কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Sunday, October 15, 2017

বিশ্বকর্মা ভূত

| বিশ্বকর্মা ভূত |

----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

বিশ্বকর্মা পুজোর দিন-ভোকাট্টা,মাচা গান, আকাশ  জোড়া ঘুড়ি, চাইনিজ মাঞ্জা, মন্ডপের সামনে কর্মঠ মাতাল ছাড়াও কিছু ভূত দেখতে পাওয়া যায়। বিশ্বকর্মা ভূত।

সাধারণ মানুষ যারা সেদিন রিক্সাওয়ালা চারগুন ভাড়া চাইছে বলে খিস্তী করে, শপিং মলে মিনারেল ওয়াটারে রাম ফুচকা খেয়ে বমি করে, বিকট জোরে গানওলা ডিস্কে যায় গলা অব্দি মদ খেতে, শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ভাসানের নাচ নাচতে, তারা ওই ভূত দেখতে পারেনা।

এই ভূত গুলো ঘুরে বেড়ায় ঊষা কারখানার সাইরেনের চারপাশে। এখন যে জমিতে সাউথ সিটির সবচেয়ে উঁচু ফ্ল্যাট বাড়িটার সবচেয়ে উঁচু ছাদ উঠেছে। কিংবা বাটা কারখানার গেটে। যেখানে এখন বহুতল আবাসন। ভূত বসত করে হাওড়া, হুগলি, নৈহাটি, ব্যারাকপুর চত্বরে। চটকলে, মেটালিকে, ইঞ্জিনিয়ারিং নাম শুনলেই।

ঝুপ করে ঢুকে পরে জয় ইঞ্জিনিয়ারিং এর স্টাফ কোয়াটারে। দয়াল বিশ্বকর্মা যে ঘরটায় গলায় দড়ি দিয়েছিল। কিংবা নর্থব্রুকের ওই অফিস ঘরটার সামনে যেখানে পিটিয়ে মারা হয়েছিল ম্যানেজার হরেকৃষ্ণ মাহেশ্বরীকে। অথবা ডুয়ার্স চা বাগানে। হাড় গিলগিলে, গা ছমছমে। একটু সাদা ভাত নুন দিয়ে পেলে কাঁমড়া কাঁমড়ি করে খাবে।

প্রতি দুর্গা পুজোর আগে লকআউট হয়ে যেত  কারখানা, একদিন তালা মেরে দিল সাহেব। কেউ চাকরি করে না, কেউ না। বাড়িতে ২৩ বছরের মেয়েটা একদিন বোম্বে পালালো এক দালালকে বিয়ে করে। টাকা পাঠাতো প্রথম প্রথম, তারপর বন্ধ। বিশ্বকর্মা ভূত হতে গেলে প্রথমে হতে হয় টিবি। তাই হল। তারপর চিকিৎসা না করে ফেলে রাখা, অমানুষিক যন্ত্রণা সহ্য না করতে না পেরে একদিন অপঘাতে মৃত্যু।

বিশ্বকর্মা সৌখিন বাঙালির অরুচি। তার ওপর আবার ভূত। কোন ইতিহাস বই, নিষিদ্ধ ইস্তেহার, সরকারি গেজেটে এদের উল্লেখ নেই। থাকার মধ্যে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ, চপ শিল্প, শ্রমিক অসন্তোষ, ভিনদেশে কাজের খোঁজে পাড়ি।

বিশ্বকর্মা ভূতেরা অতৃপ্ত আত্মা হয়ে ন্যানো কারখানা, জুটমিল, ভারি শিল্প ছিল যা কিছু তার আশেপাশে খালি পায়চারী করছে। কোন বৃদ্ধি নেই, কোন বৃদ্ধি নেই ফিসফিস করছে। বাল শুনছে কেউ। রাজারহাটের আইটি শিল্প ব্যস্ত গণেশ পুজো নিয়ে, সরকার ব্যস্ত মাটি উৎসবে। বন্ধ কারখানায় নজর দেবে কখন?

গোটা রাস্তা তে আজ ঢেকুর এর আওয়াজ। সাথে পেঁয়াজ রসুন গন্ধ। শেফালি দি খদ্দের পেতে আজ লেট অব্দি ডিউটি দিচ্ছে। কড়া ফুসফুস দেয় বোগল, নেকলেস এর আশেপাশে। ওই গন্ধটাও মিশে গেছে উৎসব এ। বিশ্বকর্মা আর ওসির বোতল নিয়ে বান্টু সেল্ফি নিচ্ছে। দারুণ হ্যাপি উইথ ৪৯ আদার।

এখন লাচ হবে রাস্তা জুরে। মাঝে কম্পালসারি ফেটে যেতে হবে থানার মেজো বাবু চক্কর মারতে এলে। গোটা রাস্তাজুরে ঝলমল করছে বিশ্বকর্মা বর্তমানের। ভূত হয়ে যাবার আগে।

©------- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

No comments:

Post a Comment