কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Tuesday, December 12, 2017

|জিডি বিড়লা,রক্তমাখা বাড়ি ও এক নিহত শৈশব |

|জিডি বিড়লা,রক্তমাখা বাড়ি ও এক নিহত শৈশব |

--- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

এভাবেই খুন হয় কত শত শৈশবকাল/ আমরা শোকসভা করি। লোন করে ডোনেশন দিয়ে নামী স্কুল জিডি বিড়লাতে ভর্তি করিয়েছিলেন বাড়ির মেয়েকে। কিন্তু স্কুলেই যে ৪ বছরের ছাত্রীর `যৌন নির্যাতন` করা হবে,অভিযুক্ত হবে পিটি টিচার, একটি ও সিসিটিভি থাকবে না। ভাবেন নি।

এটাও তো অকল্পনীয়, কি ভাবে স্কুলের প্রিন্সিপাল শর্মিলা নাগ ঠান্ডা গলায় সাফাই গান স্কুলের। অন্য শিক্ষক অবলিলায় বলবেন পিটি শিক্ষকের `দুষ্টুমি`!

যে স্কুলে সামান্য নিরাপত্তা নেই, অথচ আকাশছোঁয়া মাইনে, সেই স্কুলেরই প্রিন্সিপাল বলতে পারেন বললেই তো একদিনে সিসিটিভি লাগানো যায় না। টাইম লাগে। কিন্তু সেই স্কুলই অভিভাবকদের বললে তারা ডোনেশন হোক বা ক্রাফট পেপার একদিনের মধ্যে হাজারো ফরমাইশ পূরণ করে দেয়।

পিটি টিচার প্রথমে স্কুলের বাথরুমে নিয়ে যায় বাচ্চাটিকে। তারপর অন্তর্বাস খুলে গোপনাঙ্গে হাত দেয় ওই শিক্ষক`।`বাথরুমের মধ্যেই শিশুর গোপনাঙ্গে আঙুল ঢুকিয়ে দেয়'। বুকের কাছে দলা পাকানো কি যেন একটা হবে। তারপর রাগ হবে। অনেকটা রাগ। ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজছে: পিটি শিক্ষকের `দুষ্টুমি`! বললেই তো একদিনে সিসিটিভি লাগানো যায় না। টাইম লাগে।

এভাবেই খুন হয় কত শত শৈশবকাল। কত হাজার অভিনেতা, ক্রিকেটার, শিল্পী মরে যায় ইস্কুলের টয়লেটে। আমরা শোকসভা করি বছর চল্লিশ হলে child abuse সেমিনারে।

এই শিশু সুস্থ হলে আগলে রাখুন। এই শিশুই আর একটু বড় হলে স্ট্রেস বাস্টার হিসেবে ব্লু ওয়েল চ্যালেঞ্জ নেবে। মা বাবা বাড়ি না থাকলে ছোট ভাইকে পাখার সাথে ঝুলিয়ে দিয়ে শাস্তি শাস্তি খেলা খেলবে। খোলা গলায় গান গাইতে লজ্জা পাবে, কোন প্রশ্ন করতে ভয় পাবে। কেউ ছুঁলে কুঁকড়ে যাবে। সারাজীবন। প্রিন্সিপাল তখনো নতুন কোন দুষ্টুমিকে জাস্টিফাই করবেন।

জিডি বিড়লা আমাদের শৈশবস্মৃতি। যে স্যার কান মুলে না দিলে আমাদের বাংলাটা শেখাই হত না টাইপ না। স্যাডিস্ট, পারভার্টেড টাইপ ছিল যারা।

অকারণ থাবড়ে দিত যারা, জামা খুলে কান ধরে উঠবোস করাতো আর পাছায় সপাটে লাথি মারতো যারা। যে আয়ামাসি স্কুল প্যান্টে হাগু করে ফেললে সবাই কে ডেকে ডেকে দেখাতো আমাদের কীর্তি আর হাগু করা প্যান্টটা শুঁকতে বলতো তারা। যে দারোয়ান কাকু ইয়ার্কি মেরে কাঠ পিঁপড়ে ঢুকিয়ে দিতো ফ্রকের ভিতর, যে স্যার উত্তর ভুল হলেই কোমর, পিছন, থাইতে চিমটি কেটে দিত আর মা মা বলে পীঠে হাত বোলাতো। হ্যা তারা।

আমাদের সব্বার জীবনে একটা করে টফি কাকু বা মিষ্টি কাকি এসেছে কোন না কোন সময়। যারা আমাদের কোলে বসিয়ে টফি খাওয়াতো, পিছনে শক্ত কি যেন ঠেকতো, যারা আমাদের স্নান করাতে পারলে বেশি খুশি হত, যারা আমাদের "ওসব" চটকাই মটকাই করে দিত আর অনেক দিন হয়ে গেলে ওনাদের ওই সব জায়গায় হাত বুলিয়ে দেওয়ায় অদ্ভুত খেলা খেলতো। না বললে বুক জোর সে চিপে দিত। মেয়েটির দুদিন ব্যাথা থাকতো। মা কেও কি আর এসব বলা যায়?

আন্টি পড়াতে এসে চিমটি কাটলে বা পেন্সিল দিয়ে চামড়ায় ফুটিয়ে দিলেও তো কিছু বলা যায় না। স্যার গোপনাঙ্গে আঙুল ঢুকিয়ে দিলেও চুপ করে থাকতে হবে।কারণ আন্টি বা স্যার সব সময় ঠিক হয়। আর আমরা ভুল, বেয়াদপ, শয়তান।

জিডি বিড়লার সমস্ত টিচার বাড়ি ফিরবেন। নিজের মেয়েকে জড়িয়ে ধরবেন। ড্রেস বদলে দেবেন। তারপর আবার পরের দিন টিচার্স রুমে আসবেন। গোটা মেঝেতে রক্ত মাখা একটা ঘর। বই এর মাঝে, দেওয়ালে, আলমারিতে, নোটবুকে, প্রিন্সিপালের হাতে। সাউন্ড বক্স থেকে ক্রমাগত শোনা যাবে: বললেই তো একদিনে সিসিটিভি লাগানো যায় না। টাইম লাগে। যদি কেউ দুষ্টুমি করে, তাকে কি আটকানো যায়?

ফেলুদা,তোপসে, ক্যাপ্টেন স্পার্ক, হ্যাডক, মিতিন মাসি, মাঞ্জা দেওয়া, ভোকাট্টা, ন্যাঁড়াপোঁড়া, আম পাড়া শেখানোর লোক গুলো সব অনেক দূরে এখন। হয়তো বা মৃত। থেকে গেল টিচার্স, ডিসিপ্লিন, একটা স্কুলবাড়ি যেখানে শৈশব খুন হয় আর দগদগে একটা দাগ, স্কুলের ব্যাগের চেয়েও ভারী যা সারাজীবন বহন করে যেতে হবে।

বাচ্চাগুলোকে বাঁচাই আসুন, অনেকটা দেরি হয়ে গেছে।

©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

No comments:

Post a Comment