কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Sunday, May 31, 2020

আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে

.| আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে |

------ ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

দিল্লির চাণক্যপুরীতে অবস্থিত কমিউনিস্ট চীনের দূতাবাস। এক 'চৈনিক চাড্ডি' নিজের স্ত্রীকে সাথে নিয়ে উঠোনে এসে প্রদীপ জ্বালালেন। বললেন এই অন্ধকার সময়ে ভারতের পাশে আছে চীন। এই আলোর রস্মিতে ১৩০ কোটি মানুষ শক্তি পাক লড়াই করার। বলে রাখি, ঐ 'চৈনিক চাড্ডি'টি চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য, ভারতে চীনের রাষ্ট্রদূত! রাত নটায় ন'মিনিট সংহতির জন্য মোম জ্বালালেন। 

এরকমভাবেই বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, নেপাল, ভুটান, পোল্যান্ড এর মতো প্রায় এক ডজন দেশের দূতাবাস মোমবাতি জ্বালিয়ে পাশে থাকার বার্তা দিলো। ওরা আপনার ভাষায় অশিক্ষিত, উজবুক!

সীয়াচেনে সাধারণত মাইনাস ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে স্বাভাবিক তাপমাত্রা। ওখানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যরা ও থাকে। আজ মোবাইলের আলো ও জ্বলেছিল ওই রুক্ষ, নিষ্ঠুর এলাকায়। আপনার কথায় হুজুগে কয়েকজন খামোখা আবেগপ্রবণ হয়ে পরেছিল।

আলো তো অনেক মুসলিম পরিবারে ও জ্বলেছিল৷ ওরা সব্বাই বোরখা বা ফেজটুপি হয়তো পরে না, সব্বাই তবলীগকে সমর্থন করে না। সব্বাই ওই আপনার তোষণ সহ্য করতে পারেনা। অনেকেই আলো জ্বালালো। মজার ব্যাপার কাল ওই পরিবারগুলোকে সম্প্রদায়ের মাতব্বরেরা একঘরে করে দিলে আপনি দরজার খিল দিয়ে না শোনার ভান করবেন। কিংবা শাহবানুর মতো কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন! শাহ বানু মামলা মনে আছে তো? 

শাহ বানুকে মনে না থাকলে ও রতন টাটা যে ১৫০০ কোটি টাকা দান করলো কোরোনা মহামারী রুখতে সেটা মনে আছে নিশ্চয়ই! কি কান্ড, এই অশিক্ষিত, ষ্টুপিড লোকটা ও প্রদীপ জ্বালালো। শুধু তাই নয়, তাজের সব হোটেল দীপাবলির মতো সাজালো। তাজ হোটেল বন্ধ কিন্তু কিছু মানুষ আছে। যারা ভারতের ভয়াবহ সন্ত্রাস হামলার শিকার তারা জানে অন্ধকার সময়ে মোমবাতি কতোটা আরাম দিতে পারে ক্ষতে। ওরা আজ প্রদীপ জ্বালিয়ে কয়েক দন্ড গল্প করলো। রোগের না, জরা জীর্ণতার না, আলোয় ফিরে যাওয়ার গল্প। 

একদিন আলোয় ফিরে যাবার প্রত্যয় নিয়ে তো ওই ফুটপাতে ও আজ আলো জ্বললো৷ কোরোনা আটকে দিতে? না! স্রেফ জানান দিতে, তোমার দলের পিছনে আমিও আছি। দেশ রাগ আজ ও নাগরিকদের ঘরে ঘরে আলো জ্বালিয়ে রাখে। 

আপনার শত্তুর আলো জ্বালাবে বলেছে তাই আপনি আলোকে খিস্তি করা শুরু করলেন। অন্ধকার ঘরে গোঁসা করে পরে থাকলেন। এভাবেই একদিন আপনার শত্তুর দেশাত্মবোধকে ছুঁয়েছিল বলে আপনি অচ্ছুৎ ভাবলেন দেশের প্রতি আবেগকে। ভারত তেরে টুকরে হোংগে ইনশাল্লাহ ইনশাআল্লাহকে ভাবলেন বিশ্ব নাগরিকতার শব্দব্রহ্ম! আপনার শত্তুর নিজেকে ধর্মের জ্যাঠামশাই ভাবছে, তাই দেখে আপনি গোটা ধর্ম আর তার সবটুকুকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে উঠতে বসতে গাল দিতে শুরু করলেন। আচ্ছা আসলে আপনার শত্তুর অপ্রতিরোধ্য না আপনি হোপলেসলি হেরো, ময়দান ছেড়ে পালিয়ে বাঁচতে চান কারণ দাঁতে দাঁত চেপে দেশ, ধর্ম, সংস্কৃতি, সংস্কৃতি ওদের কবল থেকে ছিনিয়ে আনতে ভয় পান আপনি! আপনি বড্ড হেরো মাইরি। আয়নার সামনে আপনি খুব বড় বিপ্লবী সাজেন কিন্তু আদপে আপনার বাড়ির লোক ও আপনার কথা শোনেনা, আপনার আদর্শকে সিরিয়াসলি নেয় না। 

এই যে ছবিগুলো দিলাম এরা কেউ আপনার পাশে নেই। আপনি যত সেনাবাহিনীকে, রামায়ণকে, তুলশীতলায় প্রদীপ জ্বালানোকে, শাঁখ বাজানোকে কোন এক দলের সংকীর্ণতায় ঠেলে দেবেন ওরা আরো বেঁধে বেঁধে থাকবে। 

আর যারা মিছিল করেছিল? যারা বাজি ফাটালো? তারা বিচ্ছিন্নই। ওই যেমন আল্হ হ আবকর বলে ৯/১১ এর মতো ঘটনা ঘটানোটা বিচ্ছিন্ন, যেমন তবলীগের জীবাণু দান করে বেরানো বিচ্ছিন্ন সেরকম। রাষ্ট্রদূত, রতন টাটা, সেনাবাহিনী, আম নাগরিক বা ভবগুরের প্রদীপ জ্বালানোর পরে কোরোনা কমবে না কিন্তু সংহতি বাড়বে। লড়াই চালিয়ে যাওয়ার সংহতি। নিশিদিন          আলোক-শিখা জ্বলুক গানে, আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে, ছোঁয়াও প্রাণে, ছোঁয়াও প্রাণে।

©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

স্বার্থপর হোন,স্বাস্থ্য কর্মীদের সর্বোচ্চ স্বাচ্ছন্দ্য দিন

.| স্বার্থপর হোন,স্বাস্থ্য কর্মীদের সর্বোচ্চ স্বাচ্ছন্দ্য দিন |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ 

স্বার্থপর হোন। ভীষণ ভীষণ স্বার্থপর। এই সময় ডাক্তার, সিস্টার সহ সমস্ত স্বাস্থ্য কর্মীদের সর্বোচ্চ স্বাচ্ছন্দ্য দিন, তাদের আগলে রাখুন, তাদের সুরক্ষিত রাখুন। পরে ফের ওদের রোগী মৃত্যু হলে কলার চেপে, টেনে হিঁচড়ে মারা যাবে, আউটডোরে লম্বা লাইন বলে চুলের মুঠি ধরা যাবে, কষাই বলে ফের খিস্তি করা যাবে। এখন ওদের বাঁচিয়ে রাখুন নিজের স্বার্থে। 

