো না। এরপর পচা গন্ধ বেরোবে। সংক্রমণ বাড়বে। বরং এমনি এমনি টেস্ট টেস্ট আর টেস্ট করাও। বিশ্বাস করুন, কেউ দায়ী করবে না টেস্টে কয়েক হাজার সংক্রমিত ধরা পরলে।  এদিক ওদিক এমনি এমনি হরলিক্স খাওয়ার মতো এমনি এমনি লোক মরে যায়? শালা ফেলু, ব্যোমকেশ তদন্ত করে দেখুক। ওরা ও অজানা জ্বরে আক্রান্ত নাকি? 

©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

রমজান না রামাদান

| রমজান না রামাদান? | 

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ 

এ বছর ও স্বজন -বন্ধুকে পবিত্র মাসের প্রথম দিনে শুভেচ্ছা জানানোর আগে এই দ্বন্দ্বটা চলছিল। কি লিখবো? ওটা লিখলে ঠিক হবে কি? বাজার এবার ও ছেয়ে গেছে রামাদান করীম শুভেচ্ছায়। রমজান মুবারক একটু ব্যাকসিটেই। এমনিতে রামাদান করীম  শব্দটা ও কানে মিঠে লাগে, এবার রামাদান করীম লেখা শুভেচ্ছাপত্রই পাঠিয়েছি। কিন্তু এখন যেহেতু অনেকটা সময়, ভাবলাম ফের জানাই এই বিষয়ে। ছোট বিধর্মীর বড় মুখের গুনহা মাফ করে দিয়েন সংযম মাসে। 

কথাটা রমজান। রামজান বা রামযান না। আর শ্রীরামচন্দ্রের সাথে এর দূর দূরান্তর অবধি কোন সম্পর্ক নেই তবু ও কয়েক বছর ধরেই দেখছি আশেপাশের বেশ কিছু মানুষ স্রেফ রামাদানেরই শুভেচ্ছা বিনিময় করছে ফেসবুকে হোয়াটসঅ্যাপ এ। অথচ মনে করে দেখুন, কয়েক বছর আগে অবধি রমজানই ছিল আমাদের। যেমন এই উপমহাদেশের নিজস্ব কিছু গল্প ছিল যা আরব্যরজনীর চেয়ে আলাদা, মিঠে, মাটির গন্ধ ছিল। 

রমজান শব্দটা এসেছে পারস্যদেশের ভাষা থেকে। আর রামাদান সৌদি আরব থেকে। ঐতিহাসিকভাবে ভারত বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মুসলমানদের ভাষা পারসি, উর্দু বা বাংলাই প্রধানত। উপমহাদেশে মোগল সাম্রাজ্যের বিস্তারের সাথে সাথে সুফিবাদ আর ফারসিক প্রভাব বেশি করে আসতে শুরু করে। আল্লাহহাফিজ যেমন এখানে খুদাহাফিজ পারস্য প্রভাবে। কিন্তু ক্রমশ গোটা উপমহাদেশ জুড়ে ওয়াহাবি সংস্কৃতি গ্রাস করতে শুরু করে। উগ্রতা, কট্টরপন্থা ও। অথচ আদর্শ মানুষ তথা খাঁটি মুমিন হওয়ার জন্য কোরান শরিফে বর্ণিত গুণাবলির মধ্যে ক্ষমা ও উদারতাকে উত্তম বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

যে কোন আগ্রাসন বা সাম্রাজ্যবাদের প্রথম লক্ষ থাকে সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত আগ্রাসন। হয়তো আরব ঠিক সেটাই করছে আমাদের এই কয়েকটা দেশ জুড়ে। আর তাই আরো বেশী করে শুনতে পাচ্ছি আরবী শব্দ বাংলাভাষী মানুষদের মুখে। 

সৌদি আরব গোটা পৃথিবী নয়। তার যেরকম একটা সংস্কৃতি আছে, আপনার নিজের ও একটা সংস্কৃতি আছে আর তার সাথে আপনার ধর্মীয় বিশ্বাসের কোন দ্বন্দ্ব নেই। ঠিক যেমন মুসলিম হলে ও আপনি একজন বাঙালি, বিহারী, মালায়লি বা ভারতীয়। প্রত্যেকটা অংশ আপনার, আমাদের সকলের। 

আত্মশুদ্ধির এই পবিত্র মাসে আসুন আমাদের ঐতিহ্যগুলো সগর্বে বহন করি।  আমাদের ভাষা, আমাদের সংস্কৃতি, জাত্যাভিমান, আম্মির হলুদমাখা আঁচল, আব্বার গুনগুন করে সাঁইয়ের গান গাওয়াটা ও আমারই ইবাদতের অংশ। আমার শষ্য শ্যমলা মাতৃভূমির মতোই। বিদেশী মরুভূমির মধ্যে এক চিলতে জলের হাতছানিতেই দৌড়োতে যাবো কেন শুধু? এতে না শেখা হবে শুদ্ধ বাংলা না বোঝা হবে বিশুদ্ধ আরবী। মানবজমিন সাধনার এই বোধ যতদিন আমাদের মধ্যে থাকবে আমাদের কোন শক্তি আলাদা করবে আগুন লাগিয়ে?

বেশ অনেকদিন আগে লুফতর রহমান দা লিখেছিল, এই সব্বার রামাদান করীম নিয়ে হামলে পড়া দেখে সে জনৈক একজনকে জিজ্ঞেস করেছিল। "রামাদান কি চাচা??চাচা,মেকুরের বাচ্ছার মতো গলা তুলে,কোন রকমে বলেছিল: রুমজানের চাচাতো ভাই।হজ্ব করে এয়েচে। নাম নিয়েছে,হাজী রামাদান!"

কি এসে গেল রমজান আর রামাদানের ভাগে! নিজের নিজের গল্পগুলো নিজের নিজের ভাষায় বানিয়ে নিয়েই বেঁচে থাকি না! নিজের শিকড়কে আঁকড়ে থেকে বাঁচার মজাই আলাদা। মাথায় রাখবেন মুসলমানি, হিন্দুয়ানী হয়ে বাঁচা না, মানবজমিনে মানুষ হয়ে বাঁচার স্বাদ ঈদের সেমাইয়ের চেয়ে ও মিঠে। 

ছোট বিধর্মী মুখে অনেক বড় বড় কথা বলে ফেললাম। ক্ষমা করবেন। ফাঁকা সময় পেলে অলীক কল্পনা করি কিনা। আপনি ও পারলে এক ফকিরের গান শুনবেন। 

"এমন সমাজ কবে গো সৃজন হবে/
যেদিন হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিস্টান,
জাতি গোত্র নাহি রবে।।

ধর্ম কুল গোত্র জাতির/
তুলবে না গো কেহ জিগির।
কেঁদে বলে লালন ফকির,
কেবা দেখায়ে দেবে।" 

রমজান মুবারক হো ♥!

©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

প্রতিরোধে, প্রতিশোধে, ৭৫এ পা: পার্টিজানদের Bella Ciao

| প্রতিরোধে, প্রতিশোধে, ৭৫এ পা: পার্টিজানদের Bella Ciao ❤ | 

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

আজ ইতালির ফ্যাসিস্ট বিরোধী লড়াইয়ের ৭৫ বছর। আজ লিবারেশন ডে। আজ ঘৃণাকে জয় করে বারুদ, বিপ্লব আর বন্ধুকে বুকে টেনে আদর করার গান 'বেলা চাও' এর ৭৫বছর। আজ ফের হিটলার আর মুসোলিনিকে ঘেন্না করার ৭৫বছর।

যদি এ প্রজন্ম ইতালির লোক সঙ্গীত "Bella Ciao, Bella Ciao" কে স্রেফ এক ওয়েব সিরিজের গান ভেবে বসে থাকে, যারা বেলা চাও গাইতো আর যে কারণে গাইতো, যেমন Money Heist এ প্রফেসরের বাবাদের মতো মানুষেরা, তাদের অসম্মান করা হবে। Resistance song কে বেলা চাও এর শত্রুরা বারবার ভুলিয়ে দিতে চাইবে। বেলা ও তার ঐতিহ্যকে বুকে নিয়ে এগোতে হবে আমাদের! ও পার্তিজানো পোরতামি ভিয়া, ও বেলা চাও, বেলা চাও, বেলা চাও চাও চাও!

না হে ভায়া, নেটফ্লিক্সের Money Heist এর জন্যই ইতালীয় গান 'বেলা চাও' বাঁধা হয়নি। শ্রমিকের গান, কৃষকের গান, মাঝির গান, মল্লার গানের মতোই স্রেফ চুরির গানেই সীমাবদ্ধ নয় এ বেলা! বেলা প্রতিরোধ ও। বেলা প্রতিশোধ ও। বেলা নিরপেক্ষ নয়। বেলা ফ্যাসিস্টদের ঘেন্নাপিত্তি করে, বেলা প্রেম করে, বন্দুক চালাতে চালাতে প্রেমিকার ওষ্ঠে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দিতে পারে, দিনের শেষে বেলা পার্টিজান ও! 

