কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Sunday, October 15, 2017

এখন নয়তো কখন?

| এখন নয়তো কখন? |

---ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

গোটা রাজ্য জুরে মাংসপোঁড়া গন্ধ। জমে থাকা রাগের উষ্ণতা খেটে খাওয়া ঘামের সাথে দড় দড় করে পরছে আমার আপনার গায়। আপনি স্টার জলসা আর ঘন্টাখানেক এর মাঝে টের পাচ্ছেন না। এখন যদি দারুন রাগে যুদ্ধ না হয়, তবে কখন হবে?

গোটা রাজ্যে বিগত এক দশকে একটাও নতুন ভারী শিল্প আসেনি। কোন উল্লেখযোগ্য বহুজাতিক সংস্থা অফিস খোলেনি, সেক্টর ফাইভেই আইটি স্বপ্ন শেষ। কোন চাকরী নেই, ফোট। এখন যদি রগ না চটে তবে কখন?

একটা বিশাল বৃদ্ধাশ্রম। নাম কলকাতা। প্রবাসের বহু ছেলেমেয়ে এই বৃদ্ধাশ্রমকে নিজের ঘর বলে মনে  করে। বাড়ি বানায়ে দিল্লী,বম্বে,লন্ডন।

কলকাতায় রমরমা বাড়ে আয়া সার্ভিস, ওষুধ, অক্সিজেন সিলিন্ডার এর হোম ডেলিভারি, একাকিত্ব দূর করতে স্কাইপ শেখানো, ফিজিওথেরাপি, ডিলাক্স বৃদ্ধাশ্রম এর। এগুলোই রমরমা শিল্প। এখন অভিমান নয়তো কখন?

অন্য রাজ্যে টাটা বিদায় নিলে শোক পালন হয়, এখানে দেবীর জন্ম হয়। দেবী উদযাপনেই খুশি। বদল এখন নয় তো কখন?

কিছু লুম্পেন ধর্মের নামে ঘর জ্বালাবে, পুলিশ মারবে, হেলমেট না পড়ে বাইক চালাবে, অস্ত্র মিছিল করবে আর তাদের মাথা মেরে গুঁড়িয়ে দেবো না? তাদের তোষন করতে হবে? এখন?

বিএ পাশ, এমএ পাশ করছে ছেলেমেয়েরা। পুরুষতান্ত্রিক বাংলায় প্রেমিকের হাতে রুমাল ধরিয়ে মেয়েগুলো বিয়ে করে মুম্বাই, দিল্লী, লন্ডন চলে যাচ্ছে আর ছেলেগুলো সিন্ডিকেট বা ওলা উবের এর লাইসেন্স নিচ্ছে। খুব বেশী হলে পৌরসভায় কাজ। অন্য রাজ্যে এই শিক্ষাগত যোগ্যতায় ম্যানেজার হয় লোকে। ফি বছর ১৫% ইনক্রিমেন্ট নিয়ে।

কোন নতুন চ্যানেল নেই, খবরের কাগজ নেই, আপিস, স্টার্টআপ,স্বপ্নঘোর বৃদ্ধি নেই। থাকার মধ্যে হতাশা চায়ের দোকানে, ক্যারাম আর তাস পেটানোয়।

এখন রাগ হবে না তো কখন হবে? বাদুরিয়ার আগুন আমার বাংলা নয়। আমার বাংলা বিসমিল্লার সানাই এ শুভ দৃষ্টি, ব্রাহ্মণ দলিত মুসলিম নির্বিশেষে বিরিয়ানিপ্রেম, টপ শটে হাওড়া ব্রিজ।

আসুন না, যেটা যার ভুল সেটা বলি। যদি মসজিদ ভেঙে দেওয়া হয় আসুন ঘেন্না করি একসাথে, যদি মন্দিরে গরুর মাংস ছুড়ে দেওয়া হয় সেটার ও নিন্দা করি।

আসুন না দুই ধর্ম থেকেই হাত ধরি শপথ নিতে। কেউ যদি বেশী পায়, পাওয়ার হিসেব নাও কেন না অনেক লোক ভালো সব পায়না। লড়াইটা চাকরি পেতে, দু বেলা খেতে, পড়তে পাওয়ার জন্য হোক। মন্দির, মসজিদ তৈরি করলে শিল্প আসেনা। আগুন জ্বালালেও আসেনা।

উন্নয়ন এর রথ যাত্রা কবে হবে এই পোড়া দেশে? কবে দাঙ্গা বাঁধবে বিশ্বমানের কারখানা, তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প পেতে নিজের মাটিতে। দেখবেন প্রত্যেক কারখানা তখন মন্দির, মাজার হবে। ধর্ম হবে উন্নয়নের গতি।

যারা অস্ত্র মিছিল করছে, ঘর জ্বালাচ্ছে, রথ পোঁড়াচ্ছে, মাজারে ঢিল ছুঁড়ছে, তাদের চাকরিজীবন দিন। ব্যাবসা দিন। ব্রোকার, ডিলার, রিটেইলার হতে দিন। মতাদর্শ দরজা খুলুন। শিল্প বৃদ্ধি আনুন। ধন্দা সে বড়া কোই ধরম নেহি হোতা!

