কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Thursday, March 22, 2018

| মল কা, মিল কা, মজদুর কা- সব কা বদলা লিয়া হমারা লং মার্চ |

| মল কা, মিল কা, মজদুর কা- সব কা বদলা লিয়া হমারা লং মার্চ |

©--- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

পাকিস্তানী আর মুসলিমদের অনেক আগে, বালা সাহেবের শত্রু ছিলেন কমিউনিস্টরা। বলিউডি সিনেমার শহরে কেন যেন সবকিছু সিনেমার মত পর পর ঘটে চলেছে। রাষ্ট্রের সাথে যুদ্ধ লেগেছে, কৃষকেরা গান বেঁধেছে হাল্লা বোল, পায়ে রক্ত জমাট বেঁধেছে আছড়ে পরবে বলে, ভীলেন ভয় পেয়েছে সরকার বাঁচাতে হবে বলে আর শেষ সিনে সব দাবী মেনে নিয়েছে রাজা নতজানু হয়ে। আম জনতা কে সামনে।

এসব হিন্দি সিনেমার মত ঘটে যাওয়া ঘটনার মাঝে আসুন ময়ূখের কাছ থেকে কিছু Dark secret শুনুন। এই বম্বে শহরেরই। শিবসেনার উত্থানের, বামপন্থী নেতার অন্তর্ধানের, ট্রেড ইউনিয়নকে খতম করার- Vengeance Drama।

২০১৮ সাল, শিবসেনা প্রধান আদিত্য ঠাকরে বোম্বাই এর আজাদ ময়দানে কৃষকদের সমবেদনা জানাতে গিয়ে বললেন, হয়তো তারা লাল ঝান্ডা নিয়ে আছেন। কিন্তু আমি তাদের পতাকা দেখতে পাচ্ছি না। আমি ওদের লাল রক্ত দেখতে পাচ্ছি। তাই ওদের পাশে থাকবো।

কি অদ্ভুত সমাপতন। আর ৩০ বছর আগে আদিত্যর দাদু বালা সাহেব ঠাকরে এই আজাদ ময়দান থেকেই ঘোষণা করেছিলেন, যেখানেই লাল ঝান্ডা দেখবে, উপড়ে ফেলবে। তারপর যারা ওটা কাঁধে নেয় তাদের পিঠে মারবে ওই দিয়েই। ক্ষতবিক্ষত করে দেবে। মারতেই থাকবে। দরকার পরলে মাথায় মারবে। খুব বেয়াদব হলে পিছনে ঢুকিয়ে দেবে ঝান্ডা। বোম্বাই জুরে একটাও যেন লাল ঝান্ডা না দেখি। পাকিস্তানী আর মুসলিমদের অনেক আগে, বালা সাহেবের শত্রু ছিলেন কমিউনিস্টরা। তার বিখ্যাত উক্তি ছিল: 'we must not miss a single opportunity to massacre communists'। ময়ূখ না, খবরের কাগজ বলছে।সে গল্পে আসছি।

বম্বেতে আজ যে সব উঁচু উঁচু ফ্ল্যাটবাড়ি দেখেছেন, শপিং মল দেখছেন, রেস্ট্রো N গ্যাস্ট্রো হাব দেখছেন মিল কমপ্লেক্সে, এ গুলোর বেশীর ভাগই এককালে কাপড়ের বা তুলোর মিল ছিল। কারখানা ছিল। কমলা মিলস, টোডি মিলস, সেঞ্চুরি মিলস, প্লাজা মিলস, ইত্যাদি। আশে পাশে শ্রমিক কলোনি ছিল, সাইরেন ছিল, সাইকেল স্ট্যান্ড ছিল, লাল পতাকা ছিল, মালিকের মুনাফার লোভে লক আউটের ফন্দি ছিল, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে হরতালের ডাক ছিল, সেলিম-জাভেদ এর সমাজতান্ত্রিক চিত্রনাট্য ছিল, অমিতাভ বচ্চনের মত রাগী নায়ক ছিল যে বড়লোকের ফেকে হুয়ে পয়সা নেহি উঠাতা। গুদামে বিল্লা ৭৮৬ নিয়ে দুশমনের অপেক্ষা করতা। এই বম্বে শহরেই। লাল পতাকার শহরে। ট্রেড ইউনিয়ানের শহরে, বানিজ্যের শহরে।

জেনে রাখুন, ক্যাটরিনা কাইফ, সানি লিওনি আর মুকেশ আম্বানির শহর কিন্তু শ্রমিক ঐক্যের ও শহর ছিল। ভারতের প্রথম ট্রেড ইউনিয়ন সংস্থা বম্বে মিল হ্যান্ডস অ্যাসোসিয়েশন গঠন হয় ১৮৯০ সালের ২৪ এপ্রিল এই শহরেই। এটি ব্রিটিশ ভারতে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনে গতি সঞ্চার করে।