স্বার্থপর হোন। ভীষণ ভীষণ স্বার্থপর। ভাবুন তো ভারতে সমস্ত ডাক্তার একদিন মারা গেল! পরপর সব নার্স অসুস্থ হয়ে ভেন্টিলেটরে। কারা চিকিৎসা করবে তখন? কারা কোরোনার চোখে চোখ রেখে স্টেথোস্কোপ হাতে লড়বে? স্বার্থপর হোন। সীমান্তে সেনাবাহিনী দেখলে আপনার গলার কাছে যেরকম দলা পাকিয়ে আসে, স্বাস্থ্য কর্মীদের দেখলে সেরকম ভাবে স্যালুট দিন, নিদেনপক্ষে একটা হাততালি। এই লড়াই কালাশনিকভ দিয়ে জেতা যাবে না। এ লড়াইয়ে স্বাস্থ্য কর্মীদেরই যে একমাত্র প্রয়োজন। 

আপনি ডোনাল্ড ট্রাম্প হতে পারেন, আপনি মুকেশ আম্বানি হতে পারেন, আপনি শাহরুখ খান হতে পারেন কিন্তু বিশ্বাস করুন এতো অল্প সময় আপনি চিকিৎসা বিজ্ঞানটা আয়ত্তে আনতে পারবেন না। তাই স্বাস্থ্য কর্মীদের সুরক্ষিত করুন। এই লড়াই লড়তে যা যা দরকারি সেটা দিন ওদের। পারলে একটা দুটো PPE আর কিট বেশী দিন। মাথায় রাখুন, ওদের যদি ঢাল তলোয়ার ছাড়া যুদ্ধে পাঠান আর সেই যুদ্ধে যদি ওরা হেরে যায়, মৃত্যুপুরী হবে এই মহান দেশ। স্বার্থপর হোন। ভীষণ ভীষণ স্বার্থপর।

এই সময় ডাক্তারদের একটু স্বাচ্ছন্দ্য দিন। মাথায় রাখবেন ওরা ভগবান নয়। ভগবান হতে ও পারবে না। ভগবান মিরাকল করতে পারে। ডাক্তার শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করার আগে অবধি লড়তে পারে বাঁচানোর। ডাক্তার ও হেরে যায়, ডাক্তারের ও ডিপ্রেশন আসে৷ পাশে থাকুন। খোঁজ নিন স্বাস্থ্য কর্মীদের বাড়িতে বাজার টা হচ্ছে কিনা, বৃদ্ধ কেউ আছে কিনা, বাড়ির সব্বাই ভালো তো? ওরা এসব ভাবতে ভাবতে যত চিকিৎসা করবে শত্রু ততোধিক দশাশই হবে। আখেড়ে আমাদের লোকশান৷ স্বার্থপর হোন প্লিজ।

ইতালি, আমেরিকা, স্পেনের সব আছে। সব অত্যাধুনিক প্রযুক্তি থাকার পরে ও প্রাচুর্য থাকার পরে ও রোজ হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে কারণ ডাক্তারেরা সংক্রমিত এখন। একজন ডাক্তার ও অসুস্থ হয়ে ঘরে চলে গেলে এক হাজার লোক বিনা চিকিৎসায় পরে থাকবে। নেতা, অভিনেতা, জাদুকর, গুরুজী, জ্যোতিষী কেউ না, স্রেফ স্বাস্থ্য কর্মী আপনাকে প্রাণে বাঁচাতে পারবে৷

কাল স্বাস্থ্য কর্মীদের বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিন যেভাবে পরিযায়ী শ্রমিকদের খোঁজ নিচ্ছেন। ডাক্তার নিজে বাঁচলে বাকিরা বাঁচবে। কাল থেকে পারলে স্বাস্থ্য কর্মীদের কোন অসুবিধা হচ্ছে কিনা খোঁজ কিন। যারা High Risk Zone এ কাজ করছে কিন্তু সামান্যতম প্রোটেক্টিভ গিয়ার পাচ্ছে না, তারা আপনার জীবন বিপদে ফেলছে। স্বার্থপর হোন। ডাক্তারদের অসুস্থতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে যারা তাদের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করুন। 

দিল্লিতে সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারদের জন্য পাঁচতারা হোটেলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সমস্ত পরিষেবা, খাবারদাবার ভিভিআইপির মতো প্রদান করা হচ্ছে৷ মুম্বাইয়ে ও তাই। এছাড়া ও তাজ হোটেল থেকে সরকারি হাসপাতালের সমস্ত স্বাস্থ্য কর্মীর জন্য দুপুরের খাবার যাচ্ছে। স্বাস্থ্য কর্মীদের ভিভিআইপির মতো আচরণ করুন, পৃথিবীর অসুখ সেরে গেলে স্বাস্থ্য খাতে আরো টাকা বরাদ্দ করুন, স্বাস্থ্য কর্মীদের খুশি রাখুন। মাথায় রাখুন এ লড়াই কালশনিকভ, যুদ্ধবিমান, তাগা তাবিজ, পবিত্র জল, পশুর মূত্র হাতে না, স্রেফ স্টেথোস্কোপ হাতে, গ্লাভস আর মাস্ক পরনে ডাক্তারেরা বাঁচাতে পারবে। এখন স্বার্থপর হোন, স্বাস্থ্য কর্মীদের সর্বোচ্চ স্বাচ্ছন্দ্য দিন।

©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

ট্রাম্প একটা বাজে লোক, ওর হলুদ চুলে উকুন হোক

.| ট্রাম্প একটা বাজে লোক, ওর হলুদ চুলে উকুন হোক |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

দাদু ছোটবেলায় বলতো বন্ধুত্ব দেখে করবে। কেন বলতো বুঝিনি। এখন বুঝছি৷ টিফিন খেয়ে, নোটস নিয়ে, নিজের প্রেমিকার চিঠি  লিখিয়ে নিয়ে, পরীক্ষার হলে সব টুকে নিয়ে ও যদি কম নম্বর পেতো, সে বলতো সব তোর জন্য হয়েছে। ট্রাম্প ও সেরকম এক বজ্জাত ছেলে৷ পাল্টিবাজ আর বেইমান শিরোমণিরা ও লজ্জায় মুখ লোকাবে ট্রাম্পকে দেখে। 

শালা তোর জন্য কি না করা হলো৷ আমেরিকার সব গুজরাতিকে এক ছাতার তলায় আনলো দেশের সবচেয়ে বড় ইভেন্ট ম্যানেজার। ওখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তোর গু এর মতো এজেন্ডা গুলোকে গুজিয়ার রোম্যান্টিকতা মাখিয়ে বিক্রি করে দেওয়া হলো৷ নিজে যেচে যেচে বুথ এজেন্টের মতো সব্বাইকে বললো ভবিষ্যৎটা আমাগো আর তেনাগোর, আর তুই আমাদের চোখ রাঙাচ্ছিস ব্যাটাচ্ছেলে কুইনাইন দেবো না বলে? প্রফুল্ল রায় বোতল ছুঁড়ে মারতো রে কমলা লেবু তোর ত্যাঁদড়ামো দেখলে!

আ মোলো যা, কুইনাইন দেবে না বলে নাকি প্রতিশোধ নেবে! রোজ হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে, নিউইয়র্ক শহরে গণ-কবর দেওয়া হচ্ছে, বেওয়ারিশ লাশের মতো ফেলে রাখা হচ্ছে স্বজনের দেহ আর এখনো কমলালেবু ভাঙবে তবু মচকাবে না। এখনো অন্য দেশকে ধমকাচ্ছে চমকাচ্ছে। এখনো বলবে না ওদের ভুল হয়েছিল স্বাস্থ্য খাতে খরচ কমিয়ে, ওদের এই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা ভুল ছিল।

প্রতিশোধ নিবি কেমনে শুনি? যুদ্ধ জাহাজ পাঠাবি? মানুষ বাঁচলে তো প্লেন উড়বে, মিসাইল হামলায় নিহত হবে শিশু, অমানবিক অত্যাচার চলবে আবু গ্রাইবে। মিনশে বুড়ো সব সেনা দিয়ে জয় করা যায় না। হোয়াইট হাউসের ফাইলগুলো পড়লে জানতি ভিয়েতনামে কি হয়েছিল৷ এবার ভিয়েতনামকে আবার ভিভেকামুন্ড বলে দিস না!

