কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Tuesday, March 6, 2018

| গুড়িয়ে দিক হাজার পাথুরে লেনিন, রক্ত ঘামে দীর্ঘজীবি সে |

| গুড়িয়ে দিক হাজার পাথুরে লেনিন, রক্ত ঘামে দীর্ঘজীবি সে |

----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

ভ্লাদিমির ইলিচ উলিয়ানভ লেনিন এর মূর্তি ভাঙা নিয়ে রে রে কান্ড জুড়েছে কিছু নিরাকারবাদী মুক্তমনা। পুত্তৌলিক ধর্মসাধনের যারা বিরুদ্ধে, পুজো আচ্চা, মন্দিরের শিন্নি, মজসিদের নামাজ পড়ায় যারা নিমরাজি , তারা। তারা যাদের মুদ্রাদোষ প্রায়, ভেঙে দাও, গুড়িয়ে দাও।

স্বাভাবিক নিয়মে তাই দিচ্ছে হনুমানের দল। দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে গুড়িয়ে গোডসে আর গোলওয়ালকারের মূর্তি স্থাপনের পথ প্রশস্ত করছে দেশ জুড়ে। এতে যার পর নাই অবাক হওয়ার তো কিছু নাই। যদি অবাক ও হতাশ হয় বিপ্লববাদী উত্তরসূরি তবে তাদের বাস্তববোধ নিয়ে চিন্তা হবে বটে। লেনিনের ও হত।

কথাই তো ছিল এক ইঞ্চি জমি না ছাড়ার লড়াই এর। শ্রেণী শত্রু চিনে নিয়ে শেষ যুদ্ধ শুরু করার। আর একটা ধাক্কা দিয়ে ব্যারিকেড ভাঙার। এর একটাও গান্ধীববাদী উপায় নয়। প্রতিরোধ প্রতিশোধের উপায়। তা হলটা কি এত ছিছিক্কারের? ভাঙছে মানেই তো এখনো ময়দানে থাকা। ভাঙছে মানেই তো লাল নিশানে জুজু দেখা। এই আকালেও স্বপ্ন দেখা। অগত্যা....

আদানি-আম্বানির আশ্চর্য প্রদীপ তো নেই। তাই গায়ে গতরে, দেওয়ালে, স্লোগানেই লড়াই টা চালিয়ে যেতে হবে। মাঝে কিছু খেলা হারতে হবে, কিছু খেলায় কিস্তিমাত করা হবে। এতে মরাকান্নার কি আছে? সোভিয়েত টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়ার পর যা হয়েছিল, জার্মানিতে যা হয়েছিল, কেরল, বাংলাতে যা হয়েছিল, তাই ত্রিপুরাতে হচ্ছে। ফেসবুকের কল্যানে বেশী পাব্লিসিটি পাচ্ছে আরকি। আর সিরিয়ার মৃতদেহ গুলির মত উপড়ে ফেলার ছবিটা ড্রামাটিক তাই গাঁতিয়ে শেয়ার ও হচ্ছে।

লেনিনের এই রক্ত, মাংস, প্রাণহীন পাথরস্তম্ভ নিধনের অনেক আগে হাজারে হাজারে লেনিনকে খুন হতে হয়েছে গণতন্ত্র, বহুত্ববাদ আর খেটে খাওয়া মানুষের অধিকার রক্ষা করতে গিয়ে।  জঙ্গলমহলে প্রতিদিন খুন হয়েছে ডজনে ডজনে গায়ে ঘামের গন্ধ লাগা, লাল পতাকা শক্ত ধরে ধরা লেনিনের। মায়ের সামনে, ফুটফুটে বাচ্চার চোখের সামনে। লেনিনের লাশ ছুঁয়ে ও দেখতে পারেনি পরিবার। মাওবাদীদের হাতে ঝাঁজরা হয়ে গেছে ওই লেনিনেরা। ওদের নাম মনে পরে? মনে পরে বর্ধমানের প্রদীপ তাঁকে? সে লেনিন হয়নি কেন? বা দক্ষিন ২৪ পরগনার ওই ছাত্রটা যার নামে প্রতিবার একটা মঞ্চ না স্মৃতি নগর হয় সম্মেলনে সম্মেলনে। বা ওই আধ পাগল লোকটা যে বেহালা বাজায় আর রাস্তায় রাস্তায় ছেলে সুদীপ্ত গুপ্তর গল্প ফেরি করে। এরা ও তো লেনিন।

ডাভোলোকার- কালবুর্গি লেনিন নয়? লংকেশ-পানসারে লেনিন নয়? জামির মোল্লা- খয়েরুল জমাদার লেনিন নয়? ভাঙরের মোফিজুল-আলমগীর লেনিন নয়? লেনিন মানে যদি ফ্রেঞ্চ কাট আর ওভারকোট হয়, আর তার ব্যক্তিপূজোই হয় আদর্শগত পথ, তবে তা গুড়িয়ে ফেলাই ভালো।

