কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Friday, July 6, 2018

পয়লা মে: হাগোড়ে হাবাতের যুদ্ধ জয়ের দিন

| পয়লা মে: হাগোড়ে হাবাতের যুদ্ধ জয়ের দিন |

----ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

আপনি সদ্য ব্যাক্ল কফির মাগ হাতে দেওয়াল জোড়া কাঁচের সামনে দাঁড়িয়েছেন এসে। সতেরো তলার এই পরিষেবা-কারখানা থেকে শহরটা বোঁদের মত লাগে। আপনি হাম্বরা কর্পোরেট। ১৪ ঘন্টার ওয়ার্ক কালচারাল। উদয়াস্ত বসের থাপথাপানিতে আরো মোটিভেটেড। আরো ট্যাবলেট ঠুঁসে দিলখোলা গল্ফ খেলেন।

আজ গোটা শহরজুরে সাইরেনের শব্দ। বিকট সে জয়ধ্বনি। পাথরের দেওয়াল, লোহার গ্রিল, প্রকাণ্ডকায় নিরাপত্তাবলয়, কাঠের দরজা, সৌখিন আসবাব, অফিসের শীতাতপনিয়ন্ত্রক ভেদ করে নরম বিছানাপত্তরের অহেতুক পোঁদে লাগে সেই সাইরেন। আমাদের পলিটিকাল কারেক্টনেস ভেদ করে।

এরকম অপয়া দিনেই সেনাবাহিনী রুট মার্চ করাতে হয়। জল কামান মজুদ করতে হয় রাস্তায় রাস্তায়, ব্যারিকেড গড়ে তোলা হয় চৌমাথায়। আশে পাশের এলাকা থেকে পুলিশ মোতায়েন হয়। বেয়োনেটে শান দেওয়া হয়। ফরাসি সুগন্ধি আর জার্মান গাড়িওয়ালারা আগাম সুরক্ষা নিয়ে রাখেন। কাঁচের ঘরে ক্রমাগত পায়চারী করে ধবধবে পাঞ্জাবি। পাছে তাদের সৌখিন ঘরের কোনে পেচ্ছাপ করে দিয়ে যায় প্রোলেতারিয়েৎ নুনু গলা অবধি খেয়ে। আজ প্রগাঢ় কম্পন হবে বাবুদের। এরা নাকি অন্তবিহীন কাল মৃতবৎ ঘোরে।

ওদিকে যুদ্ধ জয়ের যুগযুগান্তরের আয়োজন তুঙ্গ। আজ গরুর মাংস রাঁধা হবে শুয়োরের তেল দিয়ে। সোহাগি নাস্তিক চচ্চড়ি বলে তাকে। পেঁয়াজ রসুন আদা বাটা আদর করে রাখে। মুসলমান আর হিন্দু মিলেমিশে একশা হয় এই দিনে। খালি পেটে ধম্ম হয় না। গরম ভাতের গন্ধ। দুনিয়ার হাবাতে এক হও।

হিন্দু চটকল শ্রমিক মুসলিম ইটভাটার মজুরের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ার কথা বলে। দিন বদলে দেওয়ার কথা বলে। ভুঁড়ি ফাঁসিয়ে দেওয়ার কথা বলে। দরকার হলে প্ল্যানচেট করে নবারুণকে আনতে হয়। পরিহাসের রসিকতায় উৎসারিত হয়ে
সৈন্য, নটী, দালাল, ভাঁড়, ব্রাত্য, সার্থবাহের ঘরে
স্বচ্ছলতা আশা আপোষ কাড়াকাড়ি বিলাস ব্যর্থতায় যাকে দেখা যায়। ওই মক্কেলই লাইন বাতলে দেয়।

"হোপলেস কেস, আধমরা, লাথখোর ছেলে, খুচরো চিটিংবাজ, উটকো দোকানদার, খিদিরপুর, একবালপুর, কাঁটাপুকুর, সোনাগাছি, গরানহাটা, ভাল্লুকপাড়ার মাগ, হিজড়ে, আলবাল পদ্যগদ্য লেখক"- সব্বার নেমন্তন্ন থাকে মাঠে। কেবল আপনি বাদ। আপনার জেলুসিল লাগে মিনারেল ওয়াটার না খেলে, মাইনের অর্ধেক খরচা হয় নিজেকে চকচকে টাই আর কোম্পানির দেওয়া শার্ট শোভিত রাখতে।

বিশাল মাঠ জুরে কলা পাতা, বসার জন্য খবরের কাগজ বেছানো হয়েছে। রাম,পচা ফ্যাপড়া বড়া, ডিম সেদ্ধ, ছোলাসেদ্ধ , বিট নুন, গরুর ঝাল, শুয়োর ভাজা, শুঁটকি শুক্তো। সাথে গলা খুলে গান। চা বাগান শ্রমিকের গান, ড্রাইভারের গান, মুটে মজদুরির গান, হাত দিয়ে সেপটিক ট্যাংক পরিস্কার করে যে মা, তার গলায় ছোটবেলায় শোনা হরিজন বস্তির গান।

আজ ঘামের গন্ধ উদযাপনের দিন। আজ যারা ধর্ম নিয়ে বেসাতি করে তাদের ধরে এনে হাত পা বেঁধে কবিতা শোনানোর দিন। "আয় মোরা সব গরিব যত/ বাঁধব জবর জোট/ একসুরে আয় বলব তেড়ে/ ভোটমারানি ফোট।"

আজ ন্যায্য মূল্য চেয়ে হরতাল করার দিন। আজ ডবল মুনাফা করছে যারা তাদের চোখ রাঙানোর দিন। আজ লাল পতাকা শক্ত করে ধরে থাকার দিন। গোটা দিন। আজ পয়লা মে।

এই সবকিছু করতে চাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও, ওদের সাথে গলা ছেড়ে গাওয়ার সাধ থাকলেও, এক পাতে খাওয়ার আহ্লাদ থাকলেও আপনি অনেকটা দূরে চাঁদবদন সুটকেস হাতে কোন কেবিনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকবেন আজ্ঞাবহ দাস হয়ে যতক্ষণ না আপনার বসের ডবকা সেক্রেটারিকে হামি খাওয়া শেষ হচ্ছে। এক পা ও এগোতে পারবেন না। এক পা পিছোতে পারবেন না। পে চেকের চাপে চিউইংগামের মত চ্যাপ্টা হয়ে থেকে যাবেন মালিকের হ্যান্ডমেড বুটের তলায়। নবারুণ আর লেনিন খ্যাঁক খ্যাঁক করে হাসবে শ্যাওড়া গাছে বসে।

আপনার লেবার আছে কিন্তু ইউনিয়ন নেই, আপনার ক্ষোভ আছে কিন্তু দ্রোহের মুরোদ নেই।  আপনার কলারের রঙ সাদা। আর গাঁড়ে চাকরি যাওয়ার ভয়। মে দিবস আপনার জন্য নয়।

©------ ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

No comments:

Post a Comment