এবার কাজ দিন। অনেক অনেক কাজ। নয়তো অলস মস্তিষ্কজাত পিটিয়ে মারা, দাঙ্গা বাধানো, গুজব ছড়ানো চলতেই থাকবে আমার বাংলায়। ভিক্টোরিয়া, দার্জিলিং, খোয়াই, লালমাটির বাংলায়।

© ---ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

গুজব

| গুজব |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

গুজব বলতে ছোটবেলায় ভাবতাম আনন্দলোক আর নবকল্লোল এর প্রচ্ছদ কাহিনী। রসালো, ধারনানির্ভর, দুপুরবেলা বালিশ চেপে বা সন্ধের ক্যারাম ঠেকের মাখোমাখো খোরাক। গ্লসি ছাপার অক্ষরগুলো কখন যেন আমার বাড়ি, মায়ের শাড়ী, ভাতের থালা, বাবার পিটিয়ে মারা লাশের সাথে জ্বলতে থাকলো। গুজবে।

গুজবেই তো যুদ্ধ লাগে। গোল্লাছুটের মাঠ, প্রিয় শহর, পোষা বেড়ালছাড়া হতে হয় লেখককে। পরে থাকে না পাওয়া স্বীকৃতি, অপমান, এক ডক্টর কি মউত!

গুজবকে ইদানীং আঙুলে ছোঁয়া যায়, মোবাইল থেকে মোবাইল ছিটিয়ে দেওয়া যায়। সরকার নাকি এবার ৫০টাকার নোট বাতিল করবে, গণেশ ফের দুধ খাবে, ফেসবুক দাম দিয়ে ব্যাবহার করতে হবে, জিএসটির জন্য পোস্ট আপিসে সুদের হার ৪% হবে ইত্যাদি।

গুজবের গরু তুলসী গাছে ওঠে, মুসলিম ছেলের পাশে বসে করুণভাবে, মায়ের রুপ নেওয়া মাত্র তাকে নিধন করা হয় চাপাতি দিয়ে, তারপর ট্রেনে ধরা পরে নির্ঘাত কোন বীর হিন্দু পরিত্রাতার হাতে।

গুজবেই তো রক্ত গরম হয়। ভোজপুরি ছবির বলাতকার দৃশ্য বেমালুম চালিয়ে দেওয়া হয় হিন্দু নারীকে প্রকাশ্য রাস্তায় নগ্ন করা হয়েছে বলে। পাল্টা লোক জড়ো হয়, নবীর ছবিতে বিকৃতি করা হয়েছে মাইকে প্রচার করে। মন্দিরে গরু ছোঁড়া হয়েছিল, পবিত্র গ্রন্থকে কি সাংঘাতিক সব....

গুজবেই তো ১৮৫৭ এর সেপাই বিদ্রোহ। দাঁতে কাঁটতে হবে গরু ও শুয়োর। গুজবেই তো সংবাদ শিরোনাম দাদরি। মুর্শিদাবাদ এ শিশুচোর সন্দেহে মহিলাকে পিটিয়ে মারা। বাদুরিয়ায় ঘৃণায় ঘৃতাহুতি।

গুজবের মিউজিয়াম হয়? সাজিয়ে রাখা যায় রাজ্যের যত গুজব দেওয়াল এ দেওয়ালে? নন্দীগ্রামে সরকার সব জমি কেঁড়ে নেবে জোর করে, সোনারপুরে বিদ্যুৎ প্রকল্প হলে ভেরীর মাছ মরে যাবে, পোলিওর টিকা নিলে শিশু বিকলাঙ্গ হবে, বহুজাতিক শিল্প এলেই পুঁজিবাদী কালো হাত পিছু পিছু আসবে আর আমরা সংশোধনবাদী হয়ে যাবো।

গুজবে আমার শাঁখ আর আজানের সন্ধেবেলা, কাওয়ালির তালি শেষে কীর্তনের খোল, মেহতাব আর দীপেন্দুর ফুটবলমাঠ, বিসমিল্লার সানাই, ড্রাইভার চাচার পুজোর ভোগ চেটেপুটে খাওয়া, আয়াত আর লালন সাঁই এর শপথ চুরমার হয়ে যাচ্ছে। আমার সামনে। আমি তখন পৈতে কানে প্যাঁচাচ্ছি, আমি তখন ফেজ টুপি মাথায় পড়ে তৈরি। ঘর ভাঙবো।

গুজব নিয়ে অনেকদিন আগে একটা ছোট ছবি দেখেছিলাম। এক হিন্দু নাপিতের দোকানে এক মুসলিম খদ্দের, বন্ধু ও বটে সে, দাড়ি কাটতে এসেছে। টিভিতে খবরের চ্যানেল চলছে, সিয়াচেন মে জওয়ান মরছে, কেউ কেউ পাক পতাকা ওড়াচ্ছে, বাকি জায়গায় না কামানো দীর্ঘ দাড়িতে সন্দেহ।

নাপিত তার খদ্দের বন্ধুর সাথে হাজার গল্পে মশগুল ক্ষুর চালানোর আগে। চুটিয়ে আড্ডা ক্রীম মাখাতে মাখাতে, তোয়ালে চাপিয়ে, চেয়ারে হেলান দিয়ে।

আচমকা সামনের রাস্তায় কয়েকজন ফেজ টুপি পড়া ছেলে তলোয়ার হাতে এক গেরুয়া ধুতি পড়া লোককে মারতে শুরু করলো। এক সময় তরোয়াল ও ঢুকিয়ে দেওয়া হল।

