কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Thursday, March 22, 2018

| 'ওল্ড মংক' প্রয়াত হলেন: থেকে গেল গ্যালন গ্যালন রামকাহিনী! |

| 'ওল্ড মংক' প্রয়াত হলেন: থেকে গেল গ্যালন গ্যালন রামকাহিনী! |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

ওল্ড মংকের প্রতিষ্ঠাতা কপিল মোহন (১৯৪০-২০১৮) মারা গেলেন গাজিয়াবাদে। বয়স হয়েছিল বেশ তবে চেষ্টা করতেন শেষ অবধি বাজারি চটকদার, বহুল বিজ্ঞাপিত সিন্থেটিক সুরার সাথে পাল্লা দিতে রোজ। দাঁতে দাঁত চেপে রাম বানিয়ে গেছেন বিশ্বস্ত মদ্যপায়ীদের জন্য। নিজে কিন্তু না সিগারেট খেতেন না মদ। আজ চলুন এর জানা-অজানা গল্প বলি। মোহন বাবুর মৃত্যুতে দু পাত্তর চুমুক দিই। সাথে মত্ত স্যালুট।

জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডে কুখ্যাত জেনারেল ডায়ারের বাবা ছিলেন এডমন্ড এব্রাহাম ডায়ার। ১৮২০ সালে ব্রিটেন থেকে মদ তৈরির যন্ত্রাদি নিয়ে হিমাচলের কসৌলে আসেন ব্রিওয়ারি খুলবেন বলে। এশিয়ার প্রথম ডিস্টিলারি খোলেন। নাম রাখেন কসৌল ডিস্টিলারি কোম্পানি। পরে আর এক সাহেব এইচ.জি ম্যেকিন কিছু শতাংশ শেয়ার কিনে নেন। পাহাড় রাজ্যের কোলে গড়ে ওঠা, ঝরনা জল দিয়ে তৈরি সুরা কারখানার নাম রাখেন ডায়ার ম্যেকিন ব্রিওয়ারি।

স্বাধীনতার পরে হাত বদল হয়ে এই কোম্পানি আসে সজ্জন ব্যক্তি নরেন্দ্রনাথ মোহনের হাতে। লন্ডনে গিয়ে ডিস্টিলারির বেশির ভাগ অংশীদার হন ইনি। হিমাচল, উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্রতে একাধিক কারখানা গড়ে তোলেন তবে শ'ওয়েলেসের ধারে কাছে আসতে পারেনি ব্যবসা। আসে তার মৃত্যুর পর। ছোট ছেলে কপিল মোহন বাজারে আনেন এক অমৃত পানীয়। স্বদেশী, স্বাদু, সহজলভ্য। সেদিন ছিল ১৯ ডিসেম্বর, ১৯৫৪।

আবিষ্কার হল খুব গভীর ভাবে তাকিয়ে থাকা লাল ঘোলাটে রাম। এক পেটমোটা তেলের শিশির মত বোতলে। দাবিদাওয়াহীন আটপৌরে স্ত্রী এর মত। জল মিশিলে ও চলে তবে সাথে স্বচ্ছ বরফ কুচি, কোলা, ঠান্ডা জল হলে কিছু রাতে আদর বাড়ে। গ্নাসের গায়ে জলের বিন্দু। ঠোঁটে লাগা ঠান্ডা, অল্প যদিও। বাকিটা অতল খোঁজা। আরো গভীরতর। বাদামের একটা টুকরো গেলাসের নিচে পরে থাকে যেমন। রাম, জল, বরফ, চুমুক এর নিচে, অস্থিরতায়। তার ও নিচে। আরো অতল খোঁজার আকুতি। ওল্ড মংক শেখালো।

ওল্ড মংক তৈরি হয় ভেলি গুড় থেকে। ভেলি গুড়ে ঝরনার জল মিশিয়ে তা ফেলে রাখা হয়। সাধারণ ভাবে পচতে দেওয়া হয় জল হাওয়ায়। এরপর এতে মিশিয়ে দেওয়া হয়  yeast। এটি এখনো ব্রিটিশ বন্য yeast হলেই ভালো। গ্যাঁজানো দরকারি ফ্লেবার মেশাবার আগে। মংকে মেশানো হয় ভ্যানিলা আর ডিস্টিল করা হয় চারকোল এর মাঝে। এই ভ্যানিলা ও কাঠকয়লার মিশেল এটিকে উষ্ণ কিন্তু স্মোকি করে তোলে। এরপর একে ঢালা হয় Oak Barrel এ। সাত বছরের জন্য কালকুঠুরি তে বন্দি করে।