'বেলা চাও' মূলত ইতালির কৃষকদের লোকগান ছিল। ধানক্ষেতে আগাছা নির্মূল করার সময় গাওয়া হতো। ১৯৪৩ এবং ১৯৪৫ সালে ইতালিতে ফ্যাসিবাদের আগ্রাসন চলছে। মুসোলিনির বিরুদ্ধে গৃহ যুদ্ধ বা পক্ষবাদীদের ভাষায় মুক্তি যুদ্ধের সময় এই গানটি ফ্যাসিবাদদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা এবং প্রতিরোধের সঙ্গীত হিসাবে ব্যাবহার করা হয়। ফ্যাসিস্টরা আগাছাই তো। ওদের নির্মূল করতে বেলা চাও, বেলা চাও, বেলা চাও। ফ্যাসিবাদের পতন হয়, পার্টিজান বা পক্ষবাদীরা বিজয়ী হয়, পাড়ায় পাড়ায় সবাই একসাথে এই গান গাইতে থাকে। প্রতিশোধের গান, প্রতিরোধের গান। মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ঘৃণ্য আগাছা নির্মূল করার গান। 

বেলা’ শব্দের অর্থ সুন্দরী, আর ‘চাও’ শব্দের অর্থ বিদায়।  ‘বেলা চাও’ শব্দের অর্থ বিদায় সুন্দরী। বেলা এখানে পার্টিজান আন্দোলনের যোদ্ধাদের মাতৃভূমি। সুন্দরী মাতৃভূমি। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত পার্টিজান আন্দোলনের যোদ্ধাদের  শেষমুহূর্তের আকুতি থাকতো, মৃত্যুর আগে এই গান গলা ছেড়ে গাবে। সুন্দরী প্রিয়তমা, ইতালিকে ছেড়ে যাওয়ার আগে তার বন্দনা করে যাবে তার প্রেমিক। বিদায় সুন্দরী।

এরপর বিশ্ব জুড়ে ফ্যাসিবাদ বিরোধী গান হিসেবে দাবানলের মতো এর সুর আর কথা ছড়িয়ে পরে। প্রত্যেকে নিজের নিজের লড়াইয়ের শব্দ বসিয়ে নেয় বেলা চাও এর পরে। বিশ্বের অন্য অনেক দেশের আন্দোলনের পাশাপাশি স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধের সময়ও গানটির অনুবাদ ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। মধ্যপ্রাচ্যের আরব বসন্ত, লেবাননের সংগ্রাম, প্যালেস্টাইন, কংগো, ফ্রান্স - Money Heist এর Salvador Dali মুখোশ পরে রাষ্ট্র, পেটোয়া আমলা, মন্ত্রী, সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিশোধ গড়ে তোলার অস্ত্র হয়ে দাঁড়ায় বেলা চাও!

বছরের পর বছর কোন সিনেমায়, কোন ওয়েব সিরিজে, কোন বিদ্রোহী রণ-ক্লান্তের শেষ ইচ্ছেয়, কোন বিপ্লবের অগ্রভাগে যে যেখানে আমাদের লড়াটা লড়ে যাচ্ছে তাদের জন্য বেলা চাও টা গেয়ে যেতে পারি। আরো ৭০০ বছর আমরা যেন বেলাকে উদযাপন করে যেতে পারি। আরো ৭০০ বছর যেন ফ্যাসিবাদকে পরাস্ত করতে পারি গিটার আর গ্রেনেডে। মুক্তি যুদ্ধ শেষে গোধূলিবেলায় প্রিয় বন্ধুর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই গান গেতে গেতে এগিয়ে চলতে পারি যেন কোন নতুন ভোরে। 

উনা মাতিনা মি সান জুয়েলিয়াতো, ও বেলা চাও, বেলা চাও, বেলা চাও চাও চাও/
উনা মাতিনা মি সান জুয়েলিয়াতো, এ ও ত্রোভাতো লিনভাজোর।

প্রতিরোধ দীর্ঘজীবি হোক। 

©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

স্মৃতির বয়াম

| স্মৃতির বয়াম |

#একটিঘোষণা

------ ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

যবে থেকে টের পেলাম যে আমার চারপাশের সুপারহিরোরা আসলে সব্বাই কাল্পনিক আর বুড়ির চুলে কোন বৃদ্ধার চুল ছিল না আর একটাকার পেপ্সিটা ড্রেনের জলের বদলে মাছের বরফ দিয়ে বানানো হতো, ততক্ষণে অনেকটা বড় হয়ে গেছি। একা একা প্লেনে করে অনেকটা দূরে যেতে শিখে গেছি, পকেটমানির সমান টাকা একদিনে খরচা করতে পারার সুযোগ পেয়ে গেছি।

যবে থেকে উপলব্ধি করলাম আমার বুক পকেটে আর ফাউন্টেন পেনের দাগ লাগে না, হাঁটু ফুটবল খেলতে গিয়ে ছোড়ে যায় না, ব্যাট করা নিয়ে কোনদিন কারো সাথে ঝগড়া বাঁধে না, আমি টাইম মেশিন খুঁজতে শুরু করলাম একটা৷ ওই খোঁজ আজ ও চলছে৷ কিন্তু এর মাঝে না না দৃশ্য, ছবি, আমাদের বেড়ে ওঠার দস্তাবেজগুলো জমতে শুরু করলো। টাইম মেশিন পেলে ও, ওই পাহাড় পরিমাণ স্মৃতি তো স্রেফ Memory Jar এই আঁটবে। 

Memory Jar এর বাংলা হয়? বারান্দায় বসে ভাবতে ভাবতে মাথায় এলো, স্মৃতির বয়াম। ওই জাদুর বয়ামগুলোতে আজকাল কেউ কিছু রাখে? রুপকথার গল্পে ছিল, অনেক স্মৃতি অনেক অনেক দশক ধরে জমিয়ে রাখা যায় ওতে । দিদার বানানো আচার, মোরোব্বা, নারু, প্রেমিকার চিঠি, বন্ধুর সাথে প্রথম সিগারেট, বাবার হাতে প্রথম মার খাওয়া, মায়ের হাতে রান্না করা রোববারের মাংস আর জন্মদিনের পায়েস! 

আমরা যারা রুপকথায় আজ ও বিশ্বাসী, আমরা যারা ম্যাজিকে আস্থা রাখি, আমরা যারা অরণ্যদেব থেকে হিজিবিজবিজের নম্বর রাখি মোবাইলে, এই পেজটা তাদের জন্য। 

আমি নিজেকে পরিচয় দিই Nostalgist বলে, নস্টালবিলাশী। এটাকেই পেশা করতে চেয়েছিলাম। সে তো অমলকান্তি ও রোদ্দুর হতে চেয়েছিল। সে যাক গে! 

ইতিমধ্যে অনেকেই আমার আমন্ত্রণ পেয়েছেন এই স্মৃতির বয়াম পেজটি লাইক, ফলো এবং শেয়ার করার জন্যে। প্লিজ করবেন। এটা আমি না, নস্টালজিয়ার দোহাই দিয়ে বললাম। পেজটিতে স্মৃতির ভিডিও, ৯০'এর মুহুর্ত, টেলিভিশন সিরিয়ালের ক্লিপ, বিজ্ঞাপন, অন্যের লেখা, হারিয়ে যাওয়া শিল্পীর আঁকা, সাক্ষাৎকার দিয়ে ভরিয়ে দেওয়া হবে। প্যান্ডোরার বাক্স, ক্যালাইডোস্কোপ, ওপেন টি বায়োস্কোপ ঠেসে ঢুকিয়ে দিলাম এই পেজে। চোখ রাখুন। 

কাজের মাঝে এখানে ও সময় দেবো। স্মৃতি থেকে হিজিবিজি লিখে যাবো। মনখারাপের বিকেলে আজ ও কেউ গলা সাধে? চিলেকোঠায় আজ ও কেউ দুপুরবেলা সত্যজিৎ রায় পড়ে? আজ ও কেউ ৭৮তম বার সোনার কেল্লা দেখে? আজ ও কেউ পাপাঙ্গুলকে মনে রেখেছে? এই পেজটা তবে আপনার জন্যে। 

ভালো থাকবেন। স্মৃতির বয়াম থেকে যা মন চায় নিয়ে শেয়ার করতে থাকবেন। ভালোবাসা রেখে যাবেন বয়ামে। ❤

------ ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
Admin, Smritir Bawyaam- স্মৃতির বয়াম

LIKE & FOLLOW THIS PAGE

https://www.facebook.com/Smritir-Bawyaam-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A7%83%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A6%AE-111278730565470/

মা তুঝে সালাম

| মা তুঝে সালাম ❤ |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ 

নিকিতা আর বিভূতি রাহুল আর সিমরন নয় কিন্তু ওদের প্রেমকাব্যটা কোন অংশে কোন সিনেমার চেয়ে কম নয় ৷ পুলওয়ামা থেকে গুলিতে গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে যাওয়া মেজর বিভূতি শঙ্কর ধৌন্দিয়ালের নিথর দেহটা যেদিন দেহরাদুনে ফিরলো, নিকিতা অপলক দৃষ্টিতে কফিনের দিকে তাকিয়েছিল। মাত্র এক বছর আগে ৩৪ বছর বয়সী আর্মি মেজরকে বিয়ে করেছিল নিকিতা কৌল। কাশ্মীরি পন্ডিত পরিবারের মেয়ে। খুব ছোটবেলায় কাশ্মীর থেকে মা বাবার হাত ধরে পালিয়ে আসতে হয়। 

যেদিন পুলওয়ামায় সন্ত্রাস হামলা ও এনকাউন্টারে বিভূতি নিহত হয়, সেদিনই 
ও দীর্ঘক্ষন ফোনে নববিবাহিতা স্ত্রীর সাথে কথা বলে৷ শেষ কথা। গোটা ভারত দেখেছিল সেদিন নিকিতা বলে এক বছর ৩০এর মেয়েকে প্রেমিকের, বন্ধুর, বরের কফিনবন্দি দেহকে ধরে কখনো কাঁদছে, কখনো মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, কখনো চুমু খেয়ে দিচ্ছে নিথর দেহটায়, কখনো চিৎকার করে স্যালুট দিতে দিতে বলছে জয় হিন্দ তারপর কান্নায় ভেঙে পড়ে বলছে, বিভূ আই লাভ ইউ! 