সেলুনে নাপিত ক্ষুর হাতে, বন্ধু খদ্দের চোখ বন্ধ করে। নিশ্চিন্ত ক্রীম মাখানো গাল। গলার কাছ থেকে চুইয়ে চুইয়ে রক্ত পরছে। টিভিতে তখনো খবরের চ্যানেল চলছে, সিয়াচেন মে জওয়ান মরছে, কেউ কেউ পাক পতাকা ওড়াচ্ছে, বাকি জায়গায় না কামানো দীর্ঘ দাড়িতে সন্দেহ।

সবাইকে চমকে দিয়ে এক বাজখাঁই চিৎকার- কাটটটট, যে গেরুয়া ধুতির লোকটাকে ফেজ টুপির ছেলেগুলো কোপাচ্ছিল, সে উঠে বসলো। বুকে টমেটো সস লাগা। ছবির শুটিং ছিল।গুজব।

সব ঘটনা শুটিং হয়না। আসুন সময় থাকতে শুধরে নিই নিজেদের। গুজবে কান না দিয়ে হাতে হাত ধরে রুখে দিই দাঙ্গাবাজদের। আয়াত বা মন্ত্রোচ্চারণ হোক মানবতার। খেটে খাওয়ার। গুজবের না।

---© ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

প্রাচীন মাটিচাপা প্রেমপত্র/ ইদানীং গজিয়েছে ঘাস/ বিবাহিত দুপুরবেলা তাঁর/ স্মৃতিঠোঁটে জল দিয়ে যাস!। -- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

প্রাচীন মাটিচাপা প্রেমপত্র/
ইদানীং গজিয়েছে ঘাস/

বিবাহিত দুপুরবেলা তাঁর/
স্মৃতিঠোঁটে  জল দিয়ে যাস!।

-- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

অমরনাথ

কতটা ঘৃণার পাহাড় পেরিয়ে যাত্রী/
পৌছবে লাশ কফিনে অমরনাথ

তোমার জেহাদ আমার বাঁচার আর্তি/
সন্ত্রাসীদের কাপুরুষতাই জাত।

©-- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

আল্লা কে নাম

| আল্লা কে নাম |

-- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

চাপাতি দিয়ে প্রতিস্পর্ধা কোপানো হয়। চাপাতি শ্রমের চুল্লিতে সেকে সামান্য সব্জি দিয়ে খাওয়া ও হয়।

সাতজন অমরনাথ যাত্রীকে যে বুলেটে ঝাঁঝরা করলো তার নাম ইসমাইল। পেশায় সন্ত্রাসী। আল্লার দোহাই দিয়ে কালাশনিকভ চালায়।

বাকি ৬৩ জন যাত্রীকে যে উপস্থিত বুদ্ধি খরচ করে প্রাণে বাঁচালো তার নাম সেলিম। পেশায় বাসচালক। পেটের তাগিদে পূণ্যার্থীদের বাস চালায়।

আপনারাই ঠিক করুন আপনারা কোনদিকে?

©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

আমি রোদ্দুর হতে চাইনি বোধহয়/ জটিল নগরযাপন শেষে ঘোলাটে হয়ে গেছি। এখন বোমারু বিমান মাথায় বসত করে/ ঘুমের ঘোরে অনুশোচনা আসে। গরম ভাতের চৌহদ্দিতে থাকি বেশ।

আমি রোদ্দুর হতে চাইনি বোধহয়/
জটিল নগরযাপন শেষে ঘোলাটে হয়ে গেছি।

এখন বোমারু বিমান মাথায় বসত করে/
ঘুমের ঘোরে অনুশোচনা আসে।
গরম ভাতের চৌহদ্দিতে থাকি বেশ।

যে নারী রাজনিয়মে দ্বন্দ্ব প্রসব করে/ পুরুষ আদেশ মেনে গুজে দেয় ধর্ষণের অজুহাত। তাকে ক্ষতবিক্ষত জরায়ু চেনাও/ রক্তে বোঝাও সব ধর্ষণকারীর একই হয় জাত। ©-- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

যে নারী রাজনিয়মে দ্বন্দ্ব প্রসব করে/
পুরুষ আদেশ মেনে গুজে দেয় ধর্ষণের অজুহাত।

তাকে ক্ষতবিক্ষত জরায়ু চেনাও/
রক্তে বোঝাও সব ধর্ষণকারীর একই হয় জাত।

©-- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

জগ্গা জাসুস, নেতাজী,বামফ্রন্ট,অস্ত্র আর মিঁত্রো

| জগ্গা জাসুস, নেতাজী,বামফ্রন্ট,অস্ত্র আর মিঁত্রো |

-- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

জগ্গা জাসুস এই বিক্ষুব্ধ সময়ে দেখে নেওয়াটা জরুরি। হলে গিয়ে। যদিও ছবিটি কম টাকা রিকভারির সম্ভাবনা। প্রবল পরাক্রমশালী সলমান ও নিজের শান্তির বাণী নির্গত টিউবলাইট জ্বালাতে অক্ষম। আর যে আঁতেলগুলো ভারতীয় ছবির মান ও বিষয় নিয়ে ছিছিকার করেন, তারাও ছবিটা ডাউনলোড করে দেখবেন। হলে শাহরুখের কম্পাসিয় উদ্বাহু দেখাটা দরকারি।

