কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Sunday, October 15, 2017

এভাবেই খুন হয় কত শত শৈশবকাল/ আমরা শোকসভা করি

| এভাবেই খুন হয় কত শত শৈশবকাল/ আমরা শোকসভা করি |

--- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

"স্কুলের ব্যাগটা বড্ড ভারী/ আমরা কি আর বইতে পারি? এও কি একটা শাস্তি নয়? কষ্ট হয়, কষ্ট হয়।" সুমনের এই গানের লাইনগুলো ভিডিওটা দেখে মাথায় এলো প্রথম। তারপর বুকের কাছে দলা পাকানো কি যেন একটা। তারপর রাগ।

এভাবেই খুন হয় কত শত শৈশবকাল। কত হাজার অভিনেতা, ক্রিকেটার, শিল্পী মরে যায় ইস্কুল খাতায়। আমরা শোকসভা করি বছর চল্লিশ হলে। মধ্যবিত্ত কোন জীবনযাপনে।

আমি কোন শিশুর ছবি এ ধরনের ঘটনায় প্রকাশ করার বিরুদ্ধে কিন্তু এটা দিলাম। ভিডিওটা শেয়ার করুন। এই শিশুদের সন্ধান করুন। পারলে আগলে রাখুন। এই শিশুই আর একটু বড় হলে স্ট্রেস বাস্টার হিসেবে ব্লু ওয়েল চ্যালেঞ্জ নেবে। মা বাবা বাড়ি না থাকলে ছোট ভাইকে পাখার সাথে ঝুলিয়ে দিয়ে শাস্তি শাস্তি খেলা খেলবে। খোলা গলায় গান গাইতে লজ্জা পাবে, কোন প্রশ্ন করতে ভয় পাবে। সারাজীবন।

এ ভিডিও আমাদের শৈশবস্মৃতি। যে স্যার কান মুলে না দিলে আমাদের বাংলাটা শেখাই হত না টাইপ না। স্যাডিস্ট, পারভার্টেড টাইপ ছিল যারা।

অকারণ থাবড়ে দিত যারা, জামা খুলে কান ধরে উঠবোস করাতো আর পাছায় সপাটে লাথি মারতো যারা। যে আয়ামাসি স্কুল প্যান্টে হাগু করে ফেললে সবাই কে ডেকে ডেকে দেখাতো আমাদের কীর্তি আর হাগু করা প্যান্টটা শুঁকতে বলতো তারা। যে দারোয়ান কাকু ইয়ার্কি মেরে কাঠ পিঁপড়ে ঢুকিয়ে দিতো ফ্রকের ভিতর, যে স্যার উত্তর ভুল হলেই কোমর, পিছন, থাইতে চিমটি কেটে দিত আর মা মা বলে পীঠে হাত বোলাতো। হ্যা তারা।

আমাদের সব্বার জীবনে একটা করে টফি কাকু বা মিষ্টি কাকি এসেছে কোন না কোন সময়। যারা আমাদের কোলে বসিয়ে টফি খাওয়াতো, পিছনে শক্ত কি যেন ঠেকতো, যারা আমাদের স্নান করাতে পারলে বেশি খুশি হত, যারা আমাদের "ওসব" চটকাই মটকাই করে দিত আর অনেক দিন হয়ে গেলে ওনাদের ওই সব জায়গায় হাত বুলিয়ে দেওয়ায় অদ্ভুত খেলা খেলতো। না বললে গোল্লা দুটো জোর সে চিপে দিত। দুদিন ব্যাথা থাকতো। মা কেও কি আর এসব বলা যায়?

আন্টি পড়াতে এসে চিমটি কাটলে বা পেন্সিল দিয়ে চামড়ায় ফুটিয়ে দিলেও তো কিছু বলা যায় না। কারণ আন্টি বা স্যার সব সময় ঠিক হয়। আর আমরা ভুল, বেয়াদপ, শয়তান।

লক্ষ করুন শিশুটিকে। প্রথমে হাত জোড় করে বলছে একটু ভালো করে কথা বলতে, তার পর ফুঁপিয়ে কাঁদা, মাথা ব্যাথার বাহানা, তারপর চাপা রাগ নিয়ে সংখ্যা আউড়ে যাওয়া। যে রাগ দাগ কেটে যায় শৈশবে। এক, দুই, তিন, চার।

ফেলুদা,তোপসে, ক্যাপ্টেন স্পার্ক, হ্যাডক, মিতিন মাসি, মাঞ্জা দেওয়া, ভোকাট্টা, ন্যাঁড়াপোঁড়া, আম পাড়া শেখানোর লোক গুলো সব অনেক দূরে এখন। হয়তো বা মৃত। থেকে গেল সংখ্যা চেনানো- এক, দুই, তিন, চার। মুঝে মত মারো। শৈশবকাল শেষ হয়ে যাওয়ার আগে।

©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

No comments:

Post a Comment