একরত্তি ওই বউটার অসহায়তা দেখে সেদিন কেউ বোধহয় চোখের জল ধরে রাখতে পারেনি। চারপাশে নেতা-আমলা-স্বজন-বন্ধু ঝরঝর করে কেঁদে ফেলেছিল। কিন্তু নিকিতা তো সৈনিকের প্রেমিকা ছিল৷ ও নিজে ও জানতো ওর প্রিয় বিভূর প্রথম প্রেম ছিল মাতৃভূমি, ওটাই তো ওদের প্রথম ভ্যালেন্টাইন। ওর জন্যই তো সবটা দেওয়া যায়। নিজের মাটির গন্ধ আর দেশের পতাকা বুকে চলে যাওয়া যায় হাসতে হাসতে।

নিকিতা আর বিভূতির প্রেমটা আর পাঁচটা লং ডিস্টান্স প্রেমের গল্প ছিল না। পারস্পরিক বিশ্বাস ছাড়া ও দুজন দুজনকে উদ্ধুদ্ধ করতো। নিকিতা বিভূতিকে প্রেম শেখাতো, বিভূতি ওকে নেশা লাগিয়ে দিতো দেশাত্মবোধের। 

বিভূতি চলে যাওয়ার এক মাসের মধ্যে নিকিতা ঠিক করে এভাবে কেঁদে কেঁদে জীবন চালিয়ে দেবে না। অনেকে নিকিতাকে বলে আবার একটা বিয়ে করতে, কতোই আর বয়স! নিকিতা এসব কিছু না করে সিদ্ধান্ত নেয়, সে ও সেনাবাহিনীতে যোগ দেবে। প্রস্তুতি নিতে শুরু করে এন্ট্রান্স পরীক্ষার। এই বছরের শুরুতে পেয়ে ও যায়। সেদিন বিভূতির সেনাবাহিনীর পোষাকটা জড়িয়ে ধরে ও অনেকক্ষণ বিড়বিড় করে কিসব যেন পোষাকটাকে বলেছিল। তারপর কাজে যোগ দিয়েছিল বিভূতির মতো। 

আমরা সিনেমা হল থেকে বেরিয়ে আসার পরেই অন্যকিছুতে ব্যাস্ত হয়ে পরি, তার ও কম সময়ে পুলওয়ামা, মেজর বিভূতি, নিকিতা নামগুলো ভুলে গেছিলাম। মনে পরলো আজ হঠাৎ নিকিতা ফের শিরোনামে আসায়। খবরের দেখলাম ৩০ বছর বয়সী এক ঝলমলে মেয়ের হাসিমুখ। নিজের জমানো টাকা আর মাইনে থেকে ১০০০টা পিপিই কিনে হরিয়ানা পুলিশকে দান করবে ঠিক করেছে। সেনাবাহিনীর সাধারণ র‍্যাংক এ অতো মাইনে নয়। কিন্তু তাতে কি এসে গেল। ওর বিভূ বলতো, দেশকে ভালোবাসায় আবার লাভ-ক্ষতি দেখতে আছে নাকি!

নিকিতাকে জিগ্যেস করা হয়েছিল এই দানের কারণ। ও বলে, সেনাবাহিনী এই যুদ্ধে তো কিছু করতে পারবে না। এই যুদ্ধ লড়ছে ডাক্তাররা। কিন্তু ওদের ছাড়া ও পুলিশগুলো দিনরাত ডিউটি করছে, লোককে বকা দিয়ে ঘরে পাঠাচ্ছে, বাজার করে দিচ্ছে, পাহাড়া দিচ্ছে, ক্লান্ত হয়ে রাস্তার ধারেই খেয়ে ঘুমিয়ে নিচ্ছে - ওদের ও তো সুরক্ষিত রাখতে হবে। ওদের মধ্যে ও বিভূতির মতো কেউ কেউ আছে নিশ্চয়ই। বাড়িতে কোন নিকিতা অপেক্ষা করছে নিশ্চয়ই। ওদের ও তো বাড়ি ফিরতে হবে মহামারী শেষে। 

দেশমাতৃকার কোন বয়স বা অবয়ব আছে? সেটা ৩০বছরের কোন মেয়ে হতে পারে না? নারী শক্তির পোস্টার গার্ল মফস্বল শহরের এই মেয়ে হতে পারেনা? একে দেখে গলার কাছে দলা পাকানো কি জানি কি নিয়ে অস্ফুটে বলা যায় না? মা... তুঝে... সালাম! 

©------ ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

পুলিশ বড্ড অসহায়

| পুলিশ বড্ড অসহায় |

#Howrah

------ ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

পুলিশ বড্ড অসহায়। ওর পাশে দাঁড়ান। মহামারীর সময় ১৪-১৫ ঘন্টা ডিউটি দিচ্ছে, তারপর রিলিফ এর জন্য অপেক্ষা করছে, গাড়ি পেলে ভালো নয়তো রাস্তার একপাশেই খাবার খেয়ে নিচ্ছে, সেরকম দেখলে ভ্যানের পিছনে শুয়ে ও নিচ্ছে তারপর ফের ডিউটি। 

পুলিশ বড্ড অসহায় ওর পাশে দাঁড়ান। ওকে
হয়তো ডাক্তারদের সমপরিমাণ কাজই গাধার মতো করতে হয়, সংক্রমণের ও ভয় নিয়ে রোজ বাজার, হাট, হাসপাতালে যেতে হয়, প্রবীণ নাগরিকের বাজার ও করে দিতে হয়, ওকে মাস্ক ও সেলাই করতে হয়, ওকে দরকার পরলে নিজে ড্রাইভ করে রোগী পৌঁছে দিতে হয়, ওকে লকডাউন রক্ষা করতে কোন ছোকরাকে লাঠি পেটা ও করতে হয়। 

কিন্তু এতো কিছু করার পরে ও পুলিশ বড্ড অসহায়। ওদের ডাক্তারের মতো সম্মান নেই, 
সেনার মত ক্ষমতা নেই, সিবি আই এর মতো দাপট নেই। ধর্মের আড়ালে লুম্পেনবাজি হলে ও পাল্টা দেওয়ার সাধারণত অর্ডার নেই।

আজ কলকাতার একটি জায়গার ভিডিও দেখলাম। পুলিশকে ১০০-২০০ মানুষ ঘিরে ফেলে মারছে। এ নিয়ে কি লিখি? যারা এই অবস্থায়, স্রেফ লকডাউন পালন করতে বলেছে বলে নাকি পুলিশকে দৌড় করাতে করাতে মারতে পারে তারা কি প্রবল এক্কাট্টা আর ক্ষমতাসীন সেটা ভেবে স্তম্ভিত হয়ে যাচ্ছি। প্রতি এলাকাতেই হয়তো এরকম বাজার বসে, পুলিশ তিনবার লাঠির বারি মারলে সুরসুর করে ভেগে যায় সব। আসলে মধ্যবিত্তের এটাই তো পরিচয়। এক লাঠির ভয়েই ঘরে। কিন্তু এরা কারা? ভয় নেই কেন? জেলে যাওয়ার, কেন্দ্রীয় বাহিনী নামার, জল কামানের, রাবার বুলেটের ভয় নেই কেন? সত্যি কি ওই হায়দ্রাবাদের নেতার হুমকি? যদি ১৫মিনিটের জন্য পুলিশ সরিয়ে দেওয়া হয়, বুঝে নেবে? 