অভাগী স্বর্গ পাইয়াছিল। স্বর্গত বসু ও বিশ্বাস বাবু এবং তামাম বিপ্লবীগণ যারা দীর্ঘকাল মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী শক্তির কালো ছায়া দেখতেন বামফ্রন্টকে বিপন্ন করতে, তারা পাশ ফিরে শুলেন বোধহয়।

এ প্রজন্ম গুগল খোঁজা শুরু করে দিয়েছে পুরুলিয়া অস্ত্র বর্ষণ কি জানতে। কি করে একটা ভিনদেশী যুদ্ধবিমান বাংলায় অস্ত্র ফেলে চলে গেল এবং যে বিদেশি পালের গোঁদা ধরা পরলো, সে কিভাবে লাল বাতির গাড়ি করে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিয়ে টাটা করলো, টুটি ফূটি ও সেই প্রশ্ন তুলেছে। রাষ্ট্র সব জানে। মুচকি হাসে।

মুচকি তো নেতাজী ও হাসেন ছবির ফ্রেমে। গুমনামি বাবা ও নাকি মরেও মরেন নি, অজানা কোন দেশে গরীব মানুষদের আপলিফটমেন্টে বাকি জীবন কাটিয়েছিলেন। গেরিলা ওয়ারফেয়ার রাষ্ট্র মনে রাখলো কই? থাকার মধ্যে ডিক্লাসিফায়েড কিছু ফাইলের ধুলো আর বাঙালীর চোঁয়ারে ঢেকুর। তিনি আছেন।

জগ্গা ভাবে সব নষ্টামোর মূলে যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব। পাকিস্তান, চিন বা ইসলাম রাষ্ট্র নয়। মিঁত্রো এই ছবি কোন মুখে ভক্ত করিবে ভক্ষন যখন বিশ্বজোড়া যুদ্ধ লাগানোর আসল ফন্দি এ করিছে বর্ণন।

সত্যি তো ভারত জগতসভার অস্ত্রভাণ্ডার এ নয়নের মণি এখন। আজ ইজরায়েল, কাল মার্কিন পরশু রাশিয়ান গান স্যালুট পাচ্ছে মিঁত্রো। আর দেশে ফিরেই যুদ্ধ যুদ্ধ গন্ধ। ভিতর ও বাহিরে বারুদে বারুদে আছো তুমি ব্যাবসা জুরে। ভাতের বদলে যুদ্ধ নিন।

সাংবাদিক হওয়ার সুবাদে ভাইস মিডিয়ার একটি তথ্যচিত্র দেখেছিলাম। সাংবাদিকের অস্ত্র মেলায় প্রবেশাধিকার ও চোখের সামনে যুদ্ধবাজদের বিবিধের মাঝে দেখা মিলন মহান। খুব জমেগা রঙ যব মিল ব্যয়ঠেঙে তিন ইয়ার- আপ,মে আউর কালাশনিকভ।

জগ্গা, গুপী বাঘা,ফেলুদা এই বন্ধুত্বর বিরুদ্ধেই কথা বলে। মিঁত্রো ও দেশবাসীও বলে তার পক্ষে। তাই পাকিস্তান শত্রুই থাকবে, কাশ্মীর নিয়ে সমাধান সুত্র বের করা চলবে না, চুলকে চায়নাকে ঘা করতে হবে, দেশের বিদ্রোহ পেলেট, গ্রেনেড, জল কামানে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।

অস্ত্র, অস্ত্র, অস্ত্র-পৃথিবীতে বেঁচে থাকার একটাই মন্ত্র। মিঁত্রোওওওও দেশ মে হামারে জওয়ান মর রহে হ্যা।

ছবিটা দেখে ফেলুন। সব সময় সুযোগ আসে না হলে বসে ফুঁপিয়ে কাঁদা, মুচকি হাসার। Anuragদা কে ধন্যবাদ।

©--- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

পাহাড়ি ঘৃণায় দুর্গা প্রাঙ্গণ ছাই, মা থাকবে কোথায়?

| পাহাড়ি ঘৃণায় দুর্গা প্রাঙ্গণ ছাই, মা থাকবে কোথায়? |

--- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

দুর্গা পুজোর আর ঠিক ৬০ দিন বাকি। করা যাবে দুর্গা পুজো? কার্শিয়ং থেকে বেড়িয়ে দেশ, দেশান্তরে ছড়িয়ে থাকা ছেলেমেয়েগুলো পুজোয় বাড়ি ফেরার তোরজোড় শুরু করেছে। ট্রেনের টিকিট, প্লেনের টিকিট, বাসের বুকিং, মায়ের শাড়ির ফিরিস্তি রেডি। দুর্গা পুজোয় আনন্দ রেডি।

কার্শিয়ং এর ঐতিহ্যবাহী রাজ রাজেশ্বরী হল ও দুর্গা পুজা প্রাঙ্গণ আজ আন্দোলন এর নামে জ্বালিয়ে দেওয়া হল। গোটা হল আগুন এ জ্বলে ছাই হয়ে যেতে দেখলো এই এলাকার বহু যুগ ধরে বসবাসকারী বাঙালি, গোর্খা, লেপচা, মারোয়াড়ী ইত্যাদি।

রাজ রাজেশ্বরী কমিউনিটি হল তৈরি হয়েছিল ১৯৩০ সালে। বহু বছর ধরে এখানে স্থানীয় বাঙালি বাসিন্দাদের উদ্যোগে দুর্গা পুজো অনুষ্ঠিত হয়। এখনও বাঙালি এসোসিয়েশন এখানেই। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের আশ্রয়স্থলও ছিল এটি। আর ছিল ছেলেবেলার অঞ্জলি, ঝিরঝির বৃষ্টিতে ঠাকুরের মুখ দেখতে যাওয়া, দারুন প্রেমে পরা ওই পাহাড়ি ঢালে।

কমিউনিটি হল তো কোন বিশেষ  ধর্ম বা শ্রেণীর ছিল না। এখানে বিয়েবাড়ি বা স্মরণ বৈঠক ও হত। জন্ম, বিয়ে, মৃত্যুতে কবে রাষ্ট্রীয় গন্ধ এল?

