| পদ্মাবতী না তৈরি হলেই ভাল হত |
--- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
করণি সেনা এ যাত্রায় ভনসালী সাহেবকে বাঁচিয়ে দিল। নয়তো এ ছবির এক সপ্তাহে "জৌহর"প্রাপ্তি হত। একাধিক কারনে বলছি। এটা বলিউডি ছবি হতে পারে তবে সিনেমা নয়। এর হাইপ ও পাব্লিসিটি বাদ দিলে বাজিরাও মাস্তানি বা রামলীলা ঢের ভালো, টানটান। এ যেন এক সৌখিন জগাখিচুড়ি। দেখছি কিন্তু কাঁদছি কই?
গোটা ৩ ঘন্টার একটা ছবি বানানো হল শেষের আধ ঘন্টার সতীদাহকে জাস্টিফাই ও দারুণ সুন্দর ভাবে ক্যামেরাবন্দি করতে। যদি ও ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয়েছে Srijit মুখুজ্জের "রাজকাহিনী" র জৌহর দৃশ্য আরো সিনেম্যাটিক, আরো প্যাশনেট। Swara Bhaskar সম্ভবত বাংলা বোঝেন না বা বাংলা ছবি দেখেন না। খুব ইচ্ছে ছিল জানার, এক ডজন "বেশ্যা" যখন আগুনে ঝাপায় সম্মান রক্ষা করতে তখন "ভ্যাজাইনা ডিবেট" কিরকম হয়।
এ ছবির পরতে পরতে আপত্তি। না তৈরি হলেই পারতো। নম্বর দিয়ে লিখি। সুবিধা হবে।
১). প্রথমত, খামোখা ভূভারতের সাদামাটা বউদের ইয়া বড় দীর্ঘশ্বাস সামাল দিতে হচ্ছে পাজামা পরা, তুলতুলে ভুড়ি, বুকে লোমওয়ালা, নাক ডাকা বরেদের। থোড়াই তারা আলাউদ্দিন খিলজি থুড়ি রনবীরের মত যৌন আবেদন আনতে পারবে পালঙ্কতে। থাকার মধ্যে যা থাকবে তা হল এবার চৈত্র সেলে পদ্মাবতীর মত সিটি গোল্ডের নেকলেস বা প্লাস্টিকের মানতাসা। সাথে শ্রীনিকেতনের পদ্মাবতী শাড়ী। রাতে রতিসুখের মাঝে চোঁয়া ঢেকুর। এটা বাস্তব, ওটা সিনেমা।
২). শিল্পের স্বাধীনতা কি Absolute? তবে এবার নাথুরাম গোডসে কি মহৎ আত্মা ছিলেন এবং গান্ধীকে গুলি করে কি বীরের কাজ করেছিলেন তিনি তা নিয়ে ও ছবি হোক। বা যৌতুক না আনলে বউকে কেন মেরে ঝুলিয়ে দিতে হয় তা নিয়ে অথবা কন্যাসন্তান জন্মালে কেন নুন খাইয়ে মেরে দেওয়া উচিৎ তা নিয়ে। হোক না! করণি সেনা নয়, শহুরে এলিটিস্ট বিক্ষোভ দেখবো না হয়। বা দেখবো না। তারা ফেসবুক ও হ্যাসট্যাগ বিপ্লবেই সুখী।
৩). গোটা ছবিটায় এক অযথা গাম্বাটগিরি ও মেল ইগোকে রাজপুত গৌরব বলে চালিয়ে দেওয়া হল। শালা বউ রাজস্থান থেকে দিল্লি এলো সম্মান হাতে করে, স্রেফ সোহাগকে মুক্ত করার জন্য আর ইগোইস্টিক বাঞ্চোদ বলে খিলজির সাথে দেখা করে তবে যাবো। যখন বউ বলে ওগো তুমি মরলে আমি কি ঝাঁপাবো আগুনে, সে শালা মাথা নেড়ে সম্মতি দেয়। অর্থাৎ আমি মরলে তুমি ও বাপু মরে যেও।
৪).এই ছবি নিয়ে বিক্ষোভ করার কথা ছিল মুসলমানদের। যেভাবে ইসলামী সম্রাটদের দেখানো হয়েছে তার প্রতিবাদে। যেভাবে মাংসখেকো শরীর সর্বশ্য কামুক দেখানো হয়েছে সলতনৎ কে। তা না হয়ে নির্বাচনী বাজারে গাঁক গাঁক করে পেটি ঢাকতে বাধ্য হল পদ্মাবতী। ওই যে ডবকা বউরা নাচবে ঘুমর ঘুমর। বরেরা তখন রনক্ষেত্রে। একটুও আদর করেনা। কাছে আসলেই গোঁফে তাঁ দিয়ে বলে, যুদ্ধে যেতে হবে।
৫). শেষে বলছি। পদ্মাবতী না তৈরি হলেই ভাল হত। ভনসালী জাঁকজমক আর grandeur কে এক অন্য মাত্রা দিয়েছেন। সিনেমা কাকে বলে, বলিউড কাকে বলে বিশ্বকে দেখিয়েছেন। কিন্তু এই ছবি অন্তঃসারশূন্য! থাকার মধ্যে যা আছে তা অসম্ভব ভালো ক্যামেরার কাজ, সেট ডিজাইন, শব্দগ্রহন। তিনটিই চারজন বাঙালি করেছে। ক্যামেরা করেছে Sudeep Chatterjee, শিল্প নির্দেশনা করেছে Subrata Chakraborty- Amit Ray, ছবিকে শব্দ দিয়েছেন @biswadeep dipak Chatterjee.
হে দুর্ভাগা বঙ্গদেশ! এদের নিয়ে ও তো কোন লাফালাফি নেই। থাকার মধ্যে মেকি বিদ্রোহ। প্রথম দিন প্রথম শোতে পদ্মাবতী দেখলেই আমি লিবারল। আর জৌহর করলেই দেবী। বাকি যারা দাম্পত্য কলহে গলায় দড়ি দেয়, যাদের শ্বশুড়বাড়িতে কেরোসিন ঢেলে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়, তারা স্রেফ মেয়ে। রানী হওয়া তাদের হল কই?
©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
No comments:
Post a Comment