পুলিশ বড্ড অসহায়। ওরা চাইলে অনেক কিছু করতে পারে বেয়াদবি আটকাতে, ওদের সেই প্রশিক্ষণ আছে। ওরা চাইলে লুম্পেনদের ধরে মুখ ফাটিয়ে লকআপে ভরতে পারে, ওদের সেই জোর আছে। ওদের খোঁচড় আছে যারা ধরে ধরে বলে দিতে পারে কারা অশান্তির পিছনে, কারা পুলিশ মারার পিছনে, কারা লোক ক্ষেপানোর পিছনে। পুলিশ বড্ড অসহায়, ওরা প্রত্যেকে সিংঘম এর মতো নজির সৃষ্টি করতে সক্ষম হলে ও কোনদিন সেটা লাল ফিতের চাপে করে উঠতে পারে না। আমরা একটা দিন পুলিশের সন্তানকে সুযোগ দিতে পারি না টিভিতে বাবার রাম ক্যালানো দেখে  আনন্দে চিৎকার করতে - মাই ড্যাডি স্ট্রংগেস্ট। মাই ড্যাডি স্ট্রংগেস্ট। 

পুলিশ বড্ড অসহায়। ওর পাশে দাঁড়ান। ওর ওই মারের ক্ষত ভাগ করে নিন। 

©--- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

ইরফান ভিডিও র জন্য বানানো স্ক্রিপ্ট

| ইরফান |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

ঠিক যখন মনে হচ্ছে আর ভালো লাগছে না, ইরফান খান ঠিক করলেন মন মেজাজটা আরো খারাপ করে দিয়ে চলে যাবেন। অবশ্য এর দাওয়াই ও উনিই দিয়ে গেলেন। সারাদিন ওনার ছবিগুলো দেখে আবার বাঁচতে চাওয়ার অদম্য ইচ্ছে। ঠিক ওরই মতো৷  

অজাতশত্রু কি তবে একেই বলে? Life in a Metro র কংকনার মতো মুম্বাইয়ে একা থাকে যে মেয়েটি সে ও কাঁদছে আবার life of Pie বা Namesake দেখে ফ্যান হয়ে গেছিল যে ইউরোপীয় যুবক সে ও কাঁদছে। বৃদ্ধ বাবার সাথে যে অষ্টাদশী কন্যা থাকতো, তার ও টপটপ করে জল পরছে চোখ দিয়ে। মিস করছে ইংরেজি সাহিত্যের সেই ছাত্র যে প্রতিটা Shakespearean চরিত্রে ইরফানকে খুঁজে পেত, বিশ্বাস করতো ইরফান সব চরিত্রে অভিনয় করতে পারে। রান্নাঘরে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলছে কোন এক গৃহবধূ, ওর ও তো ইচ্ছে ছিল Lunchbox এর নিমরত কৌরের মতো ৫৩ বছর বয়সী কাঁচা পাকা চুলের ইরফানের সাথে প্রেম করে। সাত খুন মাফের ইরফানের মতো হয়তো কোন কবি চরিত্র বাংলায় বলবে, পাগলী, তোমার সঙ্গে ধুলোবালি কাটাব জীবন। 

সব তারকার ফ্যানেরাই পাগল হয়। কেউ ছেলেমানুষের মতো ভক্তি করে, কেউ আকাশকুসুম কাস্টিং করে রাখে গুরুর। হাজারো রোলে ইরফানকে কাল্পনিক কাস্ট করে রেখেছিল কোন একুশ বছর, কোন বিখ্যাত পরিচালক, কোন নবাগত চিত্রনাট্যকার, স্ট্রাগলিং নাট্যকার। আচ্ছা ঋষিকেশ মুখার্জির 'আনন্দ' ছবিতে আনন্দের রোলে কিরকম লাগতো, কিংবা A Wednesday তে নাসিরের রোলে বা হেমলক সোসাইটির পরমব্রতের চরিত্রে?

"Real Khan In Bollywood" বলতে একজন খানকেই বুঝতাম। যে বলিউড হলিউড সমান তালে দাপিয়ে বেড়াতেন। যার মন্ত্রীমশাইদের বিয়েবাড়িতে নাচন কোদন করতে হতোনা, গাড়ি চাপা দেওয়ার দুষ্টুমি চাপা দিতে মানবিক টি শার্ট এনজিও-র নামে বিক্রি করতে হতো না, ছবি রিলিজের আগেই সামাজিক বিষয়ে গুরুগম্ভীর টুইট করতে হতো না। এই খান সমস্ত নায়কের ম্যানারিজম স্টিরিয়োটাইপ খান খান করে দিয়ে রাজ করে গেলেন। 

অবশ্য এই খান সচারচর নামের শেষে খান ব্যবহার করতেন না। অনায়াসে বলে দিতেন "যদি তোমার ধর্ম মানুষে মানুষে বিভেদ তৈরি করে, রক্ত ঝরায় তবে তোমার ধর্ম নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। বদলানোর ও।"

ইরফান অসুস্থ ছিলেন কিন্তু লড়াকু ছিলেন। বারবার যখন উনি বিদেশে উড়ে যাচ্ছিলেন, শেষ দিন অবধি ভাবতেন এবার সব ঠিক হয়ে যাবে। তারপর জ্যায়সে ফিলমো মে হোতা হে, ফিরে আসবেন রাজার হালে। কিন্তু ইরফান তো হ্যাপি এন্ডিং এর ওই স্টিরিওটাইপ এ কোনদিন ছিলেন না। একের পর এক চরিত্রে অভিনয় করে নিজেকেই নিজে চ্যালেঞ্জ করে যেতেন রোজ। নতুন নতুন গল্প বলে যেতে পছন্দ করতেন। কতো কি করার ছিল বাকি। কতো চরিত্র একা হয়ে গেল। 

আর কে আসবে নতুন গল্প বলতে। অন্ধকার সময়ে ইরফান কে আমরা যারা রোদ্দুরে,আলোয়, আশাবাদে আঁকড়ে বাঁচছিলাম, তাদের ছেড়ে এত তাড়াতাড়ি চলে যাওয়ার কোন কারন থাকতে পারে না। 

আপনি প্লিজ ফিরে আসুন জলদি কোটরে পরা চোখ আর ওই অমায়িক হাসিটা নিয়ে। প্লিজ৷ জীবনের এই স্ক্রিপ্ট রাইটারকে বলুন না প্লিজ, এই বিচ্ছিরি বাজে পচা টুইস্ট টা না দিয়ে প্লটে আপনাকে ফিরিয়ে আনতে। এতো জলদি আপনি চলে যাবেন? ঝরঝরে বাংলা শিখতেই হবে এবার। বাংলা ছবি করতে হবে, আনন্দ ছবির রিমেক করতে হবে, হলিউডে আরো প্রজেক্ট, আরো সাহিত্যের নায়ককে রক্তমাংসের মানুষ বানিয়ে তোলা। ইরফান ভাই, একবার, প্লিস একবার আমাদের মতো হেরো মানুষগুলোকে বলুন না,"বাবুমশাই জিন্দেগি লম্বি নেহি, বড়ি হোনি চাহিয়ে।" 

©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

ইরফান

| ইরফান |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

সব তারকার ফ্যানেরাই পাগল হয়। কেউ ছেলেমানুষের মতো ভক্তি করে, কেউ আকাশকুসুম কাস্টিং করে রাখে গুরুর। আমি ও একটা রোলে ইরফানকে কাল্পনিক কাস্ট করেছিলাম। ঋষিকেশ মুখার্জির 'আনন্দ' ছবিতে আনন্দের রোলে।ভেবেছিলাম উনি সেরে উঠলে নিশ্চিত কেউ ভাববেন ছবিটা নিয়ে। কেউ নিশ্চিত এরকম একটা রিমেক করবেন। কোথায় লাগে রাজেশ খন্না! বাবুমশাই..... 

" আরে এ ভাইসাহাব বাঙালি আছে। আমি ও বুঝি বাংলা। আমার বিবি বাঙালি আছে। লেকিন ঠিক সে নেহি বোল পাতা। ইসলিয়ে ট্রাই ভি নেহি করতা- আধা বাঙালি মে বোলনা- আমি রোসোগোল্লা ভালোবাসি, মিষ্টি দই ভালোবাসি & all ঠিক নেহি লাগতা!  একদিন পুরা শিখ লুংগা"

মুম্বাই স্টুডিওতে ছবিটা তোলার পর শেষ কথোপকথন। তারপর আর কোথাও কোন ইভেন্টে দেখা হয়নি। তারপর উনি বিদেশে উড়ে যান। Jurassic World ছবির শুটিং চলছিল তখন। তারপর অনেকগুলো সিনেমা করেন, তারপর একটা বদমায়েশ টিউমার ধরা পরে,  তারপর অনেকটা ওঠা নামা, লড়াই, আজ লড়াইটা ও শেষ। 

"Real Khan In Bollywood" বলতে একজন খানকেই বুঝতাম। যে বলিউড হলিউড সমান তালে দাপিয়ে বেড়ান। যার মন্ত্রীমশাইদের বিয়েবাড়িতে নাচন কোদন করতে হয়না, গাড়ি চাপা দেওয়ার দুষ্টুমি চাপা দিতে মানবিক টি শার্ট এনজিও-র নামে বিক্রি করতে হয় না, ছবি রিলিজের আগেই শুধু সামাজিক বিষয়ে গুরুগম্ভীর টুইট করতে হয় না।

এই খান সচারচর নামের শেষে খান ব্যবহার করে না। অনায়াসে বলে "যদি তোমার ধর্ম মানুষে মানুষে বিভেদ তৈরি করে, রক্ত ঝরায় তবে তোমার ধর্ম নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। বদলানোর ও।"