যে হিন্দু বাঙালি মানুষগুলো আজ সারাদিন শোক পালন করলো ওই ছাই বুকে চেপে, যে কার্শিয়ং এর ছেলেটা ভিনদেশে রাগে ফুঁসছে- তারা গর্বের সাথে নিজেদের পাহাড়িয়া ভাবে। হোক না বাঙালি তবে দার্জিলিং এর বাঙালি। শহুরে নগরজীবন থেকে অনেক দূর।

যারা ইতিহাসের পাতা থেকে বাঙালি এই কমিউনিটি হল আর তার আবেশ মুছে দিয়ে চান তারা পাহাড়ি নন। তারা সন্ত্রাসী।

পাহাড় নিয়ে দোজো শেরিং এর গান, খাদের ধারের রেলিং, মাংকি টুপি পরা জ্যেঠু, গ্লেনারিজ এরলি কেক, ফি বছর ৩দিন ছুটি পেলেই ছুট বাঙালির অহংকার। ঠিক যেরকম সমতলে চিনে পাড়া, মাদ্রাজি হাউসিং, নেপালি অঞ্চল, লেপচা গ্রাম। এই সহাবস্থানই বাংলা। বাংলা যদি বাঙালির হয়, বাংলা গোর্খারও। এক বছর যদি পাহাড় ভ্রমণ বন্ধ করে বাঙালি?

রাজ রাজেশ্বরী হলের আগুনে একটা পাহাড় প্রমান বিশ্বাস, একে অপরের প্রতি আস্থা, ঝড়-জলে প্রতিবেশীর হাত জ্বলে ছাড়খাড় হয়ে গেল। মেরামত করতে কয়েক দুর্গা পুজো লাগবে।

এই ঘৃণার বিসর্জন হয় না? এই ঘৃণাতে যারা মদত দিচ্ছে তাদের বধ করা যায় না? দুর্গা পুজোর আর ঠিক ৬০ দিন বাকি। অনিশ্চিত দুর্গা পুজো। মায়ের থাকার জায়গা, দালান, আগেরবারের উলুধ্বনি, কাঁসর ঘন্টা, ধুনুচি নাচ, ঢাকের তাল পুড়ে ছাই।

সব ঘৃণা বিনাশ হলে, আলো ফুটুক কাঞ্চনজঙ্ঘার ফাঁকে। আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠুক আলোকমঞ্জীর। ধরণীর বহিরাকাশে অন্তর্হিত হোক মেঘমালা। মেঘের মধ্যে থেকে অনেকদূর অবধি শোনা যাক:

ইয়া দেবী সর্বভূতেষু শান্তিরূপেণ সংস্থিতা/
নমস্তস্যই নমস্তস্যই নমস্তস্যই নমো নমঃ।

© --- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

রাজ্যসভায় অমিত শাহ ঢুকছে, সীতাকে বিদায় দিচ্ছে সিপিএম: ঐতিহাসিক ভুল?

| রাজ্যসভায় অমিত শাহ ঢুকছে, সীতাকে বিদায় দিচ্ছে সিপিএম: ঐতিহাসিক ভুল? |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

হ্যাঁ এবার অমিত শাহ সংসদে প্রবেশ করবেন। সম্ভবত ভারতের গুরুত্বপূর্ণ কোন মন্ত্রী হচ্ছেন। হয়তো দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ঠিক এমন এক সময় প্রাগৈতিহাসিক সিপিএম নেতৃত্ব মনে করছে সীতারাম ইয়েচুরিকে সংসদে আর দরকার নেই।

ন্যাঁড়া কয়বার বেলতলা যায়? বিরল বোকা#*দা হইলে নাকি একই রাস্তা ধরে একাধিক বার যায়। সিপিএম হইলে অগুন্তি।

মানুষ কয়বার ঐতিহাসিক ভুল করে? গণতন্ত্রের Untraversed path হইলে এক কি দুইবার। বোদ্ধা *চি হইলে অগুন্তি।

সিপিএম হইলে ভুল টু দি পাওয়ার ইনফিনিটি। অগুন্তি মানুষের কথা যেখানে  বলা যায়, খেটে খাওয়া, খুটে খাওয়া, কম খাওয়া ভোটারের কথা, পিটিয়ে মারা সংখ্যালঘুর কথা যেখানে বলা যায় সেই সংসদে রাম থাকিবে। সীতারাম থাকিবে না। হ্যা, শ্রেষ্ঠ সাংসদের পুরষ্কার পাওয়া স্বত্ত্বেও। কারণ পার্টি মনে করেছে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার থেকে টিমবাক্টুতে বামপন্থা নিয়ে ভাষণ দেওয়া অনেক জরুরি।

