| আমি কি বানাতে পারি প্রবাসে ভাত ও ঝোল? |
---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
না "মাছের ঝোল" ছবিটি দেখার সৌভাগ্য হয়নি। ছবিটি খুব সম্ভবত এ সপ্তাহে মুম্বাইতে রিলিজ করবে। নায়কের Existential Crisis এর ন্যায় আমার ও গম্ভীর প্রবাস ক্ষণকাল। আমি কি বানাতে পারবো বাঙালি পোয়াতি মাছ বা লালচে ডিমের ঝোল? আমার দ্বারা কি সম্ভব ঝড়ঝড়ে সাদা ভাত ফ্যান গেলে রাঁধা?
নাকতলার বাড়িতে আজীবন মা রেঁধেছে। পরবর্তী সময়ে গিন্নি। আমি খেয়েছি। যেভাবে শাশুড়ির রান্না করা চিংড়ি বা সর্ষে ইলিশের তারিফ ও ঠিক কোন মশলা কম হলে ঐশ্বরিক হত, তার বিশ্লেষণ করেছি এঁঠো হাতে। ঠ্যাং এর ওপর ঠ্যাং তুলে। বা বাবার আনা রোববারের মুরগির ঠ্যাং গিলে। গন্ডে ও আলতো পিন্ডে।
প্রবাস বড় হতে শেখায়। বম্বে মানুষ হতে। নরমপাঁক জীবন ছেঁড়ে এক গো এজ ইউ লাইক খাদ্যাভ্যাস। যখন যা পাবে তাই ন্যাকামো না মারিয়ে খাবে। প্রথম প্রথম ভাডা পাও জীবন, দুপুরবেলা মারাঠা ভাতের থালির জীবন, ডোসা, মেন্দু ভডার নারকেল চাটনির জীবন, আইসি স্পাইসি জোম্যাটো জীবন। তারপর বউ এলো প্রবাস জুরে, সাথে এল খুন্তি, কড়াই, বাঁকুড়ার পোস্ত, যাদবপুর মার্কেটের বড়ি।
নতুন সময়। এসব সময় বউ যা রান্না করে তাই সোনামুখ করে খেয়ে নিতে হয়। কারন থালাতে তার পরিশ্রমটাও ঝোল আর ভাতে মিশে থাকে। কোন ধরনের কড়া রিজয়েন্ডার আসার আগে জানিয়ে রাখি, আমার বউ কিন্তু হেব্বি রাঁধে ও তার ও বেশি সময় ধরে লম্বাচুল বাঁধে। তারই মাঝে আমাদের জগৎ সংসার।
মুরগি মটন পনির পালক মাছের ডিম আইসক্রিম মেটে ও গিলে আনাজ দিলে সমস্তটা রেঁধে দেবে। আমি দেশ ও দুনিয়া সহ আমেজ করে খাবো। ঠ্যাং এর ওপর ঠ্যাং তুলে। গন্ডে ও আলতো পিন্ডে।
বম্বে এসে একাধিক বন্ধুকে দেখেছি তোফা রান্না করে। আমার অন্তরের প্রিয় সৌভিক ও তার গিন্নি নবনীতা অন্যতম। সোহম ও উল্লেখযুক্ত। মোনা তো বটেই।আর রাকা ও।
আমার বয়েসি কোন পুরুষ মানুষ যে এত ভালো আর এত রকম রান্না করতে পারে তা আমার জানা ছিল না শৌভিকের রান্না চাখার আগে।
এরা এক কড়াই তেল এ যখন ডবকা ডবকা মাংস পিন্ড ক্রমশ ভাজতে থাকে, আর সাথে পিঁয়াজ, রসুন, আদা, মশল্লা নিয়ে খুব করে গা ঘঁষাঘোঁষি করে, জিভ জল কে ঝরাতে চাইবেই। আর হাত চাইবে আরো ভাত আর এক হাতা ঝোল, আর একটা ছোট্ট আলু। আলতো লেগে থাকা স্বাদ বিকেল জুড়ে।
আমি বাঙাল যদিও আমার বউ এদেশি। পোস্তোর প্রতি আপার অনুরাগী না হলেও আরবসাগর পারে কেউ ভালোবেসে রাঁধলে পরে কোন আহাম্মক প্রশংসা না করে পারে? বিগত যৌবনা আলুথালু আঁচল নারীর মত থালার এক পাশে আলু পোস্ত, মুগ ডাল, গরম সরু চালের ভাত। বিসমিল্লা।
কিন্ত অনেক হয়েছে আর না। বদলা নয় স্বাদ বদল চাই। ইদানীং বউ এর নিদারুণ অসুখ ও আমাদের দুজনেরই অফিসে বেদম চাপে ওই ফান্ডামেন্টাল প্রশ্ন বাড়বার টোকা মারছিল: আমি কি বানাতে পারি প্রবাসে ভাত ও ঝোল?
টিজার আগের সপ্তাহেই দেখিয়েছিলাম একটু নুন বেশি, তলায় লেগে যাওয়া মুরগির ঝোল আর কম সেদ্ধ ভাতে। ট্রেলারে ছিল হালকা চ্যাটচ্যাটে ভাত, ভুল করে গরম মশলা ও মিট মশলা দেওয়া ডাল আর সসেজ ভাজায়।
এবার ব্লকবাস্টার। ঝড়ঝড়ে ফাইন চালের ভাত, যার ফ্যান সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের চেয়েও নিপুণভাবে গালা হয়েছে, অষ্টাদশীর মত লাজুক সোনামুখ, স্নিগ্ধ হলদে ডাল, মিনি বাস স্ট্যান্ড এর পাশের সেন বা মিত্র কেবিনের লাল ডিমের ঝোল আর সামান্য তেলে কড়া করে আলু ভাজা।
প্রেমিকার মত অভিমানী কড়াইয়ের অন্তরের সরঞ্জাম। সামান্য ইগনোরেন্স দগ্ধ করতে পারে। ভাত সেদ্ধ করা আবার উলটো। প্রথম প্রথম তেজি, শক্ত, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। সেদ্ধ হলে নিস্তেজ, একে অপরের সাথে সেঁটে থাকা। বিবাহ যেরম হয়।
নিজের হাতে রান্না করা এক দারুণ অর্গাজম বুঝছি। পরমাণু শক্তি সম্পন্ন রাষ্ট্র প্রধানের রাষ্ট্রসংঙ্ঘে কিরকম লাগে আজ ঠাহর হল।
আয় শালা কোন মশলা দিয়ে কি রান্না করেছিস আগের রোববার গপ্পো করতে আয়।
© ---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
No comments:
Post a Comment