কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Thursday, March 22, 2018

| রশ্মিতা |

| রশ্মিতা |

----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

'শীতের অপরাহ্নের মতো বিষন্ন সময় আর হয় না। কেমন যেন মৃত্যু আকীর্ণ চরাচর'। এরকম এক চরাচরই রোদ্দুরকে ঢেকে দিয়ে রশ্মিতার মৃত্যু সংবাদ বয়ে আনতে পারে। গোটা দিল্লিজুড়ে আজই যেন দমবন্ধ কুয়াশা। প্রবল শীত মনখারাপি।

বর্ষবরনের আতসবাজি যাতে কানে না যায়, তার আয়োজন করেছিলাম। জয়ন্ত দাকে ঘুম পাড়ানো জরুরি। সব প্রেমের গল্পতেই হ্যাপি এন্ডিং হবে কেউ বলে দেয়নি। কিছু গল্প বাকিদের জীবনকেও আরো বেঁধে বেঁধে থাকার তাগিদ দিয়ে যায়। রশ্মিতা-জয়ন্ত সেরকমই তো এক দম্পতি। ভালোবাসা বাদে আর কি বা থেকে গেল? আজই তো নিজের নিজের ভালোবাসার মানুষকে শক্ত করে জাপ্টে ধরার দিন, তারা দুম করে চলে যাওয়ার আগে।

নয়ডার অফিস থেকে আমি আর সোহম যতক্ষণে AIIMS পৌঁছতে পেরেছি, ততক্ষণে তুমি ঠান্ডা রেফ্রিজারেটরে রশ্মিতা। কাল সকালে জরা জীর্ণতা পরিষ্কার করে তোমায় কফিনে রেখে দেবে চিকিৎসা বিজ্ঞানে পারদর্শী কিছু মানুষ যারা কর্কটে ভীত। বিমান নিয়ে যাবে আদরের বাড়ি। যে শহরে তুমি লাইভ করতে। প্রাণ খুলে মুচকি হাসতে। প্রতিশ্রুতি দিতে ঘর বাঁধার শূন্যের মাঝারে।

জয়ন্ত দা ভালো নেই রশ্মিতা। ২৫ ডিসেম্বর তোমার mask পরে কেক কাটার ছবি, বাইক থামিয়ে মিঠে রোদের সেল্ফি, ঝলমল বিয়ের ছবি, বিয়ে হওয়ার আগের ছবি দেখছিল, দ্যাখাচ্ছিল। তোমার ছবি তুলতে ভালো লাগতো। আগামীর রোদ পিঠে নিতে ভালো লাগতো আশাবাদী, নিশ্বাস নিতে ভালো লাগতো দিগ্বিদিক, আমায় সব বলেছে জয়ন্ত দা। তুমি ততক্ষণে ভিন্নদেশী তারায় বোধহয়।

এটা খুব সাধারণ দুটো মানুষের গল্প ছিল। ঘর বাঁধার গল্প ছিল। ছোট ছোট আশা, ভরসার, পাশে থাকার গল্প ছিল, কান্না পেলে মন ভোলানোর গল্প ছিল। ২০১৩ সালে কর্কট রোগ ধরা পরে ওর। তার পর থেকে রোজ লড়াই করেছে দুজন। মাঝে ঠিক হয়ে গেছিল। তারপর আবার রিল্যাপ্স করে। জয়ন্ত শেষদিন অব্দি পাশে ছিল মেয়েটার। ছেড়ে তো যেকোন সময়ই যাওয়া যেত। ওরা কেউ কাউকে ছেড়ে যায় নি। শপথ করেছিল এক দৃষ্টান্ত স্থাপনের।

মেয়েটা স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসতো। সিঁদুর পরতে চেয়েছিল। সোহাগ করতে চেয়েছিল সাহস করে। ছেলেটা সব আবদার মেনে নেওয়ার জন্যই ছিল। আট মাস হয়েছিল ওদের বিয়ের। নিমন্ত্রিত ছিলাম কিন্তু তখন মুম্বাই তে। আমার লেখা ভালোবাসতো পড়তে। আবদার করেছিল একটা লেখা দিতে। আমি ওয়াটস্যাপে লিখে পাঠিয়েছিলাম,শপথ নিও সোহাগ,সিঁদুর, সঙ্গোপন এ/ আজীবন যেন হাতে হাত রেখে চলো দুজনে!

শেষের কয়েকদিন ঝলমল নাকি করতো না মুখ, কেমো নেওয়ার ফলে হাত দিলেই উঠে আসতো চুল, নাক দিয়ে রক্ত, রাগ হত ওর। সেই ৬ তারিখ থেকে।

রশ্মিতার বম্বে শহর বড্ড প্রিয় ছিল। গল্প শুনতো আমার থেকে। জয়ন্ত ওখানে কোথায় কাজ পেতে পারে খোঁজ নিতো, ডিজিটালে কি কি নতুন হচ্ছে ন্যাশনাল মিডিয়াতে জানতো । বম্বে থেকে দিল্লি যাওয়ার আগে ফোন করেছিলাম। শেষবার। ৩০ নভেম্বর। অনেক টিপস দিয়েছিল দিল্লি নিয়ে। বাকিটা দিল্লি আসলে বলবে বলেছিল। আমার ফ্ল্যাটে ঘুরতে আসবে বলেছিল।

সব কথা কি আর বলা হয়ে থাকে? সব গল্প কি আর শেষ হয়?  জয়ন্ত আর রশ্মিতার গল্প না হয় আধুরি কহানি হয়েই থাক। হাজার হাজার মানুষকে এই অসহিষ্ণু সময়ে সহিষ্ণুতার পাঠ দিতে। জাদু কি ঝাপ্পি, নিঃস্বার্থ ভালোবাসার বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে থেকে যেতে আগামীর।

জানি না কেন কোনও কারণ নেই, কিছু নেই, কারও কারও জন্য খুব অন্যরকম লাগে। বুকের মধ্যে চিনচিনে কষ্ট হতে থাকে, খুব দেখতে ইচ্ছে হয় শেষবার, ওই অপলক দৃষ্টি, হাসিমুখ, এক আকাশ আশাবাদী রোদ্দুর।

এ ছবিগুলোই থাক আমার জন্য। ওই কফিনবন্দি বন্ধুর দেহ দেখার সাহস নেই। রশ্মিতা উড়ে যাক কলকাতা বা যে কোন মেঘবাড়ি শান্তি পেতে, সোহাগ পেতে আট মাসের সংসারে। যেখানে কর্কট রোগ নেই।

বিদায় রশ্মিতা। সিনেমাহল এর বাইরে ও তো অনেক "আনন্দ" "মুন্নাভাই" জীবন শিখিয়ে দিয়ে যায়। তুমি বেঁচে থাকার গান হয়েই না হয় থেকো এই অশান্ত সময়।

----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

No comments:

Post a Comment