কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Thursday, March 22, 2018

| কন্ডোম: দেখবো না, বলবো না, পরবো না |

| কন্ডোম: দেখবো না, বলবো না, পরবো না |

----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

রাষ্ট্রহুজুর আদেশ করেছেন টিভিতে সকাল ৬ ঘটিকা হইতে রাত ১০ ঘটিকা অব্দি কোন প্রকার প্রতিক্রিয়াশীল, ভারতীয় সংস্কৃতিবিরোধী নিরোধ অর্থাৎ কন্ডোমের বিজ্ঞাপণ সম্প্রচার করা যাইবে না। এটি হয়তো একটি চায়নার চক্রান্ত।

দশটার পর যখন নাগপুরের প্রধান দপ্তরের সমস্ত আলো নিভে যায়, ভাগবান নিদ্রা যান, রাম মন্দিরের দাবী আজকের মত ক্ষান্ত হয়, তখন দেখানো হোক।

তবে দিনভর গোমূত্রের সুফল, ডিও স্প্রের নিরীহ খুনসুটি, শ্রী শ্রী জ্যোতিষীর বিশ্লেষণ, "সাবধান ইন্ডিয়ার" নামে রোজ রাতে ধর্ষণের পুনর্নির্মাণ, ক্ষুদে প্রতিযোগীর আরো খুদে কাপড় পড়ে হানি সিং এর গানে যৌনকাতর নাচ, সানি লিউনির বিনোদনমূলক আইটেম নাম্বার, রাত নটায় সংখ্যাললঘুদের জেহাদ-ফন্দি ফাঁস, উন্নয়নের ফিরিস্তি চাইলেই পাকের নাপাক ইরাদার ধারাভাষ্য একটানা চলতেই পারে।

কন্ডোম একটি অপদেবতার আবিষ্কার। এটি একটি লম্বা রবারের নাস্তিক খাপ যেটি যৌনসংসর্গের সময় কাপুরুষ পুরুষাঙ্গে পরে নিতে হয়। কারন হিন্দু পুরুষ সিংহ এক হুংকারে প্রেগন্যান্ট করে দেয়, সূর্য দেবতা পেটে লাইট তাক করলেই বাচ্চা ঢুকে যায়, মুনি ঋষি হলে মনে মনে ভাবলেই পেট।

কন্ডোম যোনিতে হিন্দুত্ববাদী, দেশপ্রেমিক ও পেহলাজ নিহালিনির মত সংস্কারি শুক্রাণুর প্রবেশ প্রতিরোধ করে যা হিন্দু রাষ্ট্র নির্মাণের পরিপন্থী।

পুরুষাঙ্গ ও যোনির সংস্পর্শ হওয়ার আগেই এটি উত্থিত পুরুষাঙ্গে পরে নিতে হয়, যা প্রগাঢ় কঠিন কাজ। দিনভর রক্ত গরম থাকে দেশদ্রোহীদের দেখে, জাতীয়তাবাদী পুরুষাঙ্গ বলিষ্ঠ রাখতে হয় জেএননিউ, যাদবপুর, ওসমানিয়া, আলীগড়ের দেশবিরোধের সাথে পাল্লা দিতে গেলে। উন্নত শিরদাঁড়া রাখে ওরা, আমরা রাখি গোমূত্র মাখা ব্যাম্বু, রাতে নরম থাকে, ভজন কীর্তনের পরে ঘুমোতে যায় এক রামমন্দিরের স্বপ্ন নিয়ে। হিক!

কন্ডোম গর্ভনিরোধের একটি সুরক্ষিত উপায় নয় নয় নয়। মনুসংহিতাতে লেখা আছে, আমেদাবাদ মুম্বাই বুলেট ট্রেনের ভিতর লেখা আছে, সবার ব্যাংক এ যে ১৫লাখ টাকা ঢুকেছে তার পাসবুকে লেখা আছে। খনার বচনেও লেখা আছে যে এরকম একটি দিন আসবে যবে একটি প্লাস্টিককুন্ড হিন্দু ধর্মের বৃদ্ধি বিরোধী হবে। মুসলমানরা পকাপক জন্ম দিয়ে যাবে দেশদ্রোহী।

মাকু ও নাস্তিকেরা বলে কন্ডোম এইডস ও অন্যান্য যৌনসংক্রমণ প্রতিরোধ করে। বোগাস। এইডস হয় কামদেবের অভিশাপে। যৌনসংক্রমণ হয় লাভ-জিহাদ, গুজরাট মডেলের প্রতি অবিশ্বাস বা ভীনধর্মে বিয়ে করলে। এর সাথে প্রাচীন জ্যোতিষ বিজ্ঞানের কোন সম্পর্ক নেই।