মোদিজী এসব ছিঁচকাদুনের কথায় একবার কিছু দিলে বারবার দিতে হবে। এদের কাঁধে চাপালে কাল মাথায় বসে চুল ঝাকাবে। আজ কুইনাইন নিলো কাল যখন জানবে যে টয়লেট পেপারের জায়গায় জল দিয়ে আমাদের কায়দায় শৌচকর্ম করলে অনেক কাগজ, গাছকাটা বাঁচে আর হাইজেনিক ও,কমলা লেবু না ছুচু করিয়ে দেওয়ার লোক চেয়ে বসে। স্যামচাচার চাহিদার শেষ থাকবে না। কড়া চোখে দরদাম করুন। 

আমরা সবাই এক্কাট্টা হয়ে নিন্দা করছি আমেরিকার রাষ্ট্রপতির। পারলে ওই যে মহিলা রাস্তায় নেমে থালা বাজিয়ে গো কোরোনা গো চিৎকার করছিল তাকে আর যে গোটা বাড়ি জ্বালিয়ে দিলো প্রদীপের জায়গায় বাজি ফাটাতে গিয়ে, তাকে ছেড়ে দিন। ওরাই বুঝে নেবে। 

কুইনাইন, হামি সব পাবেন প্রতিবার। বদলে কিছু আমাদের ও ছাড়ুন। ক্যান্সারের ওষুধ সস্তায় দিন ভারতকে। আগে ভারতীয় ওষুধ কোম্পানিগুলোকে ছাড় দিন আমেরিকায় ব্যবসা করতে, কোন প্রতিবন্ধকতা যে ভারতীয় কোম্পানির না হয়, US FDA যে ব্যানগুলো ভারতীয় বানিজ্যিক সংস্থার বিরুদ্ধে করে রেখেছে সেগুলো তুলে নিক। ট্রাম্প নিজে দেখুক যাতে আমেরিকায় ব্যবসা করার ক্ষেত্রে কোন অসুবিধা না হয় ভারতীয় ওষুধ কোম্পানি গুলোর। 

মোদিজী আমাদের সংবিধানে এখনো সার্বভৌমত্ব শব্দটা আছে। ওটাকে বেচে ট্রাম্প টাওয়ার বানিয়ে দেবেন না। এসব লোক কারোর বন্ধু হয়না। আজ কুইনাইন চাইছে কাল স্ট্যাচু অফ ইউনিটি চাইবে। পরশু বলবে তাজ মহলের জমিতে ফ্ল্যাট বাড়ি বানাবে। দেশ না ট্রাম্প পরিবারের ফার্ম হাউস এটা। ভাগ!

©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

সোনার খাঁচা

.| সোনার খাঁচা |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ 

আমার এক ভারতীয় বন্ধু আফগানিস্তানের টোলো নিউজে কাজ করতো৷ ওর না না গল্প শুনে আমার ও লোভ হতো ডলারে কামানোর। ও বলতো, ভাড়া বাড়ি ঠিক করে দেওয়ার মতো অফিস ওদের পাঁচ তারা হোটেলেই থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়। আসা যাওয়া অফিসের গাড়িতে, সামনে মিলিটারি জিপ৷ হোটেল টু অফিস, অফিস টু হোটেল। মাঝে আফগান সেনার চেকিং, হোটেলে ঢোকার আগে চারবার চেকিং। মানে এক্কেরে থ্রিলিং একটা ব্যাপার। এটাই ক্রমশ ওর দুনিয়া হয়ে গেছিল৷ 

বেশ কিছুদিন হলো আমি এবং আমাদের অফিসের কয়েকজন এই হোটেলেই বন্দি। আরো সাত দিন থাকবো। হোটেল থেকে অফিসের গাড়িতে মাস্ক পরে অফিস আর হোটেল ফেরত, অফিসে আমরাই কয়েকজন হোটেল থেকে আসছি, লাইভের আয়োজন করছি, হোটেলে ফিরে যাচ্ছি। এসবটা করা কারণ দা শো মাস্ট গো অন!

আমাদের ও রাস্তায় চারবার চেকিং, কারফিউ পাস দেখানো, অফিসে ঢোকার মুখে চেকিং, মাথায় বন্দুক সদৃশ যন্ত্র ঠেকিয়ে বডি টেম্পারেচার মাপা, স্যানিটাইজ করা, হোটেলে ফিরে নরম আলোয়, নরম তোয়ালে দিয়ে ফ্রেশ হওয়া, আলাদা আলাদা খাওয়া, নিজের মতো ফিরে আসা ঘরে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির দরজা বন্ধ করে ঘুম! কাল ফের একইরকম এক সকাল।

তাজ হোটেলের নামেই শিহরণ জাগে মধ্যবিত্ততায়। সেই দিল্লির সদা গমগমে তাজ হোটেলই Post Apocalypse কোন সিনেমার প্রথম দৃশ্য যেন। পিয়ানোটা বন্ধ পরে আছে। ক্যাপিটাল কিচেনের মতো রেস্তোরাঁ যেখানে সাধারণ দিনে ও এক ঘন্টা অপেক্ষা করে লোকে আর পাঁচ-ছয় হাজার টাকার বিল মিটিয়ে উঠে চলে যায় মোটা টিপস রেখে, সেখানে খাঁ খাঁ করছে। সদর দরজাতে ও তো ওই ইয়া গোঁফওয়ালা পাগড়ি পরা লোকটা নেই। বাইরে সিআইএসএফ ঘরের চাবি আর আইডি চেক করছে। 

তাজ হোটেল ও বন্ধ কিন্তু কিছু ঘরে সাকুল্যে  ৫০জন মতো জরুরি পরিষেবার সাথে যুক্ত মানুষেরা আছেন। এই যেমন সাংবাদিক বা ডাক্তার বা আটকে পরা বিদেশি কূটনীতিক। এরা সব্বাই আলাদা আলাদা ব্লকে। কারা কারা আছে সেটা একে অপরে জানে কিন্তু কেউ কাউকে দেখতে পায় না। কেউ কারোর জন্য হাততালি দিতে পারেনা। পাছে জীবাণু ছোবল মারে। দেখার মধ্যে কয়েকজন তাজের স্টাফ। ওরা ও আমাদের মতো টানা ১৪দিন কাজ করে বাড়ি যাবে। দূরে দূরে বসে ওরা ও সুখের গল্প করছে, যা দরকার সাথে সাথে দিয়ে যাচ্ছে। ভয়ের গল্প করছে। এই ভয় তাজের সেই ব্রিটিশ ভূতের না। এই ভয় হোটেল শিল্পের মন্দা পরিস্থিতির। দেশে মন্দা চলছিলই, তার সাথে যুক্ত হলো লকডাউন। শ্রমিক তো সব্বাই, পেটে জ্বালা তো সবারই হয়। কারোর আগে কারোর পরে। কেউ গামছা গলায়, কেউ হোয়াইট কলারে। 

জুলিয়ান আসাঞ্জ এর কথা আসলেই ভাবতাম সে বন্দিদশা আর এমন কি? দূতাবাসে আলিশান জীবন। খাচ্ছে দাচ্ছে ব্লগ লিখছে। ওমার আবদুল্লাহর ও তো তাই। ধন্যবাদ তাজ স্বাধীনতার মানে উপলব্ধি করাবার জন্য। এসময় পাখিরা দিল্লিতে ফিরে এসেছে। এই চাণক্যপুরী অঞ্চলে তো আরো গাছ, সবুজ ঘাস। সাথে ঝকঝকে নীল আকাশ। 

