কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Thursday, March 22, 2018

#দিল্লিরডায়েরি পর্ব ২

| নয়ডা একটি শহরের নাম, শীতঋতু ইদানীং |

#দিল্লিরডায়েরি পর্ব ২

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

ফেলুদা তোপসেকে বলেছিল যে কোন শহর চিনতে হলে পায়ে হেঁটে দেখাই সবচেয়ে ভালো উপায়। ওতে শহরের শ্বাসপ্রশ্বাস, দিনলিপি, ব্যস্ততা, অলস দুপুরের অনেক ছবি চোখের সামনে পরিষ্কার হয়ে যায়।

আমার ও পায়ে হেঁটে শহর দেখার বাতিক আছে। তবে দিল্লি আসার পর এই বেয়াদব ঠান্ডা, প্রগাঢ় ল্যাদ আর এই আখাম্বা দিল্লি-নয়ডার জিওগ্রাফি আমাকে ইস্তক জবুথবু করিয়া ফেলিয়াছে। সুতরাং বন্ধুর থেকে একটি  Activa ধার নিলাম, জ্যাকেটের ওপর জ্যাকেট তার ভিতরে থার্মাল তার ভিতরে আমি। চললাম একটা গোটা ছুটির দিন,সময় নিধন করতে।

নয়ডা একটি মজার শহর। এখানে সবাই রাজা যোগীর এই মহান রাজ্যত্বে। যে যেদিক দিয়ে পারে গাড়ি চালায়, বা চালায় না, বা থেমে যায় বা ঝড়ের বেগে যায়। পুরোটাই গণতান্ত্রিক। কেউ মাইন্ড করে না। পুলিশ আছে কোথাও একটা ভগবানের মত কিন্তু নেই।

গোটা শহরটাই একটা রাজারহাট-নিউটাউন। কেবল দিদির ছোঁয়াটাই যা নেই। ত্রিফলা নেই, ঝোপের মধ্যে রোশনাই নেই, দুমদাম শিল্পকলা নেই। থাকার মধ্যে মাখন রাস্তা, আরো মাখন দিয়ে মালিশ করা একদম সোজা রাস্তা, উঁচু উঁচু ফ্ল্যাট বাড়ি, সিক্স লেন হাইওয়ে আর দিগন্ত বিস্মৃত ফাঁকা জমি। এককালে চাষার ছিল এখন শিল্পপতি বা সরকারের। চাষার ঘরে বিপুল টাকা ঢুকেছিল। তাতে জমি, ট্র‍্যাক্টার, তিন তলা বাড়ি, দামি গাড়ি, কাঁচা টাকা ঢুকেছিল, বন্দুক কেনা হয়েছিল, মাথা গরম হলেই দুমদাম গুলি চলেছিল আর ছেলেকে বলা ছিল: পুলিশ ধরলেই বলবি, জানতা হেয় মেরা বাপ কৌন হে?

সোহাগি শীতের ওড়না জড়িয়ে থাকা লম্বা রাস্তা ধরে দিকভ্রান্ত সফর ও তো এক আনন্দ। দু পাশে নিরাপদ গাছের ঝাড়, শীতের সকালে ঝিমিয়ে থাকা ধুলো, সদ্য ফিরে যাওয়া কুয়াশা, মিঠে রোদ পিঠে এসে বসে। চলার পথে কাজে লাগে বেশ।

মুম্বাই এর মত এ শহর সদা হাইপার নয়। এর মিঠে রোদ নেওয়ার সময় আছে, নান রুটি তন্দুরে সেঁকে যত্ন করে মাখন লাগিয়ে, মটর পনির দিয়ে খাওয়ার সময় আছে মাত্র ২০টাকায়, এরপর শীতকালীন আড্ডা।

দিল্লির শেষ ও নয়ডার শুরুতে একটা গোটা মল সমর্পণ করা হয়েছে মদ্যপায়ীদের জন্য। তিন তলা স্টার সিটি মল জুরে গোটা ২৫ মদের দোকান, সোডা চিপসের দোকান, কাবাব, তন্দুর, পাব, বার ও বসার জায়গা। নয়ডা এখান থেকেই বোতল তোলে। কারন এখানে ইউনিয়ান টেরিটোরির দামে মাল পাওয়া যায়।

এখানে সন্ধে নামার আগে বেশির ভাগ লোক এলাকাতে ফিরে আসে। এরপর পাড়ায় পাড়ায় তন্দুরের ঠেক, মোমোর দোকান থেকে ধোঁয়া ওঠা সাংসারিক খুনসুটি হয়। বাকিদের জন্য কার ও বার বসে হানি সিং এর গানে গানে। গ্লাস ওখানেই পাওয়া যায়। কেউ কাউকে বিরক্ত করতে আসেনা। সবাই শীত পোয়াচ্ছে চুমুকে।

গোটা শহরটা হিম শীতল এখন। ঠান্ডা ৮,৯ এর ঘরেই অভ্যস্ত। শীর্ষেন্দু লিখেছিলেন, বোধ হয় শীতের অপরাহ্নের মতো বিষন্ন সময় আর হয় না। কেমন যেন মৃত্যু আকীর্ণ চরাচর। এরকম এক চরাচরই ছুটি থাকলে কাছ থেকে দেখার সুযোগ মেলে। বাকিদিন তো অফিসের হিটার ও নিউজব্রেকের উষ্ণতা।

অনেকটা লম্বা পথ ধরে ফিরে এসে, গলা শুকিয়ে যায়, তখন আকণ্ঠ পান করতে হয়। দূরভাষ নিশ্চুপে থাকে গানে, আজ সশব্দ জানান দিলে পারতো প্রেম। এই ঠান্ডা প্রদেশে। আয় চুমু পান করি তারিয়ে তারিয়ে। নারী পুরুষ মিলে মিশে এক হয়ে যাক।

আমি শুরু করি অনিদ্রা উদযাপন, বিষন্ন পৃথিবী তার পূর্বাপর বন্ধুদের ভুলে গেলেও আমি মনে রাখি গত জন্মের প্রেম। গত শহরের প্রেম, উদযাপন। শহর বড্ড ঘন ঘন বদলাচ্ছি আমি।

©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

No comments:

Post a Comment