আসলে কন্ডোম যৌনসঙ্গমের বাবরি মসজিদ ভাঙার যে স্বতঃস্ফূর্ততা ও পিটিয়ে মারার যে আনন্দ তা কমিয়ে দেয়, নতুন ভারতের করসেবক ও ফেক আইডি থেকে ক্রমাগত ঢপের প্রচার করতে সক্ষম শিশুর প্রজনন হ্রাস করে । তার উপর কিছু মানুষের রবারে অ্যালার্জি থাকে। যেমন লম্বা দাড়ি, ফেজ টুপি, আজানে অ্যালার্জি থাকে।

যৌনসঙ্গমের সময় যথেষ্ট পিচ্ছিলতা না থাকলে অথবা যদি ঠিক ভাবে পরা না হয় কন্ডোম ছিঁড়ে যেতে পারে। এর জন্য হিন্দু পুরুষদের উচিৎ বেশি করে বিনয় কাটিয়ার ও প্রবীন তোগারিয়ার বক্তৃতা শোনা। পেট্রিয়োটিক অর্গাজম যে সে ব্যাপার না।  এর জন্য রোজ তিন প্যাকেট পতাঞ্জলীর আটা নুডল খেয়ে তরোয়াল মিছিল করা। প্রবল পরাক্রমে কোন সংখ্যালঘুর ঘরে রাত বারোটায় জয় শ্রী রাম বলাতে প্রবল পুরুষত্ব আছে। ঘন পতাঞ্জলী ঘি এর মত ঔরস।

কন্ডোমের বিজ্ঞাপণ শিশুদের অস্বাস্থ্যকর বিষয়ে কৌতূহল তৈরি করতে পারে, এর চেয়ে তাদের সাভারকার, গডসের ইতিহাস পড়া উচিৎ। গুজরাট দাঙ্গার বীরগাঁথা শোনা উচিৎ। বিশ্বাস করা উচিৎ যে তার জন্ম হয়েছিল মা বাবার গোমাতা ও জয় শ্রী রামে ভরসা রাখার ফলে। টপ করে কোলে এসে পরেছিল অযোদ্ধা থেকে।

জজ সাহেব বলে গেছেন ময়ূর এর চোঁখের জল আসলে বীর্য। তাজমহল ছিল তেজো মহালয়া। যেরকম গরু আসলে মা আর গনতন্ত্রের পীঠস্থানে অর্ধশিক্ষা লো জিডিপির কারন। সুতরাং অযথা ভারতের জনসংখ্যা বিস্ফোরণ, আফ্রিকার মত এ দেশেও সম্ভাব্য এইডস, STDর মহামারির আকার ধারণ বা যে বাচ্চা সারাদিন ইন্টারনেট এ মুখ গুঁজে পরে থাকে তার থেকে কন্ডোমের বিজ্ঞাপণ দূরে সরিয়ে রাখার কারন জানা উচিৎ তবে জানতে নেই। কারন সিয়াচেন মে হামারে জাওয়ান মর রহে হে। কোন আলবালগরুর পালের প্রশ্ন নয়। প্রশ্ন করুন জলবিমানে চড়ে কেমন লাগলো, রাম মন্দিরের দেওয়ালে কি কি স্লোগান থাকবে, রিলিজ হওয়ার আগে পদ্মাবতী কেন গো বলয় সমিতিকে দেখানো হল না?

পেট্রিয়োটিক অর্গাজম যে সে ব্যাপার না।  এর জন্য রোজ পাঁচটা করে মিথ্যাচার সোশাল মিডিয়াতে বেদ পুরান, ধর্ম, জাতের মশলা মাখিয়ে শেয়ার করতে হয়। তবে গিয়ে বিদ্বেষ, দাঙ্গা, দ্বন্দ্ব প্রসব হয়। বেয়ারা কন্ডোম আসলে ওগুলো ও আটকে দেয়।

তবে একটা প্রশ্ন থেকেই গেল, প্ল্যান তো ছিল কন্ডোম না পড়ে হিন্দু মায়ের কোলে দশ সন্তান জন্ম দেওয়ার। এই বিজ্ঞাপণ বন্ধ হলে যদি মুসলমান বাড়িতেও আবার ২০ সন্তান জন্ম দেওয়ার রেওয়াজ শুরু হয়?

©------- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

No comments:

Post a Comment