কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Tuesday, December 12, 2017

| ওদের চোখে চোখ রাখতে পারছি না। ধর্মসূত্রে আমিও যে হিন্দু |

| ওদের চোখে চোখ রাখতে পারছি না। ধর্মসূত্রে আমিও যে হিন্দু |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

খুব গা গুলোচ্ছে। অস্বস্তি হচ্ছে সারা শরীরে।আজকের পর কিছুতেই ফিরোজ, সাবরিনা, ইলিয়াস, আয়েশার চোখে চোখ রাখতে পারছিনা। কিছুতেই তাকাতে পারছিনা ওদের দিকে।

গোটা দেশজুরে মাংসপোড়া গন্ধ। জমে থাকা ঘৃণার হিংস্রতা খেটে খাওয়া মানুষকে ধর্মের নামে চিহ্নিতকরণ করছে আর জ্যান্ত জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে সংখ্যালঘু। সেটা আবার ভিডিওবন্দি করা হচ্ছে, তারপর উদ্বাহু নৃত্য চলছে রাষ্ট্রীয় আসকারায়। শেষ বোধহয় এরকম ছবি জার্মানিতে দেখা গেছিল। আপনি স্টার জলসা আর ঘন্টাখানেক এর মাঝে টের পাচ্ছেন কিন্তু আপনার ও তো ধর্ষণ, পিটিয়ে মারা, কোপানো দেখতে ভালোই লাগে। তারপর মিডিয়াকেকে খিস্তি করতে।

এখন যদি দারুন রাগে যুদ্ধ না হয়, তবে কখন হবে? এখন মানুষের মাংস ঝলসানো হচ্ছে ঘৃণা আর সংখ্যাগুরুর আঁচে। আমরা দেখছি আমাদের নরম বিছানায় শুয়ে। অনেকক্ষন ধরে কোপানো হয়েছিল মালদার ছেলেটাকে। তারপর কোপ মারা হল গলায়। কেরোসিন ছিটিয়ে দেওয়া হল, তারপর জ্যান্ত জ্বালিয়ে দেওয়া। মাংসপিণ্ডটা ইসলামধর্মী। চামড়াটা বাঙালির, হৃদপিন্ড প্রেমিকের ছিল, হাড়গোড় খেটে খাওয়া মজদুরের।

এরপর আপনাদের শীতের যে মজলিশটা হবে সৌখিন বারবিকিউতে, তাতে চেখে দেখতে পারেন এই মাংস। কিম্বা রোববার কষা কষা খেতে পারেন একে। অন্য কোন লভজেহাদি, লম্বা দাড়ি, ফেজ টুপিকে পুড়িয়ে মারার দৃশ্য দেখতে দেখতে।

আমরা রোজ এক পা এক পা করে এগোচ্ছি এদের খেতে। একটা মস্ত আগুনের গোলা নিয়ে রোজ খেলছি আমরা। রোজ গা জোয়ারি করে মসজিদ ভাঙা জমিতে মন্দির তুলবো বলছি, নায়িকার নাক কাটার হুমকি দিচ্ছি, সিনেমা বন্ধ করে দিচ্ছি, শাটার নামিয়ে দিচ্ছি মাংসের দোকানে, সংখ্যালঘু ঘরের বাইরে লিখে দিচ্ছি ভগবানের নাম, দুমদাম ঘরে ঢুকে যাচ্ছি ফ্রিজে কি মাংস আছে দেখতে, কোথায় কে কোন বিধর্মীকে স্বেচ্ছায় বিয়ে করেছে খুঁজতে গিয়ে কুপিয়ে দিচ্ছি। আমরা রোজ আগুন নিয়ে খেলছি, রাষ্ট্র প্রতি সকালবেলা পেট্রল জোগাচ্ছে আরো নতুন মাংস পোড়ানোর জন্য এই আগুনে।

আমি রোজ আমার এক মুসলিম বন্ধুর সাথে আড্ডা দিই দেশ ও দুনিয়া নিয়ে। আমি সপ্তাহান্তে যে রাস্তার তন্দুরটা কিনে গেলাসের সাথে ফোয়ারা তুলি সেটা যত্ন করে ঝলসায় এক চাচা। আমার চুল কেটে, শেভ করে, হেড মাসাজ দিয়ে দেয় যে ভাইয়া, সে ও বিকেলে ফাঁক পেলে নামাজ আদা করে নেয়। আমার অনেক ভালো লাগা ভাগ করে নিই যে বান্ধবীর সাথে সে ঈদের বিরয়ানী আনবে বলেছিল।

আমি আজকের পর কিছুতেই এদের চোখে চোখ রাখতে পারছিনা। কিছুতেই তাকাতে পারছিনা ওদের দিকে। ভয় হচ্ছে যদি ওরা প্রশ্ন করে বসে? লজ্জা পাচ্ছি যদি নিজের থেকে মাঝ রাস্তায় ওরা কাপড় খুলে আমায় আশ্বস্ত করে যে ওরা জেহাদি নয় বা বোমা নিয়ে ঘুরছে না কিংবা উদাত্তকন্ঠে জন গন মন গেয়ে দেশত্ববোধ প্রমাণ করতে যায়?

ভারতে যে মুসলমানরা আছেন তারা স্বাধীনতার সময় স্বেচ্ছায় থেকে গেছিলেন এ দেশে কারন তারা মনে করেছিলেন হিন্দুস্থান তাদের। একটি ধর্মের ভিত্তিতে তৈরি হওয়া ইসলামিক রাষ্ট্র তাদের দেশ নয়। কিন্তু এই বধ্যভূমি ও কি এদের দেশ? যেখানে প্রতি পদক্ষেপে তাদের প্রমাণ দিতে হয় দেশত্ববোধের। যেখানে হিন্দি হিন্দু হিন্দুস্থানের বাইরে যে ২০০ বছরের উর্দু লব্জ আছে তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়। যেখানে মোঘল স্থাপত্য ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।

কাল থেকে সব বদলে যাবে। অবিশ্বাসের আগুনে তিলে তিলে জ্বলতে থাকবে কোন মোহিত আর সাবরিনার প্রেমের গল্প। কোন ফিরোজ আর বরুনের বন্ধুতা। কোন ইসমাইল চাচা আর খোকাবাবুর ছেলেবেলার গল্পগাছা। বেঁচে থাকবে ওই কোপের পর কোপ, উন্মত্ততা কোন মসজিদ গম্বুজে আর হিন্দু হৃদয় সম্রাট লৌহ পুরুষের পা ধরে আপ্রাণ আকুতি, এ দেশে বেঁচে থাকার।

ওদের চোখে চোখ রাখতে পারছি না। ধর্মসূত্রে আমিও যে হিন্দু। ওই মাংসপোড়ার কিছু ভাগ আমার ভাতের থালাতে ও যে পরেছে। আমাকে ও যে এক মুসলিমের রক্ত মেখে ভাত খেতে হবে।

©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

No comments:

Post a Comment