| সাংসদেরই কেবল মুদ্রাস্ফীতি হয়, আম জনতার আঁটি ও প্রাপ্য নয় |
---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
প্রিয় আম আদমি। ঘেমো অফিসযাত্রী, খিঁচখিঁচে করণিক, ১৪ ঘন্টা ঠান্ডাঘরের ধোপদোরস্ত শ্রমিক, পাঠক, বেতনভুক কর্মচারী। শুনুন! আপনি হয়তো নিজেকে বড় মাতব্বর ভাবেন কিন্তু রাষ্ট্র আপনাকে ছাঁটের কেশাগ্র ও ভাবেনা। ভাবে সাংসদদের কথা যাদের আবার বেতন বৃদ্ধি হবে। মুদ্রাস্ফীতির সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়বে বেতন। এখন থেকে প্রতি মাসে সাংসদের মাসিক বেতন হবে প্রায় ২.৫ লাখ টাকা।রাষ্ট্রপতির বেতন বেড়ে হবে ৫ লাখ টাকা। উপরাষ্ট্রপতি ৪ লক্ষ এবং রাজ্যপালেরা পাবেন ৩.৫ লক্ষ টাকা। ইয়ে মানে আপনার কত?
এই যে এলইডি টিভি খুলে বাতেলা শুনলেন বা বোঝার ভান করলেন, এবারের সাধারণ বাজেটে আপনার শিঁকেতে লবডঙ্কা ও বরাদ্দ হল না, বুঝুন। না ট্যাক্স স্ল্যাবে পরিবর্তন হল, না কোন ছাড় দেওয়া হল মধ্যবিত্তকে। তার ওপর আবার পিপিএফ বা মিউচুয়াল ফান্ডে টাকার রাখলে ও চাপ। কাজু বাদাম বাদে আপনার প্রয়োজনীয় প্রায় সবকিছুর দাম বাড়লো। জীবনদায়ী ওষুধের দাম একই থাকলো। স্যানিটারি ন্যাপকিনে ট্যাক্স বসলো। মাথায় রাখবেন চাল-ডাল-তেল-নুন আর সব্জির দাম এমনিতেই আকাশছোঁয়া। পেট্রলের দাম মোদীজির বয়স পিছনে ফেলে এবার আদবানী জির বয়সের সাথে পাল্লা দিচ্ছে। অর্থাৎ হাতে রইলো পেন্সিল।
প্রতি বছর ফর্ম ১৬এ ফিল আপ করুন, ট্যাক্স পে করুন আর বছর শেষে ইলিশ মাছ কিনবেন ভেবে বাজার এসে বাড়ি নিয়ে যান লোটে। আসুন আবার না হয় ঝালিয়ে নিই আপনার টাকায় ঠিক কি কি হয় গণতন্ত্রের পীঠস্থানে। ময়ূখের দেওয়া গাঁজাখুরি না। সংবাদমাধ্যমে ও RTI তে প্রকাশিত খবর বলছি।
১). ভারতের সাংসদরা ৫০ হাজার টাকা করে মাসিক বেতন পান। অধিবেশনে বা সংসদীয় স্থায়ী সমিতির বৈঠকে হাজির হলেই রোজ ২০০০ টাকা করে পান। সঙ্গে সংসদীয় ক্ষেত্র ভাতা বাবদ পান মাসে ৪৫ হাজার টাকা। স্টেশনারি খরচের জন্য পান মাসে ১৫ হাজার টাকা। আপ্ত সহায়ক বা ব্যক্তিগত সচিব রাখার জন্য পান প্রতি মাসে ৩০ হাজার। এ ছাড়া সাংসদদের বিমান ও রেলের টিকিটের দাম, তিনটি ল্যান্ড ফোনের এবং দু’টি মোবাইলের বিলও সংসদই বহন করে। আমার আপনার টাকায়।
২). ভারতের ৭০ ভাগ মানুষের যেখানে দু’বেলা পেট ভরে ডাল-ভাত জোটেনা, সেখানে কয়েক মাস আগে ও সংসদ ক্যান্টিনে ২৪ টাকায় মাংসের ঝোল, ৪ টাকায় ধোসা, ৮ টাকায় ভেজ বিরিয়ানি, ৫ টাকার ভেজিটেবিল স্টু, ফিশফ্রাই ২৫ টাকায়, মাটন কাটলেট ১৮ টাকা পাওয়া যেত। সংসদের যে সদস্যরা মাসে ১ লক্ষ ৪০ হাজার বা তার বেশি টাকা রোজগার করেন, তাঁরা এক প্লেট ‘ফ্রায়েড ফিশ উইথ চিপস্’ কিনতেন মাত্র ২৫ টাকায়। প্রায় ৯০% ভর্তুকি দেওয়া হত। যা বছরে কয়েক কোটি টাকা। শুধুমাত্র এই বিলাসিতার জন্য। আমার আপনার টাকায়।