ইরফান অসুস্থ ছিলেন কিন্তু লড়াকু ছিলেন। বারবার যখন উনি বিদেশে উড়ে যাচ্ছেন, ভেবেছিলাম এবার সব ঠিক হয়ে যাবে। তারপর জ্যায়সে ফিলমো মে হোতা হে, ফিরে আসবেন রাজার হালে। কিন্তু ইরফান তো হ্যাপিস এন্ডিং এর ওই স্টিরিওটাইপ এ কোনদিন ছিলেন না। নতুন নতুন গল্প বলে যেতে পছন্দ করতেন। 

আর কে আসবে নতুন গল্প বলতে। অন্ধকার সময়ে ইরফান কে আমরা যারা রোদ্দুরে,আলোয়, আশাবাদে আঁকড়ে বাঁচছিলাম, তাদের ছেড়ে এত তাড়াতাড়ি চলে যাওয়ার কোন কারন থাকতে পারে না। 

আপনি প্লিজ ফিরে আসুন জলদি কোটরে পরা চোখ আর ওই অমায়িক হাসিটা নিয়ে। প্লিজ৷ স্ক্রিপ্ট রাইটারকে বলুন না প্লিজ, এই বিচ্ছিরি বাজে পচা টুইস্ট টা না দিয়ে প্লটে আপনাকে ফিরিয়ে আনতে।  ঝরঝরে বাংলা শিখতেই হবে এবার। আনন্দ ছবির রিমেক করতে হবে এবার। একবার আমাদের মতো হেরো মানুষগুলোকে বলতে হবে,"বাবুমশাই জিন্দেগি লম্বি নেহি, বড়ি হোনি চাহিয়ে।"

ভালো থাকবেন ইরফান খান। 

©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

২০২০টা সাল না শনি? কি যে হচ্ছে চারদিকে

| ২০২০টা সাল না শনি? কি যে হচ্ছে চারদিকে |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ 

মধ্য রাতে হঠাৎ অস্বস্তি অনুভব করায় মুম্বাইয়ের রিলায়েন্স হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো অভিনেতা ঋষি কাপুরকে। সাথে স্ত্রী নিতু কাপুর আছেন। যখন এটা লিখছি ততোক্ষণে উনি কেবিনে স্থানান্তরিত হয়েছেন। আইসিইউতে কিনা কেউ বলছেনা। 

ঋষি কাপুরের এই অসুস্থতার সত্যতা তার ভাই রনধির কাপুর স্বীকার করেছেন কিন্তু বারবার আইসিইউতে আছেন কিনা জিগ্যেস করা হলে বিস্তারিত কিছু বলেননি, স্রেফ বলেছেন উনি অসুস্থ হয়ে পরেন। তারা সকালে বিস্তারিত জানাবেন হাসপাতালের সাথে কথা বলে। 

ঋষি কাপুরের ২০১৮ সালে ক্যান্সার ধরা পরে৷ টানা দুবছর আমেরিকাতে চিকিৎসা করিয়ে দেশে ফিরেছেন কিছুদিন হলো৷ ফের রিল্যাপ্স করেছিল কিন্তু ডাক্তার বলেছিল ভয়ের কিছু নেই। 

আমরা সবাই সেই আশাতেই আছি। চিন্টু জী ফের হাসিখুশি গোলগাল মুখটা নিয়ে ফিরে আসবেন, মজা করবেন, কাপুর খানদানের পরম্পরা বজায় রেখে ভালো খাবার, ভালো পানীয় নিয়ে ফুর্তি করবেন। 

২০২০ টা বড্ড বাজে একটা বছর। খালি টেনশনে ফেলে দেয় প্রতি রাতে। 

©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

অনন্ত যাত্রাপথে একটি কাল্পনিক কথোপকথন

| অনন্ত যাত্রাপথে একটি কাল্পনিক কথোপকথন |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ 

ঋষি: যেখানে যাচ্ছি সেখানে খাবারদাবার কেমন? ভালো স্কচ পাবো? আমার কিন্তু তন্দুরিটা কেউ জ্বালিয়ে দিয়ে রোস্ট বানালে বোতল ছুঁড়ে মারতে ইচ্ছে করে। ওখানে কি আয়োজন কে জানে। দুর ভালো লাগে না। 

ইরফান: আরে চিন্টু দাদা, এই তো এলেন। প্রায় ২৪ ঘন্টা ট্রানজিটে যম সাহাব আমাকে ওয়েট করালো৷ বড় স্টার আসছে নাকি। তা বড় স্টারকে আলাদা গাড়ি দে। এই বিল্লু বারবার, পান সিং তোমারের সাথে দেওয়ার কি দরকার। ঘুম ও হলো না। ইতনা মচ্ছর।

(ঋষি অন্যদিকে তাকিয়ে উদাস মনে বসে।)

স্বগতোক্তি - বাড়ির কথা মনে পরছে। নিতু এখন ঠিক কি করছে? কাকে অনিয়মের জন্য বকা দেবে? কাল থেকে একলা হয়ে যাবে। রনবীর আর কার উপর অভিমান করবে। ছেলেটা বড্ড সরল। টুপি পরিয়ে দেয় অনেকে। ইশ যদি ভূত হয়ে ফিরে নজর রাখতে পারতাম। অবশ্য রনবীর দেখতে পেলে গন্ডগোল হতো৷ ড্যাড বলে এমন বকুনি দিতো৷ 

ইরফান আবার কথা বলছে: নিচে অতিমারী না মহামারীর জন্য জলদি হয়ে গেল৷ কোন মিনিট টু মিনিট আপডেট নেই, একশোটা ক্যামেরা নেই। একদম শান্ত, বলতে হে না, একদম পিসফুল। মুঝে তো মজা আ গায়া!

ঋষি: But I loved to get the pampering & attention. আজ ও কিরকম তোমার সেকেন্ড লিড হয়েই থেকে গেলাম। কিন্তু আমি তো স্টার। রাজ কাপুরের বংশধর, দি কাপুর ফ্যামিলির একজন। তুমি যেন এখানে ও নায়ক হয়ে গেলে। জানো ঠিক এটাই সিনেমাগুলোতে ও হতো৷ স্পেশালি অমিত সাহাব। সব জায়গায় লাইমলাইট নিয়ে চলে যেত। 

ইরফান: আরে আজব মানুষ আছেন আপনি৷ শুভ শুভ বলুন। আজ ও মুখে আসে বলে দেন। আপনার মুখে মিউনিসিপালিটির একটা টাইম কল বসিয়ে দেবো। আমির আদমি আছেন তো। তাই এসব দেখেন নি আপনি। আমাদের রাজস্থানের বাড়িতে ছিল৷ আহা কি সব দিন। বেকার বেকার এতো সময় ওয়েট করতে হলো আপনার জন্যে। আম্মি ওদিকে খাবার নিয়ে বসে। উফ কতোদিন পরে দুজনে খাবো একসাথে। 

ঋষি: তুমি কথাটা কম বলে চুপচাপ বসবে? এসি ও ঠিকঠাক কাজ করছে না। কি জ্বালা বলোতো। তার উপর জানালার ধারের সিটটা তো আগে এসে নিয়ে নিয়েছো৷ বকরবকর বকরবকর। 

(ইরফান চুপ, শান্ত চোখে দূরের দৃশ্য দেখছে। মায়ের কথা মনে পরছে, মাকে জড়িয়ে ধরার কথা। সেই দৃশ্য ভারী সুন্দর নিশ্চয়ই কিন্তু নশ্বরদের ও দৃশ্য ইহলোকে থাকাকালীন দেখার উপায় নেই। তাই হয়তো টাইট ফ্রেমের এই শটটা পাঠানো হয়েছে৷ পক্ষীরাজটা দেখতে কিরকম সেটা ও বোঝা যায় না৷) 

ঋষি: কি হলো, এরকম চুপ মেরে গেলে কেন? মরতে যাচ্ছি নাকি! কথা বলো। 

ইরফান: আজিব সটেলা আদমি আছেন। আপনার চেয়ে তো পিকুতে ওই ভাস্কর ব্যানার্জি ভালো ছিল। (একটু থেমে) বলছি আপনার ও কি চেয়ার নিয়ে আসা হয়েছে নাকি? (সেই সিগনেচার হাসিটা খ্যাকখ্যাক করে হাসতে হাসতে)

ঋষি: এই মুখ সামলে কথা বলবে। এই ড্রাইভার এর সাথে কে দিতে বলেছিল। এতো আবার মেরে দেবে দেখছি। ডেঞ্জারাস লোক। চোখ গুলো দেখো কিরকম। বাপ রে। 

ইরফান: আপনার তো চোখই দেখা যাচ্ছে না। কিরকম সানগ্লাস পরা লাল আপেল লাগছে৷ কালো চশমাটা খুলুন। এখানে কেউ আপনার অটোগ্রাফ নেবে না।

(ইরফান ভূবন ভুলানো হাসিটা হাসতে হাসতে ফের জানালার দিকে তাকালো। ঋষি কাপুর এই বাচালতার কোন উত্তর দেবে না ঠিক করেছে। কিন্তু চুপ করে থাকতে খারাপ ও লাগছে। মৃত্যুর পরে ইহলোক থেকে এই যে পরলোকে যাওয়ার রাস্তাটা সেটা অনেক আলোকবর্ষ দূরে। কি জানি কোন গাড়িতে এতো তাড়াতাড়ি পৌঁছে দেয় এরা৷ এতোদিন পরে কাপুর খানদানের বাকিদের সাথে দেখা হবে। পাপার সাথে দেখা হবে। শ্রীদেবী ও শুনেছি ওখানেই এখন। আনন্দ আর বেদনার ওলটপালট করা একটা কান্না বেরিয়ে এলো চোখে৷ )

ঋষি কাপুর ছেলেমানুষের মতো ভেউ ভেউ করে কাঁদছে। এটা ঋষি কাপুর বলেই সম্ভব৷ দুম করে রেগে যায়, হঠাৎ আবেগপ্রবণ হয়ে পরে, প্রকাশ্যে কেঁদে ফেলে তারপর জীবন কে উদযাপন! 

