কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Friday, July 6, 2018

রিভিউ: 102 Not Out: মেন উইল বি মেন

| রিভিউ: 102 Not Out: মেন উইল বি মেন |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

মেট্রো কান্ডের পরে যুবচোখে কলকাতার প্রায় সমস্ত সিনিয়র সিটিজেনেরা নাকি হয় বিকৃতকাম নয় বদরাগী। এমতাবস্থায় এক ৭৫ ও আরেক ১০২ বছরের বৃদ্ধের সাধারণ এক সেলুলয়েড গল্প বাঙালী দেখবে কিনা কৌতূহল থাকলো।

এ ছবিটা 'বাগবান' বা 'লাগে রাহো মুন্নাভাই' হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে জন্মেছিল। ধাঁচ এক হলেও দুটোর একটা ও হয়নি। বৃদ্ধ অমিতাভ বচ্চন ও ঋষি কপুরের ইদানীংকালের সেরা ছবি হয়েছে। ভালোই হয়েছে। শিবপ্রসাদের ছবি ভালো লাগলে এটা ভালো লাগবেই।

মুম্বাই এক অদ্ভুত মায়াবী শহর।আমার জীবনে বারবার নিজেকে ফিরিয়ে আনে ছবিতে, গানে, চলচ্চিত্রে। এ ছবি শহর বম্বেকে উদযাপন করেছে। অসহায় বোধ করলে মুখ্যচরিত্র সমুদ্রের পারে এসে কেঁদেছে। চ্যাপলিনিয় ভঙ্গিতে। ঝমঝমে বৃষ্টিতে ভেউভেউ করে কাঁদা।

আমরা ও তো মন খারাপ হলে সমুদ্রের ধারে কত রাত একা কাটিয়েছি। আরব সাগর কাউকে কিচ্ছু বলেনি। আছে এই ছবিতে আছে। এক অসাধারণ দৃশ্য নির্মাণ। সান্টা ক্রুজের জুবিলি পার্ক হয়ে চেম্বুর সেন্ট সেবাস্টিয়ান গির্জা দিয়ে দাদরের সিটি বেকারি। ওখানে বিখ্যাত কিলো দরে প্লাম কেক। আমার একলা বম্বেযাপনে বেশ কয়েকবার খেয়েছি। সেখান থেকে সোজা নারিমান পয়েন্ট। বম্বের নস্টালজিয়ার বাকি কি থাকলো? থাকলো থাকলো।

এবার জুড়ি গাড়ি চেপে মেরিন ড্রাইভ অবধি যাওয়া। ঘোড়ার গাড়িতেই প্রিয়জনের জন্মদিনের কেক কাটা। তারপর বাদবাকি কেক ফুটপাথের যীশুদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া। তখন নামবে বৃষ্টি।  গলার কাছে কি যেন দলা পাকিয়ে আসবে এসব সন্ধেবেলা। বম্বে শহর আর বৃষ্টি প্রেমিক। ওরা থেকেই যায়।  এ ছবিতে যেমন।

এই ছবি জীবন উদযাপনের। বার্ধ্যক্য যে মনের তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর। বুড়ো তো চল্লিশে ও হয় লোকে। অমিতাভ বচ্চন মাস্টার মশাইয়ের মত যেন সেটাই শেখালো। ফারাক কেবল নির্দেশনায়। দত্তাত্রেয় আর একটা ফুংসুক ওয়াংরু বা মুন্নাভাই হলো না।

আমার সেদিন হঠাৎ কি করে যেন আমার ক্লাস সিক্সের এক স্কুল মিসের সাথে মেসেঞ্জারে কথা হয়ে গেল। প্রায় এক দশক পরে। কি খবর বল টাইপ কথোপকথন।  ক্লাস সিক্সে মিস একটা ফিনফিনে শাড়ি বা কটনের সালোয়ার পড়ে আসতো। ইংলিশ পড়াতো। প্রশয় দিত। গাল টিপে দিতো মোটা বাচ্চাদের। চুলে ইলিবিলি কেটে দিত বাকিদের এক গাল হেসে। মনে আছে আমার নাটকে অভিনয় দেখে কেঁদে ফেলেছিল একবার। ওটা অস্কার প্রাপ্তির থেকেও বড় ব্যাপার।  উপরি পাওনা আমায় জড়িয়ে ধরেছিল আনন্দে। সেই সুগন্ধিটা বোধহয় আজ ও নিয়ে ঘুরছিলাম। ওই কথা বলার আগে অবধি।

স্টকিং বা ওর ছবিগুলো পাল্টে পাল্টে দেখতে গিয়ে আন্দাজ করলাম ওর বয়স বোধহয় এখন ৩৫ মত হবে। মুখ ধুলাম। আয়নায় মুখটা দেখলাম নিজের। এদিক ওদিক কয়েকটা সাদা চুল বেড়িয়েছে। আমারই তো ৩০ হচ্ছে। ওর বোধহয় ৫২। বার্ধ্যক্যটা মনের ব্যাপার। কিছুটা শরীর বুঝে নেয়।

জানি ওমারতা বা এভেঞ্জার টানছে কিন্তু এ ছবি আজকের প্রজন্মকে দেখতে হতো। সমস্ত সিনিয়র সিটিজেনেরা বিকৃতকাম বা বদরাগী নয়। তারাই হয়তো প্রেমিকাকে বিপ্লব বলতো। দুমুঠো ভাতের জন্য ট্রাম জ্বালিয়ে দিতো। দিস্তে দিস্তে মনখারাপের চিঠিপত্র লিখতো আর আগুনখেকো হতে শিখতো। অগ্নিযুগে।

এরকম সময় আসে যখন নিজের সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুটির কিম্ভুত সব দাবী, রুক্ষ কথা ও অপমানজনক লাগে। অবাস্তব, অসহনীয় লাগে। কিন্তু গভীরতম কোনে হয়তো তার উত্তর ছিল। হৃদয়ের দূরত্ব ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বার্ধ্যক্যজনিত কারণে ঝগড়া হয়। মতবিরোধ হয়। তারপর একই সাথে বৃষ্টি ভিজতে ইচ্ছে করে, বদমাইশি করতে ইচ্ছে করে, পুরনো প্রেম ঝালিয়ে নিতে ইচ্ছে করে, যে প্রেমিকা দাগা দিয়ে গেছে বা যে ছেলে পোছেও না বাবাকে তাকে লাথ মেরে দূর করতে ইচ্ছে করে।

ইচ্ছে করে বুড়ো হয়ে যাওয়া বন্ধুটাকে খিস্তি করতে। বাবার সাথে বন্ধুত্ব পাতাতে এ বয়সে। বাবা ছেলের দুষ্টুমিকে বিজ্ঞাপনী শব্দবন্ধে বাঁধতে। মেন উইল বি মেন।

©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

No comments:

Post a Comment