| ২৯ সেপ্টেম্বর, ২২টা লাশ, এলফিন্সটন স্টেশন |
----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
মানুষ বড় সস্তা। বুলেট ট্রেন পিষে দিলে পারতো।
এলফিন্সটন স্টেশনে স্রেফ পদপৃষ্ঠ হয়ে ২২ জন যাত্রী মারা গেল। ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি, অফিস যেতে দেরী, ট্রেন সামান্য লেট, পিছল সিঁড়ি, সংকীর্ণ ফুটব্রিজ, প্যানিক।
আমিও অন্যান্য দিন ওই একই ফুটব্রিজ ধরে অফিস যাই। এটা ভেবে যত না আঁতকে উঠছি তার দ্বিগুণ এই ভেবে যে যদি এলফিন্সটনের জায়গায় তুমুল ব্যাস্ত দাদর, ব্রান্দ্রা বা অন্ধেরিতে এটা ঘটতো তবে কি হত?
আমার মুম্বাই আসার পর থেকেই এলফিন্সটন জড়িয়ে আছে রন্ধ্র। প্রথম মেসবাড়ি এলফিন্সটনে, ট্রেন ধরতে এলফিন্সটন, অফিস যেতে এলফিন্সটন, দারুন পুরি সবজি খেতে এলফিন্সটন, এখন যেখানে ফ্ল্যাট সেখান থেকে ট্রেনে চেপে এলফিন্সটন, তারপর হাঁটা। বম্বের লাট সাহেব এলফিন্সটন সাহেব সব জানেন।
এলফিন্সটন অফিসপাড়া। আশেপাশে বিশ্বমানের সব উঁচু উঁচু অফিসবাড়ি। যে ২২টা লাশ পরে আছে, তাদের সব্বাই হয়তো কোন না কোন কর্পোরেট ঠান্ডাঘরে আইডি পাঞ্চ করে ঢুকতো, নবমী উইশ করতো, কাজে মাথা গুঁজতো তারপর ফের এলফিন্সটন স্টেশন থেকে ঘর। তারবদলে আজ যাবে লাশকাঁটা ঘর।
নবমী ছুটি নেবো ঠিকই ছিল। লুচিমাংস,ঠাকুর দেখবো। পুজোর অন্যদিন অফিস। আজ যাই নি। গেলে হয়তো পরে থাকা মৃত দেহ, চপ্পল, ব্যাগ, চশমা পেড়িয়ে যেতে হত।
গোটা দেশের ৪০% রেল ট্রাফিক ও রেলজনসংখ্যা মুম্বাই এ। রেলের ৫০% রোজগারও মুম্বাই থেকেই তবু ভারতের সবচেয়ে কসমোপলিটান শহর এসব রক্তের দাগ বয়ে নিয়ে চলে।
এই এলফিন্সটনেই মুম্বাই বন্যার দিন এক বিখ্যাত ডাক্তার ম্যানহোলে পড়ে তলিয়ে গেছিল। লাশ উদ্ধার হয়েছিল আরবসাগর লাগোয়া সি ফেস থেকে। আজ ২২টা "সস্তা" জীবন প্রাণ দিল। মানুষ সত্যি বড্ড সস্তা। বুলেট ট্রেন দামী। গুজরাট থেকে মুম্বাই আসবে শীগগির।
পুনশ্চ: এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক। দৌড়ানো চালু। কাল আমার ও অফিস। একই ফুটব্রিজ দিয়ে নামবো, একই ভাবে। নেতা মন্ত্রী, অমিতাভ বচ্চন বাদে সস্তা সাধারণ মানুষ যেরকম যাতায়াত করে আরকি।
সময় এসেছে ত্যাগিয়ে সোনার গদি, রাজা,উজির, মন্ত্রীকে অফিস টাইমে লোকাল ট্রেন চড়ানোর।
©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
#বংযাত্রীরবম্বেডাইরি #Elphinston #MumbaiStampede
No comments:
Post a Comment