ইরফান : কি আংকেল! আরে দেখুন কান্ড। আরে.... মাথা খারাপ হো গয়া ক্যা! আঁসু পুছে ফেলুন। নিন টিশ্যু নিন। সব কুছ পাবেন রে বাবা। মাকে পাবেন, বাবাকে পাবেন, পুরোনো তারকাদের পাবেন, আরডি সাহাবকে পাবেন, ললিত, চাঁদনী, কিশোর দাকে পাবেন, নতুন সিনেমা প্ল্যান করতে পারবেন আর দারু ভি পাবেন, আচ্ছা ওয়ালা। ইয়ে লম্বা সফর হে কাপুর সাহাব! যেতে হবে, যেতে হবে, যেতে হবে! 

(গাড়ির রেডিও: "চলা যা তা হু কিসিকে ধুন মে... ধরকতে দিল কে তরানে লিয়ে!" বাজছে)

সিনেমাতে এই সময়টা একটা লং শটে গাড়িটার চলে যাওয়া দেখায়। লম্বা হাইওয়ে, দুদিকে ধুসর প্রান্তর, গাড়িটা একটু একটু করে মিলিয়ে যাবে। কিন্তু এটা তো সিনেমা না, এখানে কি হয়, কবে হয়, কতোদিন থাকতে হয় কেউ জানেনা। অনন্ত এক সিন্ধুপার। কেউ বলে জর্জর, ঝিল্লিমুখর রাতির মতো এক নিদ্রিত পুরী। কেউ বলে ইরফান, ঋষি কাপুরের মতো ভালো মানুষ, জীবনকে উদযাপন করতো এরকম মানুষ গেলে নাকি এ বদলে যায় উল্লাসের আড্ডাখানায়, জরা নেই, জীর্ণতা নেই, শোক নেই, শান্তির এক মালভূমি যেখানে রোজ স্বজন বন্ধুরা এসে বসে,পৃথিবীতে কাটানো কয়েকটা দিন নিয়ে গল্প করে। অনন্তকাল, অসংখ্যকাল। 

©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

দুমুঠো ভাত ডে, কাজের সুরক্ষা ডে, শিক্ষা- স্বাস্থ্যের অধিকার ডে

| দুমুঠো ভাত ডে, কাজের সুরক্ষা ডে, শিক্ষা- স্বাস্থ্যের অধিকার ডে |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

মহামারী শেষে পৃথিবীর প্রায় ১৬ কোটি অসংগঠিত ক্ষেত্রের সাথে যুক্ত শ্রমিক কাজ হারাবে। ভারতের নিরিখে প্রায় এক কোটি কাজ। আচ্ছা এখন তো রামজান মাস, খোঁজ নিয়েছেন ওই যে ছেলেটা রাস্তায় কাবাব বিক্রি করতো ও কেমন আছে? বা পুরীতে বীচের ধারে যে মাছ ভেজে দিতো৷ দার্জিলিং এ যে মাংকি টুপির দোকান দিয়েছিল সে আর ওই যে কেরালা মুম্বাই গুরুগ্রামে উঁচু উঁচু ফ্ল্যাট বানাতো যারা, তারা? 

এ এক অদ্ভুত পয়লা মে। যারা সবকিছুকে বেসরকারি করে দাও বলে চেঁচাতো তারা নিশ্চুপ। কোন বেসরকারি কোম্পানি এগিয়ে আসেনি, পোস্ট অফিস সারা দেশে কাজ চালিয়ে গেছে। সেই পোস্টাল ডিপার্টমেন্ট যাদের রুগ্ন করে দেওয়া হচ্ছে বেসরকারি ব্যাংককে জায়গা করে দিতে। কাজ তো এসবিআই এর মতো ব্যাংক ও টানা করে চলেছে, ওই যেখানে গেলে নাকি স্রেফ লাঞ্চ ব্রেক চলে৷ আশা কর্মী যাদের ন্যায্য দাবীর আন্দোলনে লাঠি চালিয়েছিল পুলিশ তারা ফুল দিয়ে স্বাগত জানাচ্ছে ওদের এখন। বিএসএনএল টানা পরিষেবা প্রদান করে চলেছে, এয়ার ইন্ডিয়ার কর্মচারীরা গোটা পৃথিবী থেকে ভারতীয়দের ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে আসছে এটা জানার পরে ও যে তাদের কোম্পানি বিক্রি করে দেবে সরকার, চাকরি অনিশ্চিত হয়ে যাবে, এই পয়লা মে ওদের কুর্নিশ। কুর্নিশ সেই সমস্ত সরকারি হাসপাতালের স্বাস্থ্য শ্রমিকদের যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছে, কুর্নিশ পরিযায়ী শ্রমিকদের যারা কেউ মাইলের পর মাইল হেঁটে বাড়ি ফিরেছে। যাদের এখনো হিন্দু বা মুসলিমে ভুলিয়ে রাখা হয়েছে। বাড়ি না ফিরে ওরা যদি রাষ্ট্রকে ঘেরাও করতো? 

ভুলিয়ে রাখাই ভালো এদের। শ্রমিক হিসেবে চিহ্নিত না করে হিন্দু মুসলমানে ভাগ করে মন্দির মসজিদের রাখাই ভালো এদের। এরা যেদিন দুনিয়ার মজদুর হিসেবে নিজেকে ভাবতে শুরু করবে সেদিন সব হিসেব ওলট-পালট হয়ে যাবে। পয়লা মে সেদিন হয়ে যাবে দুমুঠো ভাতের দাবীর ডে, কাজের সুরক্ষা দাবীর ডে, শিক্ষা- স্বাস্থ্যের অধিকার দাবীর ডে।

ফঞ্চুদা আমাদের এলাকায় রিকশা চালাতো। রোজ, ৩৬৩ দিন। বাকি দুদিন ছুটি নিতো। নিতোই। সে রিকশার সামনে কামান তাক করলে ও চালাবে না। একদিন মে ডে আরেকদিন বিশ্বকর্মা ডে। প্রথমদিনটা ফঞ্চুদার কাছে প্রাতিষ্ঠানিক ছিল আর অদ্ভুত ভাবে দ্বিতীয় দিনটা ছিল হক বুঝে নেওয়ার, দামি পানীয় কিনে সাহেব সাজার, সাউন্ডবক্সের আস্ফালনে আশেপাশের সবাইকে বুঝিয়ে দেওয়ার - Have Not দের ও একটা দিন আছে। ফঞ্চুদা বলতো পয়লা মে বিলেতি ঠাকুরের জন্য, আর বিশ্বকর্মা দেশী। তারপর চোখ মেরে সন্ধেবেলা নেমতন্ন করতো ঠেক এ। 

মে দিবসের জয়গান যদ্দিন শহীদ বেদী টু জন হেনরি ভায়া পল রবসনে সীমাবদ্ধ থাকবে, তদ্দিন শ্রমিক নিজেকে হিন্দু বা মুসলিমের দলে নাম লেখাবে। কারণ পল বা জন আসলে ওদেশের ফঞ্চুদাই, ছাঁটাই হয়ে যাওয়া শ্রমিকটা, বাড়িতে বসে যাওয়া মুটেটা। আপনি কোনদিন সেলিব্রেটই করেননি ওকে৷ শ্রমিকই তো সবচেয়ে বড় জাত আর ধনী এবং দরিদ্র সবচেয়ে বড় দুটো ধর্ম। বাকি যা তা তো Divide and Rule সাবান কলের ন্যাংটো শ্রমিকের তেড়ে আসা আটকাতে।

 আজ "হোপলেস কেস, আধমরা, লাথখোর ছেলে, খুচরো চিটিংবাজ, উটকো দোকানদার, খিদিরপুর, একবালপুর, শ্রীরামপুর, সীতাভোগ, লক্ষীকান্তপুর, কাঁটাপুকুর, সোনাগাছি, গরানহাটা, ভাল্লুকপাড়ার মাগ, হিজড়ে, আলবাল পদ্যগদ্য লেখকদের একসাথে খেলা ভাঙার খেলার দিন। ফুঞ্চুদাকে আজ বোঝানোর দিন মে ডে মানে হেব্বি কোন রাশভারী ফরেন সেলিব্রেশন না, মে ডে মানে পাঁচ বচ্ছর অন্তর অন্তর আসে যে ভোটমারানিরা তাদের কলার চেপে দুমুঠো ভাত ডে, কাজের সুরক্ষা ডে, শিক্ষা- স্বাস্থ্যের অধিকার ডে বলার দিন। হঠাৎ একদিন মহামারীর কারণে রিকশা চালানো বন্ধ হয়ে গেলে, রাষ্ট্র যেন ফুঞ্চুর বাড়ি এসে চাল-ডাল-তেল দিয়ে যায়, সামান্য হাতখরচ দিয়ে যায় সেটা মনে করানোর ডে। ডে মানে দিন। নতুন এক সূর্য ওঠার দিন। 

©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

জয় বাবা মানিকনাথ

| জয় বাবা মানিকনাথ |

#সত্যজিৎ১০০ #২মে

----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ 

"পরশু তো ষষ্ঠী, পরশুর মধ্যে কি আপনার কাজ শেষ হয়ে যাবে ?"

