| শান্তনু ভৌমিক, গৌরী লঙ্কেশ ও চুপকথারা |
----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
এ এমন এক সময় যখন গোটা দেশ ছিছিকার করছে, খিল্লি ওড়াচ্ছে এক বিপুল জনপ্রিয় মুম্বাই নিবাসী, দেশপ্রেমী সাংবাদিকের গুজরাট দাঙ্গার কভারেজ সংক্রান্ত ঢপবাজি নিয়ে।
ঠিক সেই সময় অখ্যাত, নাম না জানা চ্যানেলে কর্মরত, ভারতের ভরকেন্দ্র থেকে অনেকটা দূরে, ছোট্ট রাজ্য ত্রিপুরাতে এক ২৮ বছর বয়সী সাংবাদিক মৃত। রাজনৈতিক দাঙ্গা কভার করতে গিয়ে খুন হতে হয়েছে। কারন ব্লগার, সাংবাদিক কোপানো , ওবি ভ্যান জ্বালানো, হর্তাকর্তার নাম করে সাংবাদিক চমকানো ও কথায় কথায় চাকরী খেয়ে নেওয়ার সুড়সুড়ি দেওয়াতে এক নির্মল আনন্দ আছে। যে যায় লঙ্কায়, সে বোঝে।
শান্তনুরা ছোট্ট ক্যামেরা নিয়ে ফিল্ডে পরে থাকে, স্টুডিওর চড়া আলো থেকে অনেক মাইল দূরে, চামড়া তুলে নেওয়া গ্রামের বোমাপ্রেমীদের কাছাকাছি। দ্রোহের উষ্ণতা কম তাই, মোমবাতি ও দেরীতে জ্বলে।
আমার দেশে একের পর এক কালবুর্গি, পানসারে, ডাভোলকর আর গৌরি লঙ্কেশদের খুন হতে হয়। প্রতিস্পর্ধা দেখায় বলে। বাকিরা মরে না। চুপকথা আয়ত্ত করেছে বলে রাষ্ট্রগত, প্রাতিষ্ঠানিক।
এরা ফুলের মালা পাঠাবে, লেটারহেডে শোকজ্ঞাপন করবে, কষ্ট পাবে, আঙুল তুলবে বিরোধীর দিকে তারপর ফের মিথ্যে মামলায় এক এক করে ফাঁসাও শালা কলমচিদের।
স্টুডিওর আস্তরণে আছে যারা তারা তখন বিজ্ঞাপনী বিরতিতে যুদ্ধং হেবি! শত্রু চেনা হয়ে গেছে। এবার নেশনকে জানানো শুধু বাকি।
যারা এই ছকে নিজের রোজনামচা লিখবে না তাদের ঠান্ডা গলায় জানাতে হয়, কোন প্রশ্ন নয় কোন প্রশ্ন নয়।
আমার দেশের রাজধানী স্বাধীনতার ৭০ বছর বাদেও ধর্ষণ শহর হিসেবে পরিচিত নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা মেয়েটির কাছে।
আমার দেশে গো-মৃত্যু হলে সংখ্যালঘু নিধন যজ্ঞ হয় আর তারা ফোঁস করলে জেহাদি।
আমার দেশে শিশু মরলে বলা হয় বিরোধীদের চক্রান্ত। আর প্রশ্ন করলে রাষ্ট্রদ্রোহী।
আমার দেশেই অবস্থিত কাশ্মীরের মানুষকে দেশ সবক শেখায় পেলেট গানে অন্ধ করে, দ্রোহ বুকে বাঁচছে বলে।
আমার দেশের মানুষ নিজের জমানো টাকা নিজের ব্যাংক থেকে তুলবে বলে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে। শেষে মৃত্যু হলে তাকে শহীদ তকমা দিতে হিড়িক লাগে।
আমার দেশেই আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাগার, আধুনিক শিল্পতালুক, উৎকৃষ্ট শিক্ষাকেন্দ্র বা মারণ রোগের চিকিৎসার সর্বশ্রেষ্ঠ হাসপাতাল গড়ার জেদের চেয়ে বড় জেদ পোষা হয় একটি মন্দির বানাবো বলে।
আমার দেশেই রাম রহিম একর একর জমি নিয়ে আশ্রম বানায়, নাথুরামের মূর্তি বসে, গণেশ দুধ খায় আর দাঙ্গা বাঁধে মন্দিরে পাওয়া মাংস পিন্ড নিয়ে।
আমাদের প্রশ্ন করতে হয় সৌখিনতার, ফুলদানিতে রাখা গোলাপের মত। আধো আধো, সোনামণি প্রশ্ন। সে প্রশ্ন মনে ধরলে উদ্বাহ নৃত্য হয়। বিষম খেলে একপেশে, কুচক্রী।
আমার দেশ রোজ একধাপ করে অন্ধকূপের দিকে পা বাড়ায় আর আমরা নতুন এক সকালের জন্য অপেক্ষা করি কালবুর্গি, ডাভোলকর, লঙ্কেশ বা ভৌমিকের অগোছালো স্টাডি টেবিলে,যুক্তিবাদী পথসভা বা ফেসবুক পোষ্টে।
আমরা তো সীমান্তে বন্দুক হাতে যুদ্ধ করতে অক্ষম, বেয়ারা প্রশ্ন করে বিপদে ফেলি হোমড়া চোমড়াদের, তাই চুপ থাকি, শীতাতপনিয়ন্ত্রিত, সামাজিক, মধ্যবিত্ততায়।
ধামা ধরতে হয়। চুপ থাকতে হয়, নয়তো চুপ করিয়ে দেওয়া হয়। চাপাতি বা ত্রিশূল জানে। মনের কথা লেখার পর ও ডিলিট করে দেওয়ার অসহায়তা জানে, ক্যামেরা আছড়ে ভেঙে ফেলে, কলম, মাইক কেড়ে নিয়ে শান্ত গলায়- আপনি কিচ্ছু দেখেন নি স্যার।
©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
No comments:
Post a Comment