| বাংলার বাইরে যারা থাকে তাদের পালা করে খিল্লি করছে দেশ |
----ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
এ এক অদ্ভুত সমাপতনের ক্ষন। এখনই শর্ট সার্কিট হয়ে মৃত্যু হয় বিরুদ্ধতার। এখনই ভোটবাক্স আগলে রাখতে গিয়ে ট্রেনে কাটা পরে শিক্ষক, ভোট কর্মী। এখনই কেউ কিচ্ছু দেখতে পায়না, জ্বলন্ত ব্যালট, শুনশান বুথ। একটু চুপ থাকো, গণতন্ত্র চলছে।
চারিদিকে মাংস পোড়া গন্ধ। ভাগাড়ের না বোধহয়। ও মাংসে রাজনীতি নেই। বাণিজ্য আছে। এই মাংস মানুষের লাশের গন্ধমাখা। দম্ভমাখানো।
যে কবি ফেটে পরেছিল রাগে ১৪টা লাশের খবর পেয়ে, সে আজ হিমশীতল। যে 'স্যার' অসহিষ্ণু পায়চারি করেছিল নাগেরবাজারে সে রাতে আর ধর্মতলায় করেছিল মিছিল, তার এখনো রাগ পায়নি।
আমাদের বমি পাচ্ছে। আমরা ভেবেছিলাম পরিবর্তন এসেছে, দিন বদলের স্বপ্ন এসেছে নীল সাদা রঙের আস্তরণে। এলো স্করপিও গাড়ি আঞ্চলিক নেতার ঘরে। ওই যেখানে সাইকেল রাখা হত। দালান হয়েছে, চোখ রাঙানো স্বভাব হয়েছে। একেই বোধহয় উন্নয়ন বলে। রাস্তাঘাটে বিরোধী মাপে সে। চড়াম চড়াম শব্দ করে।
রাগ হচ্ছে। মৌলবাদের দোহাই দিয়ে যে এলো দেবতারুপে সে গনতন্ত্রের মা মাসি করছে আর আমাদের মেনে নিতে হচ্ছে। কারণ সংবিধান পুড়লে শোকসভা হয় না। সংখ্যালঘু পুড়লে হয়। আর তা হওয়া ও উচিৎ। কিন্তু এতটা? এত ভোটদেবতা, গণতন্ত্রদেবীকে মাঝরাস্তায় উলঙ্গ করে বলা, নে এবার "ভোটমারানি ফোট"।
রাজ্যের বাইরে যারা থাকে তাদের পালা করে খিল্লি করছে দেশ। আমায় এক রাজস্থানি ছেলে এসে বললো, ভাই তোরা এতটাই লিবারেল যে উদারমনে উনিশটা লাশ ফেলে দিলি স্রেফ একটা গ্রাম নির্বাচনকে কেন্দ্র করে? রাজস্থানে ভাই যাই এসব হয়না।
এক উত্তরপ্রদেশের ছেলে বুকে জড়িয়ে ধরলো। "গুরু বাঙালি সচ মে ইন্টালেকচুয়াল হতে হে। ভোট বাক্সা কা মা বহেন কর দিয়া। ফুল রেপ ভাই, ফুল রেপ"। হোয়াটয়াপের যুগে ভোটবাক্স পুড়িয়ে দেওয়া,পুকুরে ফেলে দেওয়ার ছবি ভাইরাল হতে সময় লাগে না।
জানি রে রে করে আসবে সবে, এ জিনিস ৩৪ বছর ধরে চলেছিল। চলেছিল বলেই তো জগদ্দল পাথর সরিয়ে খোলা হাওয়া বয়ে আনা। বুক বাঁধা ডিএল রায়ের "এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে না কো তুমি"তে।
মোহভঙ্গ হলো, মুম্বাইয়া বন্ধুর কথায়। ভাই তোদের না আছে শিল্প, না আছে মেয়েদের নিরাপত্তা। তোরা শালা সস্তায় ভালো খাবারের বুকনি দিতি, তাও ভাগাড়ের পচা মাংস, কথায় কথায় গুলি চলে, মানুষ মরে, বাংলাদেশ থেকে জিহাদি পালিয়ে এলেও এখানে শান্তিতে থাকে, সামান্য জড়িয়ে ধরলে ক্যালানি খায় ছেলেমেয়ে। মুঝে বতা কাহে কা সিটি অফ জয়? ইয়ে তো জঙ্গলরাজ হে!
উত্তর পাইনি। ধুলোমাখা কিছু লাল চটি বই ঝেড়ে পড়তে শুরু করেছি। ওটাই বোধহয় শেষমেশ প্রখর রোদে বেমক্কা ঘুরে গাছের ছায়া। কেউ যদি বেশী খায় খাওয়ার হিসেব নাও, কেন না অনেক লোক ভালো করে খায়না। এই মন্ত্রই তো মাথায় রাখতে হবে? সাধারণ মানুষের পাশে থাকাই তো ধর্ম বলে মানতে হবে? দাঙ্গা যদি বাঁধাতেই হয় তবে তা হতে হবে অশিক্ষা, আধপেটা, শোষণ, বেকারত্বের বিরুদ্ধে।
এই তো মোদ্দা বিষয়? মোটা বইগুলো পরে পড়ে নেবো। গোটা দেশে লাশপোড়া গন্ধ, ধর্মান্ধতা। রাজ্যে লুম্পেনপনা। লোহা গরম, হাতুরি মারতে হবে Declassed হয়ে। ঝেড়ে ঝুড়ে উঠুন। ইরাক থেকে বম্বে। টেলিপ্যাথির জোড় আছে আছে আছে। একটু পা চালিয়ে, বাঁদিকে নিন!
#TurnLeft
©----ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
No comments:
Post a Comment