কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Thursday, March 22, 2018

| কানুন আন্ধা নয়, রাষ্ট্র সরল নয়, রাজা সৎ নয়, সন্দেহ করতে শিখুন |

| কানুন আন্ধা নয়, রাষ্ট্র সরল নয়, রাজা সৎ নয়, সন্দেহ করতে শিখুন |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

ভগবানকে ছেঁড়া স্যান্ডো গেঞ্জি গায়ে কলতলায় এসে কখনো চুলোচুলি করতে দেখেছেন? বা কখনো গৃহযুদ্ধ দেখেছেন?বা গনঅভ্যুত্থান? রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে শীর্ষ স্তরের দ্রোহ? আখাম্বা সাংবিধানিক সংকট? কালো ফেট্টি বাঁধা কানুনকে গাল ফুঁলিয়ে গোঁসা করতে দেখেছেন চারমাথায় বসে ক্যামেরার সামনে?

প্রিয় পাঠক, শীতঘুম থেকে উঠুন। এ দেশে ধিকি ধিকি আগুন জ্বলছে। যেকোন সময় বিচ্ছিরি বিস্ফারণ হবে।চারিদিকে পচা মাংস আর বারুদের গন্ধ পাচ্ছেন? ক্ষোভের আগুনে রাজধানীর ঐতিহ্যগুলো জ্বলছে দেখছেন? না এখনো সিরিয়াল চলছে আপনার টিভিতে?

অর্থাৎ এটা প্রমাণিত জজ সাহেবরা রক্ত মাংসেরই মানুষ। টিভি সিরিয়াল দেখেন, বউ এর খ্যাদানি খান, মাঝেমধ্যে ক্লাবে পান, চোঁয়াড়ে ঢেকুর তোলেন, বুক পকেটে নিজের প্রিয় বাবাজীর ছবি রাখেন গিফট পাওয়া মোবাইল এর সাথে। জজ সাহেব চাইলে কেস জিতিয়ে দিতে পারেন বা হারিয়ে দিতে পারেন। পুলিশ, উকিল, মুহুরির ই মত।

এখন ও মানবেন ঠাণ্ডা ঘরে বসে, ঠাণ্ডা গাড়ি চড়ে, লাল বাতি হেঁকে বিচার আসে? একে প্রশ্ন করা যায় না। খাড়া নেমে আসে মানহানি ও অবমাননার। যেভাবে ইভিএম জাল হয় না বা ট্যামপারিং করা যায় না। যেভাবে ময়ূরের চোখের জল আসলে বীর্য। যেরকম গরু আসলে মা আর হিন্দু রাষ্ট্রে অশ্রদ্ধা লো জিডিপির কারন।

দেশ বদল রাহা হে। ভাবতে শিখুন নতুন ভাবে জনাব।
কানুন আন্ধা নেহি, মায়োপিক হ্যা। এ কানুন সব জেনেও কিছু মানুষকে নির্বাচনের আগে দাঙ্গা বা ফেক এনকাউন্টার কেস এ মুক্ত করে, দশকের পর দশক ধরে শুনানি চলে এক মসজিদ ভাঙার ঘটনায়।

এ কানুন এর ঘুমের ব্যাঘাত ট্রামের শব্দে হলে, ট্রাম খারাপ হ্যা। এ কানুন এর মেয়ে বিলেত ফেরত ট্রামডিপো তে সেল্ফি নিয়ে বাবাকে ট্যাগ করলে ট্রাম হেরিটেজ হ্যা।

আজকে শীর্ষ আদালতের চার বিচারকের নজিরবিহীন প্রেস কনফারেন্স হতেই পারে এলিটিস্ট ক্ষমতা প্রদর্শন, CJI কে চাপে ফেলা, সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির কৌশল, অবসর নেওয়ার আগের লাইমলাইট কিংবা সত্যি কোন দমবন্ধ রাষ্ট্রীয় প্রেসার কুকারের বিক্ষুব্ধ সিটি। কিন্তু আজকের এই প্রেস কনফারেন্স আমাদের যে মধ্যবিত্ত জীবন, যে মৌড়লা মাছ আর সরু চালের ভাতের জীবন, শীতের আমেজ মেখে পিঠে পার্বণ, টিভিতে ঝাপসা ধর্ষিতার সমর্থনে মিছিলের জীবন, একটা ছোট্ট গাড়ি এক বিরাট বিপ্লবের কথা ভেবে যাওয়ার জীবনকে টেনে নামালো রুক্ষ বাস্তবতায়।

