কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Thursday, March 22, 2018

| প্রজাতন্ত্রে কোন গল্প শুনবেন সিদ্ধান্ত নিন: পদ্মাবতী তো অনেক হল |

| প্রজাতন্ত্রে কোন গল্প শুনবেন সিদ্ধান্ত নিন: পদ্মাবতী তো অনেক হল |

----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

পদ্মাবতীর বিরুদ্ধে দাঙ্গা যদি শেষ হয়ে থাকে, এর "পোতিবাদে" প্রথম দিনের শো দেখা যদি শেষ হয়ে থাকে, ভারত কত মহান দেশ তার ফিরিস্তি দেওয়া শেষ হয়ে থাকে, মিথ্যে কথার রাষ্ট্রীয় ফুলঝুরি শেষ হয়ে থাকে, এই গল্পগুলো ও জানুন।

১). লক্ষ্মীকুট্টি আদিবাসী এক নারী। ৫০০র ও ওপর জড়িবুটি দিয়ে আয়ুর্বেদিক উপায়ে সাপে কামড়ানোর
এন্টি ভেনাম আবিষ্কার করেছেন। বিগত ৩০ বছর ধরে হাজার হাজার গ্রামের মানুষের প্রাথমিক চিকিৎসা করে চলেছেন। স্পটলাইট থেকে অনেক দূরে, প্রত্যন্ত গ্রামে। এই প্রজাতন্ত্রেই।

২). সুলাগট্টি নারাসাম্মা গভীর অরণ্য হোক বা শেষের কোন গ্রাম, বছরের পর বছর ধরে দাইমার কাজ করে চলেছেন। গর্ভধারণে সাহায্য করা, কোন প্রযুক্তি ছাড়াই প্রাচীন উপায়ে নবজাতকের স্বাস্থ্য পরিক্ষা এমন কি সংকটজনক অবস্থায় মা ও বাচ্চাকে বাঁচিয়ে তোলাতে ও ইনি বিশেষ দক্ষ। এ সবই ইনি একটা পয়সা না নিয়ে করেন।  স্পটলাইট থেকে অনেক দূরে, প্রত্যন্ত গ্রামে। এই প্রজাতন্ত্রেই।

৩). সুভাষিণী মিস্ত্রী বাড়ি বাড়ি কাজের মাসির কাজ করেন। কাজ না থাকলে দিনমজুরের কাজ করেছেন ২০ বছর ধরে। সেখান থেকে টাকা জমিয়ে জমিয়ে হাসপাতাল গড়েছেন। ছেলেকে অনাথ আশ্রমে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন যাতে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে। ছেলে ডাক্তার হয়েছে। এখন মায়ের বানানো হাসপাতালে গ্রামের রুগীদের চিকিৎসা করেন। একটা পয়সা না নিয়ে করেন।  স্পটলাইট থেকে অনেক দূরে, প্রত্যন্ত গ্রামে। এই প্রজাতন্ত্রেই।

৪). সুবাদানি দেবী মনিপুরী এক মহিলা। আজীবন লড়ে গেছেন মনিপুরের হস্ত ও বস্ত্র শিল্প বাঁচিয়ে রাখতে বহুজাতিক কাপড় দানবদের হাত থেকে। আজ ও ঘরে ঘরে গিয়ে মনিপুরী কাপড় কিনতে অনুরোধ করেন সুবাদানি। সামান্য ধকল যায়। সুবাদানি শারীরিক প্রতিবন্ধী। এই প্রজাতন্ত্রেই।

৫). সিতাভা জোদাত্তি প্রাক্তন দেবদাসী। সাত বছর বয়সে এক পুরোহিতের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল। পরে মন্দিরে মেঝে মুছতো, পুরোহিত দের পা ও বিগ্রহ। রাতে দৈবিক সব কিছু দানবে বদলে যেত। এর পর এ পালিয়ে আসে। দেবদাসীদের উদ্ধারের কাজ করে। এখন অবধি প্রায় ৫০০ দেবদাসীকে মূলস্রোতে ফিরিয়ে এনে বিকল্প কাজের ব্যবস্থা করেছেন। এই প্রজাতন্ত্রেই।

৬). শুধু নারী নয়। এরকম পুরুষ ও আছে। যেরকম রাজাগোপাল ভাসুদেবন। প্লাস্টিক রোডের জনক। ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক থেকে টেকসই রাস্তা বানানোর প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছেন। প্লাস্টিকের বর্জ্য বিশেষ করে বোতলের বর্জ্য থেকে প্লাস্টিকের শিট তৈরি করে রাস্তা নির্মাণ করেন। প্লাস্টিকের এই রাস্তা কিন্তু পিচ ঢালাই রাস্তা থেকে তিনগুণ বেশি টেকসই। রোদ বা বৃষ্টিতে এটি যেমন নষ্ট হয়না তেমনি এর ভেতর দিয়ে যেকোনো প্রয়োজনীয় পাইপ স্থাপন করাও সহজ। গোটা প্রযুক্তি বিনা পয়সায় ভারত সরকার কে দান করেছেন। কোটি টাকার বিদেশি অফার পেয়েও।

৭). বা বিজ্ঞানী অরবিন্দ গুপ্ত যিনি বর্জ্য বা ফেলে দেওয়া যে কোন জিনিস দিয়ে খেলনা বানিয়ে চলেছেন কয়েক দশক ধরে। বাচ্চাদের মুখে হাসি ফোটাচ্ছেন উপহার দিয়ে। বদলে বিজ্ঞানের পাঠ দিচ্ছেন ওই খেলনা গুলো দিয়ে। বা হাতে ধরে শেখাচ্ছেন কি করে যেন কোন জিনিস রিসাইকেল করা যায়, যা মন চায় খাড়া করা যায়। এই প্রজাতন্ত্রেই।

এরা প্রত্যেকে এবছর পদ্ম সম্মানে ভূষিত। প্রত্যেকে প্রজাতন্ত্রের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। যে ভাবে সীমান্তে জওয়ান করছেন, ক্ষেতে কৃষক করছেন, কয়লা খাদানের শ্রমিক করছেন, খোলা ম্যানহোলে ম্যানুয়াল স্ক্যাভেঞ্জার করছেন কিংবা অসংগঠিত ক্ষেত্রে কাজ করা কয়েক কোটি প্রজা।

সিদ্ধান্ত নিন এদের গল্প শুনবেন, শেয়ার করবেন না বালের করণি সেনা বা কোন কালে মড়ে ভূত হওয়া কোন রানীর জন্য আগুন জ্বালাবেন দেশে।

ঘুম থেকে উঠে চাড্ডি তিরঙা আর মেরা দেশ মহান ফরোয়ার্ড করলেই যদি ভাবেন আপনি দেশপ্রেমিক তবে আয়নায় তাকিয়ে দেখুন নিজেকে করণি সেনার মত দেখতে লাগছে কিনা।

এসব খুব সাধারণ গল্প প্রচার করি চলুন। করণি সেনারা আপসে ল্যাজ গুটোবে।

©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

No comments:

Post a Comment