| রাজপথে লাল সমুদ্র, আরবসাগর পাড়ে হৃদকম্পন |
©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
না এটা ব্রিগেড এর পুরনো ছবি না। এটা ভারতের বম্বে। ২০১৮ সাল। বাণিজ্য নগরী জুরে এখন দমবন্ধ হৃদকম্পন। লাল পতাকাবাহী তামাটে ঘেমো মানুষেরা লাখে লাখে ঘিরে ফেলছে নগর। মায়ার নগর, বহুজাতিক সংস্থার শহর, সিনেমার নগর, শোষণের শহর, স্বপ্নের নগর। পালটা জল কামান মজুদ হচ্ছে রাস্তায় রাস্তায়, ব্যারিকেড গড়ে তোলা হয়েছে চৌমাথায়। আশে পাশের এলাকা থেকে পুলিশ মোতায়েন হয়েছে। বেয়োনেটে শান দেওয়া হয়েছে। ফরাসি সুগন্ধি আর জার্মান গাড়িওয়ালারা আগাম সুরক্ষা নিয়ে রেখেছেন। কাঁচের ঘরে ক্রমাগত পায়চারী ধবধবে পাঞ্জাবিতে। পাছে তাদের সৌখিন ঘরের কোনে পেচ্ছাপ করে দিয়ে যায় প্রোলেতারিয়েৎ নুনু। সে প্রগাঢ় কম্পন হবে বাবুদের। হ্যাশট্যাগে হ্যাশট্যাগে ছেয়ে যাবে অনলাইন দেওয়াল। হুলিগানেরা রাজপথে তান্ডব করছে। (ফসলের ন্যায্য দাম চেয়ে, ভর্তুকি চেয়ে, সরকারি ঋণ মকুবের দাবীতে)।
এই যে মিছিলটা দেখছেন এর প্রত্যেকটা মানুষ লাল পতাকাতে বিশ্বাস করে। প্রত্যেকে নাসিক থেকে মুম্বাই এগোচ্ছেন পায়ে হেঁটে শেষ এক সপ্তাহ ধরে। সোমবার এরা মহারাষ্ট্র বিধানসভা ভবন, সরকারি দপ্তর, প্রশাসনিক কার্যালয়ে আছড়ে পরবেন বলে হুমকি দিয়েছেন। কাস্তে, হাতুরি না, স্রেফ লাল ঝান্ডার ডান্ডা সাথে এনেছেন। আর তাতেই পিলে চমকেছে রাষ্ট্রযন্ত্রের।
দশ হাজার মারাঠি কৃষক। ফসলের দাম না পাওয়া, বন্ধুকে আত্মহত্যা করতে দেখা, ক্ষেতে জল না পাওয়া,সরকারি সাহায্য না পাওয়া কৃষক ঠিক করেছিল এবার যুদ্ধ ঘোষণা করবে। পাশে পেয়েছিল কৃষক সভাকে। আর কয়েকটা লাল পতাকা। তাই ধরেই পায়ে হেঁটে এগোতে শুরু করেছিল। দশ হাজার বিশ হল, পঞ্চাশ হল, পঁচাত্তর হল, শেষে এক লাখ মানুষ পায়ে হেঁটে স্লোগান দিতে দিতে, খেটে খাওয়া মানুষের গান গেতে গেতে মুম্বাই শহরের কাছে পৌছে গেল। এই অসময়ে ও লাল পতাকা অবলম্বন করে প্রায় ২৫০ কিমি পথ পেরিয়ে এলো। ঝড় জল দাবদাহ উপেক্ষা করে।
এরপর ও ভাবছেন? ১% মানুষের ক্ষমতা কিন্তু অমানুষিক। ৯৯% কে চমকে দিতে কলজের দরকার হয়। পতাকা, অর্থ, লোকবল, সংগঠন আপসে চলে আসে। আসেই কারন খিদের থেকে বড় লড়াই এর কারন কিছু হতে পারেনা। লড়াই টা হয় সব পেয়েছি বনাম কিচ্ছু পাইনি দের। আপনি কোন দিকে থাকবেন ঠিক করে নিন।
এখনই লোহা গরম। চাল ডাল তেলের দাম আকাশছোঁয়া। পেটে খিদে এদিকে আপনাকে যুদ্ধ উপহার দিচ্ছে রাজা। আপনার টাকা লুঠ করে পালাচ্ছে আরবপতিরা। ট্যাক্সের নামে আপনার উপার্জনের অর্ধেক চলে যাচ্ছে কোষাগারে আর সেই দিয়ে গো পূজন, যোগা উৎসব চলছে। আপনি এখনো যা ছিলেন তাই আছেন নিজের ছেঁড়া গেঞ্জি আর পাজামাতে। কাস্তে হাতুরি মারবেন নাকি এক ঘা?
©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
No comments:
Post a Comment