এই সময় পাখিগুলোকে দেখে বড্ড হিংসে হচ্ছে। হিংসে হচ্ছে ওই কাঠবিড়ালিটাকে দেখে। ওকে কেউ বলে দেয়নি, ওই একটা গাছ থেকেই ওকে খুঁটে খেতে হবে। হিংসা তো তাদের জন্যও হচ্ছে যারা গরম ভাত আর ডিম সেদ্ধ মাখন দিয়ে খাচ্ছে নিজের ঘরে। ইচ্ছে তো হচ্ছে নিজের রান্নাঘরে ওই খুব সাধারণ কালচে কড়াইয়ে একটা ডিম ভাজতে। 

জাহাজ করে প্রথমবার সমুদ্র সফরের প্রথম আধ ঘন্টা যেমন দারুণ রোমাঞ্চকর আর তারপর যেদিকে তাকাও নীল জল, দিগন্ত বিস্মৃত নীলিমা, এই পাঁচ তারা হোটেলে বিচ্ছিন্নতা যাপন ও তাই। প্রথম তিনদিন দারুণ লাগে কিন্তু তারপর ঘরে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে, প্রিয়জনের সাথে বিকেলে কালো চা আর চালভাজা খেতে খেয়ে খবর দেখতে ইচ্ছে করে, ভুলে ফেলে আসা ওষুধের স্ট্রিপটা মনে পরে ফ্রিজের মাথায়, তারপাশে ফটোফ্রেম! 

আফগানিস্তানে বড় সাংবাদিক ছিল যে বন্ধুটা সে বেমালুম এসব চেপে গেছিল। ওর ও এসব হতো৷ ওর ও ভয় করতো ঘরের জন্য, ওর ও পাঁচ তারা হোটেলের এই দিগন্ত বিস্মৃত ঐশ্বর্য দেখে দেখে নতুন কিছু দেখতে ইচ্ছে করতো৷ ও বলেনি, আর প্রাচীন প্রবাদ মেনে আমি ভাবতাম নদীর এপার কহে ছাড়িয়ে নিশ্বাস....

স্বাধীনতা আর মুক্ত হওয়া যে কি বিশাল এক পাওনা, সেটা যতক্ষণ না কেউ আটকে পরছে উপলব্ধি করতে পারেনা। তাই হয়তো পরে পাওয়া চোদ্দ আনার মতো কিছু একটা অর্জিত স্বাধীনতাকে ভাবে। পাখিকে যতোই তুমি আখরোট খাওয়াও, সোনার খাচায়, রুপোর বাটিতে জল খাওয়াও, পাখি নীল আকাশে একদিন ঠিক পারি দেবে। রোজ ক্যালেন্ডার দেখবে, ডায়েরি লেখার পরে, তারপর একটা দীর্ঘ নিশ্বাস। আজ এখানেই শেষ। 

©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

আপনার সন্তান যেন থাকে দুধে- ভাতে: আপনার সাথে এ জিনিস যেন না ঘটে

.| আপনার সন্তান যেন থাকে দুধে- ভাতে: আপনার সাথে এ জিনিস যেন না ঘটে |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ 

ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি এরকম এক হৃদয়বিদারক ভিডিও পোস্ট করার জন্য৷ বিশ্বাস করুন আপনার দিনটা আমি খারাপ করে দিতে চাইনি, কিন্তু কি বলুন তো, দুমিনিটে ম্যাগি আর তিরিশ মিনিটে পিজার যুগে আমাদের সব হাতে গরম প্রমাণ চাই। আমি চোখের সামনে ইতালি বা আমেরিকার পুনরাবৃতি এ দেশে হচ্ছে দেখতে চাইনা। 

ডাক্তার শত্রুঘন পঞ্জওয়ানিকে আপনি চিনবেন না। ডা. পঞ্জওয়ানি শাহরুখ খান নয়। মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে উনি সাধারণ এক ডাক্তার ছিলেন। ছিলেন বলছি কারণ আজ উনি মারা গেছেন কোরোনা আক্রান্ত হয়ে। ফ্রন্টলাইনে যে ডাক্তারেরা কাজ করছেন তাদের মধ্যে প্রথম মৃত্যু। ভারতে প্রথম ডাক্তার যে চিকিৎসা করছিল, কোরোনা পজিটিভ ধরা পরে এবং মৃত্যু হয় ৬২ বছর বয়সে৷

ডা. পঞ্জওয়ানি বস্তি এলাকায় চিকিৎসা চালিয়ে যেতেন। নিম্নবর্গের মানুষকে কোরোনা সচেতন করতেন। অসুস্থ বোধ করার আগে অবধি তাই করে গেছিলেন। ডা. পঞ্জওয়ানির স্রী আর তিন ছেলে অস্ট্রেলিয়াতে আটকে পরেছিলেন লকডাউনের কারণে। এখন ও সেখানেই৷ অস্ট্রেলিয়ার জায়গায় মুম্বাই, দিল্লি, পুনে হলে ও আসতে পারতেন না। ঝরঝর করে কাঁদতে কাঁদতে ভিডিও কলের মাধ্যমে বাবার মৃতদেহকে দূর থেকে শেষ চুমু দিলো ছেলেরা। বাবার শরীর প্লাস্টিকের ব্যাগে রাখা হলো, মুখটা সামান্য সময়ের জন্য দেখতে দিলো প্রশাসন, ভ্যানে তুলে দেওয়া হলো তারপর। স্ত্রী তার দীর্ঘদিনের বন্ধুকে হারালো কিন্তু পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতো পারলো না শেষ যাত্রার আগে। ভগবান করুক এই মর্মান্তিক দৃশ্য যেন আপনাকে না দেখতে হয়। 

এরকম দৃশ্য হয়তো আপনাদের পাড়াতে ও দেখা যাবে এরপরে। হয়তো আপনাদের মধ্যে অনেকেই আটকে পরেছে বাইরে। স্বজনের দেহ ছুঁয়ে দেখতে পারবে না হয়তো।  
ডাক্তার শত্রুঘন পঞ্জওয়ানি বা তার মতো হাজার হাজার ফ্রন্টলাইনে লড়ছে যারা, সেই স্বাস্থ্য কর্মী, পুলিশ, জরুরি পরিষেবার সাথে যুক্ত মানুষে)পরা চেয়েছিল তাদের সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে। তারা ও বাড়ি ফিরে আসতে চেয়েছিল। পারেনি কিন্তু বিশ্বাস করুন এরা সব্বাই চায় আপনার সন্তান যেন থাকে দুধে। 

এরজন্য আপনাকে স্রেফ বাড়ি থাকতে হবে। আপনাকে ক্রমাগত সরকারগুলোকে চাপ দিতে হবে পিপিই, মাস্ক সহ সব স্বাচ্ছন্দ্যের প্রথম দাবিদার যেন জরুরি পরিষেবার সাথে যুক্ত মানুষেরা হয়। ওইটুকুই অনেকটা পরিবারের এনে দেবে সংখ্যায়। 

আমি চাইনি এই ভিডিওটি দেখাতে। পৃথিবীর কোন সন্তান, কোন বাবা, কোন ভাই চায়না এই সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করাতে কিন্তু আগামীকে সুরক্ষিত করতে এই ভিডিওটা দেখা দরকারি, লেখাটা পড়া জরুরি। 

©------ ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

ধর্মের দোহাই দিয়ে অশিক্ষাকে তোল্লাই দেবেন না, এতে মুসলমানদেরই পিছিয়ে দিচ্ছেন

.| ধর্মের দোহাই দিয়ে অশিক্ষাকে তোল্লাই দেবেন না, এতে মুসলমানদেরই পিছিয়ে দিচ্ছেন |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ 

