কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Friday, July 6, 2018

সেই যদি কং মাড়ালি তবে কেন লোক হাসালি

| সেই যদি কং মাড়ালি তবে কেন লোক হাসালি?|

----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

কংগ্রেসে কংগ্রেসই এলো শেষে। হ্যাঁ। বিপ্লবী সুধীজন। ভারতের মার্ক্সবাদী কমিউনিস্ট পার্টি নিজের রাজনৈতিক প্রস্তাব পেশ করিয়াছিল পার্টি কংগ্রেসে। গদাই লস্করি চালেই যুক্তি পাল্টা যুক্তি  আসিয়াছিল ও শেষকালে পরিবর্তন আসিলো আসিলো আসিলো। কংগ্রেসি হাতই ধরিবে কাস্তে, আস্তে আস্তে।

ভোটাভুটি এড়াইয়া আজ সিদ্ধান্ত হইলো, কংগ্রেসের সঙ্গে ‘জোট’ কিংবা ‘সমঝোতা’ নয়, এই শব্দ দুটি রাজনৈতিক কৌশলগত দলিল হইতে বাদ দেওয়া হইবে। অর্থাৎ কংগ্রেস আর অচ্ছুৎ নহে। জোট হইতেই পারে। যেভাবে বুদ্ধবাবু ও রাহুলজীর পাশে তিরংগা উত্তরীয় পরে বসিতে পারে। রাজীব গান্ধী হাসিতে পারে জ্যোতি বসুর ছবির পাশে। ইনকালাবে জুড়িতে পারে মাতরম।

অভ্যাগতদের সম্মুখে প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট এবং সীতারাম ইয়েচুরি দুজনেই ঘোষণা করেন, বিজেপির বিপদ রুখিতে কংগ্রেসের সহিত সংসদের ভিতরে এবং বাহিরে সমঝোতা রক্ষা করিয়াই চলা হইবে। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতেও তাই জানানো হইলো। বড্ড দেরীতে জানানো হইলো। সৈফুদ্দিন চৌধুরী মৃত, জ্যোতি বাবু মৃত, হরকিষণ নেই, সোমনাথ ব্রাত্য, গৌতম অসুস্থ। অনেক দেরী করে সিদ্ধান্তটা নেওয়া হল। ২০০৬ থেকে ২০১৮। এক দশক পর।

কাট টু ২০০৬, দিল্লির এক হাই লেভেল মিটিং রুম। সোনিয়া জী, প্রণব বাবু, কারাত সাহেব, ইয়েচুরি বাবু এবং আরো কয়েকজন উপস্থিত। গোটা দেশে রটে গেছে।৬২টা সাংসদ নিয়ে বামেরা ইউপিএ সরকার ফেলে দিতে বদ্ধপরিকর তাও এমন এক নিউক্লিয়ার ডিলকে কেন্দ্র করে যা খায় না মাথায় দেয় আজ ও জানা গেল না। প্রণব বাবু প্রায় বাবা বাছা করে কারাত সাহেবকে বোঝালো এই সিদ্ধান্ত না নিতে। এতে বিজেপির হাত শক্ত হবে, সাংগঠনিক বিস্তার পাবে আরএসএস, এনডিএ আবার পুনরুজ্জীবিত হবে। করবেন না প্লিজ করবেন না। কারাত সাহেব দাঁতে দাঁত চেপে বলেছিল, I want to see your Government Fall। ২০০৮ এর লুটিয়্যান্স দিল্লি সাক্ষী আছে সেই মহাকাব্যিক ক্লাইম্যাক্সের। বাকিটা ইতিহাস।

এরপর যমুনা নদী দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। যে বামফ্রন্ট একটা ছোট টেবিলের পয়েন্ট A থেকে পয়েন্ট B চায়ের কাপ সরাতে পাঁচটা সিসি, তিনটে পিসি, সাতটা খসড়া সংশোধন করে তারপর সিদ্ধান্ত নেয়, তারা সেই গতিতেই ভোট রাজনীতি ও আদর্শগত লাইনের মাঝামাঝি লটকে থেকেছে ও আরো কনফিউজ করেছে, হয়েছে। পুরন্দর ভাট হলে বলতো, এক পা স্বর্গে এক পা নরকে ঝোলা। একটি কামান, দুটি কামানের গোলা।