এক বিরল ঔদ্ধত্য নিয়ে এর বিপণন বিভাগ চলতো।  ৭০ বছরে একবার ও ওল্ড মংকের কোন বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়নি কোথাও। মোহন বাবু এটি অর্থ-অপচয় ভাবতেন। এর চেয়ে মদের দাম সস্তা রাখা ও ভারতবর্ষকে এর স্বাদে আচ্ছন্ন করে তুলতে উনি বেশি আগ্রহী ছিলেন। আজ ও হয়তো সে কারনে ওল্ড মংক কেবল একটি ব্র‍্যান্ড নয়, একটা অনুভূতি, একটা ভালোলাগা মন্দ লাগার বন্ধু হয়ে থেকে গেছে। আমি এরকম লোক চিনি যারা সিংগল মল্ট ছেড়ে ওল্ড মংক খান। সন্ধে নামলেই।

হয়তো সে কারনেই, ওল্ড মংককে জাতীয় পানীয় হিসেবে ঘোষণা করার প্রস্তাব দিয়েছিল কিছু বেহেড মাতাল। গৃহীত হয়নি তবে গেলাসে গেলাসে আজ ও বিপ্লব জাড়ি আছে। মুম্বাইতে একটা গোটা গোষ্ঠী আছে রামভক্তদের। নাম COMRADES — Council of Old Monk Rum Addicted Drinkers and Eccentrics! এরা প্রতি সন্ধে দেখা করে ঠেক এ, দু তিন পেগ খায়, নানা গল্প বিতর্ক হয় শেষে যে যার বাড়ি চলে যায়।

ইদানীং রামভক্তের সংখ্যা দেশে বৃদ্ধি পেলেও, উইস্কিভক্তিই বাজার দাপাচ্ছে। রামের গেলাস কমই রোচে। নতুন ইচ্ছে, বিরাট স্বপ্ন দেখা, আইফোন, লম্বা গাড়ির সাথে পাল্লা দিতে সৌখিন স্কচ বা টেনেসি প্রয়োজন। রাম বড্ড মধ্যবিত্ত, সেকেলে শুনেছি। হয়তো সেকারনেই বাজার থেকে সম্পূর্ণ উবে যাওয়ার আগে, জোর টক্কর দিচ্ছে মংক। ভালোলাগার মংক।

ওল্ড মংক বোধহয় সেই খচখচানিটা যে রোজ কর্পোরেট দৌড় আর আকাশ ছোঁয়ার প্রতিযোগিতার মাঝে মনে করিয়ে দেয় আমার একটা নোনা ধরা ছাদ ছিল, খবরের কাগজ পেতে তাতে বাদাম মাখা, সেদ্ধ ছোলা, প্লাস্টিক এর গেলাস ছিল। শেষবেলায় অন্ধকারে চুমু। এ ঠোঁট ও ঠোঁটে রাম মাখানো ছিল। কতই বা দাম হবে।

কবেই গেছে সেই ঢাউস কালো রঙের টেলিফোন রিসিভার, সেই কলেজ ক্যান্টিনের টেবিল বাজিয়ে সেই গান, চার পেগ হলে দিনবদলের স্লোগান। লংপ্লে রেকর্ডটাও বাবা বিক্রি করে দিয়েছে। ওর পেছনেই লুকিয়ে রাখতাম নিষিদ্ধ বোতল।

অনেক কিছুই হারিয়ে গেছে জীবন থেকে। অনেক বন্ধু, অনেক ঠেকের আলো, হাসির শব্দ, বৃষ্টি হলে আবগারি গেলাস। তাদের জন্যে আমাদের মন কেমন করে আজ ও।একটা অদ্ভুত বিষণ্ণতা আমাদের তাড়া করে বেড়ায়। হাজার চেষ্টা করলেও আর ফিরে আসবে না সে সব জিনিস,ঘটনা,মানুষজন। ওল্ড মংক আসলে রোজ রাতে প্ল্যানচেট করে এক টেবিলে নামিয়ে আনে অনেকখানি স্মৃতি। আমাদের বিষাদকুন্ডগুলো ওই সন্ধে নামার পরে কিরকম উজ্জ্বল এক একটা আলোকছটায় বদলে যায়। অসংলগ্ন গান গাই জলজ। বন্ধু, কী খবর বল, কত দিন দেখা হয় নি।

©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

No comments:

Post a Comment