এই ভিডিওটা আজকের। মানে শুক্কুরবারের। মানে লকডাউন উপেক্ষা করে মুর্শিদাবাদের কান্দি মহকুমা অন্তর্গত বড়ঞাঁ থানা এলাকায় একশোর উপরে মানুষ জড়ো হওয়ার। মানে অশিক্ষার। মানে এটা বিশ্বাস করা এবং করানোর যে প্রার্থনা করলে কোরোনা মহামারী থেকে বাঁচা যাবে। 

এই ভিডিওটা দেওয়ার সাথে সাথে একদল ফের ঝাপিয়ে পরবে পাল্টা কিছু ভিডিও দেখিয়ে ব্যালেন্স করানোর। এটা বোঝানোর যে ইসলামের সাথে এর কোন জোগ নেই। সত্যিই নেই। কোন ধর্ম কি অশিক্ষিত হয়ে থাকতে বলে? এতোটা গোঁড়া হয়ে থাকতে বলে? বলেনা। তাই মক্কা মদিনা ও বন্ধ। নামাজ পড়তে মসজিদমুখো হলেই তাই কাতার এ এক লক্ষ টাকা জরিমানা হচ্ছে। সৌদি রাজ পরিবারের প্রায় ১৫০জন কোরোনাতে আক্রান্ত। ইসলাম তো একে সমর্থন করছে না। তা হলে কি মৌলবাদ আর গোঁড়ামিকে সমর্থন দেওয়া হয়ে যাচ্ছে না?

আজকাল তবলীগ মৌলবাদী আর সুইসাইড বোম্বারের সাথে তুলনা করলেই অনেকে তেলে বেগুনে জ্বলে, অমুক সময় বলেন নি তো, তমুক সময় কোথায় ছিলেন, ইসলামোফোবিক শালা ইত্যাদি বলে দিচ্ছেন কিন্তু আবার বললাম, ভয়ে ভয়ে বললাম, ড্যানিয়েল পার্ল যেভাবে মরেছিল সেরকম পরিনতি হতে পারে ভেবে ও বললাম, ধর্মের দোহাই দিয়ে অশিক্ষাকে তোল্লাই দেবেন না, এতে ওই সম্প্রদায়কেই পিছিয়ে দিচ্ছেন। এতে আপনার ভোট বাড়ছে, কিন্তু সমাজ প্রাগৈতিহাসিকই থেকে যাবে। একটা সৈয়দ আহমেদ, একটা রামমোহন, একটা বিদ্যাসাগর আসুক। ভুলকে ভুল না বলতে পারলে আর কিসের মুক্ত হাওয়া! 

©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

তোমার মিনিবারের মুখোমুখি, অভুক্ত সৈন্যদল/ না খাওয়ার লড়াই।

.তোমার মিনিবারের মুখোমুখি, অভুক্ত সৈন্যদল/ না খাওয়ার লড়াই।

ছিপি খুললেই, ব্যাপক বিলিং,
একটা চালের ভুল/ কোথায় দাঁড়াই।

মদের ওপর মদের ব্র‍্যান্ড, ওষ্ঠ ছুঁতে চায়/
না খেয়ে খেয়ে, মুখের আয়না আদল লাগছে অসহায়।

তুমি লকডাউন শেষেই গ্লাসে বেঁধো গান।

এটাও তো অমানবিক এক অত্যাচার। মানবাধিকার কর্মীরা কই? কই? হিরের খনির মজুরের সামনে কোহিনূর, কুলিনান ডায়মন্ড রেখে দেওয়া হয়েছে। চ্যাংড়ামো? ধৈর্যের পরীক্ষা নেওয়া চলছে। খুললেই কোট পরা এক ভদ্রলোক টুংটাং পিয়ানোর কলিং বেল বাজিয়ে এক মাসের মাইনে সমান এক বিল ধরিয়ে যাবে। 

সব ইয়াদ রকখা যায়েগা! একবার শাটার উঠুক, একবার পৃথিবীর জ্বর সেরে যাক, আমি হোস পাইপ দিয়ে প্রতিক্রিয়াশীল এই চক্রান্তের মুখে মদ ছুঁড়ে মারবো৷ 

সব কা বদলা লেগা রে তেরা ফাইজল৷ 

©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

এটা "মোল্লারা" করেনি, পুলিশের হাত কেটে নেওয়া হলো, এটা ও শিরোনাম হোক |

| এটা "মোল্লারা" করেনি, পুলিশের হাত কেটে নেওয়া হলো, এটা ও শিরোনাম হোক |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ 

ঠিক যেই সময় আপনার মনে হচ্ছিল এরপর আপনার পাতলা পায়খানার জন্য ও 'মোল্লারা' দায়ী হবে, এই ভিডিওটি সামনে এলো। পাঞ্জাবের পাটিয়ালাতে এক পুলিশ অফিসারের হাত তলোয়ার দিয়ে কেটে দেওয়া হয়েছে। তার অপরাধ ছিল, কিছু মানুষ যারা লকডাউন উপেক্ষা করে রাস্তায় ঘোরাফেরা করছিল তাদের কাছে কারফিউ পাস চাওয়া। তাদের মধ্যে একজন গাড়ি না থামানোয় পুলিশেরা সেটা আটকাতে চেষ্টা করে, লাঠি মারতে থাকে গাড়ির উপরে। গাড়ি থেকে একজন নেমে এসে কোমড়ে গোজা তলোয়ার বের করে পুলিশের হাত কোপে মারে। হাতটা কেটে বেরিয়ে আসে।

এই অবধি পড়ে আপনার মনে হতে পারে, 'মোল্লা' ছাড়া আর কারাই বা এটা করবে। 'মোল্লা' মানে আপনার চোখে কারা? ওই তো যারা ফেজটুপি পরে, যারা লম্বা দাড়ি রাখে। আর শাহরুখ খান? সে ও তো দেশদ্রোহী কারো কারো চোখে। 

এই কান্ডটা পাঞ্জাবে নিহাং শিখেদের এক গোষ্ঠী ঘটিয়েছে। নিহাং বা আকালি শিখেদের আপনি দেখে থাকবেন। লম্বা পাগড়ি, লম্বা দাড়ি, নীল পোষাক, ইয়া লম্বা বল্লব নিয়ে ঘোরে৷ এনাদের মহিলা সদস্যরা ও পাগড়ি পরে। বীরেদের গোষ্ঠী, লড়াকু গোষ্ঠী হিসেবে সম্মানিত। 

এই যে কয়েকজন এই কান্ডটা ঘটালো, তার জন্য সব্বাই কি দোষী? ফতেহ সিংহের বলিদান মিথ্যে হয়ে যাবে? তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো খেলো হয়ে যাবে? আচ্ছা রাজ্যের শাসক দলের এক মন্ত্রী যে এই অবস্থাতে ও হনুমান পুজো করলো তাতে সমস্ত হিন্দুদের সমর্থন ছিল?