এরপর কনফিউজড টু দি পাওয়ার ইনফিনিটি, স্থবির, হাম্বড়া,গোহারা হেরো, সব বোঝেন আর মিনিটে মিনিটে স্বীকার করেন নিজেদের ভুল কিছু জন(বিচ্ছিন্ন) নেতা বুঝলেন পৃথিবীটা অনেক এগিয়ে গেছে। এখন আর বাজারি মিডিয়াকে খিস্তি করা যাবে না। তার বাইরে ও সোশ্যাল মিডিয়া বলে একটি বস্তু আছে যা বেশ শক্তিশালী এবং না এটা রাশিয়া বা চিনের নয়। বুর্জুয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। সেই ফেসবুকই কয়েক বছর পর বিপ্লবী বুকুনির সবচেয়ে লোভনীয় জায়গা হবে। কমরেড বুঝবেন এই দেওয়ালে লিখলেও ডবল ডিভিডেন্ড মেলে আর সংশোধনবাদী ও হতে হয় না।

প্রতিবার বিশাল এক বেড়াল ফোলান, ভাবেন বাঘ হয়েছেন, লালন পালন করেন তাকে, বিপ্লবী ভাষণ ছাড়েন সর্বহারার প্রতিনিধি হয়ে ওঠার আর শেষমেষ ঘ্রোঁয়াও ক্রমাগত মিয়াওঁ এ বদলে যায়। মুঠো হাত বদলে যায় হাতজোরে। তারপর ঢোঁক গিলে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া। চলেছে চলেছে সেই ট্রেডিশন সমানে চলিছে। এরমাঝে কেউ যদি বলে, স্যার আসল শত্তুর বিজেপি, কংগ্রেসের হাতে হাত ধরে লড়ি চলুন, সাথে সাথে মোটা বই এর অমুক নম্বর পাতার রেফারেন্স ঝেড়ে দেওয়া হবে। চোপ! ট্রটস্কি এই বিষয়ে কি বলেছিল জানো?

ইদানীং সিপিআইএম এর বড্ড জ্বালা ছিল। ওই এক পা ভোট রাজনীতির হাগু আর আরেক পা জনগণতান্ত্রিক বিপ্লবের পায়েসে ফেলে ঝুলছিল। এবার অভাগী স্বর্গ পেলো। বুঝলো ভারতে ভোট বড় বালাই। ওসব তত্ত্বকথা ভেনেজুয়েলা নিয়ে সেমিনারে ভালো লাগে কিন্তু এ দেশের মাঠে ময়দানে থাকতে গেলে ভোটবাক্সে ও থাকতে হয় নয়তো নেঁপোয় দই মেরে কেটে পরে।

মুম্বাই এ যে বিশাল কৃষক মিছিল হলো, তার লাভের গুড় কি আপনার মনে হয় বামফ্রন্ট খাবে? কচুপোড়া।

আলিমুদ্দিন স্ট্রিট আর বিধানভবনে আলোকোজ্জ্বল রাত। মন দিয়ে এবার ভোট রাজনীতিটা করতে হবে বুঝেছে বিপ্লবী। ওটাই পথ। গ্রামে গ্রামে দাঙ্গা করছে, কোটি টাকা মারছে নেতা মন্ত্রী, বললেই মেরে স্যাটা ভেঙে দিচ্ছে, জেলে পুরছে, কেস দিচ্ছে আর আপনি বিরোধী কে আক্রমণের আগে গাঁড় বাঁচাও আন্দোলন করছেন যাতে ইতিহাস আপনাকে ক্ষমা করে, যাতে লাইন ঠিক থাকে। সরকার, প্রশাসন, সাংসদ, বিধায়ক পদ চলে গেলে বিপ্লবের পথ বুকুনি দিয়ে হয় না বুঝেছে সে। তখন ইদার তুমি কিষাণজী হও অথবা হরকিষাণ। মধ্যিখানে থেকেছো কি সবজান্তা মাতব্বর এলসিএস হয়ে থেকে গেছো। তখন ঘরের বউ বা কাজের লোক, কেউ পোছে না। ওই যে পুরন্দর ভাটের কথায়, এক পা স্বর্গে এক পা নরকে ঝোলা। একটি কামান, দুটি কামানের গোলা।

©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

No comments:

Post a Comment