দুই "মারাঠি মানুস", নারায়ণ মেঘাজী লোখান্ডে ও জ্যোতিরাও ফুলে বম্বে ও মহারাষ্ট্রের খেটে খাওয়া মানুষের ঘরে ঘরে শ্রমিক আন্দোলনকে পৌছে দেন। রবিবার কারখানা বন্ধ রাখতে হবে, ৮ ঘন্টা কাজ হবে, মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে মাইনে দিয়ে দিতে হবে। এই ছিল দাবী। আরবসাগর কেঁপে উঠেছিল। তারপর আরবসাগর দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। স্লোগান উঠেছে বম্বে জুরে শোষণ আর মুনাফারাজ নেহি চলেগি নেহি চলেগি। মেরিন ড্রাইভ থেকে অন্ধেরী ধ্বনিত হয়েছে সামাজিক সুরক্ষার দাবী, শ্রমিক স্বার্থ দেখবার দাবী। রেল, মিল, কারখানা, সিনেমা স্টুডিয়ো- সব লালে লাল।ওটাই কাল হল।

পাকিস্তানী আর মুসলিমদের অনেক আগে, বালা সাহেবের শত্রু ছিলেন কমিউনিস্টরা। শত্রু বানানো হয়েছিল। তখন ৬০' এর শেষ, ৭০' এর শুরু। উগ্র ট্রেড ইউনিয়ান আর বাম আন্দোলনে অতিষ্ঠ বম্বের বনিয়া মহল। বনেদী বড়লোক ও শিল্পপতিরা -যেমন টাটা বা ওয়াদিয়ারা সমঝে চলেন এদের। গুজরাটি ব্যবসায়ী ও মিল মালিকরা রাগে ফোঁসেন। ২০০% যেখানে মুনাফা হত আগে, এখন সেখানে ৬০% হয় হকের কথা বলবার লোক আছে বলে, হরতালের ভয় আছে বলে, লাল চা আর পাউরুটি কলা খাওয়া বাম শ্রমিক নেতা আছে বলে।

বালা সাহেবের তখন মারাঠি ভাবাবেগ উস্কিয়ে একটি দল তৈরির স্বপ্ন ছিল। মারোয়াড়ী ও গুজরাটি ব্যবসায়ীদের দরকার ছিল এমন একজনের যে কমিউনিস্টদের প্রতিদ্বন্দ্বী হবে আবার মালিকের হাতের পুতুল ও হবে। নিঃসন্দেহে ঠাকরে ছিলেন বাগ্মী ও অদ্ভুত সম্মোহনী শক্তিসম্পন্ন। মারাঠি ছেলে ছোকরাদের নয়নের মনি। কেবল একটা ভয় তাড়া করে বেড়াতো। বামপন্থীদের ভয়।

বামপন্থীদের হটিয়ে দেওয়া বড্ড দরকারি হয়ে পরেছিল। বালা সাহেবের ছিল সংগঠন ও লোকবল। ব্যবসায়ীদের ছিল টাকা ভরা সুটকেস। কংগ্রেসিরা ও সেনাকে ওপেন হ্যান্ড দিয়েছিল। পুলিশকে বলা ছিল দেখে ও না দেখতে। যেমন দাউদ ইব্রাহিমের বেলা হয়েছিল। সে আরেক গল্প। ময়ূখের অন্য কোন ব্লগে লেখা যাবে।

শরদ পাওয়ারের ছিল চিনির কল। আখের ক্ষেত। তখন উনি কংগ্রেস। পরে মুখ্যমন্ত্রী। বামপন্থী ট্রেড ইউনিয়ন ওনার ও সমস্যা বাড়িয়ে তুলছিলেন। সোজা আঙুলে বাম নেতাদের বোঝানো যাচ্ছিল না। ঠাকরে সাহেবের ব্যাকা আঙুল দরকারি ছিল আর তাই হল।

সিপিআই বিধায়ক কৃষ্ণ দেশাই খুন হলেন বম্বে শহরে। ধরা পরলো শিবসেনার কিছু যুবক। পরে এদেরকেই মালা, কারা নাকারা দিয়ে সেনা প্রধান বরণ করে নেবেন। একে একে চিহ্নিত করা হল শ্রমিক নেতাদের। কেউ সারাজীবনের মত নিরুদ্দেশ হয়ে গেল, বাকিরা রহস্যজনক ভাবে রাজনীতি করা ছেড়ে দিল, বাইরের রাজ্যে চলে গেল, কালশিটে আর বেকারত্ব নিয়ে দুধে ভাতে হয়ে গেল। একে একে বিধায়ক আসন, মিউনিসিপালিটি সব বাম দলগুলির হাতছাড়া হতে থাকলো। কংগ্রেস সমর্থন দিয়ে দিয়েছে সেনাকে। মিল বিক্রি হচ্ছে, মল তৈরি হচ্ছে, অমিতাভ আর রাগ করেনা। শাহরুখের এনআরআই বাবা সেজে নাচে Say Shaba Shaba। দেদার ফারাক ধারাবী আর কোলাবাতে। লাল ঝান্ডা সব বদলে গিয়ে গেরুয়া।