যারা উগ্র, যারা অশিক্ষিত, যারা গোঁড়া তারা যে ধর্মেরই হোক, তাদের একঘরে করুন, তাদের দ্ব্যর্থহীন ভাবে নিন্দা করুন। এটা করতে গিয়ে গোটা সম্প্রদায়টাকে দাগিয়ে দিলে হাতে থাকবে পেনসিল। সেই পেনসিল দিয়েই লিখে রাখতে পারেন, কি করে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলেন আপনার পাশের বাড়ির লোকগুলোকে, আপনার ওই ছেলেবেলার বন্ধুটাকে, আপনার উৎসবে যে অংশ নিতো আর তার উৎসবে যে আসতে বলতো, তাকে। যে দেশে সংখ্যালঘুরা এতো বছর পরে ও হীনমন্যতায় ভোগে, সে দেশে সংখ্যাগুরুদের ও দায়িত্ব নিতে হবে, প্রগতিশীল চিন্তাধারার সংখ্যালঘু মানুষকে সামনের সারিতে নিয়ে এসে তাদের ক্ষমতায়ন করার। তবেই তারা নিজের নিজের গোষ্ঠীর গোঁড়ামির বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারবে। আপনি হাত ছেড়ে দিলেই চাপাতি বা তলোয়ার দিয়ে ঘ্যাচাং। 

©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

তাজ প্যালেস, নয়া দিল্লি

রবিবার, এপ্রিল ১২, ২০২০
তাজ প্যালেস, নয়া দিল্লি

টাইমলাইনটাকে আইডি হাসপাতাল বানিয়ে ফেলতে হবে, এরকমটা কেউ বলেছে নাকি? মনকে ফুরফুরে না রাখলে আর কাহে কা সর্বাত্মক লকডাউন সফল? ফূর্তিতে থাকুন। হাকুনামাটাটা! No Worries! সব্বাই মিলে যাই আসুক না কেন ঠিক সামলে নেবো! 

হাকুনামাটাটার কথায় মনে পরলো, টাটার এই সিংহহৃদয় আতিথিয়েতা ছেড়ে তাজকে আজ আশা করি টাটা বলতে পারবো। 

প্রায় মেরে এনেছি। আশাকরি পরের পোস্ট নিজের ঘরে ল্যাদ খেতে খেতেই লিখতে পারবো।

Wednesday, May 27, 2020

ওঠো

| ওঠো |

#অণুগল্পহলেওসত্যি

--- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ 

"ওঠো ওঠো মা ওঠো" একরত্তি বাচ্চাটা ঘুমন্ত মায়ের চারপাশে খালি এটা বলতে বলতে খেলছিল। মাঝে মাঝে মায়ের শরীরের উপরে উঠে পরছিল। মা উঠছে না। 

দুই সন্তানকে নিয়ে পরিযায়ী শ্রমিক মা শ্রমিক এক্সপ্রেস করে গুজরাট থেকে বিহারের কাটিহার ফিরছিল। শ্রমিক এক্সপ্রেস কি আর বুলেট ট্রেন? ট্রেন তো দিয়েছে কিন্তু না আছে জল না আছে খাবার। ব্লাউজের খাঁজে যে টাকা টা ছিল সেটা ও তো কবেই শেষ৷ ৪৪ডিগ্রি গরমে, তৃষ্ণায়, হাঁটতে হাঁটতে স্টেশন পৌঁছনোর ক্লান্তিতে মা মুফাফফরপুর প্ল্যাটফর্মে নেমে জলের সন্ধান করতে গিয়ে শুয়ে পরে। চিরনিদ্রায়। রিপোর্ট বলে হিট স্ট্রোক। ব্যাস!

মায়ের দেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মানুষ কাল ভুলে যাবে। "ওঠো ওঠো, ওঠো না ওঠো" একরত্তি বাচ্চাটা খালি আমার পাশে আমাকে ধাক্কা দিচ্ছে। ও এখান এলো কি করে? আমি এখনো উঠছি না কেন? অবস হয়ে যাচ্ছে কেন চারপাশ.....

©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

Sunday, May 24, 2020

এটা "মোল্লারা" করেনি, পুলিশের হাত কেটে নেওয়া হলো, এটা ও শিরোনাম হোক

| এটা "মোল্লারা" করেনি, পুলিশের হাত কেটে নেওয়া হলো, এটা ও শিরোনাম হোক |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ 

ঠিক যেই সময় আপনার মনে হচ্ছিল এরপর আপনার পাতলা পায়খানার জন্য ও 'মোল্লারা' দায়ী হবে, এই ভিডিওটি সামনে এলো। পাঞ্জাবের পাটিয়ালাতে এক পুলিশ অফিসারের হাত তলোয়ার দিয়ে কেটে দেওয়া হয়েছে। তার অপরাধ ছিল, কিছু মানুষ যারা লকডাউন উপেক্ষা করে রাস্তায় ঘোরাফেরা করছিল তাদের কাছে কারফিউ পাস চাওয়া। তাদের মধ্যে একজন গাড়ি না থামানোয় পুলিশেরা সেটা আটকাতে চেষ্টা করে, লাঠি মারতে থাকে গাড়ির উপরে। গাড়ি থেকে একজন নেমে এসে কোমড়ে গোজা তলোয়ার বের করে পুলিশের হাত কোপে মারে। হাতটা কেটে বেরিয়ে আসে।

এই অবধি পড়ে আপনার মনে হতে পারে, 'মোল্লা' ছাড়া আর কারাই বা এটা করবে। 'মোল্লা' মানে আপনার চোখে কারা? ওই তো যারা ফেজটুপি পরে, যারা লম্বা দাড়ি রাখে। আর শাহরুখ খান? সে ও তো দেশদ্রোহী কারো কারো চোখে। 

এই কান্ডটা পাঞ্জাবে নিহাং শিখেদের এক গোষ্ঠী ঘটিয়েছে। নিহাং বা আকালি শিখেদের আপনি দেখে থাকবেন। লম্বা পাগড়ি, লম্বা দাড়ি, নীল পোষাক, ইয়া লম্বা বল্লব নিয়ে ঘোরে৷ এনাদের মহিলা সদস্যরা ও পাগড়ি পরে। বীরেদের গোষ্ঠী, লড়াকু গোষ্ঠী হিসেবে সম্মানিত। 

এই যে কয়েকজন এই কান্ডটা ঘটালো, তার জন্য সব্বাই কি দোষী? ফতেহ সিংহের বলিদান মিথ্যে হয়ে যাবে? তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো খেলো হয়ে যাবে? আচ্ছা রাজ্যের শাসক দলের এক মন্ত্রী যে এই অবস্থাতে ও হনুমান পুজো করলো তাতে সমস্ত হিন্দুদের সমর্থন ছিল?

যারা উগ্র, যারা অশিক্ষিত, যারা গোঁড়া তারা যে ধর্মেরই হোক, তাদের একঘরে করুন, তাদের দ্ব্যর্থহীন ভাবে নিন্দা করুন। এটা করতে গিয়ে গোটা সম্প্রদায়টাকে দাগিয়ে দিলে হাতে থাকবে পেনসিল। সেই পেনসিল দিয়েই লিখে রাখতে পারেন, কি করে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলেন আপনার পাশের বাড়ির লোকগুলোকে, আপনার ওই ছেলেবেলার বন্ধুটাকে, আপনার উৎসবে যে অংশ নিতো আর তার উৎসবে যে আসতে বলতো, তাকে। যে দেশে সংখ্যালঘুরা এতো বছর পরে ও হীনমন্যতায় ভোগে, সে দেশে সংখ্যাগুরুদের ও দায়িত্ব নিতে হবে, প্রগতিশীল চিন্তাধারার সংখ্যালঘু মানুষকে সামনের সারিতে নিয়ে এসে তাদের ক্ষমতায়ন করার। তবেই তারা নিজের নিজের গোষ্ঠীর গোঁড়ামির বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারবে। আপনি হাত ছেড়ে দিলেই চাপাতি বা তলোয়ার দিয়ে ঘ্যাচাং। 