লক্ষ রাখুন তাদের যারা লেনিনের এই মূর্তি ভাঙা নিয়ে মর্মাহত কিন্তু ব্যাংকের টাকা লুঠ নিয়ে কনফিউজড। এরাই লেনিনকে লেলিন বলে। রজনীগন্ধা ও ধুপকাঠি দেয় ফটোতে। এদের বোঝান লড়াইটা ঠিক কাদের বিরুদ্ধে। এদেরই মধ্যেই কিন্তু অনেকে এক হাতে লালঝাণ্ডা আর আরেক হাতে বিপত্তারিণী লাল সুতো বেঁধে ঘোরে। কালি মন্দিরে পি.আর. করতে যাওয়াকে জাস্টিফাই করে, ধুমধাম করে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করে আর ম্যাথা ন্যাড়া করে গিয়ে পার্টি অফিসে পেরিস্ট্রোয়েকা আর সমবণ্টন নীতি বোঝায়। এতে খারাপ কিছু নেই বোধহয়।

দ্রোহের ১০০ বছর বাদে ও যদি একটা লেনিন থেকে যায় বুকপকেটে আর মানিব্যাগে থেকে যায় স্তালিনের ছবি, তবে বুঝতে হবে স্থবিরতা এসেছে সেরিবেলামে। ভেঙে ফেলতে হবে তাও। নতুন লেনিন, নতুন আইডল খুঁজতে হবে। আমাদের কি আইডল কম পরিয়াছে?

যে লোকটা ভন্ড বাবাদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ও বিজ্ঞানমঞ্চ আন্দোলনটা করছেন তার পাশে থাকুন, যে কয়লা খাদানের শ্রমিকদের এক ছাতার তলায় এনে দারুণ রাগে ফেটে পরার কথা বলছেন, তার পাশে থাকুন। পাশে থাকুন যে গণশক্তি টা ঝড় জল বৃষ্টিতে ও আপনার বাড়ি এসে দিয়ে যাচ্ছে। পাশে থাকুন যে কমরেড আদিবাসী মানুষদের নেতা হয়েছেন। এদের কাছেই ফিরে যেতে হয় লাল পতাকার। এরাই রক্ষা করবে শেষমেশ লেনিন এর উত্তরাধিকার।

হনুমানের দল লেনিন এর মূর্তি ভাঙবেই। এরপর অম্বেতকর, পেরিয়ার, সিধু কানহু, ভানুভক্ত, রাবণ, বেহুলা, বনবিবির মূর্তি ভাঙবে। বহুত্ববাদী সংস্কৃতি ভেঙে ফেলাই প্রধান কর্তব্য যে কোন মৌলবাদীর। এটা ঠান্ডা মাথায়, সেই ছকেই ভাঙা। এর ফাঁদে পা দেবেন না। এর ফাঁদে পা দেওয়ার মানে আপনি ভুলে থাকবেন নীরভ মোদি আমার আপনার ১১,০০০০ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছে, আপনি ভুলে থাকবেন যে আধার কার্ড এ সব তথ্য লিংক করার পর আপনার ব্যক্তিগত ডেটাবেস জলের দরে চলে যাচ্ছে বেসরকারি সংস্থাগুলোর হাতে। আপনি এটাও ভুলে থাকবেন যে রান্নার গ্যাসের দাম এই চার বছরে প্রায় তিনগুন হয়ে গেছে।

লেনিন নিয়ে হাহুতাস না করে সেই মূর্তির ভাঙা পাথর কুড়িয়ে পালটা মারুন। রাস্তাঘাট ট্রেনে বাসে ফেসবুকে "মুদ্দে কি বাত" করুন। বার বার মানুষ কে মনে করান যে তার পেটে লাথিটা ঠিক কি ভাবে মারা হচ্ছে। রান্নাঘর অবধি এর বাইরে নয়। মহার্ঘ নিত্যদিনের জিনিসপত্র, পাকস্থালী খুলে তারপর সরকার দেখছে আমি কি মাংস খাই। কিচ্ছু বলার উপায় নেই। কারন বাতাসে যুদ্ধ যুদ্ধ গন্ধ। সীমান্তে সেনা মরছে। কৃষক, শ্রমিক, বেকার যুবক, দলিত ছাত্র মরছে তো কি? সময় এসেছে রেল, তেল সহ দেশের সব সম্পদ কিভাবে বেচে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে তা ফাঁস করে দেওয়ার। জঙ্গি আন্দোলনের সময় এসেছে। এ সরকার ভাতের বদলে যুদ্ধ দিচ্ছে থালায়। এখনই তো লোহা গরম। এখন যদি কাস্তে হাতুরি না মারি, তো কখন?

লেনিন ও এটাই চাইতো হয়তো। তার পাদদেশে প্রণামীর থালা রাখা আর যাই হোক সমাজতন্ত্রীয় নয়। তার কোন গ্রামে কোন মূর্তি ভাঙলো তাতে থোড়াই তার গরিমা গেল। বাকিদের বেলুন ফুঁলিয়ে বাঘ বানাতে "মন কি বাত" লাগে। লেনিন তো সেই ভুখা নাংগা ১% রাষ্ট্রবাসীর চেতনা যা ভীষণ রাগে ফেটে পরতে পারলে আণবিক বোমার মত কোন জাতীয়তাবাদী রেটোরিকে। স্লোগানে স্লোগানে ঢাকা পরে যায় মিঁত্রোওওওওওওওওওও!!!!

©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

No comments:

Post a Comment