| সারাহায় শিহরণ শেষ |
----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
অদ্যই শেষ রজনী। সারাহা নিয়ে যাহারা এখনো মেতে তারা থাক মেতে, আমি ফের নিজের আগডুম বাগডুম লেখায় মেতে উঠি। সারাহা প্রোফাইলটা থাকলো উড়োচিঠি, বলতে না পারা দীর্ঘশ্বাস আর গুমোট সমালোচনা পড়তে।
ভেবে আনন্দ লাগছে যে এখনো অন্তত একটা বিষয়ে তো বাঙালি দেশকে পথ দেখালো। বাঙালি যা তিনদিন আগে শুরু করেছিল, ভারত তা নিয়ে আজ হুলুস্থুলু করছে। হিন্দি চ্যানেল এ প্রায় পারমাণবিক বিস্ফারণ সমান ভয় পাইয়ে দেওয়া তথ্য দেওয়া হচ্ছে, টুইটারে ট্রেন্ড হচ্ছে।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য জুজু এর ইসলামোফোবিয়া। যেহেতু মধ্যপ্রাচ্যতে সারাহা তৈরি হয়, নিশ্চয় এটা আইএসআইএস এর চক্রান্ত। ডিজিটাল ওয়েপন ও হতে পারে।
আমি টেস্টনির বিরুদ্ধতা করেছি। কারন টেস্টনির কোথায় রেজিস্ট্রি, কোথায় আইপি, সাইট ডিটেল কেউ জানে না। ব্যবসাটা আসলে কি তাও জানা নেই। কিন্তু সারাহা নির্দিষ্ট একটি ওয়েব প্ল্যাটফর্ম। প্লে স্টোর এ রেজিস্টার্ড, ডাউনলোড এনক্রিপ্টেড, ব্যাবহার এর উদ্দেশ্য ছিল নাম না বলে অন্যকে গঠনমূলক সমালোচনা করা। সবটাই সাইটে লেখা। নো লুকাছাপা।
প্লে স্টোরে রেজিস্টারড এপ্লিকেশন ডাউনলোড আর দুম করে ফেসবুকে উদয় হওয়া কুইজ সাইটকে নিজের তথ্য দেওয়ার মধ্যে পার্থক্যটা বুঝতে শিখুন। প্রথমটা নেসেসিটি। পরেরটা লাক্সারি!!!
Uday Deb দারুণ একখানা সারাহা নিয়ে প্রতিবেদন আমায় পাঠিয়েছিল। সারাহা কিভাবে রেসিজিম আর হেট কমেন্ট এর আঁখড়া হচ্ছিল বিদেশে। বাস্তব। ফাঁকা মাঠে গোল দিতে কার না ভালো লাগে। আদপে আমরা জিনগত লিঞ্চ মব সোসাইটি। ফ্রান্সে এক সোশাল এক্সপেরিমেন্ট করেছিল এক মহিলা। ওপেন অফার দিয়েছিল প্রত্যেক আগতকে তার সাথে যা ইচ্ছে করার। সে কেবল চুপটি করে দাঁড়িয়ে থাকবে। প্রথম ঘন্টায় দর্শক তাকে ছুঁয়ে দেখে, তারপর তার স্তনে হাত বুলায়, থাপ্পড় মারে, চুমু খায়, এক এক করে কাপড় খুলে দেয়, কে আগে তার রোম ছিঁড়বে তার জন্য মারপিট শুরু করে আর শেষে ব্লেড দিয়ে তার শরীর ক্ষতবিক্ষত করতে উদ্যত।
মোরাল অফ দি স্টোরি আমরা সবাই সুযোগ পেলে ফাটিয়ে পারভার্টেড, সেডিস্ট, মিসোজিনিস্ট সহ গুরুগম্ভীর কিছু পটেনশিয়াল রাখি। সারাহা তাতেই সুড়সুড়ি দেয়। তবে গোদা ভাবে।
সারাহা তে সরাসরি উত্তর দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। অর্থাৎ আমার মেজশশুড় যদি পাশের বাড়ির আলুথালু বউদি সেজে কথা বলে, আমার শুনে যেতে হবে টুঁ শব্দটি না করে। এতে অবদমিত কাম, ক্রোধ, অহংবোধ প্রেসার কুকারে সেদ্ধ হবে কিন্তু শুনে যেতে হবে।
কি ভালোই না হত যদি নাম, গোত্রহীন এক ছায়ামানুষকে তেড়ে খিস্তি করতে পারতাম। বা প্রেম নিবেদন বা নিষিদ্ধ কথোপকথন। সে ও পাল্টা করতো। অনেকটা ওই ভীড় ট্রেন বা বাসে অকারণ ঝগড়া করে স্রেস বাস্টিং এর মত।
বস এর থাপ, বউ এর চাপ, বরের রাগ, মায়ের অভিমান আর রিসেশনের গলা শোঁকানো রাষ্ট্রীয় গান শুনতে শুনতে আমরা হেজে গেছি। সহজ পাঞ্চিং ব্যাগ চাই ১২ ঘন্টা কাজের শেষে। নেট দুনিয়ায় সারাহা এই আরাম দিতে না পারলে তাকে সন্ত্রাসবাদী, হ্যাকার, ইসলামোফোবিয়াতে টেন্ট করে দাও। তারপর একলা ফেসবুকে আবার এ দেওয়াল ও দেয়াল উঁকি মারো, সারা রাত খুঁজতে থাকো দুটো কথা বলার মরহবা।
----- © ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
No comments:
Post a Comment