| শেষের দু এক লাইন........ |
--- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
চেক-ইন ব্যাগেজ এ অনেকটা কাজ করার তাগিদ নিয়ে এসেছিলাম, বুক পকেটে অল্প দুঃসাহস আর জেদ। বাদ বাকি যা লাগে এই শহর শিখিয়ে পড়িয়ে নিয়েছিল।
এই শহর কথা বলে মাঝরাতে সমুদ্রের পাশে বসলে। খুব মনখারাপ হলে ম্যাজিক দেখায়। ম্যাজিক এ বিশ্বাস রাখা ভালো।
একটা থোকে যাওয়া কলজে আর হেজে যাওয়া কাজের তাগিদ নিয়ে বোম্বে এসেছিলাম। এক বছর সাত মাস আগে। আর ৪৮ ঘন্টা পরে চলে যাওয়ার পালা। এ শহর ছেড়ে। প্লেন আকাশ দিয়ে ওই চোখা চোখা বাড়ির ওপর দিয়ে যাবে, আরবসাগর ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকবে। উইন্ডো সিট নেওয়া ঠিক না। ঝাপ্পা হতে পারে যখন তখন। চোখ।
একটা ভাডা পাও, দুটো কলা খেয়ে কি করে কাজ করত হয় এ শহর শিখিয়েছে। স্বপ্ন দেখা চালিয়ে যেতে হবে। আধ খাওয়া পেট মনে করাতে থাকে শিকড় নিজের। এই শহরে এসেই তো প্রথম শিখলাম রান্না করা, বাসন মাজা, ঘর মোছা, ঝাড় দেওয়া কোন রকেট সাইন্স বা ঘেন্না ঘাটি নয়। আর পাঁচটা কাজ।
এ শহরে এসেই তো দেখলাম থামার কোন দাগ নেই। দৌড়ে যাওয়া, একে অপর কে নিয়ে। একা হয়েছো কি ঝাঁপ দিয়েছো দমবন্ধ প্রেশারকুকার হয়ে।
কলকাতা যদি জানে আমার প্রথম সব কিছু, এ শহর জানবে আমার গোপন সবকিছু। সব গোপন কথা রাতে বলা যায় সমুদ্রপারে। তখন চারপাশে সব্বাই না শোনার ভান করে।
ম্যাজিকে বিশ্বাস রাখা ভালো। এ শহর দুম করে আকাশ ছুঁইয়ে দিতে পারে। তারপর সেখানে টিকে থাকা নিজের ওপর। ছোটবেলা থেকে একটা মনের মত মাস্টারদা খুঁজতাম। ভাবিনি একটা শহর পদে পদে আমাকে জীবন শেখাবে, পোড় খাওয়াবে, ভেউ ভেউ করে কাঁদার পরে মুচকি হেসে দিন শুরু করাবে, আমি ও যে কিছু পারি, তা পীঠে হাত রেখে বোঝাবে।
ছবিটা টাইম ওফ ইন্ডিয়া গেস্ট হাউসের। মেরিন ড্রাইভ এলাকা। আমার ঘরের বিশাল জানালা থেকে তোলা। এই অচেনা শহরে প্রথম এক মাস আমার মাথা গোঁজার ঠাঁই।
আমার কিন্তু ম্যাজিক দেখতে আজও ভালো লাগে। একটা দারুন আগামীকাল, একটা ঝলমলে, আশাবাদী রোদ্দুর- আসবে জানি।
প্রেমে পড়ে যাওয়া এই শহর ও জানে। চুম্বকটা ওই সমুদ্রের আনাকে কানাচে কোথাও আছে বোধহয়। তাই যাওয়ার সময়টা এগিয়ে আসলে গলার কাছে কি যেন শক্ত হয়ে আসে।
©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
No comments:
Post a Comment