©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

মুম্বাই মাঝি জান আহে

| মুম্বাই মাঝি জান আহে ❤ |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ 

মুম্বাইয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ১০০ ছাড়ালো। ১৫০০ জন আক্রান্ত। ধুর! এতো সহজে ভেঙে পরবে মুম্বাই? সেই শহর যার ধর্মই হলো জীবনকে উদযাপন করা? যে সিরিয়াল ব্লাস্ট এর পরের দিন ফের গমগম করে, অফিস দোকান আর পাঁচটা দিনের মতোই খুলে যায় সন্ত্রাস হামলার পরে, বন্যা হলে যেখানে বিশাল বিশাল অফিসগুলো খুলে দেওয়া হয় আর দোকানদার নিজের দোকানে স্টক করা বিস্কুট আর জলের বোতলগুলো অকাতরে বিলিয়ে দেয় অফিস যাত্রীদের, গাড়ি ঘোড়া না পেয়ে আটকে গেলে যাতে তারা জল আর বিস্কুট খেয়ে নিতে পারে।

যখনই মুম্বাইকে প্রতিকূলতার মুখে দাঁড় করানো হয়, মুম্বাই তার সুপারহিরোদের ডেনে আনে। সাধারণ দেখতে সব মানুষরা Avengers এর মতো দাঁড়িয়ে পরে শত্রুর সামনে। জ্যায়সে ফিলমো মে হোতা হে! প্রেমিকাকে আগলে নায়কের মতো দাঁড়িয়ে পরে মুম্বাইকাররা।

সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারেরা ২০ ঘন্টা কাজ করছে বলে তাজ হোটেল রোজ তাদের খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছে। ওদিকে শিবাজী পার্ক এলাকার শ্মশানে যারা রোজ কোরনায় মৃত মানুষদের চুল্লিতে পোড়াচ্ছেন তাদের জন্য খাবার যাচ্ছে আশেপাশের তথাকথিত সম্ভ্রান্ত সব বাড়ি থেকে। পুলিশ রোজ ভাবছে সে কাল ছুটি পাবে, বাড়ি ফিরে সন্তানের মুখ দেখবে কিন্তু রোজ আরো জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে। এক অদৃশ্য শত্রুর সাথে লড়তে জান লড়িয়ে দিচ্ছে। এ যেন ২৬/১১ র থেকে ও ভয়াবহ এক পরিস্থিতি।

মুম্বাইয়ে প্রতি দুমিনিটে একটা করে লোকাল ট্রেন চলে। পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ ও জটিল রেল নেটওয়ার্ক। প্রতিটা কামরার প্রতিটি হ্যান্ডেল, সিট পরিস্কার করে গেছে এক ডজন ছেলে৷ তারপর নিজেরা অসুস্থ হয়ে পরেছে। এখন ট্রেন চলছে না কিন্তু রেলের আধিকারিকরা রোজ অফিসে বসে হাজার হাজার এক্সপ্রেস ট্রেনের দিস্তে দিস্তে রিজার্ভড কামরার  লাখ লাখ যাত্রীর খোঁজার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এরা সবাই সংক্রমণের শিকার হতে পারে। এদের মাঝেই একাধিক পজিটিভ রোগী যাত্রা করেছে।

এশিয়ার সবচেয়ে বড় জনবসতি ধারাভি ও আক্রান্ত। এক একটা দেশলাই বাক্সের মতো ঘরে বিশ তিরিশজন শুতে আসে স্রেফ৷ প্রতি দু পা হাঁটলে পঞ্চাশটা মানুষের ধাক্কা লাগে। ট্রাম্প বা পুতিন ও হয়তো পাগল হয়ে যেত এর পরিনতি ভেবে। কিন্তু বালাসাহেব ঠাকরের ছেলে, উদ্ধব ঠাকরে ভয় পায়নি। যা হবে দেখা যাবে বলে গোটা প্রশাসনকে নিয়ে নেমে পরেছে মাঠে। সন্ত্রাস হামলার পরে যেভাবে মুম্বাই প্রশাসন লড়াই করে সেভাবে ঝাপিয়ে পরেছে। টেস্ট টেস্ট টেস্ট। পাগলের মতো সন্দিগ্ধ মানুষ খুঁজে টেস্ট চলছে। টাকা কম পরলে ফোন যাচ্ছে জাঁদরেল লোকেদের বাংলোতে। টাকা ছাড়ুন।

মুম্বাই একটি স্বপ্নের নাম। এখানে রোজ একটা করে সাফল্যের গল্প লেখা হয়৷ এখানে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের ২০% থাকে। বিশাল বিশাল ইমারত, চোখধাঁধানো তারকা গলি। আবার এখানেই স্রেফ পদপৃষ্ঠ হয়ে মানুষ মারা যায়। রাস্তার খোলা ম্যানহোলে ভেসে যায় লোক। গুলি খায় বিয়ারে চুমুক খেতে খেতে কোন পাবে।

কিন্তু বিশ্বাস করুন, এবার ও মুম্বাই বেঁচে যাবে। ফের এক দন্ড দাঁড়ানোর সুযোগ পাবে না। ফের গমগম করবে দিন আর রাত। কেন জানেন? 

কারণ মুম্বাইয়ে সব্বাই শহরটাকে নিজের প্রেমিকা মনে করে। রীতিমতো প্রতিযোগিতা করে ভালোবাসা জাহির করতে। এক সপ্তাহ হলো যে ছেলেটা সদ্য ট্রেন থেকে নেমেছে সে, বিহার থেকে ট্যাক্সি চালাতে এসেছে সে, তালি বাজিয়ে সিগনালে সিগনালে টাকা তোলে সে, বাদশা বলে ডাকা হয় যাকে সে, মুম্বাইয়ের রাজা বলা হয় যাকে সে, ডোংরির ডন ছিল যে সে। এরা না না রাজ্যের থেকে এসে, না না ভাষাভাষী হয়ে ও প্রেমিকাকে নিয়ে বলার সময় স্রেফ একটাই লাইন বলে - মুম্বাই মাঝি জান আহে। হিন্দি করলে, মুম্বাই মেরি জান। 

©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

পয়লা বৈশাখে কথা দিচ্ছি

| পয়লা বৈশাখে কথা দিচ্ছি |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

কথা দিচ্ছি, নব বর্ষে আর তোমায় অবহেলা করবো না। আর স্রেফ এক আধদিন তোমায় উদযাপন করে বাকি দিনগুলো আলমারির মাথায় বা চিলেকোঠার ঘরে অযত্নে রেখে দেবো না। কথা দিচ্ছি। 

কথা দিচ্ছি পৃথিবীর অসুখ সেরে গেলে আমি অনলাইনে ওষুধ, ডিজিটাল মুদিখানা ছেড়ে নতুন কাপড়-জামা পরে পাড়ার শংকর কাকুর দোকানেই ফিরবো। দোকানের দরজার মাথায় কচি আম পাতার শুভ প্রতীক। শংকর কাকুর দেওয়া মিইয়ে যাওয়া কচুরি আর খুব মিষ্টি সন্দেশই তৃপ্তি করে খাবো। প্রমিস করছি সেভেন আপ আর হালখাতাতেই ফিরবো৷ অনেক হলো ডিজিটাল সবকিছু। এবার ফের হালখাতায় পুরনো মোহরের ছাপ তুলে লক্ষ্মী-গণেশের নবকলেবর প্রতিষ্ঠা করবো। 

কথা দিচ্ছি পৃথিবীর অসুখ সেরে গেলে, আমরা ফের শৈশবে ফিরে যাবো। পয়লা বৈশাখের সকালে লুচি আর সাদা আলুর তরকারি,নাড়ু,খই, মুড়ি-মুড়কি, বাতাসা, গজা, জিলিপি খেয়ে, সব ভাই বোনেরা মিলে কানামাছি, দাড়িয়াবান্দা, ডুডু, চু-কিৎকিৎ-ছুট খেলবো। 