কারণ সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে পার্টি লাইন। আমার গভীর ধারনা সীতা এই অগ্নিপরীক্ষা দিতে প্রস্তুত। খোঁয়াড়ে শুয়োর থাকে, পলিটব্যুরোয় বিপ্লবী।

এই বিক্ষুব্ধ  সময় সীতারামকে সংসদে না পাঠানো এবং কুমার শানুর শোয়েব আখতারের মুখোমুখি হওয়া প্যাড, এবডোমেন গার্ড ছাড়া- দুই সমান। এটা এখন পার্টি লাইন। তাই সত্য এবং সুন্দর সিদ্ধান্ত।

ভবিষ্যৎ এই  ভুল ফের স্বীকার হবে। সেই কবেকার পার্টি বিশাল এক বেড়াল ফোলায়, ভাবে বাঘ হয়েছে। তাকে রুশ কায়দায় লালন পালন করে, বিপ্লবী ভাষণ ছাড়ে সর্বহারার প্রতিনিধি হয়ে ওঠার আর শেষমেষ ঘ্রোঁয়াও ক্রমাগত মিয়াওঁ এ বদলে যায়। তারপর ঢোঁক গিলে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া। সেই কবে জননেতা বুদ্ধ বাবু হাত জোর করেছিলেন, ব্যস হা রে রে করে মধ্যমেধা সব নামিলো ক্ষমা চাইতে। চেতেই থাকলো।

জ্যোতি বাবু প্রধানমন্ত্রী হলেন না, সোমনাথ চাটুজ্জে রাষ্ট্রপতি ভবন পেলেন না, সীতারাম টিকিট পেটে লাথি খাওয়া মানুষের কথা বলতে। থাকার মধ্যে থাকিলো দীর্ঘসূত্রী এক লাইন। পার্টি লাইন। যা কনফিউজড।

দেওয়াল লিখন পরিস্কার! মায়োপিয়া থাকলে চশমা পাল্টান আর পারলে ধারনা। দুনিয়া বদলেছে, আম্বানিরা এখন অনেক সজাগ ও ক্ষমতাশালী, আপনি রিপ ভ্যান উইংকিল। আপনার স্ট্রিট কর্নার শিশু ফেসবুকে ওই চাড্ডি প্রোপাগান্ডার কাছে। পুঁজিবাদী কালো হাত অনেক অনেক হাত ধরেছে।

কমরেড বাঁশি বাজাচ্ছেন যাচ্ছেতাই আর তাতেই ইদুঁরের দল পিল পিল করে গা এ গা ধা এ ধা মেলাচ্ছে ব্রিগেডে ব্রিগেডে। কেউ মাথা খাটাচ্ছে না। কেউ অন্য সুর এ কথা বলছে না।আজি হতে শতবর্ষ আগেও এই পার্টি প্রতিবাদ করতে হলে সহস্র মাথা চুলকে সেই বন্‌ধই ডাকত, এখনও চিন্তা-দেওয়ালে মাথা কুটে সেই বন্‌ধই ডাকছে। কী ব্রেন-বিবর্তন!

জ্যোতি বসুু,হরকিষন  আপনারা ঘুমোন। আমরা এই অবস্থা দেখবো বলে জেগে থাকি। আধা বিজেপি, আধা কংগ্রেসি হই। নকশাল হওয়ার মুরোদ নেই।

পুনশ্চ: আমি শ্রেণিশত্রু, পাতিবুর্জোয়া, তিনোমূলি বা চাড্ডী নই। আরো খারাপ। আপনারা অযাচিত ভালো। হবেন না। প্লিজ।

©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

কোন শব্দ করো না: বোধবুদ্ধি নিদ্রা গিয়েছে: প্রশ্ন সইতে পারে না

| কোন শব্দ করো না: বোধবুদ্ধি নিদ্রা গিয়েছে: প্রশ্ন সইতে পারে না |

---ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

(বিশাল মিউজিয়াম। সদর দপ্তর নাম। গোল করে একাধিক মমি বসে। মাঝে প্লেনামের দস্তাবেজ।)

হাবাতে: কমরেড এখন আমাদের কি কর্তব্য? লাইন কি হওয়া উচিৎ? এলসি আপিসে কোন ন্যারেটিভ চলবে তাসের মাঝে?

বোদ্ধা: সাম্রাজ্যবাদ, পুঁজিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, ট্রটস্কিবাদ,মমতাবাদ.....আর কি কি বাদ? ও মনে পরেছে..... সাম্প্রদায়িকতা সহ একাধিক বাদের বিরুদ্ধবাদ।

হাবাতে: তা এই সব করতে গিয়ে তো আমরাই বাদ পরে যাচ্ছি।

বোদ্ধা: এখন যাচ্ছি। তবে ইতিহাসের পাতা, মিউজিয়াম, প্রাগৈতিহাসিক ডাইনোসরের ফসিল, টেরোড্যাক্টিলের কুসুম, বৈপ্লবিক সমাধিতে আমরা বেঁচে থাকবো। টিমবাক্টু, নিকারাগুয়া,চিলে,হুক্কাহুয়া, আগাপাস্থালাতে আমরা বেঁচে থাকবো।

হাবাতে: কিন্তু নিচুতলায় প্রশ্ন উঠছে। টিভিতে পেপারে আজগুবি গল্প ছাড়ছে। ভারতে আমরা প্রাসঙ্গিক হবো কি করে?

