| তামিলনাড়ুর থুত্থুকুডিতে Sterlite প্লান্ট বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিলো তামিলনাড়ু সরকার |
---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
দু দশকের আন্দোলন, ১০০ দিনের জোড় লড়াই, ১৭টা লাশের বদলে বিশাল জয় পেলো লড়াকু মানুষ। হ্যাঁ মানুষ ধর্ম নির্বিশেষে সাধারণ মানুষ।
তামিলনাড়ুর থুত্থুকুডিতে একটাও লাশ পরতো না যদি তারা সংখ্যাগুরু পরিচয় গায়ে মেখে মসজিদ ভাঙতে যেত।
থুত্থুকুডিতে ১৭জন মারা যেত না যদি মিছিলের প্রত্যেকে ওই প্রখর দুপুরে মাথায় একটা করে ফেজ টুপি পড়ে এগিয়ে আসতো পুলিশ জিপের সামনে।
থুত্থুকুডিতে রাষ্ট্রের পোষা বন্দুকবাজ দুবার ভাবতো গুলি চালানোর আগে যদি এদের একজনের ও গলায় ক্রস চিহ্ন থাকতো। গায়ে থাকতো সাদা পোষাক। মিছিলের আআগে ভ্যাটিকান থেকে যদি আসতো দৈবিক সমর্থন।।মন্ত্রপূত ফুল আসতো যদি পাশ্চাত্য থেকে।
থুত্থুকুডি অযোধ্যা নয়। থুত্থুকুডি মুজাফফরনগর নয়। এখানে তারা বেদান্তর স্টারলাইট তামা কারখানার দূষণের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। এলাকার জল বায়ুতে ব্যাপক দূষণ করার জন্য সুপ্রিম কোর্ট একবার জরিমানা করেছিল স্টারলাইটকে। অসংখ্য মানুষের পেটের অসুখ, আর্সেনিক, শ্বাসরোগ এমনকি ক্যান্সার ও হয়েছে।
একদশক ধরে বিক্ষোভকারীদের দাবি ছিল যে কারখানা ওখান থেকে সরিয়ে নিতে হবে। সেই দাবি বছরের পর বছর ধরে করেও কোনো ফল হয়নি। তাই গত একশো দিন ধরে ধর্নায় বসেছিলেন এলাকার মানুষ। সাধারণ মানুষ, ভুখা মানুষ, অসুস্থ মানুষ, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মানুষ।
থুত্থুকুডি প্রমাণ করলো, আবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো, মুসলমান, জৈন, খৃষ্ট না এ দেশে সংখ্যালঘু দাবীদাওয়া বিক্ষোভরত ভুখা আম আদমি যারা হকের জন্য পথে নামে। থুত্থুকুডি এটাও প্রমাণ করলো যে সংখ্যাগুরু এ দেশে হিন্দু না। সংখ্যালঘু তারা যারা আরবপতি এ দেশে। যারা দেশের পাহাড়, নদী, খনিজসম্পদ কিনে নেয় জলের দরে। যারা আদিবাসী উচ্ছেদ করে অরণ্য কিনে নিতে জানে। যারা ঠান্ডা মাথায় মানুষ খুন করিয়ে দিয়ে দুর্ঘটনার প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিতে পারে।
এখনো ভাবছেন হিন্দু আর মুসলিমই দুটো ধর্ম যাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব? এ দেশের দুটো প্রধান ধর্ম, ধনী ও দরিদ্র। একে অপরের প্রতিপক্ষ ছিল আছে থাকবে। এপাং নয়তো ওপাং। Have All VS. Have Not এর লড়াই এ এখনো যদি দ্বিমত থাকে, এখনো যদি কনফিউজড থাকেন আপনি কোন পক্ষ তা নিয়ে,
কিচ্ছুটি না করে ঘুমোতে যান। কাল অফিস আছে। তারপর দুর্গাপূজো বা ঈদের খুশী। মাঝে দাঙ্গা বাঁধবে কিছু হরিজন বস্তিতে বা হাজিপাড়ায়- আপনি শান্তিজল ছেটাবেন, তারপর মাংসপোড়া গন্ধ ভুলে আপনি আইপিলে মজে যাবেন, গরম গরম কেএফসি চিকেন, স্টাউট বিয়ার, ফিঙ্গার চিপস খাবেন। টিভি খুলুন এসি চালিয়ে। সুন্দরী পাঠক বলবে দেখুন এক্ষুনি:
" নমস্কার, এই মুহূর্তের সবচেয়ে বড় খবর। আজ গোটা দেশজুড়ে কিছু পোড়-খাওয়া মারমুখী উড়ুক্কু জনগণ ফ্যাৎ ফ্যাৎ সাঁই সাঁই করে উড়তে থাকে। স্বৈরাচার আর অন্ধকার দূর করে বিপ্লবী হ্যাজাক হাতে বিভিন্ন জায়গায় দেখা গেছে ওদের।
শোষণ, পরাধীনতা, গ্লানি, জোচ্চোরি, মানুষে মানুষে তীব্র বিভেদের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছে এরা।
শোনা যাচ্ছে এদের কাছে Weapons of Mass Destruction আছে। পঁচাজলের বোম্বাচাক। বোঁদপড়া ডোবার জল যাতে পোকামাকড়, জার্মস থিকথিক করছে। কাকশকুনও ধারে বাড়ে যাবে না তা পিচকিরি দিয়ে বেলুনে ঢুকিয়ে গিঁট দিয়ে বেঁধে জলবোমা বানিয়েছে। সাথে ম্যাথরেরা এনেছে ঢ্যালা ঢ্যালা মানুষের গু আপনার কর্পোরেট স্পা করা টাকে, সৌখিন জামায়, সব দেখে ও না দেখার ভান করে চলা বিবেকে ছুঁড়বে বলে। "
©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
No comments:
Post a Comment