কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Thursday, March 22, 2018

| হিন্দু ছেলে, কোপানো হলে, কি আসে যায় |

| হিন্দু ছেলে, কোপানো হলে, কি আসে যায় |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

আজ রাতে কোন মোমবাতি জ্বলেনি। কোন পুরস্কার ফেরত দেয়নি কবি, কারো মনে হয়নি দেশে অন্ধকার সময় চলছে। আজ রাতে এক প্রেমকাহিনী ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল ধর্মের কোপে।

মেয়েটা ছিল হৃদয়অবাধ্য। নাম শেহজাদি। প্রেম করতো বিধর্মে, নামাজ পড়তো, নকাব থাকতো তবে বেআব্রু ও তো হত ঠোঁট, লুকিয়ে রাখা প্রেম পত্র ও ছিল বোধহয়। সামনেই বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। না লুকিয়ে নয়। পালাতে চাইলে প্রেমিকের কোপানো শরীর দেখতে হত না। ওরা দুই বাড়িতে নিজেদের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিল। আয়াত ও মন্ত্রোচ্চারণ পাশাপাশি রাখার কথা ভেবেছিল আজীবন। দুজনে। একজন হিন্দু একজন মুসলমানে।

ভরদুপুরে, রাজধানীর রাস্তায় প্রেমিকার বাবা ও ভাই কুপিয়ে কুপিয়ে মারে অঙ্কিতকে। পেশায় চিত্রগ্রাহক। বয়স ২৩, প্রেম করতো এক মুসলমানিকে। তবে মেয়ের বাড়িতে আব্বার অপছন্দ ছিল বিধর্মে বিয়ে। আঁতকে উঠেছিল মেয়ে হিন্দু বাড়ি বিয়ে করে যাবে শুনে।

এরপরের গল্পটা অন্য হলেও হতে পারতো। ঝগড়া হতে পারতো, কান্নাকাটি, মুখ না দেখাদেখি হতেই পারতো। হয়নি। মেয়ের বাড়ির লোকের মনে হয়েছে হিন্দুর মাথা কেটে দিলেই এ পাপমোচন হবে। মনে হয়েছে কুপিয়ে কুপিয়ে মারতে মারতে এক সময় যখন দেহ নিস্তেজ হয়ে যাবে, তখন শান্তি আসবে। আব্বু ধর্মপ্রান নামাজি ছিল। ধর্ম নাকি শান্তি আনে, সহিষ্ণুতা শেখায়।

রিজওয়ানুর রহমান কে মনে আছে? এরকমই পরিণতি হয়েছিল হিন্দু মেয়েকে প্রেম করার অপরাধে।  যদি রিজওয়ানুরকে মনে থাকে তবে অঙ্কিতকেও মনে রাখতে হবে। আখলাখ কে, পেহেলু কে, জুনেইদকে, আফরাজুলকে মনে থাকে, তবে অঙ্কিত-শেহজাদির প্রেমকাহিনী ও ছড়িয়ে দিতে হবে।

পাড়ায় পাড়ায় ঝগড়া, বড়লোকের মেয়েকে গরিব ছেলে বিয়ে করার অপরাধ, অবৈধ প্রেম জানাজানি হয়ে যাওয়ায় পুড়িয়ে মারা কে আমরা আইন শৃঙ্খলার অবনতি বলে চালিয়ে দিই নি। আমরা মোমবাতি মিছিল করেছি, দিস্তে দিস্তে লিখেছি, প্রতিবাদ করেছি, কারন সংখ্যালঘু ভাইরা খুন হয়েছে বেঘোরে। এখন কিভাবে চুপ থাকবো? এখন বুদ্ধিজীবীদের শান্ত হয়ে ঘরে বসে থাকলে চলবে?

এবার এই হিন্দু ছেলের, এই হৃদয়অবাধ্য প্রেমিকের হয়ে বিচার চাওয়ার পালা। কারণ এটা বুঝতে হবে, যে কয়েকজন হিন্দু মিলে একজন মুসলমানকে মারলেই যেমন গোটা দেশ অসহিষ্ণু হয়ে যায় না, গোটা হিন্দু ধর্ম কসাই এর ধর্ম হয়ে যায় না, সেভাবেই বলার সময় এসেছে সাচ্চা নামাজির যে এই কুপিয়ে খুনের ধর্ম তার ধর্ম নয়। এই চাপাতি নিয়ে নাস্তিক ব্লগার কোপানো তার ধর্ম নয়, সন্ত্রাসবাদ তার ধর্ম নয়।

কঠিন সময়। এক আকাশ জুড়ে বারুদ আর অবিশ্বাসের গন্ধ। এখন যদি মুসলমানেরা দরজা খুলে মোমবাতি নিয়ে বেরিয়ে না আসে হিন্দুর হয়ে, এখন যদি অঙ্কিত-শেহজাদির প্রেমের গল্প মুখে মুখে না ফেরে, গরু খেয়ে প্রতিবাদ করার তাগিদ টা, হাতে হাত রেখে সংখ্যালঘুকে আগলে রাখার তাগিদটা কমে যাবে। দুই জাতের বজ্জাতরা রক্তের গন্ধ পেয়ে গেছে। কানে কানে বিষ ছড়িয়ে যাবে। যদি সত্যি বেঁধে বেঁধে থাকতে চান, আওয়াজ তুলুন। এটা সম্মানার্থে খুন না, এটা সাম্প্রদায়িক হত্যা।

আকলাখ, পেহেলু খান, জুনেইদ এর দেশ এটাও মনে রাখবে যে এক ২৩ বছরের প্রেমিক যুবক কে রাজধানীতে খুন হতে হয়েছিল স্রেফ হিন্দু বলে।

©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

No comments:

Post a Comment