কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Sunday, October 15, 2017

পাহাড়ি ঘৃণায় দুর্গা প্রাঙ্গণ ছাই, মা থাকবে কোথায়?

| পাহাড়ি ঘৃণায় দুর্গা প্রাঙ্গণ ছাই, মা থাকবে কোথায়? |

--- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

দুর্গা পুজোর আর ঠিক ৬০ দিন বাকি। করা যাবে দুর্গা পুজো? কার্শিয়ং থেকে বেড়িয়ে দেশ, দেশান্তরে ছড়িয়ে থাকা ছেলেমেয়েগুলো পুজোয় বাড়ি ফেরার তোরজোড় শুরু করেছে। ট্রেনের টিকিট, প্লেনের টিকিট, বাসের বুকিং, মায়ের শাড়ির ফিরিস্তি রেডি। দুর্গা পুজোয় আনন্দ রেডি।

কার্শিয়ং এর ঐতিহ্যবাহী রাজ রাজেশ্বরী হল ও দুর্গা পুজা প্রাঙ্গণ আজ আন্দোলন এর নামে জ্বালিয়ে দেওয়া হল। গোটা হল আগুন এ জ্বলে ছাই হয়ে যেতে দেখলো এই এলাকার বহু যুগ ধরে বসবাসকারী বাঙালি, গোর্খা, লেপচা, মারোয়াড়ী ইত্যাদি।

রাজ রাজেশ্বরী কমিউনিটি হল তৈরি হয়েছিল ১৯৩০ সালে। বহু বছর ধরে এখানে স্থানীয় বাঙালি বাসিন্দাদের উদ্যোগে দুর্গা পুজো অনুষ্ঠিত হয়। এখনও বাঙালি এসোসিয়েশন এখানেই। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের আশ্রয়স্থলও ছিল এটি। আর ছিল ছেলেবেলার অঞ্জলি, ঝিরঝির বৃষ্টিতে ঠাকুরের মুখ দেখতে যাওয়া, দারুন প্রেমে পরা ওই পাহাড়ি ঢালে।

কমিউনিটি হল তো কোন বিশেষ  ধর্ম বা শ্রেণীর ছিল না। এখানে বিয়েবাড়ি বা স্মরণ বৈঠক ও হত। জন্ম, বিয়ে, মৃত্যুতে কবে রাষ্ট্রীয় গন্ধ এল?

যে হিন্দু বাঙালি মানুষগুলো আজ সারাদিন শোক পালন করলো ওই ছাই বুকে চেপে, যে কার্শিয়ং এর ছেলেটা ভিনদেশে রাগে ফুঁসছে- তারা গর্বের সাথে নিজেদের পাহাড়িয়া ভাবে। হোক না বাঙালি তবে দার্জিলিং এর বাঙালি। শহুরে নগরজীবন থেকে অনেক দূর।

যারা ইতিহাসের পাতা থেকে বাঙালি এই কমিউনিটি হল আর তার আবেশ মুছে দিয়ে চান তারা পাহাড়ি নন। তারা সন্ত্রাসী।

পাহাড় নিয়ে দোজো শেরিং এর গান, খাদের ধারের রেলিং, মাংকি টুপি পরা জ্যেঠু, গ্লেনারিজ এরলি কেক, ফি বছর ৩দিন ছুটি পেলেই ছুট বাঙালির অহংকার। ঠিক যেরকম সমতলে চিনে পাড়া, মাদ্রাজি হাউসিং, নেপালি অঞ্চল, লেপচা গ্রাম। এই সহাবস্থানই বাংলা। বাংলা যদি বাঙালির হয়, বাংলা গোর্খারও। এক বছর যদি পাহাড় ভ্রমণ বন্ধ করে বাঙালি?

রাজ রাজেশ্বরী হলের আগুনে একটা পাহাড় প্রমান বিশ্বাস, একে অপরের প্রতি আস্থা, ঝড়-জলে প্রতিবেশীর হাত জ্বলে ছাড়খাড় হয়ে গেল। মেরামত করতে কয়েক দুর্গা পুজো লাগবে।

এই ঘৃণার বিসর্জন হয় না? এই ঘৃণাতে যারা মদত দিচ্ছে তাদের বধ করা যায় না? দুর্গা পুজোর আর ঠিক ৬০ দিন বাকি। অনিশ্চিত দুর্গা পুজো। মায়ের থাকার জায়গা, দালান, আগেরবারের উলুধ্বনি, কাঁসর ঘন্টা, ধুনুচি নাচ, ঢাকের তাল পুড়ে ছাই।

সব ঘৃণা বিনাশ হলে, আলো ফুটুক কাঞ্চনজঙ্ঘার ফাঁকে। আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠুক আলোকমঞ্জীর। ধরণীর বহিরাকাশে অন্তর্হিত হোক মেঘমালা। মেঘের মধ্যে থেকে অনেকদূর অবধি শোনা যাক:

ইয়া দেবী সর্বভূতেষু শান্তিরূপেণ সংস্থিতা/
নমস্তস্যই নমস্তস্যই নমস্তস্যই নমো নমঃ।

© --- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

No comments:

Post a Comment