| #দিল্লিডায়েরি- প্রথম পর্ব |
----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
মাঝ আকাশে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বিমানে কি পরমাণু বিস্ফোরণ সম্ভব? রাজমা চাওয়ল খেলে বোধহয় হয়। একেবারে নিঃশব্দ বিপ্লব।
সৌখিন অন্দরে আলোড়ন ফেলে দেওয়া সে বিস্ফোরণ। কি আশ্চর্য কেউ মুখ বিকৃত করছে না, সব্বাই আরো গম্ভীর মুখে কর্পোরেট সাজছে। ফেলুদার ও সাধ্যি ছিলনা কাল্প্রিটকে পাকড়াও করা। মিঠে সুর ভেসে আসছে বটে কিন্তু নাকে তখন কার্পেট বোম্বিং হচ্ছে দুপুরের রাজমা অস্তিত্বের। এ পাশে ও পাশে সুমধুরভাষিণী বিমানসেবিকারা ও পাচ্ছেন কিন্তু কোম্পানি ওদের মুখ কোঁচকাতে বা বিকট গন্ধ নাকে গেলেও স্থিতধী থাকতে বলেছে।
আজ পুর্নিমা ছিল। একটা ইয়া বড় চাঁদ মুম্বাই বিমানবন্দর থেকে পিছু নিয়েছিল। গোটা বিমানপথ জ্যোৎস্না দিয়ে ধুয়ে দিয়েছিল। প্রথমে মুম্বাই এর জনপথ, ছোট হতে হতে মিলিয়ে যাওয়া বাড়ি, উড়ালপুল, বিদ্যুৎ এর খুটি। এরপর চিকচিক করতে থাকলো সমুদ্রজল। তারপর আরো কিছু জলজ। অনেকটা এগিয়ে গেছে প্লেন। ডানায় ও জ্যোৎস্না লেগেছিল। আমার ঠান্ডা লাগছিল। আমি ঘুমিয়ে পরেছিলাম ভরসায়। মুম্বাই থেকে একজন ছাড়তে আসছে আমাকে। পুরো ছায়াপথ।
যে বিমানসেবিকা সবচেয়ে ঝিলমিল লাগিয়ে দেওয়া তার নাম ছিল অবিনাশ। দিল্লির মেয়ে। ভীষণ বিব্রত হয়ে পরেছিলেন জল এর কন্টেনার খোলা হয় নি এদিকে আমি জল চেয়ে বসেছি বলে। অবিনাশ তৃষার্ত আমাকে জলের জায়গায় কোক অফার করলো। ফ্রী বিষ ও শুনেছি অপ্সরাদের হাত থেকে নিয়ে নিতে হয়। সুন্দরী মেয়ের নামটা অবিনাশ হওয়াতে কিছুটা রিপালশন ছিল বটে।
এখান গোটা দিল্লি শহরে আবগারি আবহাওয়া। দুষণ নেই। রাস্তাঘাটে একটা ও ধর্ষক চোখে পরলো না। তবে মোটা সোয়েটারে আপাদমস্তক ঢাকা মেয়ে চোখে পরলো। একলা হেঁটে যাচ্ছে। বাইকের পেছনে জাপ্টে ধরে যাচ্ছে। ট্যাক্সি বাসে ও যাচ্ছে। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম।
নয়ডাতে কনকনে ঠান্ডা। বোধহয় দিল্লিরর থেকে দু ডিগ্রি কমই হবে। শীতকাল এখানে এসে গেছে সুপর্ণা। এখানে সব মোমবাতি ভোজবাজীর মত নিবে যায় একসঙ্গে- থেকে যায় পাছুফাটানো শীতের চাবুক।
বাঙালির কাছে এ তিন মাস লেপের নিচে ঘুমিয়ে থাকার শীত। প্রেম করার শীত উষ্ণতা পেতে। "অপুর সংসার" নয়ডাতে হলে নির্ঘাত অপর্ণা অপুর জন্য উলের জাঙিয়া বুনে দিত। মাঝে অদ্যাক্ষর থাকতো 'অ'। সিগারেটের প্যাকেটে কড়া শাসন লেখা থাকতো। "কথা দাও যেখানেই যাও, ওটা পড়ে বেড়োবে।"
সত্যি বোধ হয় শাসন না থাকলে প্রেম নিবিড় হয় না। আমার বউ উল বুঁনতে পারেনা। আধুনিকা সানন্দা নারী। তিন জোড়া Amul Body warmer কিনে দিয়েছে। শীতকালীন গল্প লিখতে সুবিধা হবে।
©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
No comments:
Post a Comment