পাকিস্তানী আর মুসলিমদের থেকেও বড় জুজু ছিল বাম। বামেদের সংস্কৃতি, উত্তরাধিকার খতম করতে হবে। বালা সাহেবের সেটাই প্রধান কাজ ছিল। যা কিছু লাল তা গেরুয়া করতে হবে। যা কিছু লেনিন তা ছত্রপতিতে বদলে ফেলতে হবে। খেটে খাওয়ার অহংকারকে বদলে দিতে হবে মারাঠা অস্মিতাতে। সেই ছক মেনেই বামেদের চালু করা শ্রমিক-টিফিন পাউরুটি আর কলা বদলে গেল ভডাপাও আর ভাজিতে। ঢালাও ভডাপাও এর দোকান দিল সেনাতে নাম লেখানো যুবকেরা। স্টলের নাম শিব ভডাপাও। ছত্রপতি, বাঘ আর বালাসাহেবের ছবি মাস্ট।

রাস্তার ধারে গণশক্তির মত পার্টি মুখপত্রের বোর্ড ও ভেঙে ফেলা হল। পাল্টে গেল সেনা পত্রিকা "সামনা" তে। অলিখিত ফরমান জাড়ি হল কল কারখানায়। কেউ বাম সংস্পর্শ পেলেই তার চাকরি যাবে।

বনিকমহল আর কংগ্রেসের জন্য উইন উইন সিচুয়েশন। হক কথা, দাবী দাওয়া, পেনশনের কথা স্পষ্ট করে বলার আর একগুঁয়ে কোন লোক নেই। থাকার মধ্যে সেনা আছে যারা নিচুস্থরে তোলাবাজি করে আর দেশ বিক্রি করার জন্য কংগ্রেস তো আছেই। নেই শুধু লাল ঝান্ডা ধরা হাতগুলো যেগুলো মেরে ফাটিয়ে গুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর কেউ মুদ্দে কি বাত, হক কি বাতের কথা বলে না। বলিউড ও না।

মিলগুলোতে ফ্ল্যাট উঠেছে। এক একটার দাম ছয় সাত কোটি। ডুপ্লে হলে ১৫ কোটির কিছু কম। নায়ক,নায়িকা, MNCর বড় বাবু থাকে। বারান্দা থেকে দূরে সমুদ্র দেখতে দেখতে স্কচ খায়। অনেক নিচে ফুটপাথে কে মরলো কে বাঁচলো তাতে কেষাগ্র ও ছেঁড়া যায় না। মিলগুলোতে রেস্তোরাঁ ও হয়েছে। একদিনে ৩০ হাজার টাকা মদ আর সাইড ডিশে উড়িয়ে দেওয়া যায় এমন রেস্তোরাঁ। সেই সব মিল গুলোতে যে গুলো আচমকা লকআউট হয়ে গেছিল বা আগুন লেগে গেছিল। কেউ প্রতিবাদ করেনি, কেউ চক্রান্তের গন্ধ পায়নি।

বিজেপি সরকার লিখিত আশ্বাস দিয়েছে কৃষকদের সব দাবী পূরণ হবে। ট্রেন ভাড়া করেছে বিনে পয়সায় তাদের বাড়ি পৌছে দিতে। শিবসেনা ডাক্তার এনেছে ওদের পায়ের ক্ষতে মলম লাগাতে, গরম জলে পা ধুইয়ে দিতে। কংগ্রেস ফুল ছুঁড়ে স্বাগত জানিয়েছে, রাহুল গান্ধী অভিনন্দন জানিয়েছে। শরদ পাওয়ারের দল বলেছে পাশে আছি। হয়তো তারা লাল ঝান্ডা নিয়ে আছেন। কিন্তু ওরা নাকি তাদের পতাকা দেখতে পাচ্ছে না। ওরা কেবল লং মার্চ শেষে কিছু মানুষের লাল রক্ত দেখতে পাচ্ছে। না ফের বামে জুজু দেখছে লালে ভয় দেখছে ওরা ৩০ বছর পর? ওম শান্তি ওম ছবির মত একটা দমবন্ধ ভয়, হৃদকম্পণ, অপরাধবোধ?

নিহত, মৃত দেশাই, লোখান্ডে, ফুলে, রানাডিগে, ডাংগে, মিরাজকর,পারুলকরেরা মুচকি হাসছে। আরবসাগর পাড়ে নোনতা হাওয়া।মিলশ্রমিক, মল তৈরির সময় পরে গিয়ে মৃত শ্রমিক, নিঁখোজ হয়ে যাওয়া ট্রেড ইউনিয়ন নেতা, মেরে মুখ ফাটিয়ে দেওয়া লাল পতাকা বওয়া মজদুরের বদলা নেওয়া হয়ে গেছে। কৃষক, ক্ষেতমজুর, আদিবাসী ভাগচাষী এবার আলিশাল India থেকে ভারতবর্ষ ফিরে যাবে। অরন্য ঢাকা, দারিদ্র ঢাকা, অবহেলা ঢাকা এক চিলতে দ্রোহভূমিতে। মুম্বাই এর ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাস স্টেশন থেকে লেনিনিস্থান খুব বেশী দূর নয়। হাঁটা পথে ২০০ কিলোমিটার।

©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

#বংযাত্রীরবম্বেডায়রি

No comments:

Post a Comment