পৃথিবীর আর কোন জাতি এই লাইনটা শুনে প্রবাসে বসে দুর্গাপুজোর ঠিক আগে আগে Homesick হয়ে পরতে পারে? বাঙালিরা পারে। বাঙালিরাই বোধহয় একমাত্র পারে সম্মিলিত ভাবে চোয়াল শক্ত করতে "হয় এর বদলা নেবো নয়তো গোয়েন্দাগিরি ছেড়ে দেবো" শুনে। বাঙালিরাই তো বলতে পারে আবিষ্কারের আনন্দে, "আছে, আছে আমাদের টেলিপ্যাথির জোর আছে"।

আজ ও বিদ্রোহে বিপ্লবে কেউ বলতে পারে, "দড়ি ধরে মারো টান, রাজা হবে খানখান।" বাঙালিদের আপনি যতোই Welldone, Great Job Bro, Super Performance বলে প্রশংসা করুন না কেন, একটা দারুণ কাজের পরে স্রেফ একবার পিঠ চাপড়ে "সাবাশ তোপশে" বলে দেখবেন। অস্কার হাতে তুলে দিলেন যেন। এসব পাগলামির জন্য যে দায়ী আজ তার জন্মদিন। আজ বাঙালির শিক্ষক দিবস ও বটে। সত্যজিৎ রায়ের ১০০ বছর শুরু হল। 

যার ছবি দেখতে দেখতে সিনেমার ভূত চাপে, যার গল্প পড়তে পড়তে লেখার দত্যি আসে খাতায়, যার আঁকা রোজ চ্যালেঞ্জ করে যায় আমাদের শিল্পকর্মকে, যার করা সুর শুনে আজ ও গায়ে কাঁটা দেয়  আজ তার জন্মদিন। আজ র‍্যাক্সিট, ক্যাপ্টেন স্পার্ক, ডাকু গন্ডারিয়া, তারিণী খুড়ো, অনুকুল, মন্দার বোস, অপু, দুর্গা, পিকু, রুকু, মুকুলকে প্রফেসর শঙ্কুর টাইম মেশিনে চাপিয়ে ১/১ বিশপ লেফ্রয় রোডের Summer camp এ নিয়ে যাওয়ার দিন। সবুজ এম্বাসাডর চেপে জটায়ু খাবারদাবার নিয়ে আসবে হগ মার্কেটের কলিমুদ্দিদের  দোকান থেকে, ভূতের রাজার ভোজ বসবে দুপুরে, প্রহ্লাদ সব্বাইকে পরিবেশন করে দেবে। সারাদিন আমরা আলকেমি, প্ল্যানচেট শিখবো, গুপি গান শেখাবে, সিধু জ্যাঠা যত্ন করে বই সংরক্ষণ শেখাবে, বনবিহারী বাবু তার র‍্যাটেল স্নেকটাকে নিয়ে এসেছে, বেনারসের ঘোষাল বাবু এসেছে আফ্রিকার রাজা আর ওই সোনার গনেশটা নিয়ে। মন্দার বোস তার উজবেকিস্তানের উট ধরার গল্প বলবে, মনমোহন মিত্র বলবে সভ্যতার সংকট নিয়ে, জটায়ু নিজের সাম্প্রতিকতম উপন্যাস "কোরোনার কামড়" এর প্রথম পাতায় সই করে দেবে। বিরিঞ্চি বাবাকে ও ডাকা হবে সন্ধের দিকে৷ সূর্য বিদ্যা আয়ত্তে রাখা জরুরি। 

প্রতিপক্ষ যতোই দুর্ধর্ষ দুশমন হোক না কেন, বাঙালির মগজাস্ত্রের কাছে সে ভ্যানিশ হবেই। এই যুদ্ধ বিদ্যা যে শিখিয়েছিল সেই দ্রোণাচার্যের আজ ১০০ বছর হলো। অবশ্য পয়েন্ট ৩২ বোরের, ছটা গুলি থাকে সেই কোল্ট পিস্তল ব্যবহার ও সেই শিখিয়েছি। অ্যানাইহিলিন, মিরাকিউরল, নার্ভিগার, অমনিস্কোপ, স্নাফগান, ক্যামেরাপিড, লিঙ্গুয়াগ্রাফ বের করে ঠাঁই ঠাঁই ঠাঁই ঠাঁই ঠাঁই করে চালিয়ে দেওয়া যে শিখিয়েছিল আজ তার জন্মদিন। 

যে মেমরি গেম খেলার ছলে শিখিয়েছিল রবীন্দ্রনাথ, কার্ল মার্কস, ক্লিওপেট্রা, অতুল্য ঘোষ, হেলেন অফ ট্রয়, শেক্সপিয়ার, মাও শেতুং আজ তার জন্মদিন। ত্রিনয়ন ও ত্রিনয়ন এট্টু জিরো মানের খোঁজার হোমটাস্ক দিতো যে স্যার, আজ তার জন্মদিন। যে প্রতি গরমের ছুটিতে ফেলুদা, তোপশে, লালমোহন বাবুর সাথে আমাকে ও বেড়াতে নিয়ে যেত নানান জায়গায় তারপর লালমোহন বাবুর কথায় হাইলি সাসপিশাস কিছু টের পেয়ে ঘটে যেত কোন থ্রিলিং এডভেঞ্চার, আজ তার একশোতম বছর।

নীল মাথাতে সবুজ রঙের চুল ওরা পাপাঙ্গুল, পিপলিবিলের ধার, ডং, মোল্লা নাসিরুদ্দিনের আজব দুনিয়ার সাথে আমার মাতৃভাষায় পরিচয় করিয়েছিল, উপহার দিয়েছিল তোড়ায় বাঁধা ঘোড়ার ডিম, চিলেকোঠায় শুনিয়েছিল লিমেরিক, রামপাগলের গান, আদ্যি বুড়োর পাদ্যি আজ সেই ইয়া লম্বা লোকটার জন্মদিন। 

যে শিখিয়েছিল দুপুরের খাওয়ার পরে একটা খয়ের ছাড়া মিঠে পান খেতে আর ভাবতে ভাবতে সিগারেটের রিং ছাড়তে তার জন্মদিন আজ। সিগারেটের প্যাকেটে পৃথিবীর সর্ব প্রথম Statutory warning, "খাবার পরে একটা করে", ওটা ও তো ওরই লেখা। 

আমাদের এই reaching to the top,top, top এর ইঁদুর দৌড়টা আসলে কি ভীষণ অর্থহীন, যে পরশ পাথরের লোভ তা আজ আছে কাল নেই,  আজ যে রাজা, কাল সে ফকির, এটা যে মগজধোলাই এর মতো গেঁথে দিয়েছিল, আজ তার জন্মদিন। ইন্দির ঠাকুরনদের অবহেলা করে, কাশবনের মধ্যে দিয়ে কালো ধোঁয়া ওড়া ট্রেনের পিছনে না ছুটে অর্থ যশের পিছনে ছুটলে শেষমেশ ওই টাকার চোরাবালিতে ডুবে যেতে হবে। আমাদের ও চলে যেতে হবে। আমি, আপনি, ফেলুদা, তোপশে দা, লালমোহন বাবু আমরা সব্বাই চলে যাবো একদিন, ভ্যানিশ হয়ে যাবো নকল ডাক্তার হাজরার মতো কিন্তু যাওয়ার আগে শেষ দিন অবধি বাঙালির সবচেয়ে ভালো, সবচেয়ে প্রিয় মাস্টারমশাইকে সেলাম ঠুকে যাবো। তার ২৮টা সিনেমা, ফেলুদা সমগ্র, ছোটগল্প, গুগাবাবার গান, আঁকা, ছড়া সব, সব বুকে আগলে রাখবো। ওগুলোই তো মনখারাপের মিরাকিউরল। এটা ২মে, এটা জয় বাবা মানিকনাথ বলার দিন। 

©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

লাইক | শেয়ার | কমেন্ট করে সত্যজিৎ স্মৃতি ভাগ করে নেবেন।

জাজ'মেন্টাল' হ্যায় ক্যা?

| জাজ'মেন্টাল' হ্যায় ক্যা? | 

----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

ম্যা গো আবার ওই মোটা মেয়েটা নাচছে আর ওই রোগা মেয়েটা না নেচে রান্নার ছবি দিচ্ছে খালি? আচ্ছা এই বাজারে মাংসের ঠ্যাং এর ছবি দেওয়াটা কি খুব জরুরি? আর দিচ্ছিসই যখন ডালগোনা কফির ট্রেন্ড ফলো না করে চালগোনার বাচালপনা করছিস? তুই টাকা দিয়েছিস প্রধানমন্ত্রী রিলিফ ফান্ডে? আর মোমবাতি জ্বেলেছিলি? ছবি কই, প্রমাণ কই, পোস্ট কই? আর দান করে অতো ছবি দিতে আছে? দান তো চুপচাপ করতে হয়। চুপচাপ তো গান ও শুনতে হয়। তা এতো লোককে শোনানোর কি দরকার শুনি? কই কতোদিন কোন গান শুনিনি তো তোর। বরের সাথে অশান্তি হলো নাকি? শাশুড়ী সারদিন লাইভ করা দেখে ঝাড়েনা কেন? আচ্ছা রাত নটায় তোর শাড়ির সেলের ওই লাইভটা মনে আছে? বাবা পারিস ও বটে, এই মন্দার বাজারে ও শাড়ি কেনার রেস্ত আছে?

