কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Thursday, March 22, 2018

| বিজলী কি রানী হয়ে থাকতে চাওয়াই কাল হল? |

| বিজলী কি রানী হয়ে থাকতে চাওয়াই কাল হল? |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

ওই যে আমরা যারা মিস্টার ইন্ডিয়ার ঘরে আটকে রাখা বল টা ফেরত পেতে দিদির সামনে হাত জোড় করে নিরীহ গান ধরতাম, "সরি দিদি অব হম নেহি করেংগে সোর...." আর পাশ থেকে বন্ধু ঠিক করে দিত, "সোর" নেহি "শোরররর", তারা আজ কাঁটে নেহি কাটতি য়ে দিন য়ে রাত এ ভেজা শিফন শাড়ী তে ওকে ভাবি। বয়স বেড়েছে আমাদের ও। মেপে খাই, অল্প হাঁটি হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে।

আমরা বড় হয়ে গেছি। শাহীদ কপুরের মত কমপ্ল্যান বয় হই বা না হই। মোগ্যাম্বোর মত দুষ্টু হই বা না হই। অনেক বড় হয়ে গেছি। কয়েকটা পাকা চুল এসেছে। মিস্টার ইন্ডিয়ার বাড়িতে যারা ছিল তারা সব্বাই এখন ইয়া লম্বা, ইয়া মাসেলধারী। স্টেরয়েড বা প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট নিই এখন। আর কেউ আরশোলা দেখলে ভই পাই না। অনেক বদলে গেছি। দিদি কিন্তু একই রকম দেখতে থেকে গেছিল। লাল শাড়ী তে ছ্যাঁকা দেওয়া, পটর পটর কথা বলা, ঝলমলে হাসীর বিজলী কি রাণী হাওয়া হাওয়াই।

রুপ কি রানী চোরো কা রাজা কখন যেন বদলে গেছে জব উই মেটে। করিনা কাপুর, অনুষ্কা, পরিণীতি কি তবে বাচালপনা তোমার থেকেই শিখেছিল? আমরা যারা অনেকটা বড় হয়ে গেছি এখন তারা তো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেছিললাম সদমা দেখে। এখন কি আর কান্না আসে?

দিদি তোমার বিজলী কি রানী হয়ে সারা জীবন থেকের যাওয়ার অদম্য ইচ্ছা টুকুই কি কাল হল? সবে তো ৫৪ হয়েছিল। সারা শরীর জুরে নানা কাটাছেঁড়া, গন্ডা গন্ডা ওষুধ তো স্রেফ বিজলী কি রানী থেকে যাওয়ার জন্যই। সৌখিন ভাবে যাকে বোটোক্স, নোস জব, লিপ জব, প্লাস্টিক সার্জারি বলি।

সংবাদসংস্থাতে কাজ করার সবচেয়ে পচা দিকটা হল সব খবর সবার আগে পাওয়া। মৃত্যু সংবাদ ও। প্রতিবার মৃত মানুষের খবর জীবিতদের জানিয়ে যাওয়ার কাজ। মুম্বাই থাকাকালীন অনেক তারকাকে কাছ থেকে দেখেছিলাম, দেখেছিলাম ক্যামেরার সামনে, আয়নার সামনে নিজেকে ফিটফাট সুন্দর সাজুগুজু করে ঝলমলে দেখতে লাগার কি অদম্য প্রয়াস। নাম বলবো না, তবে এমন অনেক তারকা আছে যারা উইগ না পরে, এজ চিট মেকআপ না করে বাথরুম অবধি ও যান না। যেতে পারেন না কারণ ওয়ারড্রব থেকে হাতছানি দেয় চরিত্ররা। চোখ ধাধানো চরিত্ররা যারা বয়সকে থোড়াই কেয়ার করে।

হয়তো রুপ কি রানী আর চোরো কা রাজা রা আনন্দ দিতে দিতে নিজেরাই কখন যেন ভুলে যান তারা ও রক্ত মাংসের মানুষ।  তাদের ও অম্বল হতে পারে, পেট কামড়ে পাতলা পায়খানা হতে পারে, দাঁতে পোকা হতে পারে, ড্রাগ ওভারডোজ হতে পারে।

ঝুপ করে অন্ধকার নেমে এল শ্রীদেবীর চলে যাওয়ায়। সারাদিন চ্যানেলে চ্যানেলে আলোচ্য বিষয় হবে তার এজলেস বিউটি, গ্রেস, গ্লোরি। টুইটে পোস্টে ভরে যাবে বিজলী কি রাণীর ছবিতে ছবিতে। কেউ ক্যামেরা ঘোরাবে না শ্রীদেবীর জুহুর বেডরুমে। যেখানে বিগতযৌবনা এক প্রথম সারির অভিনেত্রী বড্ড ইনসিকিওর থাকতো নিজের রুপ হারানোকে নিয়ে। ঘনিষ্ঠ মহলে সবাই জানতো তা। জাঁদরেল প্রযোজক স্বামী ও কিন্তু তার ও ভালো লাগতো ৫৪ এর বউ ৪০ এর মত দেখতে লাগলে। শ্রীদেবী ঠিক তাই করতো। আর পায়চারী করতো বিশাল বিশাল আয়নার সামনে, ঘন ঘন সাউথ ক্যালিফোর্নিয়াতে সার্জারি করাতে যেত, এ ক্রিম ও রেডিয়েন্ট জেল মাখতো বয়সকে রুখে দিতে। সবার আড়ালে।

Ageless beauty-র কদর করা ফ্যানেরা জানবে, শ্রীদেবী বয়সকে রুখে দিয়ে রুপ কি রানী হতে পেরেছিল। বারবার শরীরের চামড়া কেটে, মুঠো ভর্তি ওষুধ খেয়ে মৃত্যু কে পারেনি। মুম্বাই এর জুহুতে যে শ্মশান ছিল, তাতে শ্রীদেবী জ্বলে ছাই হয়ে গেছিল। থেকে গেছিল " বিজলী কি রানী মে হু আই, কেহেতে হে মুঝকো হাওয়া হাওয়াই।"

হা ও য়া হা ও য়া ই! 

©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

No comments:

Post a Comment