বোদ্ধা: গুলিয়ে দাও। রিক্সাচালক কমরেড প্রশ্ন তুললে কঠিন দু চারটে অর্থনীতির শব্দ বলো, একাধিক রুশ বিপ্লবীর নামে নিজের কথা চালিয়ে দাও আর শেষ পাতে ৩৪ বছরকার গন্ধ শোঁকাও। কিভাবে তার রিক্সাওয়ালা থেকে রিক্সাচালক কমরেডে উত্তরণ ঘটেছে শুনিয়ে দাও।

হাবাতে: আর যারা টিভি দেখে, সাম্রাজ্যবাদ, পুঁজিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, ট্রটস্কিবাদ,মমতাবাদের আনাচে কানাচে ঘোরাঘুরি করে?

বোদ্ধা: ওদের পেটি বুর্জুয়া বা সংশোধনবাদী টাইপ কিছু একটা বলে দিতে হবে। আগে হলে মাওবাদী বলাটা সোজা ছিল। এখন চাড্ডি বলে দেবো।

হাবাতে: সাংবাদিক গুলো খবর লিক করছে... পাচ্ছে কি করে?

বোদ্ধা: ওরা বাজারি। পুঁজিবাদীর দালাল। কিন্তু আমাদের পথের কাঁটা ওরাই সরাতে পারে। তাই দিয়ে দাও দাও দাও! পরে সব ঝুটা হ্যা বলে দেব।

হাবাতে: অমিত শাহ সরাষ্ট্র মন্ত্রী হবে শুনছি।

বোদ্ধা: এত শুনো না। চোখ কান বন্ধ রাখো। আমরা ঘুরে দাঁড়াচ্ছি।

হাবাতে: ইয়ে মানে, বিজেপি তো অশ্বমেধ যজ্ঞ শুরু করেছে। সব রাজ্য নিয়ে নিচ্ছে। এই সময় তো বিজেপিকে ঠেকানোটা বেশি দরকারি। এরা তো ধর্মনিরপেক্ষতার মা মাসি করে দিচ্ছে। এর পর তো গরুর হিসি মাথায় মেখে বেরোতে হবে।

বোদ্ধা: শাট আপ। প্লেনাম, সিসি, পিসি,হিসির থেকে তুমি বেশি বোঝো? আমাদের লাইন টিএমটি বারের চেয়ে শক্ত। ফ্লেক্সিবিলিটি ডিকশনারিতে রাখতে নেই। নো কংগ্রেস, নো বিজেপি। মধ্যিখানে রইবো।

হাবাতে: পরাণ জ্বলাঞ্জলি দিয়া? এতো পার্টি জ্বলাঞ্জলি দিচ্ছেন।

বোদ্ধা: তুমি কমরেড বড্ড বাচাল। পার্টি করলে এত প্রশ্ন করতে নেই। মিটিং শেষে হাত তুলে সমর্থন দেবে। ব্যাস। প্লেনাম, সিসি, পিসি,হিসির থেকে তুমি বেশি বোঝো?

হাবাতে: দূর বুদির চাই। ফেলে মারছে যে। রাষ্ট্র, পুলিশ,কানুন,গাই কেউ আর নাম শুনলে চমকায় না। ধর্মনিরপেক্ষ দই নেপো মারছে জোরাফুল হাতে। আমাদের হাতে মরচে ধরা কাস্তে।

বোদ্ধা: কোন প্রশ্ন নয়। কোন প্রশ্ন নয়। দেওয়াল জুরে লিখে যাও। ৯০ বছর আগে যা লিখেছিলে, তাই আধুনিক রঙ তুলিতে লেখো।

(ব্রিগেডে কোরাস)
কোন প্রশ্ন করো না। কোন শব্দ করো না। বোধবুদ্ধি, বাস্তবতা নিদ্রা গিয়েছেন। প্রশ্ন সইতে পারেন না।

©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

অন্য প্রেমের গল্প

| অন্য প্রেমের গল্প |

মেঘ বর্ষাতি আগলে রাখে নেশারঝোঁক/
সব বোতলেরই ঠোঁট আসলে গেলাশই।

সহাবস্থান রাত বাড়লে আদুরে/
ড্যানিয়েল বন্ধু পাতালো সন্ন্যাসী।

©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

সতর্ক হন আপনার সন্তান আত্মহত্যা করার আগে

| |

--- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

বিষয়টা গুরুতর। শেয়ার করা জরুরি। 'ব্লু হোয়েল চ্যালেঞ্জ ' এর নাম শুনেছেন নিশ্চই। টিভি, রেডিও, পেপারে লেখালেখি হচ্ছে। এখনো না শুনলে আপনার দৈনন্দিন ব্যস্ততার মাঝে কিছুটা সময় নিয়ে এই লেখাটা পড়ুন।

আপনি নিশ্চিত কি আপনার সন্তান মাঝরাতে ঘুমের মধ্যে আঁতকে ওঠে না বা ভোর রাতে জাপ্টে ধরতে চায় না আপনাকে? শেষবারের জন্য? ছাদের পাঁচিল থেকে খালি পাএ নিচে ঝাঁপ দেওয়ার আগে?