লকডাউনের এই বিরাট অবসরে এরকম কিছু মানুষ ও তাদের লাইন দিলাম। তাদের হ্যাঁ তে ও সমস্যা, না তে ও সমস্যা। বাদিকে ঘেষলে ও বিপ্লবী হবে না ডানদিকে ঘেষলে ও জাতীয়তাবাদী ছোবে না। সাপ, ব্যাং, কাঠবিড়ালির ঠ্যাং যা কিছুর ছবি, লেখা, মন্তব্য পোস্ট করুন না কেন, তাদের অসুবিধা৷ বিচারক সেজে চলিয়া আসিবেন জাজমেন্ট দিতে। স্বঘোষিত, সামন্ততান্ত্রিক।

এক 'পরমা' গুনী শিল্পীর সমস্যা 'থলথলে' মেয়ের ঝলমলে নাচ নিয়ে। আমার ও অসুবিধা হতেই পারতো 'মন্দ নয় সে পাত্র ভালো, রং যদি ও বেজায় কালো'র রেসিজম নিয়ে বা ডোমেস্টিক হেল্পকে চাকর বলা হবে ভেবে। আমার তো রোজগেরে গিন্নি নিয়ে ও সমস্যা হয়নি। এই সমস্যা না হওয়াটা ও শিক্ষার অঙ্গ আর সিলেবাসের অংশ হওয়া উচিত।

শুনুন দিদিমনি। ওয়েব দুনিয়ার গণতান্ত্রিক পরিমন্ডলে ওসব সামন্তবাদ আর চলে না। হিসেব স্পষ্ট। কেউ সারাজীবন গেয়ে যাবে আর কেউ সারা জীবন শুনে যাবে তা কী করে হয়। সে বেছে নেবে "ওয়াই দিস কোলাবারি ডি' বা 'বারান্দায় রোদ্দুর'৷ আপনি কাহারবা আর দাদরা তে থাকুন না।  ক্যান্টিনে, কমোডে যে যখন পারবে গাইবে৷ কাঞ্চন মল্লিক বা ক্রিস্টোফার নোলান যে পারবে যেমন খুশি নাচবে! আপনাকে গোটা ব্রহ্মাণ্ডের জেঠু সাজতে কে বলেছে। 

সাধারণত্ব উদযাপন হচ্ছে গোটা বিশ্বজুড়ে। এটা মেনে নিতে পারেন বা এড়িয়ে যেতে পারেন। এলিটিস্ট নাক উঁচুপনা করলে নিজেকেই নিজে কষ্ট দেবেন। কারণ গনতন্ত্র বিরোধীদের ও হয়। আর হয় প্রান্তিক, পেটরোগা, প্রোলেতারিতের। সে যদি শনিপুজোয় টুনির মা চালায় আর তারপর ট্রেড ইউনিয়ন নেতা মারা গেলে একই আবেগে 'গাও ইন্টারন্যাশনাল' এ গলা মেলায়, দুটোই মেনে নিতে হবে কারণ  আপনার উৎকৃষ্টতর শিল্পকর্মগুলো ফেল মেরেছে।

অমলকান্তি যে রোদ্দুর হতে চেয়েছিল আর শ্যামলী যে মাধুরী দীক্ষিত হতে, তাদের দুজনেরই হাতে এখন অত্যাধুনিক স্মার্ট ফোন আর ফোরজি ইন্টারনেট। নিজের সৃজনশীলতা প্রকাশ করতে আর দরজায় দরজায় ঘুরতে হয় না এদের। ঘরে বসে ভিডিও রেকর্ড করো আর ভাইরাল হয়ে যাও। লেখককে আর প্রকাশককে তেলাতে হয় না, একটা ও বই না প্রকাশ করে ও পাঠক সংখ্যা এক লাখ ছাড়ায়। এটা সমাজবাদী নয় আর মুলায়াম সিংহ সমাজবাদী! 

এই ভাইরাল হতে গেলে হয় তোমাকে ভয়ানক উৎকৃষ্ট বা ভয়াবহ নিকৃষ্ট কিছু করতে হবে। মানে এ.আর. রহমান বা রোদ্দুর রায় কিংবা নাসিরুদ্দিন শাহ বা হিরো আলম। মাঝামাঝি থাকলে তুমি ফাউ৷ বদলে যাওয়া পৃথিবীতে আপনাদের স্বাগত। 

যে মেয়েটা আলুথালু বেশে রোজ একটা করে ভিডিও দেয় টিকটকে তার যদি এটা করে আনন্দ হয়, কার আপত্তি? আপনি দেখবেন না মশাই। সেই সময় ভালো একটা বই পড়ুন বা নেটফ্লিক্সে সিনেমা দেখুন।  আপনার বা ওর কারো মাথাতেই তো কেউ বন্দুক ঠেকিয়ে বলেনি বই পড়তেই হবে বা টিকটক দেখতেই হবে।

সাধারণ মানুষকেই ঠিক করতে দিন ওরা ল্যাজে কাটবে না মুড়োয়। আলগোছে anarchy হবে, দু পা এগিয়ে চার পা পিছোবে কিন্তু ছোট্ট ছোট্ট পায়ে চলতে চলতে ঠিক পৌঁছে যাবে দিনবদলের দোরগোড়ায়। গণ এন্টারটেনমেন্টের সবচেয়ে সাধারণ স্টারের বিপুল হিট সংলাপ ধার করে বলি,  Don't underestimate the Power of a Common Man! 

©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

হোয়াই শুড বয়েজ হ্যাভ অল দা ফান

| হোয়াই শুড বয়েজ হ্যাভ অল দা ফান😉 |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

"এমা মদ খায় ও? আর সিগারেট ও? রাতে ও ফেরে টলতে টলতে?"

"মেয়েরা সাধারণত ভদকা খায়, হুইস্কি খায় পুরুষমানুষ"

"আমার জন্য একটা লার্জ স্কচ, ম্যাডামের জন্য একটা ব্রিজার"

"ছেলেরা স্যানিটারি ন্যাপকিন কেনে না, মেয়েরা মদের লাইনে দাঁড়ায় না।"

এই শব্দবন্ধগুলো পেরিয়ে, অনেকটা পথ পেরিয়ে, আজ এই লাইনে দাঁড়ানো। এই প্রাথমিক অস্বস্তিটা কাটিয়ে উঠতে শিখুন, এ ছবি সাধারণ ভাবতে শিখুন। এটা মানতে সময় লেগেছিল সিগারেট বিক্রেতাদের কিংবা ওষুধের দোকানে কোন মেয়ে নিরোধ চাইলে কিন্তু হয়েছে তো! ২০২০ সালে ও এই গুঞ্জন হচ্ছে বলেই তো এই ছবি ভাইরাল। নিশ্চিত থাকবেন, এটাও সাধারণ এক ঘটনা হবে একদিন। হতেই হবে!

ভালো বাজের কচকানিতে যাচ্ছি না, স্রেফ একটা ক্ষমতায়নের ছবি তুলে ধরলাম। এটা ও লিঙ্গ সমতার পোস্টার হয়ে থাক যেরকম নারী শক্তির পোস্টার গার্ল হয়ে থাক সেই মহিলারা যারা রোজ ভোরবেলা রান্না করে, ঘরের কাজ করে, ছেলেমেয়েকে খাবার খাইয়ে ট্রেন ধরে শহরে কাজ করতে যায়, বাড়ি ফিরে মদ্যপ বরের মার খেতে খেতে একদিন ঠিক করে পাল্টা মারবে, মদের ভাটিগুলো নিজে গিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়ে আসবে। পরের দিন ট্রেনে একহাতে ফটজল আর একটা বিড়ি ধরিয়ে আগের রাতের সেই সাধারণ গল্পটা ওর সইকে বলবে। ট্রেনটা অনেকগুলো স্টেশন পেরিয়ে যাচ্ছে, আপনি পিছিয়ে পরেননি তো? 

ছবিটা ব্যাঙ্গালোরের। চিয়ার্স! 

©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