কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Tuesday, December 12, 2017

| খোয়া গেছে শীতকাল, মোয়াওয়ালা, রোদে দেওয়া হারমোনিয়াম |

| খোয়া গেছে শীতকাল, মোয়াওয়ালা, রোদে দেওয়া হারমোনিয়াম |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

হেমন্ত ছাতিমগাছে মৃত। শীতকাল এসে গেছে শহরাঞ্চলীয় আনাচে কানাচ। এবার বিষাদ আসবে। ঘিরে ধরবে চারপাশ অনেক রাত হলে। কনকনে ঠান্ডা তখন জানালায় ওপাশে। ওপাশেই। কারন এপাশে দীর্ঘনিশ্বাসের তাপ অনেকটা। ওতে ওম পাওয়া যায় শহুরে উইন্টারের। শীতকাল কবেই খোয়া গেছে আমাদের।

ছোটবেলার প্রথম আর শেষ শীতকালে পাড়াতে মুড়ির মোয়া, চিড়ের মোয়া, বাতাম তকথি, তিলের নাড়ু পিঠের বিশাল বস্তাতে নিয়ে ঘুরতো মোয়াওয়ালা কাকু। ওর কোন নাম ছিল না। হাঁক ছিল। মুরিরররররররর মোয়ায়ায়া, চিড়াররররর মোয়ায়ায়া।

তখন অরিয়ো মিল্কশেক অলীক সুখ, হট চকলোট সৌখিনতা, এক বাক্সজাত শক্ত মোয়াতেই মিলতো শীতকালের গন্ধ। আর অনেকটা অপেক্ষার পর জয়নগরের মোয়াতে আরাম। ওটা অবশ্য নরম, নলেনগুড়ে আদর করা। বাচ্চাকে কাজলের টিপ পড়িয়ে দেওয়ার মত একটা কিসমিস বসানো।

এসমস্ত দুপুরবেলা প্রাচীন বউদির গোপন চিঠি লেখার কথা থাকতো। কোলবালিশটা জাপ্টে বুকের কাছে, সব ওজন চাদরে, নেকলেসটা ঝুলছে। নিষিদ্ধ কিছু শিহরণ লেখা হবে। এসব দুপুরে রোদ পোয়াতে নেই। বিছানাপত্র, বন্ধ দরজায় উষ্ণতা বেশী। কান্নার ও।

সন্ধে নামলে রুপকথা লেখা হত বয়ঃসন্ধির খাতায়। পাশের বাড়ির রাজকন্যা গলা সাধতো হারমোনিয়াম নিয়ে। সপ্তাহে দুবার রোদে দেওয়া হত হারমোনিয়ামখানা।

মোয়াওয়ালা কাকুর বস্তা, নলেনগুড়ের আদর, প্রাপ্তবয়স্ক চিঠিপত্র, বয়ঃসন্ধির খাতা আর রোদে দেওয়া হারমোনিয়ামখানা চিলেকোঠার ঘরে রাখা থাকতো। রোজ ওখানে মিঠে রোদ এসে বসতো, পাখি খোঁজ নিত, নিষ্পাপ ভালোবাসার রঙ পেন্সিল দেওয়ালজুরে আঁকিবুঁকি কাটতো। চিলেকোঠার ঘরে।

চিলেকোঠার যে ঘরে রুকু, ক্যাপ্টেন স্পার্ক, প্রখর রুদ্র, কড়ালকুম্ভীর, আফ্রিকার রাজা ছেলেবেলার অজস্র অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিয়ে শীতের ছুটি কাটাতো, সেই ঘর সহ গোটা বাড়িটাই কোন এক মনখারাপের শীতকালে ভাঙা হয়েছিল। মগনলাল মেঘরাজ সেখানে ফ্ল্যাটবাড়ি তুলেছে।

ভিত আর পিলারের অনেক নিচে মাটিচাপা মোয়াওয়ালা কাকুর লাশ। প্রবল অর্থকষ্ট আর ধারদেনা মাথায় আত্মহত্যা করেছিল। ময়নাতদন্ত হলে পরে একটা বিশাল বস্তাতে মুরে আনা হয়েছিল। শীতের ভোরবেলা।

হারমোনিয়ামটার কাপড় ইঁদুর খেয়ে নিয়েছিল, সব রিড ভাঙা। ফ্ল্যাটবাড়ি তৈরির সময় কোন এক প্রবল শীতের রাতে আগুন জ্বালানো জরুরী ছিল।

যে শ্রমিকজন রাতে থাকতো তারা হারমোনিয়ামটা  আবিষ্কার করেছিল। ইতস্তত করেছিল কিন্তু বড্ড কষ্ট পাচ্ছিল সে রাতে। দা দিয়ে এক এক করে ছোট ছোট তক্তা বানানো হয়েছিল হারমোনিয়াম কেটে। তারপর আগুন দেওয়া হয়েছিল কেরোসিন ছিটিয়ে। ওদিন সারারাত ওরা গান গেয়েছিল আনন্দে, আরামে। হারমোনিয়ামের আগুনের চারপাশে গোল হয়ে বসে। গ্রামীণ শব্দ, প্রচলিত সুর আবেশ এনেছিল।

অনেক রাত অবধি হারমোনিয়ামটা জ্বলেছিল।

©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

No comments:

Post a Comment