আপনার প্রানের চেয়ে প্রিয় সন্তান, যার হাতে আদর করে আপনি স্মার্ট ফোন, আই প্যাড, ফোর জি ইন্টারনেট উপহার দিচ্ছেন, কেবলমাত্র আপনাদের সময় কম বলে, বা তারা মেতে থাকবে বলে, এই লেখাটা তাদের জন্য। ব্যস্ত জীবন। বর বউ দুজনেই কাজ করেন। পিপিটি,আর পয়েন্টার এ অভ্যস্ত। সুতরাং পয়েন্ট এ জানাচ্ছি।

১).১৩০ জন কিশোরের আত্মহত্যার জন্য দায়ী এই অনলাইন গেম! অধিকাংশই ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়স। অর্থাৎ Vulnerable Age Group। যে বয়সে মা বাবার সাথে মারপিটটা বেশী হয়।

২). বিশাল ফ্ল্যাট বাড়ির এক চিলতে বারান্দা যখন আপনার সন্তানের ফুটবল মাঠ হয়ে যায়, ঠাকুমা নেই, দিদা নেই,গল্প দাদু নেই- থাকার মধ্যে ইন্টারনেট আর অনলাইন গেম এর নেশা, আপনাকে সজাগ থাকতে হবেই।

৩). গেমের ইনভাইট মূলত স্কুলের ওয়াটসএপ গ্রুপে, যৌন সুড়সুড়ি দেওয়া সাইট বা ফেসবুকে আসে। স্কাইপে সল্পবসনা নারী সদ্য নাইটফল শেখা কিশোরকে আদেশ করে নিজেকে ক্ষতবিক্ষত করতে, পুরুষত্ব প্রমাণের চ্যালেঞ্জ জানায়।

৪). গেমে প্রতিযোগীদের মোট ৫০টি লেভেল কমপ্লিট করতে হয়। গেমের শুরুর টাস্কগুলি অবশ্য তেমন ভয়ঙ্কর নয়। বরং বেশ মজারই। যেমন ট্রুথ ও ডেয়ার এ থাকে। আর সেই কারণেই এই গেমের প্রতি সহজেই আকৃষ্ট হওয়া যায়। কিন্তু গেমের লেভেল যত এগোয়, ততই ভয়ঙ্কর হতে থাকে টাস্কগুলি।

৪). যেরকম নিজের শরীরে ব্লেড দিয়ে ব্লু হোয়েল আঁকা। বা রোজ ভোর ৪.২০ তে উঠে হরর মুভি বা খুনোখুনির ভিডিও দেখা। সব শেষে ৫০তম টাস্ক হল উঁচু বাড়ির ছাদ থেকে ঝাঁপ দেওয়া।

৫). এই গেমিং অ্যাপ মোবাইলে একবার ডাউনলোড হয়ে গেলে তা আর কোনও ভাবেই ডিলিট করা সম্ভব নয়। শুধু তাই নয়, ওই মোবাইলে ক্রমাগত নোটিফিকেশন আসতে থাকে যা ওই মোবাইলের ইউজারকে এই গেম খেলতে বাধ্য করে।

৬). খেলাটা রাশিয়াতে শুরু হয়। ২১ বছর বয়সী ফিলিপ ভিকোন্তাক্তে নামক সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ব্লু হোয়েল সুইসাইড গেম’ নামের এই সোশ্যাল গেমিংটির পেজের অ্যাডমিন ছিল। স্বভাবতই, পুলিশের সন্দেহ গিয়ে পরে তার উপর। শেষমেশ বেশ কিছুদিন তদন্ত চালিয়ে ফিলিপ-কে গ্রেফতার করে পুলিশ।

৭). পুলিশের তীব্র জেরায় এই গেম চালানোর কথা স্বীকার করে নেয় ফিলিপ। তার বক্তব্য, সে তার খেলার মধ্য দিয়ে সমাজের ‘শুদ্ধিকরণ’ করছে। সে গর্বের সাথে বলতে থাকে, সমাজে যাদের বেঁচে থাকা উচিত নয়, তাদেরকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়াই ছিল তার লক্ষ্য।

৮). ভয়টা এই জন্য কারন ভারত ডেটা পরিষেবা গ্রহনে এখন পৃথিবীতে দ্বিতীয় স্থানে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের হাতে মোবাইল। অনেকটা সময় একা থাকা। ফেলুদা নেই, এস্টেরিক্স নেই, টিনটিনের নাম ও অজানা। থাকার মধ্যে ডাব্লু ডাব্লু ই আর ডেথ মেটাল।

৯). ভয়টা এই জন্য কারন মুম্বাইতে এক ১৪ বছরের কিশোর আত্মঘাতী হয়েছে। কতজনের সাথে সে এই খেলা খেলতো জানা যায়নি। মা বাবা কোনদিন খোঁজ নিতে যায় নি ওর অনলাইন হ্যাবিট। মায়ের ঘামের গন্ধ থেকে পরিচিত ছিল ব্রাউজার।

১০). আসুন একটু কথা বলি নিজের ছেলে মেয়েদের সাথে। সামান্য ইয়ার্কি। বন্ধুত্ব পাতাই, গল্প করি, ঠাকুরমার ঝুলির ঝুল পরা গল্প বলি। লাগুক না আর একটু বেশী ক্লান্ত। অনু-পরিবার আরো ছোট যেন না হয় দুর্ঘটনায়।

©--- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