| বিকৃত করিয়া শ'দুয়েক মুখ/ একা চাড্ডি পেটাইতে বিপ্লবী সুখ |
----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
কানহাইয়া কুমার যাদবপুরে এসেছিলেন। তা সে ভালো কথা। বুকের ভেতর জ্বলতে থাকা স্ফুলিঙ্গগুলো ডানা পায় ওর মেঠো ভাষণ শুনলে। অনেকটা গুলজার সাহেবের কবিতার মত। শুদ্ধ, সহজ কিন্তু অতল পাওয়া কঠিন। যাদবপুরে সেরকম মানুষ অনেক। ডাকাবুকো, লড়াকু, জান কবুল। হাজার হাজার।
প্রতিবারের মত এবারো কিচ্ছু চাড্ডি-ফন্দি ফাঁদা হয়েছিল কানহাইয়ার মুখ কালো করতে। এলাকাটা যাদবপুর বলে হয়তো এবার চাড্ডি কূলপতিরা কিছুটা চমকে ছিল। আগুনখেকো ছাত্র, এলাকার লোকজন, মরচে পরা লোকাল কমিটি, এমনকি দোকানীরাও কিরকম চাড্ডি মিছিল দেখলে খিঁচিয়ে ওঠে এখানে। জলে আর্সেনিক না থাকলেও তিব্র চাড্ডি বিরোধী এলার্জিন আছে। সামনে থাকলেই ক্যালাতে ইচ্ছে করে। সে মানে লাপোটে সাপোটে আর কি। যতকক্ষন না হনুমানের মত এ রেলিং ও গার্ড রেল ধরে চম্পট না দিচ্ছে, চাপকাও। রাম কে নাম।
এবারে চাড্ডি কূলপতি ঘোষ বাবুরা ( আমিও ঘোষ তবে গোয়ালা বা গোসেবক থেকে ডিস্টিংটিভ) ঠিক করলেন ব্যাক ফুটে থাকার। সামনে থেকে বিপ্লবে নেতৃত্ব দেওয়ার মস্ত চাপ। চোখ উপড়ে যেতে পারে, কপাল ফেটে যেতে পারে, নিদেনপক্ষে স্যাটা ভাঙা। এসবের থাকে লালচে স্পর্ধা যুক্ত। এর চেয়ে গেরুয়াতেই সেফ হেবেন।
অতএব বীর সাভারকরের বংশধরেরা নিজেরা থাকলেন শীততাপনিয়ন্ত্রিত গোশালায় আর লেলিয়ে দিলেন এক কমবয়সী ছেলেকে। টাকা দেব প্লাস দেশের জন্য কাজ ও করতে পারবি। যা কালি মাখিয়ে আয় ওই ছেলেটাকে। অনেকটা মোল্লা ওমর যেভাবে জন্নতে হুরের স্বপ্ন দেখায়, জাকির নায়েক আল্লার সাথে মোলাকাতের সেরকম। মগজধোলাই!
এতটা অবধি ঠিক ছিল। লিবারেল ছোট গল্পের মত চিত্রনাট্য। একে পাকড়াও করা, দু চার চড় মারা, বয়ান রেকর্ড করিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিতে পারতো। হয়নি। কারন আমাদের শেখানো হয়েছে যে একজন গর্ততে পরে থাকতে দেখলে, আচ্ছা করে পেছন, সামনে, খচ্চরের মত মেরে দিতে হয়। এতে খারাপ কিছু নেই।
কোন দোষ না করলেও কিছু মানুষের মুখ দেখলেই খিস্তি করতে ইচ্ছে করেনা? উপরন্তু তার যদি চাড্ডি যোগ পাওয়া যায় তার ওপর একলা। লিঞ্চ মব সোসাইটির ইস্তেহারে যা লেখা ছিল ঠিক তাই হল। দে গন-ধোলাই। চোখ ফাটিয়ে দে, মুখ খাবলে দে, জোর সে চুলের মুঠি ধরে দে ঠুকে দেওয়ালে।
এ অনেকটা গ্রামের জোদ্দারকে মেরে পুঁজিবাদ খতমের মত। বা কনস্টেবলের টুপি খুলে নিয়ে সিস্টেম কে সবক শেখানোর মত। কিংবা স্কুল নির্বাচনে জিতে সরকার পরে যাওয়ার সংকেতের মত।
কেউ যদি সদলবলে একটি সভায় হামলা করে এবং শত্রুপক্ষের সেদিন লোকবল বেশি থাকার ফলে কেউ কেউ যদি মার খেয়ে যায় এবং বাকিরা ভয়ে পিট্টান দেয়,তাহলে কি সেটাকে মব লিঞ্চিং বলে?না বলে না কিন্তু একলা এক প্যাংলাকে মোহন ভগবত ভেবে ক্যালানোতেও কোন বীরত্ব নেই। নো পাসারন চাড্ডি কূলের সদর দপ্তরে ঢিল মারায়, একলা একজনকে একশোজন মিলে পিটিয়ে দেওয়াতে নয়।
কানহাইয়া মঞ্চে গন পেটানো বিরোধী আইনের কথা বলবে, ইয়াকুব মেমনের ফাঁসি কেন আইনব্যবস্থার গর্ভপাত সেই নিয়ে আওয়াজ উঠবে, আমরা আপনারা লিঞ্চ মব সোসাইটি নিয়ে চায়ের কাপে তুফান তুলবো। কিন্তু কোথায় গেল সেই শপথ কমরেড? I Disapprove of What You Say, But I Will Defend to the Death Your Right to Say It.
আখলাখ, পেহলু খান, জুনেইদের সামনে মোমবাতি জ্বালাবো, লিবারেল হতে হাউ টু বি আ গুড কমিউনিস্ট পড়তে চেষ্টা করবো তারপরই ওরা অধম হইলে আমরা নরাধম হইবো। কাস্তে হাতুরি আর চাপাতি ত্রিশূলের ঠিক সেখানেই পার্থক্য।
আসলে সময়টাই এক চোখের বদলে গোটা ঘিলু খুবলে নেওয়ার। হিটলার কে খতম করতে একটা করে স্ট্যালিন এসেই যায়। খুচরো খারাপ লাগা সমেত।
©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
No comments:
Post a Comment