কথা দিচ্ছি বেঁচে ফিরলে গোলাপ, লিলি, ক্রিসেন্থেমাম না বরং ভাঁটফুল, কাঠগোলাপের বন আর বেতসলতার ঝোপে ফিরবো৷ কাঁটা ফল ছুঁড়ে মারবো বন্ধুর জামায়, বান্ধবীর চুলে গেঁথে দেবো কাঁটা ফলের গুচ্ছ। ও রাগত চোখে তাকিয়ে হেসে ফেলবে। তারপর এক এক করে ওর চুল থেকে কাঁটা বেছে ফেলবো। কথা দিচ্ছি এবার স্লথ গতিতে ভালোবাসবো। চুমু গুলো দীর্ঘ হবে। 

কথা দিচ্ছি জ্বরের শেষে সূর্য ধোয়া ঘর আজকের দিনে গোবরের ছিটে দিয়ে পবিত্র করবো দিদা যেভাবে করতো, মায়ের মতো আলপনা দেবো অনেকক্ষণ ধরে। গোছা গোছা নিমপাতা ঝোলাবো দরজায়, গলা ছেড়ে গান গাইবো। প্রমিস করছি এসব শেষ হলে গ্রামের মাটির গন্ধ বুক ভরে নেবো কালবৈশাখী বিকেলে। নাগরদোলা, জাদু, পুতুলনাচ, বায়োস্কোপ, মোরগের লড়াই বসাবো কোন প্রত্যন্ত অঞ্চলে। প্রমিস করছি সন্ধে নামার আগে তোমার ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁয়ে দেবো। পৃথিবীর অসুখ সেরে যাক। আমাদের দূরত্ব মিটুক।

কথা দিচ্ছি আর নাট সেঁটকাবো না সপ্তপদের গিমাশাক, সর্ষেশাক, হলুদপাতা, পাটশাক, কলমিশাক, থানকুনিপাতা, নিমপাতা পাতে পরেছে দেখে।

কথা দিচ্ছি নতুন আইফোন না কিনতে পারার মনখারাপ আর হবে না। বরং মেলা থেকে  টিনের জাহাজটা দশটাকা বেশী দিয়ে কিনেছি বলে আপশোশ হবে। ওই দশটাকা দিয়ে দুটো বুড়ির চুল কেনা যেত। প্লাস্টিকের বিভিন্ন বাঁশি কিনতে পারতাম। চাপ দিলে ফুত ফুত আওয়াজ হতো। আমার শৈশব শুনতে পেতো ওই ধ্বনি। 

বেয়াদব নেওটা বেড়ালছানার মতো স্মৃতি বারবার এসে গায়ে গা ঘষে দিচ্ছে। রুদ্ধ জীবনের এসব বৈশাখ তীব্র দাবদাহ শেষে ঝড় বৃষ্টির মতো। এসব সময় জানালা হুট করে খুলে যায়। উঁকি মেরে ফের ফেলা আসা সবটা দেখতে ইচ্ছে করে। অনেক তো দৌড় ঝাপ হলো। কোরোনা তো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো। অর্থ, ক্ষমতা, সিঁড়ি দিয়ে উপরে ওঠা ক্ষনিকের। দুম করে একদিন চলে যেতে হবে। কথা দিচ্ছি পৃথিবীর অসুখ সেরে গেলে আর অবহেলা করবো না আমাদের আশেপাশের মানুষকে। মানুষের ঘরবাড়িকে, বন্ধুকে, ছোট ছোট বাঁচার মুহুর্ত আর কারণগুলোকে। কথা দিচ্ছি।

©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

হাজারে হাজারে পরিযায়ী শ্রমিক রাস্তায় নেমেছে: খেতে দে, কাজ দে শালা

| হাজারে হাজারে পরিযায়ী শ্রমিক রাস্তায় নেমেছে: খেতে দে, কাজ দে শালা |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ 

“গাঁড় মারি তোর মোটরগাড়ির, গাঁড় মারি তোর শপিং মলের।
বুঝবি যখন আসবে তেড়ে, ন্যাংটো মজুর সাবান কলের।
পেটমোটাদের ফাটবে খুলি,ফাটবে মাইন চতুর্দিকে।
গলায় ফিতে নেংটি বেড়াল, তার বরাতেই ছিঁড়বে শিকে।” --- নবারুণ ভট্টাচার্য 

ফ্যাতাড়ুরা রাস্তায় ফ্যাত ফ্যাত সাঁই সাঁই করছে। বোম্বাই এটা। বান্দ্রা স্টেশনের সামনে। কলার চেপে পুলিশকে বলছে, আমাকে বাড়ি ফিরে যেতে হবে। বাড়ি ফিরতে হবে। গ্রামে ফিরতে হবে। গ্রামে কাজ নেই, চাল নেই, দুমুঠো ভাত নেই। 

এরা হয়তো কেউ মুসলমান, কেউ হিন্দু, কেউ দলিত, কেউ ব্রাহ্মণ কিন্তু এদের সব্বার পরিচয় এরা শ্রমিক। শ্রমিক হয়ে শহরে এসেছিল। তোমার পেটমোটা শপিং মল, সৌখিন বাংলোটা বানিয়েছিল৷ তুমি বলেছিলে এদের কিচ্ছু হবে না। কিন্তু তারপর আদানি আর আম্বানির জন্যই সবটা পায়েস রেখে এদের থালায় দুহাতা গু ঢেলে দিয়েছিলে। 

ফ্যাতাড়ুরা ক্ষেপে গেলে কিন্তু আপনার ধর্ম-ধর্ম খেলা গোটাটা গিলে খেয়ে নিতে পারে। আপনার জাতের নামে বজ্জাতির টুঁটি চেপে ধরতে পারে। দুমদাম ময়লাজল ঢেলে দিতে পারে আপনার রাষ্ট্রীয় ভদ্রতায়। খালি পেটে, হাতে কাজ না থাকলে আবার সৌজন্য কি? ভয় পান। ফ্যাতাড়ুগুলোকে ভয় পান। 

ওরা হাঁটতে হাঁটতে ঘরে ফেরা অবধি সুরক্ষিত আপনি। ওরা খাদ্যসঙ্কট অনুভব করার আগে অবধি সুরক্ষিত আপনি। ওরা নিজের হিসেব বুঝে নেওয়ার আগে অবধি সুরক্ষিত আপনি, ওরা অ্যানার্কি না করা অবধি আপনার ঘর সুরক্ষিত, আপনার ড্রইংরুমে স্টক করে রাখা স্কচগুলো সুরক্ষিত, আপনি, আপনার পরিবার সুরক্ষিত। 

ব্লেডের উপর দিয়ে টানা হেঁটে হেঁটে ওরা শিকড়ে ফিরতে চাইছে, ফিরে আপনার মতোই ওর সদ্যোজাত মেয়েটার মুখটা দেখতে চায়। স্রেফ ওইটুকুর ব্যবস্থা করে দিন এখন। একটা প্লেন না, বিদেশ মন্ত্রকের অনুমোদন না, রাষ্ট্রনেতাদের সহানুভূতি না, কয়েকটি বাস মহানগর থেকে কোন জেলায় পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে নিয়ে যাবে, স্রেফ একটা ট্রেন গাঁও এর ওই ইস্টিশনে থামবে - রাষ্ট্র থেকে স্রেফ এইটুকুই চাইছে। কলার চেপে ভাত, পরিশ্রুত পানীয় জল, বিনামূল্যে চিকিৎসা, মাথার উপর ছাদ, চাকরির নিরপত্তা দাবী করেনি। আমাদের এখনো ঘর পোড়েনি। আমরা সুরক্ষিত, আমরা ফেসবুক করছি সেল্ফ- কোয়ারেন্টিনে। 

©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