৩). প্রতিদিন স্রেফ সংসদে হাজিরা দিয়ে সই করলে পাওয়া যায় ২০০০ টাকা। অসাধু সাংসদের অনেকে উপরি টাকা আয় করেন স্রেফ প্রশ্ন করে। হ্যাঁ প্রশ্ন করলেই। কোন বিশেষ লবি বা সংস্থা বা এজেন্ডা নিয়ে। আমার আপনার টাকায়।
৪). এক দিন সংসদ চালানোর খরচা প্রায় ৪ লাখ টাকা। ১০০ কোটির উপর খরচা হয় এক একটা অধিবেশন আয়োজনে। অপচয় ও হয়। কারন টিভিতে আপনি দেখেন নিশ্চই কি ভাবে লোকসভা বা রাজ্যসভা স্থগিত হয়ে যায় কোন কাজ ছাড়াই। কোটি কোটি টাকার গণতান্ত্রিক অধিবেশন। আমার আপনার টাকায়।
৫). আপনি কি জানেন, গান্ধী পরিবারের সবাই নির্বাচনী এফিডেভিডে সমাজসেবী হিসেবে পরিচয় দেয়। কেউ কোনদিন আপনার মত চাকরি করেনি। সমাজসেবক কি ভাবে এত কোটি টাকার মালিক হয়? আপনি কি জানেন যে মুলায়াম সিং যাদব একজন গ্রামের শিক্ষক ছিলেন? তার পরিবারে সবাই সাংসদ। সব্বাই মার্সিডিজ চড়েন। বিজেপির একাধিক সাংসদ তো নিজের আয় হাজার টাকা মাত্র দেখিয়েছেন। তৃনমূল এর কথা ছেড়েই দিলাম। লুকোনো ক্যামেরা সব জানে।
এই বাজেটে Fiscal, GDP, Growth, Slab সহ একাধিক শব্দ শুনবেন। কিন্তু কোন সাংসদকে শুনবেন না বলছে, এই মাইনে বাড়া ঠিক নয়। এই টাকাতে বাজেটে অন্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো যেত। কাউকে শুনবেন না পথে নেমেছে রাজ্যপালের বা রাষ্ট্রপতির এত সুযোগ সুবিধে সত্ত্বেও কেন এই বিপুল মাইনে হবে তাই নিয়ে কথা বলতে।
আসলে আমরা যতই দিন বদলের বড় বড় কথা বলি না কেন, গ্যাসে ভর্তুকি ছাড়ার কথা বলি না কেন, নিজের বেলায় ওয়ান পাইস ফাদার মাদার। তখন দেশের মানুষ নয়, ঘরের বউ বাচ্চার জন্য আঁখের গুছিয়ে নেওয়াটাই রাজধর্ম হয়ে যায়।
মুদ্রাস্ফীতিটা আপনার ঘরে ও কোপ মারে। আপনার যে ঘরের বাজেট ছিল, যে স্বচ্ছতার স্বপ্ন ছিল, যে ইএমআই টা চলছে, তার ওপর বিমুদ্রাকরন, জিএসসি বা মুদ্রাস্ফীতিরর কোপ পরে। সাংসদরাও জানেন কিন্তু পাড়ার হনুমান পুজোতে মোটা চাঁদা, ক্লাবের ফাংশনে কুমার শানু, এলাকার পুকুর বাঁধিয়ে, কল লাগিয়ে গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। সাংসদ চাইলে সব পারেন। মাথায় রাখবেন, তারা যোগ্যতার গুনে ২.৫ লাখ টাকা প্রতি মাসে বেতন পাবেন।
লেখাটা ছড়িয়ে দিন। মানুষ জানুক। এবার থেকে সাংসদ কোটার টাকা কোথায় কিভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে, জানতে চান। ঘরের বউ বাচ্চার জন্য আঁখের গোছান আগে। রোটি,কাপড়া, মাকান হোক আগে। তারপর না হয় গোমাতা, পাকিস্তান, জনগনমন নিয়ে ভাবা যাবে। খালি পেটে দেশত্ববোধ আসেনা।
©------ ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
No comments:
Post a Comment