মানতে শিখুন এবার, কোর্ট সর্বদা সত্য ও সুন্দর নয়। তার রায়দান প্রভাবিত করা যায়। ইভিএম একটি যন্ত্র মাত্র, একে ম্যানুপুলেট করা যায়। আধার লিংকিং একটি বিপুল ডেটাবেস ভান্ডারের চাবিকাঠি যা সরকার বণিকদলের হাতে তুলে দিচ্ছে ইউনিক আইডেন্টিটির নাম করে। সেনা একটি রাষ্ট্রযন্ত্র, একে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে ব্যবহার করা হয়, দেশত্ববোধ একটা সরল আবেগ, এতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সুড়সুড়ি দিয়ে নির্বাচন জেতা যায়।

বর্ডারে জওয়ান মরছে ঠিক কিন্তু ক্ষেতে কৃষক ও গলায় দড়ি দিচ্ছে। ম্যানহোল পরিষ্কার করতে নেমে অসংগঠিত শ্রমিক ও দম আটকে মরছে। কোন সামাজিক সরক্ষা ছাড়া। কোন ভর্তুকি না পেয়ে।

আপনার সিরিয়াল দেখা, মন কি বাত শোনা, ডিজিটাল ইন্ডিয়াতে বুঁদ হয়ে থাকার মাঝে রাষ্ট্রকে সন্দেহ কর‍তে শিখুন। কারন আপনার ট্যাক্স এএর টাকায় দেশে গরু সুরক্ষিত হয়েছে কিন্তু নির্ভয়া আজ ও ধর্ষিতা হয়ে পরে থাকে হাইওয়েতে, প্রতি বছর নির্ভয়া ফান্ডের টাকা কোথায় ব্যয় হয় কেউ জানেনা। কারন রিজার্ভ ব্যাংক আজ ও জানে না কত কালো টাকা উদ্ধার হয়েছে বিমুদ্রিকরন করে, এটিএমের লাইনে দাঁড়িয়ে ১০০ লোকের মৃত্যুর বিনিময়ে। কারন আপনি খোঁজ রাখেন না ব্যপম কেলেঙ্কারির শেষমেশ কি হল। মুকেশ আম্বানির কত হাজার কোটি লোন ছাড় দিল সরকার, কত গুন সম্পত্তি কি ভাবে বাড়লো রাজার। আপনি খোঁজ রাখেন কে কোথায় ফ্রিজে কি মাংস রেখেছে, কবে কে সিনেমা হলে জাতীয় সঙ্গীত চলাকালীন কতবার অবমাননা করেছে।

পাশের বাড়ির লম্বা দাড়ি ও ফেজ টুপিকে সন্দেহ না করে, আজাদি চাওয়া ছাত্রটিকে সন্দেহ না করে, পাথর হাতে কাশ্মীরি বা কাটারি হাতে আদিবাসীকে সন্দেহ না করে বরং গভীরে গিয়ে চারপাশে ঘটে যাওয়া রাজ সিদ্ধান্ত গুলোকে সন্দেহ করুন। কারণ খুঁজুন একরাতে বদলে যাওয়া, ঘটে যাওয়া, লাগু হওয়া শিরোনামকে।

ফেলুদা, মিতিন মাসি, ক্যাপ্টেন স্পার্ক, টিনটিন এর দুনিয়া থেকে বেড়িয়ে নাজিবের নিখোঁজ হয়ে যাওয়া, গরুচোর আর লাভজিহাদের নামে মেরে ফেলার সরলতাকে সন্দেহ করতে শিখুন নয়তো দেশত্ববোধ জাগ্রত করতে একটা যুদ্ধ বিমান ও জংলা কামান রেখে দিতে হবে শীর্ষ আদালত প্রাঙ্গণে বা গেরুয়া রঙ করতে হবে সংসদ ভবন। না হলে চতুর্দিক থেকে স্লোগান উঠবে। যে পারবে দড়ি ধরে মারবে টান, ধমাস করে ইন্দ্রপতনের আগে শেষ বার আকাশে বাতাশে গগন ভেদিয়া আসবে সেই ডাক।

মিঁত্রোওওওওওওও!!!!!!!

©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

No comments:

Post a Comment